অর্থ - বানিজ্য

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত এবং জ্বালানি খাত নিয়েও কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনার কথা নেই। বাজেটে ‘সুখী, ‘সমৃদ্ধ’, ‘উন্নত’—এসব শব্দ আছে। কিন্তু এসব করার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট–উত্তর আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে ‘সুখী, ‘সমৃদ্ধ’, ‘উন্নত’—এসব শব্দ আছে। কিন্তু গরিব মানুষের সুখী হওয়ার মতো কিছু নেই। বাজেট জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব করলেই সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি। এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক খাত ঠিক না হলে বেশি দূর এগোনো যাবে না।’

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, ‘বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও জ্বালানি—এসব খাত নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। বেসরকারি খাতের ঋণ কাদের কাছে যায়, তা আমরা জানি। এ জন্য ভবিষ্যতে গুলশান, বনানীর রেস্টুরেন্টে ভিড় আরও বাড়বে। একটি রুটি কিনলে আপনাকেও ১০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আবার “শাহ আলম’কেও ১০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের পথের বাধা দূর করতে হবে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে পদে পদে বাধা আছে।

‘বাজেটে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে প্রবৃদ্ধির মোহ দেখা যায়’—এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, পৌনে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বিনিয়োগ লাগবে। বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত জিডিপির তুলনায় ২৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ১০ বছর ধরে এই অনুপাত ২৩-২৪ শতাংশেই থমকে আছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও কমানো হয়েছে। তাহলে এত বিনিয়োগ আসবে কীভাবে—এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকারি তরফে তেমন উদ্যোগ নেই। আবার ডলারের বাড়তি দামে আমদানি খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থায় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা অসম্ভব। প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, ব্যাংক খাত ভঙ্গুর ও খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এই খাত সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অনৈতিক সুবিধা হিসেবে দেখেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, তিন মাস পরপর জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ের ফলে মানুষের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আবার ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অস্থিরতাও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে। এই প্রত্যাশাজনিত মূল্যবৃদ্ধি কমানো না গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে প্রভাবশালীরা ব্যবসা করছেন না। এই টাকায় তাঁরা ব্যাংক কিনে ফেলছেন। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি দেশের ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কারণে শিল্প খাতে ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, এক ব্যাংকের ৬০ শতাংশ ঋণ গেল ৬ জনের কাছে। এমন ব্যাংকের এমডির মেয়াদ পাঁচবার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্র যদি লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে কাজ করে, তাহলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর কেন খেলাপি ঋণের দোষ চাপানো হয়? তাঁর মতে, বসুন্ধরায় জমি কিনলে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, আর অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি কিনলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়। এটা কি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ?

ইআরএফের ঢাকার পল্টনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম।

২০১৭ সালের অক্টোবরের পর থেকে বুলগেরিয়ার রুজা ইগনাতোভার ছবি এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে ঝুলছে। বিশ্বব্যাপী বড় বড় গণমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন কম হয়নি। ইউরোপেও শীর্ষ অপরাধীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। অভিযোগ, উধাও হওয়ার আগে তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণার মাধ্যমে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এখন রুজা কোথায় বা তাঁর কী হয়েছে—সেই উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড প্যানোরমা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছে, তাঁর সঙ্গে বুলগেরিয়ার শীর্ষ এক অপরাধীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, রুজা ইগনাতোভাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এখন এই অভিযোগ ঘিরে অনেক প্রশ্ন চারপাশে। কে তাঁকে হত্যা করল? নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এত দিন যাঁদের অর্থ দিয়েছেন, তাঁদের হাতেই কি তিনি খুন হলেন? রুজা কি চুরির সেই শত শত কোটি ডলার ভোগ করতে পেরেছেন?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক রুজা ইগনাতোভার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানিতে। ২০১৪ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান ওয়ানকয়েন চালুর আগে আর্থিক বিভাগে তাঁর সফল ক্যারিয়ার ছিল। রুজা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে ওয়ানকয়েনে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেছিলেন।

রুজার দাবি ছিল, বিটকয়েনের বিনিয়োগকারীদের তুলনায় ওয়ানকয়েনে বিনিয়োগকারীরা বেশি লভ্যাংশ পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রুজা অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে এই বিনিয়োগ নিয়ে প্রতারণা করেছেন। বিটকয়েনে লেনদেনে ডিজিটাল রেকর্ড থাকলেও ওয়ানকয়েনে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

