অর্থ - বানিজ্য

গাড়িগুলো তৈরি হয়েছে চীনে। তবে বিক্রি বাড়াতে সেগুলো নিজেদের দেশে তৈরি বলে ব্র্যান্ডিং করে ইতালির একটি গাড়ি কোম্পানি। এমন অভিযোগে ওই কোম্পানিকে ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে ইতালির সরকার। খবর বিবিসির।

দক্ষিণ ইতালিভিত্তিক ডিআর অটোমোবাইলসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে ইতালির প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা বলছে, এই কোম্পানির ডিআর ও ইভিও ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোকে ইতালিতে উৎপাদিত বলে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই চীনে তৈরি হয়েছিল।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেরি, বিএআইসি ও জেএসির উত্পাদিত যন্ত্রাংশ দিয়ে এসব কম দামের গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ইতালিতে শুধু ছোটখাটো সংযোজন ও ফিনিশিংয়ের কাজ করা হয়েছে, এমনটাই বলেছে প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এদিকে ডিআর অটোমোবাইলস জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়িগুলো সম্পূর্ণ ইতালিতে তৈরি, এমন দাবি তারা কখনোই করেনি। অবশ্য জরিমানার প্রক্রিয়াটি এমন সময় হয়েছে, যখন ইতালির বাজারে ডিআর ও ইভিও গাড়ির বিক্রি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

গত মাসে মরক্কোর তৈরি কয়েক ডজন ফিয়াট টোপোলিনো মডেলের গাড়ি ইতালির বন্দর লিভোর্নোতে আটক করা হয়েছিল। তার কারণ, গাড়িগুলোতে ইতালির পতাকা আঁকা ছিল। ফিয়াটের মূল কোম্পানি স্টেলান্টিস বলেছে, তারা নিয়ম অনুসরণ করেই কাজটি করেছে। তারপরও সেই ঘটনার পর গাড়ি থেকে পতাকা সরিয়ে দিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশন গত সপ্তাহে বলেছে, চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে, যদি গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়। গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপীয় কমিশন চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তাদের অভিযোগ, চীনের এসব কোম্পানিতে সরকার ভর্তুকি দেয়, সে কারণে এসব গাড়ির বাজারদর কম।

এদিকে গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশ করার পদক্ষেপ নেয়। তারপরই ইইউ এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নেয়।

চীন সরকার ইতিমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার এই পদক্ষেপ সুরক্ষাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। গত মাসে চীন সরকার ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

নতুন বাজেটের এক কর প্রস্তাবের কারণে এবার রেস্তোরাঁমালিকদের মাথায় হাত পড়তে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলির ছোট-বড় সব রেস্তোরাঁমালিকদের এখন থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। আবার সেই টিআইএনের বিপরীতে বছর শেষে আয়-ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে কর বিভাগে রিটার্ন জমা দিতে হবে। রিটার্ন জমা না দিলে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে পারবেন না এই ব্যবসায়ীরা।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে তাঁদের ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না, নতুন বাজেটে এমন ঘোষণা এসেছে। এর মানে হলো, রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের রিটার্ন জমার অনুলিপি লাগবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রেস্তোরাঁমালিকদের লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়ন করতে হয়।

কোন ধরনের রেস্তোরাঁমালিকদের জন্য এই বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে যেহেতু রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করতে মালিকদের রিটার্ন জমা দিতে হবে, সে কারণে তাঁরা করের আওতায় আসবেন।

আয়কর আইনে রেস্তোরাঁর বিশেষ কোনো সংজ্ঞা উল্লেখ করা নেই। তবে ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞা আছে। বলা হয়েছে, অস্থায়ী রেস্তোরাঁ ছাড়া সব ধরনের রেস্তোরাঁয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসবে।

