অর্থ - বানিজ্য

মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়ার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানির খেতাব হারানোর দুই দিন পরই তা পুনরুদ্ধার করেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য সাড়ে তিন শতাংশ কমে যাওয়ার পরপরই তালিকার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়ে এই চিপ নির্মাতা। এর ফলে কোম্পানিটির বাজারমূল্য কমে এসেছে তিন লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারে। একই দিনে মাইক্রোসফটের শেয়ারে কিছুটা দরপতন দেখা গেলেও তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য নিয়ে দিন শেষ করে কোম্পানিটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হওয়ার ‘মিউজিক্যাল চেয়ারে’ এখন লড়াই করছে এনভিডিয়া, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল। এমনকি তারা বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে চার ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছার লক্ষ্যও নিয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় শেয়ারবাজারে বড় উত্থান দেখেছে এনভিডিয়া, যেখানে বেশিরভাগ কৃতিত্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পণ্য বিকাশে কোম্পানির প্রাথমিক বিনিয়োগের।

মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে মাইক্রোসফটকে সরিয়ে শীর্ষে চলে যায় এনভিডিয়া, যেখানে ২০২২ সালের পর থেকে নিজেদের শেয়ারমূল্য ১০ গুণ বেড়েছে কোম্পানিটির। ফলে সেদিন কোম্পানির বাজারমূল্য তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

কেউ কেউ ধারণা প্রকাশ করেছেন, এরপর থেকে কোম্পানিটি ওপরের দিকেই যেতে থাকবে। তবে আরেক অংশ প্রশ্ন তুলেছে, এতে কোম্পানিটিকে সম্ভবত অতিমূল্যায়িত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এনভিডিয়া এআই খাতে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে পারে কিনা, বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য তাদের শেয়ারে প্রভাব পড়বে কিনা। কারণ এ খাতের লাগাম নিজেদের হাতে নিতে এরই মধ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করছে কোম্পানিগুলো।

মার্কিন বিনিয়োগকারী ব্যাংক ডিএ ডেভিডসনের বিশ্লেষক জিল লুরিয়ার মতে, এ বিষয়ে এনভিডিয়ার সতর্কতা এসেছে দীর্ঘমেয়াদি এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এ ধরনের পারফরম্যান্স বজায় রাখা খুবই জটিল বিষয়।

বাংলাদেশকে ৯০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার ৫৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।জলবায়ু সহিষ্ণু ও টেকসই প্রবৃদ্ধি, শহরাঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্থিক পরিস্থিতি এবং আর্থিক খাতে নীতিমালা জোরাল করতে এ ঋণ দেওয়া হয়েছে। 

শনিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল (শুক্রবার) এই ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড। 

বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্য সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, নতুন এই অর্থায়ন বাংলাদেশকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। একটি হচ্ছে, আর্থিক খাত ও নগর ব্যবস্থাপনা এবং অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, দুই কিস্তি ঋণের শেষ কিস্তি হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সংস্কারের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের গতি বাড়াবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনসহ ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করবে। এ ছাড়া অন্য একটি প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট এবং এই প্রোগ্রামের টাস্ক টিম লিডার বার্নার্ড হ্যাভেন এক বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ সরকার বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংস্কার এবং আর্থিক খাত শক্তিশালী করার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামো গ্রহণ করেছে, যা ব্যাংক পুনরুদ্ধার কাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। কম মূলধনী ব্যাংকগুলো সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি দ্রুত সংশোধনমূলক কর্মকাঠামো বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করবে। এটি অর্থনৈতিক মন্দা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিও শক্তিশালী করবে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত কমছে ৫৯৭ কোটি টাকা। আগের বছরে আমানত তুলে নেওয়ার অঙ্ক ছিল সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য প্রকাশ হলে প্রশ্ন উঠেছে এ অর্থের নতুন গন্তব্য কোথায়। কোন কারণে তুলে নেওয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের আমানত, সুইস ব্যাংকের আকর্ষণই বা কমছে কেন। তবে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির কারণে পাচারের অর্থ এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছুটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘কেওয়াইসি হাব’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারের অর্থ এসব দেশে প্রবেশ করছে। তবে এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ঝুঁকি বেড়েছে এমন দশটি দেশ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-হাইতি, চাদ, মিয়ানমার, দ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং রিপাবলিক অব কঙ্গো, মোজাম্বিক, গাবন, লাওস, ভেনিজুয়েলা ও গিনি বিসাউ।

