অর্থ - বানিজ্য

কলকাতার একটি আদালত থেকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচারে অভিযুক্ত আলোচিত ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার (পি কে হালদার) জামিন পেয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ব্যাঙ্কশাল আদালত পিকে হালদারসহ ছয়জনের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জামিনের বিনিময়ে প্রত্যেককে ১০ লাখ রুপি জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে শর্ত দেয়া হয়েছে মামলা চলাকালীন তাদের আদালতে হাজিরাও দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে রাজ্য বা দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না।

এদিকে, এর আগে গত ২৭ নভেম্বর জামিন পেয়েছিলেন পি কে হালদারের ভাই প্রানেশ হালাদার, আমিনা সুলতানা ওরফে শর্মি হালদার ও ইমন হোসেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা থেকে পিকে হালদারকে গ্রেফতার করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প থেকে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে শেখ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে নাম এসেছে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ টিউলিপ সিদ্দিকেরও। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টিউলিপকে নির্দোষ বলে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়,  তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত, তার কাজ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেয়া। তবে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধেই। এসব অভিযোগে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।

স্টারমারের মন্ত্রীসভার অন্যতম এক সদস্য  লুইস হাই, যিনি যুক্তরাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার আগেই ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। সেই কেলেঙ্কারি শেষ হতে না হতেই এবার স্টারমারের মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎের অভিযোগ। যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীলরা বলছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্টারমারের রাজনৈতিক রায় ও সিদ্ধান্তের নতুন ‘কালদাগ’।

অভিযোগের জবাবে, স্টারমারের অফিসিয়াল মুখপাত্র বলেছেন যে সিদ্দিকের ওপর প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ আস্থা রেখেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে তিনি (টিউলিপ সিদ্দিক) দুর্নীতিবিরোধী সমস্যাগুলি পরিচালনা করতে থাকবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিলো। মূলত টিউলিপ সিদ্দিকের খালা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন যে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে তারই আওতায় পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের চাকতাই শাখা থেকে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এস আলমের কর্মচারী মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরীকে সামনে রেখে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আলোচিত গ্রুপটি। এতে সহযোগিতা করেন ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন এমডি ও পরিচালকসহ ৩৪ কর্মকর্তা।

তাদের পাশাপাশি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলিয়ে মোট ৫৮ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মুরাদ এন্টারপ্রাইজের গোলাম সারোয়ার চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়ে নেয় অর্থ। ২০২১ সালের ২১ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮৯০ টাকা ঋণ মঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের নভেম্বরে বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধি করে হাজার কোটি এবং ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বরে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। যার মধ্যে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা পাচার করেছে।

রাজনৈতিকভাবে যাই ঘটুক ভারতের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। যেখান থেকে ভালো দর পাওয়া যাবে সেখান থেকে আমদানি করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে পারচেজ কমিটির বৈঠক শেষে একথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলো ঠিকভাবে এবং সময়মত আসবে। সচিবালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে । সেক্ষেত্রে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে দেশ থেকে কম দামে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই চাল আমদানি করা হবে।

বাংলাদেশে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে এমন হুমকি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক, এই বক্তব্যের প্রভাব বাণিজ্যের উপর পড়বে না।

ডক্টর সালেহউদ্দিন বলেন, রমজানকে সামনে রেখে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দাম কমানোর জন্য। আসছে রমজানে তাই পণ্যের দাম বাড়বে না। রমজানের জন্য খেজুর, তেল, মসুর ডাল আমদানি করা হচ্ছে, এসব পণ্যের ভ্যাট কমানো হচ্ছে। এই প্রভাব জিনিসপত্রের দামের উপর পড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাঁদাবাজির প্রভাব পড়ে। সিন্ডিকেট বন্ধ করা গেলেও চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আরও ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার আশা করছি। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের জন্যই এই বাড়তি সহায়তা চাওয়া হবে। দেশের কল্যাণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ, সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলটির সাথে আলোচনা হয় হয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয়ের অগ্রগতি তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তাহবিলের সাথে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে সেই ঋণের ৩ কিস্তি ছাড় করেছে সংস্থাটি।

গত সাড়ে ১৫ বছরে আর্থিক খাতে বিস্ময়কর দুর্নীতি করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ৩ টার্মে দেশের জনগণ দেখেছে ছোট, মাঝারি এবং মেগা প্রকল্পের হিড়িক। কিন্তু এসব প্রকল্পের অনেকগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনমনে। অভিযোগ ছিল বাস্তবতা ও জনস্বার্থ বিবেচনা না করে কেবল লুটপাটের জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