অস্থায়ী রেস্তোরাঁ বলতে বোঝায়, বেষ্টনী ও বৈদ্যুতিক পাখা নেই, তবে শুধু দুটি বাতি আছে—এ ধরনের সুবিধাসংবলিত রেস্তোরাঁ। এমন রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর কোনো ভ্যাট নেই। ভ্যাট আইনে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞায় এসব কথা বলা হয়েছে। ফুটপাতে বসানো ‘ভাতের দোকানে’ সাধারণত বেষ্টনী ও পাখা থাকে না। এসব দোকানে খাওয়াদাওয়া করলে ভ্যাট দিতে হবে না। অর্থাৎ এমন ধরনের রেস্তোরাঁ ছাড়া বাকি সব ধরনের রেস্তোরাঁয় বিক্রির ওপর ভ্যাট দিতে হয়।

দেশ থেকে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৮১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। টাকা পচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু। জরুরী ভিত্তিতে টাকা পাচার রোধ দরকার।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি: প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বাড়ছে। এর রাশ টানতে হবেই। ব্যাংক কমিশন করলে ভালো, না হলে অন্তত শক্তিশালী একটা কমিটি করা উচিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে।’
 
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এডিপি ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা হওয়ার কথা, তবে হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ধনীদের করহার বাড়ানো, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের মতো প্রস্তাব সাহসী পদক্ষেপ।’
ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিছু পণ্যের দাম কমছে। বাজেটের পর দাম বাড়েনি। মে পর্যন্ত ১১ মাসে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন বেড়েছে।’
 
এবারের বাজেটে সরকার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেটের আকার কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবারের বাজেট হওয়ার কথা ছিল ৯ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এবার বাজেট সংকুচিত করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট সংকুচিত করা হয়েছে। টাকার সরবরাহ কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে।’
 
বাজেটে কৃপণতা দেখানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া ঘাটতিও কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে। সে জন্য বলছি, এটি একটি সাহসী বাজেট। বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
 
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রমুখ।

গত বছরের চেয়ে লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার দাম সরকার এবার দুই টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কয়েক বছর আগেও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। একটি ছাগলের যদি ৫ থেকে ৬ বর্গফুট চামড়া হয়, লবণ দেয়ার পর দাম পাওয়ার কথা ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। অথচ এবার ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়।

চামড়া বিক্রি করতে আসা একজন বিক্রেতা বলেন, ‘দুইটা চামড়া বিক্রি করতে আসছি। দুইটা বিক্রি করছি মাত্র ২০ টাকায়। যা দিয়ে আমাদের রিকশা ভাড়ায় হয়নি।’  

আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘চামড়ার সরকারি যে দাম দিয়ে দিছে সেই দামেও তারা কিনতেছে না। তাদের মনগড়া মতো তারা কিনতেছে।’

এক আড়তদার বলেন, ‘আড়াইশো টাকার মাল এখন ৫–১০ টাকায় কিনি। লবণ ও অন্যান্য বিষয় দিয়ে আমাদের পড়ে যায় ৩৫ টাকা। বিক্রি করতে পাড়ি ৪৫ টাকায়।’

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, বিশ্ববাজারে ছাগলের চামড়ার চাহিদা কম এবং রাসায়নিক ও লবণের দামও বাড়তি। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ার কারণে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমেছে পশুর চামড়ার। 
   
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘২৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ ছিল। কিন্তু এই বাজারটা চলে গেছে। চামড়ার বিকল্প বেড় করে ফেলেছে চাইনিজ অনেক কোম্পানি। ফলে ছাগলের চামড়ার যে চাহিদা ছিল তা আর নেই।’

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাসির চামড়া থেকে দামি পণ্য আসলে সেভাবে উৎপাদন করা যায় না। হয়তো ওয়ালেট বা মোবাইল রাখার ব্যাগ উৎপাদন ছাড়া তেমন কিছু উৎপাদন করা যায় না। এছাড়াও খাসির চামড়ার প্রসেসিং খরচটা একটু বেশি।'

এদিকে, রাজধানীর পোস্তায় ঈদের দ্বিতীয় দিন প্রতিটি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর বড় চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। পোস্তায় লবণ দিয়ে সংরক্ষিত এসব কাঁচা চামড়া পরে চলে যাবে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে।