অর্থনীতিবিদ ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে বিকল্প গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে পাচারের অর্থ। যেখানে শুধু ব্যাংকে টাকা রাখাই নয়, সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট প্রাপ্তি, সম্পদের (বাড়ি-ঘর) মালিকানা অর্জন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া হয়। স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা এখন টাকা শুধু ব্যাংকে ফেলে রাখছে না। এসব অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুলছে বিনিয়োগের সাম্রাজ্য। সংশ্লিষ্টদের মতে, সুইস ব্যাংকে তিন শ্রেণির লোক আমানত রাখেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী যারা নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করেন।

সুইস ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের আমানতকারীদের টাকার অঙ্ক ৫৬ কোটি ২৯ লাখ থেকে লাফ দিয়ে ২০২১ সালে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায়। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শীর্ষ আমানতকারী দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে অস্বাভাবিক গতিতে কমে আমানত দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁতে। আর ২০২৩ সালে নেমে আসে ১ কোটি ৭৭ লাখে।

ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ পাচারকারীদের কাছে কয়েকটি কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। প্রথম আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পৃথিবীর দেশ ভিত্তিক আমানতের হিসাব প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সুইস ব্যাংককে প্রাধান্য দিচ্ছে না। দ্বিতীয় হচ্ছে সুইস ব্যাংকের প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে পাচারের অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রে। ফলে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলা ও সম্পদের (ঘরবাড়ি) মালিকানা অর্জনের সুবিধা আছে সেখানে চলে যাচ্ছে। এ ধরনের অনেক কোম্পানি দুবাই ও নিউইয়র্কে সন্ধান মিলবে। অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না, অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারের অর্থ সরিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে উঠছে। এসব কারণে আকর্ষণ কমছে সুইস ব্যাংকের।

জানতে চাইলে অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, সুইস ব্যাংকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাখা আছে। ফলে যে কোনো দেশে সুইস ব্যাংকের শাখায় বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করলে সেটি কেন্দ্রীয় ভাবে সুইস ব্যাংকের হিসাবে গণনায় আসে। কোনো বাংলাদেশি সুইস ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেটি তাদের এসেটে দেখাবে। রপ্তানি সময় হিসাব নিষ্পত্তি না হলে সেগুলো সুইস ব্যাংকের নষ্ট অ্যাকাউন্টে দেখানো হয়। তবে সুইস ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো তথ্য দেয় না। এখন আমানত কমে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মতে, পাচারকৃত অর্থ সেখান থেকে বের করে নেওয়া হলেও সেটি বোঝার উপায় থাকবে না। কারণ অন্য দেশগুলোতে নেওয়া হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বিশেষ করে একজন ব্যক্তি আমেরিকায় একটি ব্যবসা করে বছরে এক লাখ ডলার মুনাফা করেন। কিন্তু আয়কর দেওয়ার সময় মুনাফা দেখানো হলো ২০ লাখ ডলার। বাকি ১৯ লাখ ডলার সে দেশে প্রবশে করলেও ধরার উপায় থাকছে না।

এদিকে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং শুধু বাংলাদেশ নয় এটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটি বিশ্বব্যাপী হুমকি হয়ে উঠছে। জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয় (ইউএনওডিসি) অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বে পাচার হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪৭২ কোটি ডলার। এটি প্রতিবছর বৈশ্বিক জিডিপির ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের সমান। যে কারণে মানি লন্ডারিং বিরোধী কার্যক্রম আরও চাপের মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ডিজিটালাইশেনের কারণেও বেড়েছে অর্থ পাচারের ঘটনা। কেওইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ২০২৪ সালের মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং বিস্তার অর্থায়নের জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে অবৈধ আর্থিক হুমকি, দুর্বলতা এবং ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হয়। সেখানে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে ১৪ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় অর্থ পাচারের দেশ যুক্তরাজ্য। মাদক পাচারের মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনায় শীর্ষ রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কানাডায়ও বেড়েছে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে বেশি আসছে পাচারকৃত অর্থ। একই ভাবে জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশেও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েই চলছে। গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) তুলনায় চলতি বছরে (২০২৩-২৪) পাচারের ঘটনা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত ব্যাংক লেনদেন, হুন্ডি ও মোবাইল ব্যাংক এবং গেমিং বেটিংয়ের মাধ্যমেই এসব ঘটনা ঘটছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহে প্রায় সাড়ে ৫শ ব্যাংক হিসাব শনাক্ত করা হয়। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনার জন্য যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিআইএফইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বিনিময় করা হয়। এর আগের অর্থবছরে ২৮৫টি ঘটনার তথ্য বিনিময় হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আরও প্রায় ১১ হাজার লেনদেনকে সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যক্তিগত ২৭ হাজার ৬৮০ মোবাইল ব্যাংক (এমএফএস) স্থগিত এবং ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে।