২০১৭ সালে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা যখন রুজাকে প্রায় ঘিরে ফেলছিলেন, তখনই বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া থেকে গ্রিসের রাজধানীর এথেন্সের  উদ্দেশে উড়োজাহাজে চড়ে বসেছিলেন। আর এরপরই তিনি ‘নাই’ হয়ে যান। এখনো তাঁর কোনো হদিস মেলেনি।

গত এক বছর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের আই ইনভেস্টিগেশনস এবং প্যানোরমা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে, আসলে রুজার সঙ্গে কী হয়েছে, তিনি এখনো বেঁচে আছেন কি না। তদন্তের মূল বিষয় ছিল রুজার চারপাশের লোকজন কারা ছিল, সেটা খুঁজে বের করা।

এফবিআইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের রিচার্ড রেইনহার্ডও ওয়ানকয়েন নিয়ে তদন্ত করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তদন্তের সময় অন্যতম এক মূল চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায, আগে যার নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

রুজাকে যখন খোঁজা হচ্ছে তখনই তদন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে অন্যদিকে মোড় নেয়। শুনতে পাওয়া যায়, তিনি খুন হয়েছেন। কিন্তু এটি কি সত্যি? বিবিসি যা বুঝতে পেরেছে তা হলো, রুজাকে নিরাপদে রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রিস্টোফোরস নিকোস আমানতিদিস হলেন সেই মূল চরিত্র; যিনি তাকি নামে পরিচিত।

২০২৩ সালে অবসরে যাওয়ার পর রিচার্ড রেইনহার্ড প্রথম বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করছেন, এমন একজন।’ তিনি আরও বলেন, তদন্তে তাকির নাম বেশ কয়েকবার এসেছে।

বিবিসি জানায়, রিচার্ড যা বলেছেন, এমন তথ্য তাঁদের কাছে আগেও ছিল। কারণ, মার্কিন সরকারি কৌঁসুলিরা ২০১৯ সালে তাঁদের বলেছিলেন, রুজার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দলের প্রধান ছিলেন বুলগেরিয়ার একজন বড় অপরাধী। তবে তাঁর নাম বলেননি তাঁরা।

একজন সহকারী অ্যাটর্নি বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, বুলগেরিয়ার মাদক পাচারকারী ওই ব্যক্তি ওয়ানকয়েনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি রুজার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে ছিলেন।’ মার্কিন সরকারের আরেক আইনজীবী বলেছেন, তাকি সেই নিরাপত্তা দলের প্রধান। রুজার নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত।

রিচার্ডের মতে, মানুষ যতটা মনে করে, রুজা ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি চতুর অপরাধী। বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, উধাও হওয়ার আগেই রুজা ও তাকির মধ্যে যে যোগাযোগ ছিল, সেটি বুলগেরিয়ার পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ইউরোপোলের ফাঁস হওয়া নথিতেও সেই কথা রয়েছে। সেসব নথিতে বলা হয়, পুলিশের ধারণা, মাদক পাচারের অর্থ লেনদেনের জন্য তাকি ওয়ানকয়েনের আর্থিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছেন।

বুলগেরিয়ায় তাকিকে দেশটির সবচেয়ে সংগঠিত  অপরাধ চক্রের প্রধান ও বড় ধরনের মাদক কারবারি হিসেবে সন্দেহ করা হয়। অস্ত্র লুট, মাদক পাচার ও খুনের মামলায় তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের নাম এসেছে। কিন্তু কোনো অপরাধেই তাঁর বিচার হয়নি।

২০২২ সাল থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় তাকি অপরাধ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছেন, এমন অভিযোগ তদন্ত করেছিলেন তৎকালীন উপমন্ত্রী ইভান রিস্তানভ। তিনি এখন তাকির সম্পর্কে বিবিসিকে বলছেন, ‘আমরা যখন তাকিকে নিয়ে তদন্ত করি, তখন তিনি বুলগেরিয়ার মাফিয়াপ্রধান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাধর।’

ইভান রিস্তানভ বলেন, ‘তাকি ছিলেন প্রেতাত্মা। আপনি তাঁকে কখনোই দেখতে পাবেন না। আপনি কেবল তাঁর সম্পর্কে শুনতে পাবেন। তিনি আপনার সঙ্গে অন্য লোকের মাধ্যমে কথা বলবেন। আপনি যদি তাঁর কথা না শোনেন, তবে পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বিদেশি সংস্থাগুলোসহ সব ধরনের তদন্ত থেকে রুজাকে রক্ষা করতে পারতেন।’

তাকি এখন দুবাইয়ে আছেন বলে মনে করা হয়। সেখানে রুজা বেশ বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। সেখানে তাঁর বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওয়ানকয়েন প্রতারণার মাধ্যমে সেগুলোতে শত শত কোটি ডলার জমা হয়েছে।