পশু বেচাকেনায় ভর করে এবারের কোরবানি ঈদের অর্থনীতির আকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। দোকান মালিক সমিতি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক ও সাজসজ্জার পণ্য বিক্রি কমলেও, পশুর হাট ছিলো চাঙ্গা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোরবানি কেন্দ্রিক পশুপালনে সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। 

দেশের কয়েক লাখ প্রান্তিক কৃষক পশুপালন করেন। গরু-ছাগল পালনে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক বাণিজ্যিক খামারও। এ বছর এক কোটি ৭ লাখ চাহিদার বিপরীতে কোরবানিযোগ্য ছিলো ১ কোটি ৩০ লাখ পশু। যার মধ্যে গরু ৫২ লাখের বেশি। ১ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা ছিল বেশি। বাজারে বেশিরভাগ ছাগল বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে।

কোরবানি ঈদের পশু কেনাবেচা হয়েছে আনুমানিক ৭৫ হাজার কোটি টাকার। এরসঙ্গে পশু পরিবহণ, খাদ্য, কসাই ও আনুষঙ্গিক খরচ ৫ হাজার কোটি টাকা। কাঁচা চামড়া-লবন ও শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার কোটি টাকা। পেঁয়াজ, রসুন ও মসলার বাজার ৮ হাজার কোটি টাকার। ফ্রিজ-ইলেকট্রনিক্স পণ্য, পোশাক, পর্যটন ও যাতায়াত খরচ ১০ হাজার কোটি।  

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাহারি পোশাক বা বাহারি পণ্য কেনার যে বাজেট ছিল সেটা ক্রেতারা নিয়ে গেছে কোরবানিতে। তারপরে মসলার বাজার, চামড়ার বাজার এর সঙ্গে যুক্ত হয় অন্যান্য প্রাসঙ্গিক জিনিসের বাজার। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বিশাল একটি বাজার।’

উৎসবের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে প্রবাসীদের আয়। কোরবানি ঈদ কেন্দ্র করে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৪৬ কোটি ডলার বা ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘আশ্চর্য লাগে প্রতিবছর প্রায় এককোটি গবাদিপশু কোরবানি হয়, পরের বছর আবারও এককোটি। এই যে পরের বছর গিয়ে আবারও পূরণ হয়ে যাচ্ছে, এটি আমাদের যারা কৃষক আছে তাদের অবদান। যদি চাহিদা বেশি হতো তাহলে আমরা কিন্তু পশু পেতাম না।’   

পশুপালনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনেও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তাই প্রান্তিক খামারীদের জন্য সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করার পরামর্শ তাদের।

সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২৪ সংসদে উত্থাপন করলে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরি করা অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য এই সম্পূরক বিল আনা হয়।

সম্পূরক বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াসহ আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন।

তারা পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পাচারকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান। অবশ্য সংসদ-সদস্যদের এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অনেকটা ঢালাও অভিযোগ। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু জানান, আর্থিক বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসাবে তিনি ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছেন। 

তার মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাতকে তদারকি করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কী তদারকি করছে? পিকে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়, পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়। এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন? 

মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন। চুপ থাকাই ভালো।

তিনি বলেন, ডলার সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না। তিনি চুপ থাকতেন। আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আমলা যেই হোক, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন, তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।

পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে সংযত নীতি পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। 

আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুক‚লে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ৪০টির বাজেট অপরিবর্তিত রয়েছে বা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বাজেট হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সম্পূরক বাজেটে ২০টি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন সরকার ও বিরোধীদলের চারজন সংসদ-সদস্য। এর মধ্যে দুটি মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। সেগুলো হলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। 

আইসিটি খাতে অনিয়মের অভিযোগ : আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না তার খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ প্রকল্পে যারা লার্নিং করতে আসে, তারা সঠিকভাবে আস্থা করতে পারে না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।