সূত্রমতে, পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৫টি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, আমরা আইনি প্রক্রিয়া মেনে সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছি। একইভাবে আমাদের কাছেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। এরই মধ্যে পাচারকৃত অর্থের তথ্য চেয়ে ১৫টি দেশ বাংলাদেশকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে। আর অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের তথ্যাদি চেয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ থেকে অনুরোধপত্র এসেছে।

অনেক দেশেই অর্থ পাচার করা হচ্ছে

অধ্যাপক মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, নানা কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। এখন ঝামেলা ছাড়া নিরাপদে বিশ্বের অনেক দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা যায়। অর্থ পাচার আগের তুলনায় আরও সহজ হয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পাচারকারীরা আগের তুলনায় আরও বেশি সুবিধা নিতে পারছে। ফলে পাচারকারীরা এখন সুইস ব্যাংকের বিকল্প হিসাবে ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সুইস ব্যাংক আগের মতো কঠোর নিয়মে চলছে না। তারা এখন বিভিন্ন দেশকে তথ্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা এক সময় পাচারকৃত অর্থ গোপনে রাখার জন্য সুইস ব্যাংককে নিরাপদ মনে করছে তারা এখন সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সুইস ব্যাংকে আগের মতো আমানত বাড়ছে না।

তথ্য গোপন না থাকায় আকর্ষণ কমছে

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন জানান, তিন শ্রেণির লোক সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। প্রথম হচ্ছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থও সেখানে রাখা হয়। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা বাণিজ্য করছে তারাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। এরা রাখে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। আর তৃতীয় হচ্ছে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী। যারা নিজেদের গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করে। তবে সম্প্রতি সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সে ধরনের গোপনীয়তা রাখছে না। কোনো দেশের সরকার চাইলে তথ্য দিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকটি। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সেখানে রাখছে না।

তিনি আরও বলেন, পাচারকারীরা বিদেশে দুভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনা করে। এক শ্রেণি দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলে। দুবাই ও নিউইয়র্কে এ ধরনের অনেক কোম্পানির সন্ধান মিলবে। ওইসব পাচারকারী ব্যাংকে বেশি টাকা রাখে না। দ্বিতীয় হচ্ছে ব্যাংকে টাকা না রেখে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাড়িঘর ও স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করছে। এসব কারণে সুইস ব্যাংকে কোনো গুরুত্ব নেই। এছাড়া দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সুইস ব্যাংকে সরকারের ডিপোজিটও কমে আসছে। আগে পাচারকৃত অর্থ ব্যাংকে রেখে চলে আসত। এখন পাচারকৃত অর্থ ব্যবহারের বিকল্প অনেক উৎস তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা কমছে।

অর্থ গোপনের সুবিধা আছে নানা দেশে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতে, আগের তুলনায় সুইস ব্যাংক বেশি নিয়মকানুন মানার চেষ্টাসহ তথ্য প্রকাশ করছে। নানা কারণে এ ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়টি নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে এখন সুইস ব্যাংকের মতো অর্থ রাখার সুবিধা আছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থকে স্বাগত জানার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, ওইসব দেশে পাচারকৃত অর্থ দ্বারা সম্পদের মালিকানা অর্জন করা যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর। আরও আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে আরব আমিরাত। অর্থাৎ আগে সুইস ব্যাংকের একটি মনোপলি ব্যবসা ছিল সেটি ভেঙে গেছে। কারণ বিকল্প হিসাবে অন্য দেশগুলো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। ওইসব দেশের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশের অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে মনে করি। সুইস ব্যাংকে আমানত কমেছে এর মানে দেশ থেকে অর্থ পাচার কমেছে সেটি বলা যাবে না। বরং দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না। আবার নতুন দেশ যুক্ত হয়েছে যেমন গ্রিস ও পর্তুগাল-এ ধরনের দেশগুলো আছে এই তালিকায় কিন্তু তাদের নাম আসছে না। যেসব দেশে অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। যে কারণে আকর্ষণ সুইস ব্যাংকের। সুইস ব্যাংক এখন তথ্য প্রকাশ করছে, আগের মতো কড়াকড়ি নেই। এছাড়া প্রতিযোগিতায় থাকা কাছাকাছি দেশগুলো যেমন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে যেখানে যাওয়া আসা ও সম্পদ অর্জন এখন সহজ। এসব দেশ সুযোগগুলো করে দিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা সুযোগগুলো নিচ্ছে। এছাড়া ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় শুধু অর্থ পাচার নয়, বাড়িঘরে মালিকানা নিচ্ছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি কাঠামো আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় হয়েছে। সরকারের সদ্দিচ্ছা থাকলে পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত, ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা অবশ্য সম্ভব।