তবে তাকি ও রুজার কীভাবে দেখা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। ওয়ানকয়েনে তাঁরা শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন কি না, সেটাও জানা যায়নি। বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, তাঁদের দুজনের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তাকি ছিলেন তাঁর মেয়ের গডফাদার।

রুজার ঘনিষ্ঠ বুলগেরিয়ার একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছিলেন, রুজা সম্ভবত নিরাপত্তার বিনিময়ে তাকিকে এক লাখ ইউরো করে দিতেন। এ ছাড়া এ দুজনের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। দ্য ইউরোপোলের নথিতে বুলগেরিয়ায় কৃষ্ণসাগরের উপকূলে একটি প্লট বিক্রি নিয়ে জটিল এক চুক্তির কথা বলা হয়। সেখানে দেখা যায় চুক্তিতে রুজার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাকির স্ত্রী জড়িত।

পুলিশের গোপন কিছু নথি বিবিসিকে সরবরাহ করেছেন রুজার সাবেক এক গুপ্তচর এবং উপদেষ্টা ফ্রাঙ্ক স্নাইডার। তিনি বলেন, তাঁর বস অপরাধী ও গ্যাংস্টারদের সঙ্গে কাজ করেন।

ফ্রান্সে যখন স্নাইডারের বাড়িতে বসে এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি ছিলেন গৃহবন্দী। ওয়ানকয়েন কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তবে তিনি সেই অপরাধীদের নাম প্রকাশের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।  তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে তাদের নাম বলব না। কারণ, আমার পরিবার আছে...এটি সত্যি, এরা ভয়ংকর সংগঠিত অপরাধ করত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হয়তো রুজার রক্ষাকারীরাই আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন।’

২০২২ সালে বুলগেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক দিমাতার স্টোয়ানভ এবং তাঁর সহকর্মীদের হাতে পুলিশের একটি প্রতিবেদন এসেছিল। সেটি পাওয়া গিয়েছিল খুন হওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়। সেখানে দেখা যায়, পুলিশের এক তথ্যদাতা তাকির শ্যালককে মদ্যপ অবস্থায় বলতে শোনেন তাকির নির্দেশে রুজাকে ২০১৮ সালে হত্যা করা হয়েছে। এরপর মরদেহ টুকরা টুকরা করে ইয়টে করে নিয়ে আয়োনিয়ান সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।

দিমাতার বলেন, ‘এটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। দেশটির কর্মকর্তারা পুলিশের এই নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাকির অপরাধের একাধিক সহযোগীও এটি বিশ্বাস করেন।’

তবে বিবিসি নিজেদের পক্ষ থেকে এসব দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ওই সহযোগীদের একজন ক্রাসিমির কামেনোভ, যিনি কুরো নামে পরিচিত, তিনিও খুনের দায়ে ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আছেন।

দিমাতার বলেন, ‘কুরো তাকে বলেছেন, তাকিকে রুজার সামনে তাঁর অপরাধজগতের ব্যবসায় নিয়ে আলাপ করতে তিনি শুনেছেন। তখন তিনি তাকিকে এটা করা ঠিক হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, চিন্তা কোরো না, তিনি বেশি দিন থাকবেন না।’

কুরো আরও দাবি করেছিলেন, তিনি তাকির প্রসঙ্গে সিআইএ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে রুজাকে হত্যার প্রসঙ্গও ছিল। কুরোর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বৈঠকটি হয়েছিল ২০২২ সালে। ২০২৩ সালে কুরো স্ত্রী ও দুই সহযোগীসহ কেপটাউনের বাড়িতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ হত্যাকারীদের খুঁজছে।

কিন্তু বুলগেরিয়ার সাবেক উপমন্ত্রী হরিসতানোভ বিশ্বাস করেন, কুরোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাকি জড়িত। হরিসতানোভ বলেন, তাকির সম্পর্কে যাঁরা বেশি জানেন, তাঁদের সরিয়ে ফেলা তাঁর জন্য জরুরি ছিল।

রুজার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক দিমিতার ও তাঁর সহকর্মীরা হত্যার হুমকি পেয়েছেন। তিনি চতুর্থবারের মতো সাময়িক সময়ের জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। রুজাকে হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য কী, সেই বিষয়ে দিমিতার কিছু দাবি না করলেও সম্পত্তির রেকর্ড ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, বুলগেরিয়ায় থাকা রুজার অনেক সম্পদ তাকির লোকজন ভোগ করছে।

