মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গাজায় বসবাসকারী পাঁচজন ফিলিস্তিনিদের একটি দল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ- গাজা ও পশ্চিম তীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে মিডেল ইস্ট আই এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ-এর সহায়তায় দায়ের করা এই মামলাটি করা হয়েছে লিহি আইনকে কেন্দ্র করে। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিদেশী সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র বা সামরিক সহায়তা প্রদান থেকে বিরত রাখে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লেহি আইনের’ আওতায় মামলাটি করা হয়েছে। এই আইনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবিক লঙ্ঘনে জড়িত বিদেশী সামরিক ইউনিটগুলোতে সহায়তা নিষিদ্ধ করে। কিন্তু গাজার ক্ষেত্রে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর লেহি আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাদীদের পাশাপাশি মামলার সমর্থনকারী বেশ কয়েকজন প্রাক্তন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের মতে, অভিযোগে বর্ণনা করা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নীতি উপেক্ষা করে গাজায় আক্রমণ করতে সাহায্য করেছে। এই কাজে বাইডেন প্রশাসনের সাথে আরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সহায়তা স্থগিত হয়ে যাবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আইনটিতে ফাঁকফোঁকর তৈরি করেছিলো। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে বিনা বাধায় সামরিক সাহায্য দেয়া যায়।
এমনই একটি ফাঁক হল পররাষ্ট্র দফতরের ‘ইসরায়েল লিহি ভেটিং ফোরাম’ প্রতিষ্ঠা। মামলায় বলা হয়েছে যে “ইসরায়েলি সামরিক ইউনিটগুলোর গাজায় আক্রমণ করে মানবাধিকারের যে গুরুতর লঙ্ঘন করেছে, তা বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এই ডিজাইন করা হয়েছে।
গত অক্টোবরে, পদত্যাগকারী স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা জশ পল স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) মামলাটি সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি ইসরায়েল লিহি ভেটিং ফোরামের অংশ হিসেবে অনেক কিছু খুবই কাছ থেকে দেখেছি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গুরুত্বর মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে যেনেও রাজনৈতিক পরিণতির ভয়ে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন।”
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত এপ্রিল মাসে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর পাঁচটি ইসরায়েলি নিরাপত্তা ইউনিট গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়টি নির্ধারণ নিশ্চিত করে।
তবে ওয়াশিংটন নির্ধারণ করে যে তাদের মধ্যে চারটি ইউনিট মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি এবং এখনও মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তা পেতে পারে। অন্যদিকে পঞ্চম ইউনিটের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্ট যোগাযোগ করবে।
সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর)-এর সহায়তায় দায়ের করা এই মামলাটি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত খারিজ করে দেয়। তবে, আরেকটি আপিল আদালতের তিন বিচারকের প্যানেল খারিজকে পুনর্বিবেচনায় নিয়েছে। সব মিলিয়ে, মামলাটি আবার দেখার জন্য ১১ বিচারকের প্যানেলের প্রয়োজন হবে।