চিঠি দিলেই সুইস ব্যাংক বা অন্য কোনো দেশ পাচারের তথ্য দেবে এটি ঠিক নয়। এটি ফাঁকা আওয়াজের মতো। কি প্রক্রিয়ায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে, আইন অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা এসব বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে খোলাসা করে বলা হয় না।

দীর্ঘ সময় ধরে সংকটের কারণে ডলারের বিপরীতে বাস্তবে বা বাজারে টাকার মান কমে যাচ্ছে। আগামীতে আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কাগজে-কলমে বা প্রকৃত বিনিময় হারের হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েই চলেছে। 

গত সোয়া দুই বছরে ডলারের বিপরীতে বাস্তবে টাকার মান কমেছে ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ। অথচ ওই সময়ে প্রকৃত বিনিময় হারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেনি। বরং বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। যদিও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। একই সঙ্গে প্রকৃত ও সাধারণ বিনিময় হারের মধ্যেকার ব্যবধানও অনেক বেশি বেড়ে গেছে।

ডলারের দামে এই ধরনের আচরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষকদের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরাও রীতিমতো অবাক। তাদের মতে, এমনটি হওয়ার কথা নয়। তারা এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য নিবিড়ভাবে গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে প্রকৃত বিনিময় হার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে কেন এমন মিসম্যাচ বা সমস্যা হলো? তা খতিয়ে দেখা উচিত। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকগুলোতে কোনো সমস্যা হওয়ায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ফেব্র“য়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে ডলারের সংকট দেখা দেয়। এরপর থেকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। 

দেশে ডলারের দাম দুইভাবে নির্ধারিত হয়। একটি হচ্ছে সাধারণ বা নমিনাল দর। এটি বাজারে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করে। এই দরেই বাজারে ডলার বেচাকেনা হয়।

অপরটি হচ্ছে রিয়েল এক্সচেঞ্জ রেট বা প্রকৃত বিনিময় হার। এটি বাংলাদেশের যেসব দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক সম্পর্কে বেশি ওইসব দেশের মুদ্রাগুলো নিয়ে একটি বাস্কেট বা ঝুড়ি তৈরি করা হয়। এসব দেশের মুদ্রার বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতির হার, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বিশ্লেষণ করে প্রকৃত বিনিময় হার তৈরি করা হয়। তবে প্রকৃত বিনিময় হারটি বাজারে প্রয়োগ করা হয় না। এটি প্রতিযোগী বা বাংলাদেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে এমন দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান জানার জন্য তৈরি করা হয়। বর্তমানে ১৫টি দেশের মুদ্রা নিয়ে একটি বাস্কেট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ। 

সাধারণত ডলারের প্রকৃত বিনিময় হারের চেয়ে বাজার দর ৬ থেকে ১০ টাকা বেশি থাকে। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে ডলারের দাম প্রকৃত বিনিময় হারের চেয়ে বাজার দর একটু বেশি রাখা হয়। এর মাধ্যমে রপ্তানিকারক ও রেমিটরদের কারেন্সি বেনিফিট বা মদ্র্রা বিনিময় হারের সুবিধা দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, করোনার বেশ আগে থেকে এ সমস্যাটি হয়েছে। অর্থনীতির কোনো সূচকে গোলমাল হয়েছে হয়তো, যে কারণে বিনিময় হারে এমন বৈপরীত্য পাওয়া গেছে। তবে এখন দুই হারের মধ্যকার ব্যবধান বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে। এত বাড়াটা ঠিক হচ্ছে না। এখন ডলার সংকটের কারণেও এমনটি হতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাজারে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮ টাকায়। তবে এই দামে ব্যাংকে ডলার পাওয়া যায় না। আমদানিতে ১২৫ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। আগাম কিনলে প্রতি ডলার লাগছে ১৩০ টাকা। আমদানির বেশিরভাগ ডলারই এখন আগাম কেনা হচ্ছে। ফলে ওই সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে গড়ে ৩২ টাকা থেকে ৪৪ টাকা। এ হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশ। 

