অর্থ - বানিজ্য

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের নতুন বোর্ড গঠন করে ৫ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক আদেশে এস আলম গ্রুপের অধীনে থাকা এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়। একই আদেশে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেব নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন হলেন— রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ ওহাব, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এম মাসুদ রহমান ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আব্দুস সালাম।

এর আগে, গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে।

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের এমডি ও অগ্রণী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন।

সন্দেহভাজন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানেন অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

প্রথম ধাপে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও সঞ্চয় অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কর ফাঁকির অভিযোগে অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

আরও বলা হয়, সিআইসি বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা ও সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের তালিকা করেছে। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন-২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর অধীনে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধেও আর্থিক খাতে লুটপাট ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে হয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার। সিঙ্গাপুরে ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন তিনি। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

আহমেদ আকবর সোবহানের বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখল, নানা খাতে অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা নেয়া ও অর্থ পাচারের সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে। কোটা আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে আহমেদ আকবর সোবহান অঙ্গীকার করেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন।

এছাড়া, ওবায়দুল করিমের ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্পে কাজ করে ওরিয়ন গ্রুপ।

এস আলম গ্রুপের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত ইসলামী ব্যাংকের ৬ ডিএমডিসহ ৭ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়।

বরখাস্তরা হলেন– অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম, ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এছাড়া, প্রধান অর্থ পাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) তাহের আহমেদ চৌধুরী এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ।

বাংলাদেশে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে জাপান। সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে, সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিনের সাথে বৈঠকে, বিষয়টি আশ্বস্ত করেছেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোর।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় জাপান বেশ এগিয়ে। চলমান সব প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে। স্থবির প্রকল্পেও অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাপান বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের সংস্কার চায়। সেটি করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায়, রাষ্ট্রদূত বর্তমান সরকারের সাথে কাজ করতে তাদের আগ্রহ তুলে ধরেন। এ সময় বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয় উঠে আসে। ব্যাবসার পরিবেশ সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন, রাষ্ট্রদূত।

নিশ্চিত ছিল না অর্থের উৎস, যোগান নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। তারপরও বড় করা হয়েছে ব্যয়ের খাত। বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে হয়েছে লুটপাট। আর সেই অর্থের যোগান দিতে ঋণনির্ভর হয় শেখ হাসিনা সরকার। অথচ বলা হয়েছিল নতুন ঋণ নয়, বরং পরিশোধ করেছে সরকার।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেয় ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয় ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এই অর্থবছরের শেষ দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গোপনে ছাপিয়ে নেয়া হয় ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনৈতিক এমন অবস্থান বাড়িয়েছে উদ্বেগ।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ ছিল মুদ্রানীতি দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সমুন্নত রাখা। কিন্তু আগের সরকারের ক্রীড়নকে পরিণত হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইচ্ছা মতো ব্যবহার হয়েছে স্বায়ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠান। ভালো-মন্দ বিবেচনায় না নিয়ে টাকা ছাপিয়ে সরকারের যোগান দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক নীতি বেসরকারি খাতকে টার্গেট করে বাস্তবায়িত হয়েছে, সরকারি খাতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা এর বাস্তবায়ন দেখিনি। প্রায়শই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মূদ্রানীতির ভূমিকা দেখিনি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, এভাবে টাকা চাপানোকে হাই পাওয়ার্ড মানি বলে। হাই পাওয়ার্ড মানি অর্থনীতিতে তখনই ব্যবহার হয়, যখন সরকারের জন্য টাকা বেশ প্রয়োজনী হয়ে ওঠে। তখন যে সরকার ছিল, তারা মনে করেছিল বলে এটা করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিল, বন্ড, রেভিনিউ দিয়ে কাভার করা যাচ্ছিল না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সকল পরামর্শ ও মতামতকে অগ্রাহ্য করে তিনি নিতেন সিদ্ধান্ত।

খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে, আর্থিক খাতের একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণী প্রকাশ করা। সেখানে উপযুক্তভাবে দরকার রয়েছে, কার কার কাছে কী পরিমাণ অর্থ সরবরাহ হয়েছে। কী পরিমাণ অনাদায়ী রয়েছে। কোন কোন জায়গায় বাকি রয়েছে এবং কোন কোন জায়গায় প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে অনিশ্চিয়তা রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আসতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনাম ফিরিয়ে আনতে সংস্কার উদ্যোগ দরকার, এমনটা বলছেন বিশ্লেষকরা।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকটির শতাধিক কর্মকর্তা। আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে এই চিঠি জমা দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাংকের তহবিল লুটপাটের যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকটির প্রতি গণমানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য তাঁরা দ্রুত পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার, ব্যাংকের সব অংশীদারদের স্বার্থ রক্ষা, তাঁদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে হবে। এ ছাড়া সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি সহানুভূতিশীল বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ অথবা প্রয়োজনে সাবেক পরিচালকদের থেকে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক শোভন ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই একটি ব্র্যান্ড। তিনি আসায় বিদেশি ক্রেতারা আস্থা ফিরে পেয়েছে।

আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বিজিএমইএ পরিচালক।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা এনার্জি ক্রাইসিস (শক্তি সংকট), লিকুইডিটি ক্রাইসিস (তারল্য সংকট)- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কীভাবে ক্রয় ও রফতানি আদেশ আরও বাড়ানো যায়, আমরা তা নিয়ে চেষ্টা করছি।

বিজিএমইএ’র পরিচালক বলেন, আমাদের দাবিদাওয়া অল্প ছিল। মূলত ড. ইউনূসের ওপর আস্থা জ্ঞাপন করতেই তার সঙ্গে আমাদের দেখা করা। এক মাসের বেতন ও অর্থনৈতিক কিছু ব্যাপারে আলোচনা অমীমাংসিত রয়েছে বলে জানান তিনি।

শোভন ইসলাম বলেন, আমরা তাকে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে বলেছি। যাতে আমাদের শিল্পের সব সমস্যার সমাধান হয়। তারল্য সংকট নিরসনে তার সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস আমাদের আশ্বস্ত করেছেন– তিনি তার সাধ্যমতো করবেন।

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবকিছু নজরে আছে সরকারের। আজ বুধবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মূল্যস্ফীতি এখনই চট করে কমবে না। তবে যুগ যুগ সময়ও লাগবে না। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে চাই আমরা।

তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে স্বব্জির দাম কমেছে। ব্যবসা বাণিজ্য সঠিক পথে আনতে হবে। বাজারে যে সিন্ডিকেট রয়েছে, সে বিষয়ে সরকার অবগত বলে জানান তিনি।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহে জোর দেয়া হবে এখন থেকে। মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব আদায় নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে। পলিসি বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যতোটুকু খেতে পারবো, প্লেটে ততোটুকুই খাবার নেবো’।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তিনি সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

ড. আহসান এইচ মনসুর ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। এর আগে ৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়। ওইদিন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর। তারা হলেন– কাজী সাইদুর রহমান, খুরশীদ আলম, হাবিবুর রহমান ও নুরুন নাহার।

প্রসঙ্গত, ড. আহসান এইচ মনসুর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আর ১৯৮২ সালে ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।

ড. মনসুর ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগে কাজ করেছেন।

এরপর ১৯৮৯ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ওয়াহিদুল হকের অর্থ উপদেষ্টা নিযুক্ত হন এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

গত ১৫ বছরে, ২৪টি বড় ব্যাংকিং অনিয়মে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা হাতছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে নিজস্ব কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে একথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডি জানায়, ২০০৮ থেকে ২০২৩, এই ১৫ বছরে বড় বড় অনিয়ম হয়েছে। তখন বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতছাড়া হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ। অনিয়মের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায় সিপিডি।

সিপিডি আরও জানায়, অনেক ব্যাংক এখন ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’। প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। যেসব ব্যাংক দেউলিয়া হবার পথে, সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। এ অবস্থায় ব্যাংকিং কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছে, গবেষণা সংস্থাটি।

সংস্থাটি বলছে, জনগণের টাকায় দুর্বল ব্যাংকের তহবিল যোগান বন্ধ করতে হবে। বিগত সময়ে, ব্যাংকিং খাতে ঋণ পাবার যোগ্যতা বিবেচিত হয় রাজনৈতিক পরিচয় থেকে। এখান থেকে সরে আসা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করে সিপিডি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।