ব্যাংক লুটেরা, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি। তিনি বলেছেন, সময় এসেছে-ওদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। জাতীয় সংসদে এমন আইন পাশ করতে হবে যাতে তারা বিমানে উঠতে না পারে, ট্রেনের টিকিট না পায়। কোনো দামি গাড়িতে চড়া তো দূরের কথা-যেন কোনো রিকশাওয়ালা তাদের নিতে ঘৃণা প্রকাশ করে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ করব, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হোক। একই সঙ্গে ওদের বাসাবাড়ির সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হোক। বিশেষ করে ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সংকট, সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন কঠিন সংকট আমাদের প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও এখন তাকে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত ও অর্থ পাচারকারী ব্যাংক লুটেরা। যারা বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। যদিও সরকার এখন এসব রাঘববোয়ালকে শক্ত হাতে ধরা শুরু করেছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি এবং নানাভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে এই মহান সংসদে এ যাবৎ কম কথা হয়নি। বলতে বলতে সবাই এখন ক্লান্ত। কিন্তু খেলাপিরা ক্লান্ত হয়নি। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হলেও প্রভাবশালী খেলাপিরা আছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় ঋণ পুনর্গঠন করে নেন। ফলে খেলাপির খাতায় তাদের নাম আর ওঠে না। এছাড়া নামে-বেনামে কারা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তা অনেকেই না জানলেও কিছু লোক তো জানেন। কয়েকটি ব্যাংকের একশ্রেণির পরিচালকরা কীভাবে এসব ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন-সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। এজন্য ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, কারা ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী, তা সরকারের ভালো করে জানা আছে। আওয়ামী লীগ সরকার খুবই চৌকশ। তারা দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের চেনে না-এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। এছাড়া সমাজে যত ধরনের সিন্ডিকেটসহ বাজিকরদের জন্ম হয়েছে, তাদের হাঁকডাক ও দম্ভ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। আর সরকার চাইলে সব পারে। এক রাতেই এসব ডাকাতকে লকআপে ঢুকাতে পারে। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এমন সাহসী উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় রইলাম। এ কঠিন কাজটা তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা প্রতিকূলতার চিত্র তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এই সংসদ-সদস্য বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালাতে প্রায় সবকিছু আমদানি করতে হয়। বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। সেখানে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখন যদি সরকার আয় বাড়াতে সব চাপ দেয় শিল্পের ওপর, তাহলে তা হবে চরম জুলুম। বরং আমি মনে করি, রপ্তানিমুখী শিল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স আরও কমাতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশীয় শিল্প ভালো পারফর্ম করছে, তাদের নানাভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। প্রয়োজনে ওইসব বিদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত কিন্তু দীর্ঘদিন বিদেশি পণ্য বর্জন করেছে। নিজেরা নিজেদের পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা এ ধরনের বৈপ্লবিক পলিসি নিয়ে দেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অনেক সফলতাও আছে। টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে শুধু যে দেশে দুর্নীতি-লুটপাট বেড়েছে, তা নয়। দেশে উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। পদ্মা সেতু ছাড়াও এখন আমাদের হাতের নাগালে মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মানুষ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে খুব সহজে যেতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার মধ্যে যানজট অনেক বাড়লেও যারা এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা ভোগ করছেন, তারা তো বেশ শান্তিতে আছেন। কারণ, ১০ মিনিটেই এখন ফার্মগেট কিংবা হাতিরঝিল থেকে এয়ারপোর্ট আসা-যাওয়া করা যায়। এভাবে দেশজুড়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যার সুফল মানুষ পাচ্ছে। তবে ঢাকা শহরকে এখনো আমরা সেভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারিনি। সরকার যদি ১৪ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার উপর দিয়ে গাজীপুর এক্সপ্রেসওয়ে করার প্রকল্প হাতে নিতে পারত, তাহলে আজ ঢাকার ওপর এত চাপ থাকত না। ঘনঘন ওভারপাস আর রাস্তার মাঝখানে ঘর তুলে উত্তরা থেকে গাজীপুর সড়কটাকে রীতিমতো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বরং এখানে যদি শুরুতেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হতো, তাহলে মাত্র ২০ মিনিটে গাজীপুর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করা সম্ভব হতো। 