একই সময়ের ব্যবধানে প্রকৃত বিনিময় হারের হিসাবেও ডলারের দাম বাড়ার ও টাকার মান কমার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। হয়েছে উলটোটি। ওই সময়ে ডলারের দাম কমেছে, বেড়েছে টাকার মান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকৃত বিনিময় হারে ডলারের দাম ছিল ১১৪ টাকা ৬৪ পয়সা। মে মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা ০৮ পয়সা। আলোচ্য সময়ে ডলারের দাম কমেছে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।

ডলারের প্রকৃত ও সাধারণ বিনিময় হারের মধ্যকার বৈপরীত্য শুরু হয় করোনার আগে থেকে। ওই সময়ে বাজার দরের চেয়ে প্রকৃত বিনিময় হারের দর বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারিতে বাজার দর যেখানে ৮৬ টাকা ছিল, সেখানে প্রকৃত বিনিময় হার ছিল ১১৪ টাকা ৬৪ পয়সা। বাজার দরের চেয়ে প্রকৃত বিনিময় হার বেশি ছিল ২৮ টাকা ৬৪ পয়সা। এটিকে একেবারেই অস্বাভাবিক মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষকরা। বাজার দরের চেয়ে প্রকৃত বিনিময় হারের দর কম হওয়া উচিত ছিল। একই বছরের মার্চে প্রকৃত বিনিময় হার আরও বেড়ে ১১৫ টাকা ৪৯ পয়সা ওঠে। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষকরা বিনিময় হারের এই বৈপরীত্য নিয়ে কাজ করে অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে কিছু বৈষম্য দেখতে পান। পরে এগুলো পর্যায়ক্রমে ঠিক করা হয়। এর পর থেকে প্রকৃত বিনিময় হারের দাম কমতে থাকে এবং বাজারে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। 

এর আগে প্রতি বছরই বাজার দরে টাকার মান কিছুটা কমলেও ২০২০ সালে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা বেড়েছে। কারণ ওই বছরে আমদানি কম ছিল, ডলারের প্রবাহ বেশি ছিল। যে কারণে টাকার মান সামান্য বেড়েছিল।

২০২২ সালের মার্চ থেকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ওই মাসে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা, ২০২৩ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ৮০ পয়সায়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। ডিসেম্বরে আবার ১১০ টাকায় নামে। এরপর থেকে ৮ মে পর্যন্ত ১১০ টাকায় স্থির ছিল। ৯ মে থেকে ডলারের দাম আবার বেড়ে ১১৮ টাকায় ওঠে।

একই সঙ্গে প্রকৃত বিনিময় হারে ডলারের দাম কমতে থাকে। ২০২৩ সালের মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ১০২ টাকা ৬৫ পয়সা। সেপ্টেম্বরে আবার সামান্য বেড়ে ১০৬ টাকা ৫৭ পয়সায় ওঠে। ডিসেম্বরে আবার ১০২ টাকা ৪২ পয়সায় নেমে যায়। এ বছরের শুরু থেকে আবার এর দাম বাড়তে থাকে। মে পর্যন্ত ধীরে ধীরে বেড়ে ১০৭ টাকা ০৮ পয়সা দাঁড়িয়েছে।

২০২৩ সালের মার্চ থেকে বিনিময় হারে বৈপরীত্য দূর হতে থাকে, এখন অনেকটা স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। মে মাসে বাজারে ডলারের দাম ১১৮ থেকে ১৩০ টাকা। প্রকৃত বিনিময় হারে দাম ১০৭ টাকা ০৮ পয়সা। এ হিসাবে দুই ধরের মধ্যকার ব্যবধান হচ্ছে ১১ থেকে ২৩ টাকা। ব্যবধান এত বেশি হওয়াটাও যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ টাকা বেশি অবমূল্যায়িত হলে আমদানি ব্যয়সহ বৈদেশিক দায় বেড়ে যাবে।

সারা বিশ্বে ২০২৩ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পৌনে ২ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশের কমেছে পৌনে ১৪ শতাংশ। ফলে টানা তিন বছর বৃদ্ধির পর দেশে এফডিআই আসা কমল। গত বছর বাংলাদেশে ৩০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা দেশি মুদ্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে)। ২০২২ সালে এফডিআই এসেছিল ৩৪৮ কোটি ডলারের।

নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি এফডিআই স্টক বা মোট বিনিয়োগের স্থিতিও কমে গেছে। গত বছর বিনিয়োগের স্থিতি কমে ২ হাজার ৫৪ কোটি ডলারে নেমেছে, যা ২০২২ সালে ছিল ২ হাজার ৭৫ কোটি ডলারে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে এফডিআই প্রাপ্তিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সামগ্রিকভাবে গত বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় এফডিআই প্রবাহ ১৭ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উল্টো কমেছে। ৪৫টি এলডিসির পাওয়া মোট এফডিআইয়ের ৫০ শতাংশই পেয়েছে পাঁচটি দেশ। এর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ, গত বছরও তা–ই ছিল। শীর্ষ দুই দেশ হচ্ছে ইথিওপিয়া ও কম্বোডিয়া। আর চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে সেনেগাল ও মোজাম্বিক।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের চলতি বছরের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে আঙ্কটাড।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৩৬১ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে। ২০২০ সালে মহামারির সময় এফডিআই ২৫৮ কোটি ডলারে নামে। ২০২১ সালে আবার বাড়ে, যা পরের বছরও বজায় থাকে। ২০২১ সালে দেশে এফডিআই এসেছিল ২৮৯ কোটি ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ যেমন কমেছে, তেমনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের দেশের বাইরে বিনিয়োগও গত বছর কমেছে। গত বছর বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে তিন কোটি ডলারের বিনিয়োগ বিদেশে গেছে। তার আগের বছর বিদেশে বিনিয়োগ হয়েছিল ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে সামগ্রিকভাবে এফডিআই প্রবাহ পৌনে ২ শতাংশ কমে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির শ্লথগতি ও ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির কারণে এফডিআই প্রবাহ কমেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সংস্থাটির মতে, উন্নত দেশগুলোতে গত বছর এফডিআই প্রবাহ ৯ শতাংশ বেড়েছে। ৪৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে উন্নত দেশগুলো। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এফডিআই কমেছে ৭ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলো সম্মিলিতভাবে গত বছর ৮৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে।

আঙ্কটাড বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গত বছরের তুলনায় গ্রিনফিল্ড বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এসব দেশে ৮ হাজার প্রকল্পে ৭৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগের ঘোষণা রয়েছে। যদিও উন্নত দেশে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা কিছুটা কমেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় গত বছর সার্বিকভাবে এফডিআই কমেছে ৩৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ভারত ২ হাজার ৮১৬ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম। পাকিস্তানে এফডিআই গেছে ১৮২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কায়ও এফডিআই কমেছে। তবে নেপাল ও মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। প্রথমত, নতুন বিনিয়োগ কমেছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ স্থিতিও কমেছে। বহু বছর ধরে আমরা সেভাবে নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারছি না। বিদেশি যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে হারাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য একটা বার্তা।’

মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হয়েছে খুবই সামান্য। আইনকানুনের প্রয়োগ খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চায়। নতুন দেশে বিনিয়োগের সুরক্ষা দেখে। এসব জায়গায় আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে একটা নীতিকৌশল ও তার বাস্তবায়ন দরকার। কিন্তু তা নেই। সব মিলিয়েই আমরা পিছিয়ে আছি।’

গাড়িগুলো তৈরি হয়েছে চীনে। তবে বিক্রি বাড়াতে সেগুলো নিজেদের দেশে তৈরি বলে ব্র্যান্ডিং করে ইতালির একটি গাড়ি কোম্পানি। এমন অভিযোগে ওই কোম্পানিকে ৬৪ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে ইতালির সরকার। খবর বিবিসির।

দক্ষিণ ইতালিভিত্তিক ডিআর অটোমোবাইলসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে ইতালির প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা বলছে, এই কোম্পানির ডিআর ও ইভিও ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোকে ইতালিতে উৎপাদিত বলে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই চীনে তৈরি হয়েছিল।

চীনা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেরি, বিএআইসি ও জেএসির উত্পাদিত যন্ত্রাংশ দিয়ে এসব কম দামের গাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ইতালিতে শুধু ছোটখাটো সংযোজন ও ফিনিশিংয়ের কাজ করা হয়েছে, এমনটাই বলেছে প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এদিকে ডিআর অটোমোবাইলস জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়িগুলো সম্পূর্ণ ইতালিতে তৈরি, এমন দাবি তারা কখনোই করেনি। অবশ্য জরিমানার প্রক্রিয়াটি এমন সময় হয়েছে, যখন ইতালির বাজারে ডিআর ও ইভিও গাড়ির বিক্রি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

গত মাসে মরক্কোর তৈরি কয়েক ডজন ফিয়াট টোপোলিনো মডেলের গাড়ি ইতালির বন্দর লিভোর্নোতে আটক করা হয়েছিল। তার কারণ, গাড়িগুলোতে ইতালির পতাকা আঁকা ছিল। ফিয়াটের মূল কোম্পানি স্টেলান্টিস বলেছে, তারা নিয়ম অনুসরণ করেই কাজটি করেছে। তারপরও সেই ঘটনার পর গাড়ি থেকে পতাকা সরিয়ে দিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশন গত সপ্তাহে বলেছে, চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে, যদি গাড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়। গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপীয় কমিশন চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তাদের অভিযোগ, চীনের এসব কোম্পানিতে সরকার ভর্তুকি দেয়, সে কারণে এসব গাড়ির বাজারদর কম।