রুজাকে হত্যার দায়ে তাকিকে কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। রুজার মরদেহও কেউ দেখেনি। আর তদন্তকারীরাও বলেন, তাকিকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের সাবেক তদন্তকারী রিচার্ড রেইনহার্ড মনে করেন, রুজা সম্ভবত মারা গেছেন। যদিও তিনি এই হত্যার সঙ্গে তাকির সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ দেখতে পাননি। তিনি বলেন, ‘চোরদের মধ্যে কোনো সম্মান নেই।...যদি তিনি (তাকি) মনে করেন, রুজা তাঁর জন্য হুমকি...তখন তিনি ধরা পড়ার চেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলাকেই উপযুক্ত মনে করেন।’

বিবিসি তাকির আইনজীবীদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে লিখে জানতে চেয়েছিল। তবে তাঁরা কোনো জবাব দেননি। ২০২২ সালে রুজা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় শীর্ষ দশে ছিলেন। এখনো তাঁর অবস্থান সেখানেই। কারণ, রুজা মারা গেছেন। সেটার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই।

সবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হবার প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা “স্তন ক্যান্সার নিয়ে আতংক নয় ,চিকিৎসার চেয়ে জরুরি সচেতনতা !সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মূলত জিনঘটিত কারণে ৩৫–‌৪০ বছর বয়স পেরনো মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে !আলোচনাসভা, সচেতনতামূলক প্রচারের মধ্যে দিয়ে  অক্টোবর মাসেই আমরা পালন করেছি ‘‌স্তন ক্যান্সার সচেতনতা’‌ মাস। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। তবুও অনেক ক্ষেত্রে আজও সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যান্সারকে বশে আনা যাচ্ছে না। তবে সঠিক সময়ে এই রোগ ধরা পড়লে আধুনিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে সম্পূর্ণ আয়ত্তের মধ্যে আনা সম্ভব।