তিনি আরও বলেন, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট রয়েছে, এ কথা সত্য। তারপরও আমি বলব, আমাদের মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অনেক ভালো কাজ করছেন। উনি একজন শিল্পবান্ধব প্রতিমন্ত্রী। শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য উনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, সব ভালো কাজ তো একদিনে হবে না। সরকার নিশ্চয় ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। আর আমরা বিরোধী দলের সংসদ-সদস্য হিসাবে জনস্বার্থে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা যেমন করতে চাই, তেমনই সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করব না। 

বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জাতীয় পার্টির এই সংসদ-সদস্য বলেন, বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ এখন রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে চলেছে। যার বাইরে আমরাও নই। তবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমরা ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি। আমার মতে, বাংলাদেশ এখন কঠিন এক সংকটকালীন অবস্থা পার করছে। কিন্তু আমি মনে করি, এ সংকট একদিনে হয়নি। এর অন্যতম কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় চলে এসেছে যে, সাধারণ মানুষ ছাড়াও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রতিদিন তারা ধারদেনা করে দিন পার করছে। ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে গিয়ে ডলার পারচেজ করতে হচ্ছে বেশি দামে। দেশের একজন শিল্পপতি হিসাবে আমরা যারা পণ্য রপ্তানি করে ডলার আয় করছি, তাদের জন্য সমস্যা এখনো বেশি প্রকট না হলেও সামনের দিনগুলো খারাপ সংকেত দিচ্ছে। 

তিনি বলেন, তবে আমি বেশি শঙ্কিত বিদেশি ষড়যন্ত্র নিয়ে। নানা কারণে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষমতাধর বিদেশি মোড়লরা যে যার স্বার্থে আমাদের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে। যদিও এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহস করে বেশকিছু সত্য কথা জনসম্মুখে বলে দিয়েছেন। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা এখন বেশি শঙ্কিত। কারণ, এসব স্বার্থান্বেষী মহল যেখানে একবার হাতছানি দিয়েছে, তারা ছলেবলে সে দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমি এ রকম অঘটনের শঙ্কা নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুকে সামনে এনে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যে সামরিক শক্তির বলয় গড়ে তোলার অপচেষ্টা হচ্ছে তাতে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। কুকি-চিনসহ বেশকিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, রাজনীতি এবং কূটনীতিতে কেউ কখনো চিরস্থায়ী বন্ধু হয় না। যে যার স্বার্থ নানা কৌশলে আদায় করে নিতে চায়। ইতোমধ্যে আমরা এ রকম ফাঁদে যদি পা দিয়ে থাকি, তাহলে সামনে আমাদের সবার জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। বাস্তবে সবাই আমাদের ব্যবহার করছে। আমাদের কাছ থেকে অনেকে অনেক কিছু আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু বিপরীতে আমরা কিছুই পাইনি। শুধু ঋণের ভারে দিনদিন জর্জরিত হচ্ছি। মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ নিশ্চয় আগের তুলনায় অনেক বেশি। আজ যে শিশু জš§ নিচ্ছে, তার ঘাড়েও ঋণের বোঝা যুক্ত হচ্ছে। ফলে আমি মনে করি, জাতি হিসাবে আমাদের আরও সতর্ক, সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ করে আমরা যদি দেশের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে না পারি, তাহলে ওরা আরও বেশি করে সুযোগ নেবে। তাই এখনো সময় আছে, দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবার আগে দেশ। 