এদিকে গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র চীনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০০ শতাংশ করার পদক্ষেপ নেয়। তারপরই ইইউ এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নেয়।

চীন সরকার ইতিমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার এই পদক্ষেপ সুরক্ষাবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। গত মাসে চীন সরকার ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

নতুন বাজেটের এক কর প্রস্তাবের কারণে এবার রেস্তোরাঁমালিকদের মাথায় হাত পড়তে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলির ছোট-বড় সব রেস্তোরাঁমালিকদের এখন থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। আবার সেই টিআইএনের বিপরীতে বছর শেষে আয়-ব্যয়ের যাবতীয় তথ্য জানিয়ে কর বিভাগে রিটার্ন জমা দিতে হবে। রিটার্ন জমা না দিলে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে পারবেন না এই ব্যবসায়ীরা।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে তাঁদের ব্যবসার লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না, নতুন বাজেটে এমন ঘোষণা এসেছে। এর মানে হলো, রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের রিটার্ন জমার অনুলিপি লাগবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রেস্তোরাঁমালিকদের লাইসেন্স নেওয়া বা নবায়ন করতে হয়।

কোন ধরনের রেস্তোরাঁমালিকদের জন্য এই বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে যেহেতু রেস্তোরাঁর লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করতে মালিকদের রিটার্ন জমা দিতে হবে, সে কারণে তাঁরা করের আওতায় আসবেন।

আয়কর আইনে রেস্তোরাঁর বিশেষ কোনো সংজ্ঞা উল্লেখ করা নেই। তবে ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞা আছে। বলা হয়েছে, অস্থায়ী রেস্তোরাঁ ছাড়া সব ধরনের রেস্তোরাঁয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বসবে।

অস্থায়ী রেস্তোরাঁ বলতে বোঝায়, বেষ্টনী ও বৈদ্যুতিক পাখা নেই, তবে শুধু দুটি বাতি আছে—এ ধরনের সুবিধাসংবলিত রেস্তোরাঁ। এমন রেস্তোরাঁর খাবারের বিলের ওপর কোনো ভ্যাট নেই। ভ্যাট আইনে রেস্তোরাঁর সংজ্ঞায় এসব কথা বলা হয়েছে। ফুটপাতে বসানো ‘ভাতের দোকানে’ সাধারণত বেষ্টনী ও পাখা থাকে না। এসব দোকানে খাওয়াদাওয়া করলে ভ্যাট দিতে হবে না। অর্থাৎ এমন ধরনের রেস্তোরাঁ ছাড়া বাকি সব ধরনের রেস্তোরাঁয় বিক্রির ওপর ভ্যাট দিতে হয়।

দেশ থেকে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৮১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। টাকা পচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু। জরুরী ভিত্তিতে টাকা পাচার রোধ দরকার।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি: প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বাড়ছে। এর রাশ টানতে হবেই। ব্যাংক কমিশন করলে ভালো, না হলে অন্তত শক্তিশালী একটা কমিটি করা উচিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে।’
 
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এডিপি ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা হওয়ার কথা, তবে হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ধনীদের করহার বাড়ানো, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের মতো প্রস্তাব সাহসী পদক্ষেপ।’
ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিছু পণ্যের দাম কমছে। বাজেটের পর দাম বাড়েনি। মে পর্যন্ত ১১ মাসে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন বেড়েছে।’
 
এবারের বাজেটে সরকার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেটের আকার কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবারের বাজেট হওয়ার কথা ছিল ৯ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এবার বাজেট সংকুচিত করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট সংকুচিত করা হয়েছে। টাকার সরবরাহ কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে।’
 
বাজেটে কৃপণতা দেখানো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া ঘাটতিও কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে। সে জন্য বলছি, এটি একটি সাহসী বাজেট। বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
 
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রমুখ।

গত বছরের চেয়ে লবণযুক্ত ছাগলের চামড়ার দাম সরকার এবার দুই টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কয়েক বছর আগেও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। একটি ছাগলের যদি ৫ থেকে ৬ বর্গফুট চামড়া হয়, লবণ দেয়ার পর দাম পাওয়ার কথা ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। অথচ এবার ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়।

