বাপেক্সের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বেশিরভাগই শীর্ষ কর্তাদের স্বজন
বাপেক্সে মেধাবী প্রার্থীদের বাদ দিয়ে কৌশলে শীর্ষ কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাসনদ ছাড়াই অনেক ব্যক্তি নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হয়েছেন। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সাতজন ভুক্তভোগী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার ফল ২ মে প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যাদের নাম তালিকায় উঠেছে, তাদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজন। তাদের মধ্যে অনেকেই মোটা অঙ্কের ঘুস বা উৎকোচ দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন। আর যারা সত্যিকারের অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করেছেন, তাদের নানা অজুহাতে বাদ দেওয়া হয়েছে।
রিটে জ্বালানি বিভাগের সচিব, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন), ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন), জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) ও সালদা রিভার গ্যাস ফিল্ডের প্রকল্প পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব বলেন, তার আমলে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নিয়োগ হয়নি। আগের কয়েকটি নিয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টের কিছু নির্দেশনা ছিল, সেগুলোরও বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হয়ে যাবে। নানা কারণে কিছু বাদ পড়েছেন, তারা আদালতে গেছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টে যে রিট হয়েছে, সেটি তিনি এখনো দেখেননি। তিনি বলেন, বর্তমানে যে নীতিমালা করা হয়েছে, তাতে কোনো অনভিজ্ঞ কর্মী বা কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ঢুকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া এসব নিয়োগে একটি শক্তিশালী নিয়োগ কমিটি আছে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ২/৩ জন বাদে বাকি সবাই মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলাসহ বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। কাজেই ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন বা অদক্ষ, অনভিজ্ঞ কেউ ঢুকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
রিট মামলার কাগজপত্র (এনেক্সর-জে)-এর সঙ্গে দেওয়া একাধিক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে একজনের অভিজ্ঞতার সনদ ভুয়া। তিনি বাপেক্সের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং নিয়োগ কমিটির এক সদস্যের আত্মীয়। আলী নামের একজন প্রার্থী যিনি বাপেক্সের অনুমোদিত কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না। রিগম্যানের ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে গ্যাস ড্রিলিং রিগের কোনো ইনস্টিটিউট না থাকায় তার কোনো অভিজ্ঞতার সনদ থাকার কথা নয়। ওই প্রার্থীর বাবা বাপেক্সের এমপ্লোয়েজ ইউনিয়নের একজন শীর্ষ নেতা। তার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য এবং প্রশাসন বিভাগের একজন মহাব্যবস্থাপক। আরেক প্রার্থী আছেন, যিনিও বাপেক্সের অনুমোদিত কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না। তিনিও রিগম্যানের যে অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়েছেন, তা ভুয়া। তার জন্য সুপারিশকৃত কর্মকর্তা হলেন বাপেক্সের একজন ড্রিলিং ইনচার্জ। রিগম্যানের ভুয়া সনদ জমা দিয়ে আরেকজন প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে, যার জন্য সুপারিশ করেছেন নিয়োগ কমিটির সদস্য ও একজন প্রকল্প পরিচালক ও ডিলিং সুপারিনটেনডেন্ট। ওই প্রার্থী সুপারিশকৃত এই কর্মকর্তার আত্মীয়।
একই অভিযোগ তোফাজ্জল হোসেন নামে অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তিনি একজন উপ-মহাব্যবস্থাপকের আত্মীয়। নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া বাপেক্সের একজন অফিস সহকারীও রয়েছেন। তার অভিজ্ঞতার সনদটিও ভুয়া। এই অফিস সহকারীর জন্য সুপারিশ করেছেন একজন টুলপুশার কর্মকর্তা। বাপেক্সে কোনোদিন কাজ না করলেও এই অফিসে কাজ করার অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়েছেন একজন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন একজন ডিলিং ইনচার্জ। বাপেক্সের সিমেন্টিং অপারেটর হিসাবে কর্মরত থাকলেও রিগম্যান হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে একজন চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন বাপেক্সের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক। একইভাবে স্টোরকিপার হিসাবে চাকরি করে জমা দিয়েছেন রিগম্যানের সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদ। ট্রেড কোর্স সনদ দিয়ে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন বাপেক্সের একজন ড্রিলিং সুপারিনটেনডেন্ট। একই কায়দায় বাপেক্সের সিমেন্টিং অপারেটর হিসাবে কর্মরত থাকলেও রিগম্যানের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।