তিনি বলেন, সামনে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আমাদের বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। অনেকের নজর এখন তিস্তার দিকে। কেউ চায় অস্ত্র বেচতে, কেউ চায় তিস্তা প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ, কেউ আবার বড় ঋণের ঝুলি নিয়ে বসে আছে। কিন্তু তারাও এবার নিজেদের স্বার্থ ষোলো আনা উসুল না করে ঋণ অনুমোদন করবে না। ওদিকে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ডলার সংকটের কারণে আমরা অনেক বিদেশি পাওনা বা দায়দেনা পরিশোধ করতে পারছি না। কারণ, দিতে গেলে ডলারের স্থিতি আরও নিচে নেমে আসবে। কিন্তু পাওনাদাররাও বসে নেই। ঘনঘন তাগাদা দিচ্ছে। এর মধ্যে তারা পাওনা ডলারের জন্য চার্টার্ড বিমানে ঘুরেও গেছে। ফলে পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। বর্গিরা সব চারদিকে ফণা তুলে ঘোরাফেরা করছে।
জাতীয় পার্টির এ সংসদ-সদস্য আরও বলেন, এসব বোঝার জন্য এখন আর অর্থনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। এর অন্যতম কারণ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সবার হাতে হাতে প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছেন। সেখানে ইউটিউব, ফেসবুক খুললেই সারা বিশ্বের তথ্য চলে আসে। এখন ঘরে বসেই সব খবর পাওয়া যায়। আর সবাই তো মিথ্যা কথা বলে না। অনেকে হাতেকলমে হিসাব কষে সব ফাঁস করে দিচ্ছে। তাছাড়া মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে নিজেই হালচাল সব বুঝতে পারছে। বাজেট তো ৩০ জুন পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো-এখন যে মানুষগুলো ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেও মাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তার বাজেটের পর কী হবে। নির্ঘাত বাজেটের পর আরও কয়েক দফা দ্রব্যমূল্য বাড়বে। বেড়ে যাবে যে কোনো সেবার দাম। কিন্তু যার আয় বাড়ানোর সুযোগ বা সক্ষমতা নেই, তার কী হবে? বিশেষ করে যারা সাধারণ চাকরিজীবী, যাদের আয় বাড়ছে না, তাদের তো একেবারে পথে বসতে হবে। ফলে আমরা যারা সংসদে আছি, তাদেরকে এ মানুষগুলোর কথা ভাবতে হবে। এমনভাবে বাজেট দিতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে খরচের বোঝা না বাড়ে। 

তিনি বলেন, বক্তব্য আর বেশি দীর্ঘায়িত করব না। সবশেষে একটা কথা বলতে চাই। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের প্রত্যেককে নিজেকে একটা প্রশ্ন করতেই হবে। সেটি হলো-আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছি। এই যে আমরা একটু ভালো থাকার জন্য কেউ কেউ নির্দ্বিধায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছি, পারলে পুরো বাংলাদেশটা রেজিস্ট্রি করে নিতে চাই। ঢাকা শহরের সব দামি প্লট ও ফ্ল্যাটগুলো নিজের স্ত্রী-সন্তানদের দিতে চাই। আরও বেশি ভালো থাকতে বিদেশে বিলাসী জীবনের জন্য দেশটাকে বিক্রি করে দিতেও পিছপা হব না। আমি বলব, তারা কিন্তু সবাই বোকা। কারণ, প্রতিটি মানুষ সারা জীবন এত দৌড়ঝাঁপ করে যা আয়রোজগার করে, তার ৩০ ভাগ অর্থসম্পদও নিজে ভোগ করে যেতে পারে না। তাহলে আমার প্রশ্ন-এতসব ভয়াবহ পাপ এবং দেশবিরোধী কাজ আমরা কার জন্য করছি?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বাজেট আলোচনার শুরুতেই অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। স্মরণ করেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জাতীয় পার্টির সুযোগ্য চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতিও। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জনগণের পাশে থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গঠনমূলক সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন। নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শক্ত হাতে দল পরিচালনার পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