চামড়া বিক্রি করতে আসা একজন বিক্রেতা বলেন, ‘দুইটা চামড়া বিক্রি করতে আসছি। দুইটা বিক্রি করছি মাত্র ২০ টাকায়। যা দিয়ে আমাদের রিকশা ভাড়ায় হয়নি।’  

আরেকজন বিক্রেতা বলেন, ‘চামড়ার সরকারি যে দাম দিয়ে দিছে সেই দামেও তারা কিনতেছে না। তাদের মনগড়া মতো তারা কিনতেছে।’

এক আড়তদার বলেন, ‘আড়াইশো টাকার মাল এখন ৫–১০ টাকায় কিনি। লবণ ও অন্যান্য বিষয় দিয়ে আমাদের পড়ে যায় ৩৫ টাকা। বিক্রি করতে পাড়ি ৪৫ টাকায়।’

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, বিশ্ববাজারে ছাগলের চামড়ার চাহিদা কম এবং রাসায়নিক ও লবণের দামও বাড়তি। এছাড়া কৃত্রিম চামড়ার কারণে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমেছে পশুর চামড়ার। 
   
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘২৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ ছিল। কিন্তু এই বাজারটা চলে গেছে। চামড়ার বিকল্প বেড় করে ফেলেছে চাইনিজ অনেক কোম্পানি। ফলে ছাগলের চামড়ার যে চাহিদা ছিল তা আর নেই।’

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাসির চামড়া থেকে দামি পণ্য আসলে সেভাবে উৎপাদন করা যায় না। হয়তো ওয়ালেট বা মোবাইল রাখার ব্যাগ উৎপাদন ছাড়া তেমন কিছু উৎপাদন করা যায় না। এছাড়াও খাসির চামড়ার প্রসেসিং খরচটা একটু বেশি।'

এদিকে, রাজধানীর পোস্তায় ঈদের দ্বিতীয় দিন প্রতিটি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর বড় চামড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। পোস্তায় লবণ দিয়ে সংরক্ষিত এসব কাঁচা চামড়া পরে চলে যাবে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে।

পশু বেচাকেনায় ভর করে এবারের কোরবানি ঈদের অর্থনীতির আকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। দোকান মালিক সমিতি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক ও সাজসজ্জার পণ্য বিক্রি কমলেও, পশুর হাট ছিলো চাঙ্গা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোরবানি কেন্দ্রিক পশুপালনে সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। 

দেশের কয়েক লাখ প্রান্তিক কৃষক পশুপালন করেন। গরু-ছাগল পালনে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক বাণিজ্যিক খামারও। এ বছর এক কোটি ৭ লাখ চাহিদার বিপরীতে কোরবানিযোগ্য ছিলো ১ কোটি ৩০ লাখ পশু। যার মধ্যে গরু ৫২ লাখের বেশি। ১ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চাহিদা ছিল বেশি। বাজারে বেশিরভাগ ছাগল বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে।

কোরবানি ঈদের পশু কেনাবেচা হয়েছে আনুমানিক ৭৫ হাজার কোটি টাকার। এরসঙ্গে পশু পরিবহণ, খাদ্য, কসাই ও আনুষঙ্গিক খরচ ৫ হাজার কোটি টাকা। কাঁচা চামড়া-লবন ও শ্রমিকের মজুরি ১ হাজার কোটি টাকা। পেঁয়াজ, রসুন ও মসলার বাজার ৮ হাজার কোটি টাকার। ফ্রিজ-ইলেকট্রনিক্স পণ্য, পোশাক, পর্যটন ও যাতায়াত খরচ ১০ হাজার কোটি।  

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাহারি পোশাক বা বাহারি পণ্য কেনার যে বাজেট ছিল সেটা ক্রেতারা নিয়ে গেছে কোরবানিতে। তারপরে মসলার বাজার, চামড়ার বাজার এর সঙ্গে যুক্ত হয় অন্যান্য প্রাসঙ্গিক জিনিসের বাজার। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বিশাল একটি বাজার।’

উৎসবের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে প্রবাসীদের আয়। কোরবানি ঈদ কেন্দ্র করে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৪৬ কোটি ডলার বা ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘আশ্চর্য লাগে প্রতিবছর প্রায় এককোটি গবাদিপশু কোরবানি হয়, পরের বছর আবারও এককোটি। এই যে পরের বছর গিয়ে আবারও পূরণ হয়ে যাচ্ছে, এটি আমাদের যারা কৃষক আছে তাদের অবদান। যদি চাহিদা বেশি হতো তাহলে আমরা কিন্তু পশু পেতাম না।’   

পশুপালনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচনেও ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। তাই প্রান্তিক খামারীদের জন্য সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করার পরামর্শ তাদের।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।