দেখা গেছে, বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে হয়েছে পুকুর চুরি। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং মূল্যস্ফীতির কাছে হার মেনেছে বাজেট। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় একাধিক সময়ে অস্থিতিশীল হয়েছে পণ্যের বাজার।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতের লুট হওয়া অর্থ দিয়ে তৈরি করা যেত ২৪টি পদ্মা সেতু। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কারমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে তছনছ হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পে নয়-ছয়ের কারণে ব্যয় বেড়েছে শতকরা ৭০ ভাগ। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বাস্তবায়ন না হওয়ার আগেই অর্থ ছাড়, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে পাথর স্থাপন বা ফিতা কেটে তছরুপ করা হয় অর্থ। অর্থাৎ দৃশ্যমান একটি আনুষ্ঠানিকতা জানান দেয়াই ছিলো এসবের মূল লক্ষ্য।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে প্রকল্পগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো, সেসব প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। প্রকল্পগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আসল উদ্দেশ্য ছিলো কোনো গোষ্ঠিকে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া। একাধিকবার একই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে সেই বিশেষ গোষ্ঠিকে সুবিধা করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কৌশলগুলোকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এর ফলে যেসব জায়গায় বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। ব্যাংক খাতে অর্থ লুটপাট বন্ধে সেগুলোর আগের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে ব্যাংক খাতের হরিলুট অবস্থা। বলা হয়, ব্যাংক খাত ভঙ্গুর করেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এই খাতে লোপাট হওয়া অর্থে ১৪টি মেট্রোরেল অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। ঋণ খেলাপি এবং আর্থিক অনিয়ম নষ্ট করেছে আর্থিক স্থিতিশীলতা। ব্যহত হয়েছে উৎপাদনশীলতা। বছরে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

রিপোর্টে বলা হয়, পদ্ধতিগত কর ফাঁকি, ছাড়ের অপব্যবহার এবং দুর্বলভাবে কর প্রশাসন পরিচালনায় রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র। গেল ১ দশকে ভিসা ক্রয়, রিক্রুটিং এজেন্সির হুন্ডিতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে ৪টি ঢাকা এমআরটি-৬ (মেট্রোরেল) উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ সম্ভব।

উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরী করার কথা বলা হলেও, সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে ছিল প্রকৃত সুফলভোগী। দলীয় বিবেচনার পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতের যে ক্ষতি হয়েছে তা অকল্পনীয়। তিন-চার মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তবে বর্তমান সরকারের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই। শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা এবং অগ্রাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আগের চেয়ে স্থিতিশীল। রিজার্ভের ক্ষয় রোধ হয়েছে। তাছাড়া, বিনিময়হারও স্থিতিশীল। এ সময় রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার নিয়েও কথা বলেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, পোশাক শ্রমিকদের টার্গেট করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি চেষ্টা করা হচ্ছে। এটিকে প্রতিহত করতে সরকারি এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সেমিনারে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যবসা চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার দাবিও জানান তারা। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতির ধারবাহিকতাও চান তারা।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কেজি স্বর্ণসহ এক মালয়েশিয়ান নাগরিককে আটক করেছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে আটক করা হয়।

আটককৃতের নাম চো ইয়ো চার। আটকের পর তাকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে একটি ফ্লাইটে ঢাকায় নামেন ওই যাত্রী। এরপর ভিসা অন এরাইভাল এলাকায় এলে তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এনএসআই সদস্যরা তাকে নজরদারি করেন। পরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।

পরবর্তীতে আর্চওয়ে মেশিনে তার শরীর স্ক্যান করলে শার্টের নিচে ভেস্টের ভেতর স্বর্ণের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পরে তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে ১২টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার প্রতিটির ওজন ১ কেজি এবং আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

৬টি ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিতে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দেশের আর্থিক খাতের সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এ তথ্য জানান।

এ সময় তিনি বলেন, তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করতে ঋণ দিচ্ছে সবল ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে ৬টি ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়েছে। টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সাময়িক সরে এসে এ সহায়তা দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে এসব টাকা তুলে নেবো। আমাদের টাইট পলিসি থাকবে। এক হাতে দেবো, অন্য হাতে তুলে নেবো। এতে বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হবে না।

ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে উল্লেখ করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সবাই তাদের টাকা ফেরত পাবে। কোনও ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পাশে দাঁড়াবে। ১ ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকে অনেক পরিবর্তন পাবে গ্রাহকরা।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের সম্পদ বিবরণী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেয়ার কথা থাকলেও আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা জমা দেয়া যাবে।

আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সার্কুলার ইস্যু করব। গত ১৬ বছরে কেউ সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়নি। কীভাবে এটা জমা দিতে হবে, তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এ জন্য সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে, প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিসাব বিবরণী দেয়ার কথা থাকলেও এ বছর তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দিতে বলেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছিল, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণীর তথ্য গোপনীয়তার স্বার্থে সিলগালা করা খামে কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে।

দুর্নীতির লাগাম টানতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯, যা ২০০২–এ সংশোধনী এনে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী পাঁচ বছর পরপর দেয়ার বিধান করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি কর্মচারীদেরকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়।

এদিকে, আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় আরও এক মাস বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন নির্ধারিত ছিল ৩০ নভেম্বর। ব্যবসায়ী ও করদাতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় বৃদ্ধি করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।