খুলনা নগরীর শেরে বাংলা রোড। সড়কের দুপাশজুড়ে এখন লেদ মেশিনের যন্ত্রাংশ থাকলেও, এক সময়ে কাঁচা চামড়ার স্তূপ থাকতো এখানে। অর্ধশতাধিক দোকান থাকায় এলাকাটিও পরিচিত ছিল চামড়াপট্টি হিসেবে। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়া বাজারের একটি ছিল খুলনায়। কোরবানির ঈদ বাদেও এই মার্কেটে প্রতিদিন চলতো চামড়া বেচাকেনা।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকরা এখান থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন। বছরে কোটি টাকার ব্যবসা হতো এখান থেকে। এলাকাটি ধীরে ধীরে জনবহুল হয়ে ওঠায়, কাঁচা চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রশাসনের চাপে ২০১৯ সালে শেখপাড়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এরপর থেকেই চামড়া সংরক্ষণ ও বেচাকেনার নির্ধারিত স্থান নেই খুলনাতে। কোথাও সড়কের পাশে উন্মুক্ত স্থানে, নগর সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় অস্থায়ীভাবে চামড়া জড়ো করেন তারা। কোরবানির সময় বিপুল সংখ্যক চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনেক চামড়াই নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।
 
খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘোষ বলেন, সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় প্রতিদিন কসাইখানা থেকেই চামড়া বিক্রি করে দেয়া হয়। কিছু কসাই মাংসের দোকানে স্বল্প পরিসরে চামড়া সংরক্ষণ করেন। সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
 
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে বিক্রয় উপযোগী করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। আমাদের নির্ধারিত স্থান না থাকায় সড়কের উপর রেখে চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়। দুই তিন দিন পরেই পুলিশ আমাদের উঠিয়ে দেয়। এতে চামড়া নষ্ট হয়। বিক্রি করতে পারি না।’

যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা ও স্বল্প মজুরিতে কর্মী নিয়োগ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। দেশটির শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪১ লাখ, যা একটি নতুন রেকর্ড। খবর দ্য গার্ডিয়ান। 

দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিইউসি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১১-২৩ সালের মধ্যে অনিশ্চিত কর্মপরিবেশে জনবলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ। অনিশ্চিত কর্মপরিবেশের মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম কর্মঘণ্টার অনুল্লেখ, স্বল্প মজুরিতে আত্মকর্মসংস্থান ও নৈমিত্তিক বা মৌসুমি কাজ। এর মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যা কর্মীদের জন্য শারীরিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া শ্রম অধিকারের নিয়মগুলো এসব ক্ষেত্রে মানা হয় না।

২০১১-২৩ সালের মধ্যে বিধিসম্মত কাজের তুলনায় অনিশ্চিত কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ দ্রুত বেড়েছে। আগের এক পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের প্রতি আটজন কর্মীর মধ্যে একজন এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। ২০১১ সালের পর থেকে চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া কর্মসংস্থান বাড়ার পেছনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে স্বল্প মজুরি দেয় এমন খাতগুলো।

টিইউসি বলছে, অনিশ্চিত ও স্বল্প মজুরির কাজ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের অধিকার ও মজুরির বিষয়গুলো এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সবার আগে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সংস্থাটির জেনারেল সেক্রেটারি পল নোভাক বলেন, ‘আমাদের এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যারা কাজের মূল্যায়ন করবে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে আমরা অনিরাপদ ও স্বল্প মজুরির কর্মসংস্থানের বিস্ফোরণ দেখছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌শ্রমিক অধিকারের অপর্যাপ্ততা ও স্বল্প মজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যা দেশের প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শ্রমিকদের বর্তমান প্রকৃত মজুরি ২০০৮ সালের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া সারা দেশে মানুষ এমন সব চাকরিতে আটকা পড়েছে, যেখানে কোনো সুরক্ষা নেই, এমনকি বেতনও কম।’

পেশাদারদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে ইনস্টিটিউশন অব অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ। সংস্থাটির নীতিনির্ধারণ বিভাগের প্রধান রুথ উইলকিনসন বলেন, ‘অস্থায়ী কাজগুলো মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌বিষয়টি খুবই শোচনীয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। চুক্তিভিত্তিক কিংবা স্থায়ী সব শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রতিটি কোম্পানির একটি মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে।’

এদিকে টিইউসির পল নোভাক বলেন, ‘‌বিরোধী দলের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। তারা ঘণ্টা চুক্তি ও ছাঁটাই-পুনর্নিয়োগ কৌশলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, অসুস্থতাকালীন বেতন এবং অন্যায্য বরখাস্ত থেকে সুরক্ষার মৌলিক অধিকার প্রবর্তন করার কথা জানিয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো কোনো কর্মীর চাকরিতে যোগদানের প্রথম দিন থেকেই যেন তার অধিকার সমুন্নত থাকে।

টিইউসি যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ফেডারেশন, যা সম্মিলিতভাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বেশির ভাগ ইউনিয়নবদ্ধ শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটিতে প্রায় ৫৫ লাখ সদস্য ও ৪৮টি অনুমোদিত ইউনিয়ন রয়েছে।

ভিত্তিপ্রস্তর বা ফলক স্থাপনের পর সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা, যা জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নে অবস্থিত। জায়গাটি আবার ত্রিশাল উপজেলার সীমান্তেও পড়েছে। এর ফলে দুই উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
 

এ নিয়ে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এটি বাস্তবায়ন না হওয়াটা আমাদের দুর্ভাগ্য। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের জন্য চেম্বারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি হচ্ছে না। এটি বাস্তবায়ন হলে শিল্পায়নের পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো।’

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ।

দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালের এপ্রিলে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন করে ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে সরকারিভাবে পাঁচটি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাকি চারটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। এই ৯টিরই একটি ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেটি সরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে ময়মনিসংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিফলকও উদ্বোধন করেছিলেন।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। জায়গাটি মাটি ভরাট করে রাখা আছে। নতুন কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় ভূমি অফিসের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ মে ৪৮৭ দশমিক ৭৭ একর জমি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৪ দশমিক ৮৪ একর বন্দোবস্ত ও ৩২ দশমিক ৯৩ একর অধিগ্রহণ করার কথা। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার অনুকূলে সেই জমি বন্দোবস্ত দিতে ও প্রয়োজনী কিছু তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়। একই মাসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির স্থান পরিদর্শন করে। তারা কিছু জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ৪৯২ দশমিক ৩৬ একর জমি নিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-২ থেকে ২০২০ সালের ১ মার্চ পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চররামমোহন মৌজায় ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন দাগের ৪২৩ দশমিক ৬১ একর খাস জমি ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও প্রস্তাবিত জমি নিয়ে মামলা চলছে। তাই বন্দোবস্ত দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই।

পরে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে মামলার কারণে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ২০০ একর জমি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ৫ জুন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিকল্প হিসেবে নিষ্কণ্ঠক ২০০ একর জমির প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। তারপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্বাচিত স্থানে ব্র‏হ্মপুত্র নদ খনন করে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। এর বাইরে দৃশ্যমান আর কোনো অগ্রগতি নেই।

উচাখিলা মরিচারচর গ্রামের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয় অনেকের জীবিকার ব্যবস্থা হবে, এমন আশাই করেছিলাম আমরা। কিন্তু কাজ আগায়নি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হবে কি হবে না, তা বলতে পারছি না। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়িত হলে ব্রহ্মপুত্র নদের পারের মানুষের জীবন পাল্টে যেত।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাইল হোসাইন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ২০০ একর জমির বন্দোবস্তের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী অধিগ্রহণ করতে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। এটি হয়তো এখনো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেও ভূমিসংক্রান্ত জটিলতায় সেটি বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। এ অঞ্চলে কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়িত হলে এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে, মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। দ্রুত যেন এটি বাস্তবায়ন হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।