২৯টি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজারের বেশি লাইসেন্স দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বলা হয়েছিলো, এতে গ্রাহক সেবার মান বাড়বে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া হবে।
কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লাইসেন্স আর মধ্যস্বত্বভোগী কোম্পানির ভারে জর্জরিত টেলিকম খাত। গ্রাহক সেবায় নেই জরুরি কোনো সম্পৃক্ততা। অথচ মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে বছরের পর বছর মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। টেলিযোগাযোগ খাতের ইকো সিস্টেমে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজনৈতিক প্রভাবে নেয়া কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি। এ প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে সহসাই কমিটি গঠন করবে বিটিআরসি।
মূলত ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব লাইসেন্সের বেশিরভাগই হাতিয়ে নেয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ উঠেছে, বাজার যাচাই না করে টেলিকম খাতে নানা স্তর তৈরির মাধ্যমে লাইসেন্স বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, প্রায় ২৯০০-৩০০০ লাইসেন্স দেয়া আছে। এত লাইসেন্স আসলে দরকার আছে কি না, এটা দেখার দরকার আছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলের নেতাদের কেউ কেউ টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবসায় নামেন। বাগিয়ে নেন আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স ক্যটগরির ডজন ডজন লাইসেন্স। মধ্যস্বত্ত্বভোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে থেমে থাকেননি। এমনকি সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ারও প্রমাণ পেয়েছে বিটিআরসি।
এমদাদ উল বারী বললেন, আমাদের যেসব মেজর লাইসেন্স আছে, এর বেশিরভাগই মেয়াদ শেষ হবে দুই বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২৭ সালে। অনেকগুলো স্তর আমরা দেখতে পাচ্ছি, যা ভ্যালু তৈরি করতে পারছে না। সেই স্তরগুলো বাদ দিবো, সংস্কার করবো নাকি একীভূত করবো— এটা আমাদের স্ট্রাটেজির একটা অংশ হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত লাইসেন্স প্রদান গ্রাহক সেবায় কোনো ভ্যালু যুক্ত করেনি। বরং এসব প্রতিষ্ঠানের মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য গ্রাহকের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপানো হয়েছে, এমন অভিমত প্রযুক্তিবিদদের।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, অনেক লাইসেন্স বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর বড় অংশ থেকে বড় টাকা পাওনা রয়েছে। সেই লাইসেন্সগুলো দেয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া লাইসেন্স পেয়েছেন, তারা বিটিআরসির টাকা ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে এ রকম নজির খুব একটা নেই। কাজেই এসবের মূলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। যেখান থেকে আসলে প্রয়োজনের বেশি লাইসেন্স দেয়া এবং তাদেরকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়া হয়।