স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখনই স্তনে ক্যান্সার দেখা দেয়। মূলত মহিলাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও পুরুষরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলারা এ অসুখের ঝুঁকির মধ্যে যতটা রয়েছেন, পুরুষরা ততটা নন। স্তন ক্যান্সারের রোগীরা সাধারণত বুকে চাকা বা পিন্ডের  মতো কিছু অনুভব করেন। তবে স্তনে চাকা বা মাংস পিন্ডের মতো কিছু মানেই ক্যান্সার, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্তনবৃন্ত থেকে লালরঙের রস নিঃসরণ বা রক্তক্ষরণ, স্তনের ত্বকে অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ও সেখান থেকে চামড়া উঠতে থাকা ইত্যাদিকে এই রোগের লক্ষণ বলে ধরা হয়। যাঁরা এ ধরনের উপসর্গ উপেক্ষা করেন বা ভয়ে ও লজ্জায় চিকিৎসকের কাছে যান না, তাঁদের ক্ষেত্রে বগলের তলায় চাকা বা স্তনের ওপরের চামড়ায় কোঁচকানো ভাব বা ঘা নিয়ে উপস্থিত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে, রোগটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে এই রোগে কখনই স্তনে ব্যথা অনুভূত হয় না। স্তন ক্যান্সার সাধারণভাবে ৩৫ বা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলাদের সমস্যা হলেও আমাদের দেশে ৩০–এর ঘরের মহিলারাও এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিঃসন্তান মহিলা বা যাঁরা কোনও কারণে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া স্তন ক্যান্সারের বংশগত বা জেনেটিক দিকও আছে। পরিবারের কোনও মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর মা বা বোন অথবা মেয়ের (ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ) ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি ২২%‌–‌৩৩% বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ৮টি স্তন ক্যান্সারের জিন আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে বিআরসিএ ১ এবং বিআরসিএ ২ উল্লেখযোগ্য। লক্ষণ দেখা দিলে ডায়াগনসিসের জন্য সবচেয়ে ভাল ট্রিপল অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি। যেখানে প্রথমে একজন স্তন ক্যান্সার সার্জেন রোগীর পরীক্ষা করবেন ও তাঁর পরিবারিক ইতিহাস জানবেন। এরপর রোগীর ম্যামোগ্রাম বা স্তনের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হবে এবং সার্জেন রোগীর লাম্প বা স্তনের ডেলা থেকে এফএনএসি বা কোর বায়োপ্সি করবেন। এখন এফএনএসি–র বদলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোর বায়োপ্সি করা হয়। কারণ এফএনএসি–র চেয়ে কোর বায়োপ্সি অনেকটাই উন্নত পদ্ধতি। অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে সাধারণত আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। ৩৫ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের ক্ষেত্রে রোগ শনাক্তকরণের জন্য ম্যামোগ্রাম করা হয়। স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে প্রথমে কিছু রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বুকের এক্স–রে, বোন স্ক্যান এবং লিভারের আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত। যদি দেখা যায়, ক্যান্সার এই সমস্ত অঙ্গে ছড়ায়নি তবেই একমাত্র কিউরেটিভ সার্জারি এবং কেমোথেরাপি করে রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে সম্পূর্ণ স্তন বাদ না দিয়েও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। এক্ষেত্রে অপারেশনের পরে রোগীকে রেডিওথেরাপি নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে শুধুমাত্র টিউমারটি বাদ দিয়ে স্তনের বাকি অংশে রেডিওথেরাপি বা রে দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই সার্জারির সময় বগলের নীচের অংশের গ্ল্যান্ডগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয় এবং বায়োপ্সির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে রোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন আছে কিনা। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা না পড়ে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ে, তখন নিও–অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি দিয়ে সার্জারি করাটাই ভাল। বয়স যেমনই হোক প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে প্রায় সমস্ত রোগীকেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। অপারেশন, কেমোথেরাপি ছাড়াও রয়েছে হরমোন থেরাপি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হরমোন রিসেপ্টর সেন্সেটিভ হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের অ্যান্টি–ইস্ট্রোজেন হরমোন জাতীয় কোনও ওষুধ দিলে, তা খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেয়। হরমোন ছাড়াও ‘হার টু নিউ’ নামে এক ধরনের রিসেপ্টর রয়েছে। এক্ষেত্রে হারসেপ‌টিন নামে একটি ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধটি ব্যয়বহুল হলেও, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় যার সাফল্য খুবই আশানুরূপ। যাঁদের বয়স খুব বেশি সে সব রোগীর সার্জারি বা কেমোথেরাপি না করে, হরমোন থেরাপির মাধ্যমে বেশ কিছুটা সময় রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর আছে ইমিউনোথেরাপি। তবে এই ধরনের চিকিৎসা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্রেস্ট সার্জেনের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত। এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৮০–৮৫ শতাংশ মহিলাকে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।  প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার ধরতে প্রত্যেক মহিলাকেই নিজের শরীর নিজেকেই নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলা, বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আছেন, তাঁদের উচিত নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো। এই পরীক্ষায় এক বিশেষ ধরনের এক্স–রে–র সাহায্যে স্তনে চাকা অনুভব করার অনেক আগেই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ক্যান্সারের জীবাণু আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে কিনা সেটা আগে থেকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়াটাই ভাল। মাসে একবার নিজেই নিজের পরীক্ষা করুন। অর্থাৎ সেলফ অ্যাসেসমেন্ট। পিরিয়ডের এক সপ্তাহ পরে, সাধারণভাবে স্নান করার সময় বা জামাকাপড় পরার সময়ে এই পরীক্ষা করতেই পারেন। আয়নার দু’পাশে হাত রেখে দাঁড়ান। দু’দিকের স্তনের মধ্যে কোনও অসামঞ্জস্য আছে কিনা লক্ষ করুন। এবার মাথার ওপর দু’হাত তুলুন। মাথার পাশে রাখুন। দেখুন দু’দিকে কোনও অসামঞ্জস্য নজরে পড়ে কিনা। হাতের চেটো দিয়ে প্রথমে একদিকের ও পরে অন্যদিকের স্তন পরীক্ষা করুন। কোনওরকম চাকা বা ফোলা ভাব আছে কিনা ভাল করে লক্ষ করুন। এবারে দেখুন নিপ্‌ল বা স্তনবৃন্তে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা। পরিবর্তন বলতে একদিকের নিপ্‌ল ভেতর দিকে ঢুকে গিয়েছে কিনা বা নিপ্‌লের পাশে কোনও ঘা আছে কিনা। যদি ঘা–এর সন্ধান পান তাহলে অবিলম্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জেনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থ জীবনে ফেরাটা কঠিন নয়। এই অসুখের চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম। এই টিমের তত্ত্বাবধানে স্তন ক্যান্সার ও এই সংক্রান্ত সবরকম সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। অসুখ–বিসুখ নিয়ে কোনওরকম লজ্জা বা তা চেপে না রাখাই ভাল। এতে রোগের বাড়বাড়ন্তটা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তখন তাকে নিয়ন্ত্রণে আনাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্তন ক্যান্সারের মতো অসুখ নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে, উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করুন। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিতে গত দশ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিম দুনিয়ায় ব্রেস্ট সার্জারি আলাদা বিষয় বা স্পেশ্যালিটি বলে গণ্য করা হচ্ছে। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক অথবা নার্সরা শুধুমাত্র ব্রেস্ট সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসা করা হয় ! আমাদের দেশে এর অত্যাধুনিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে সফলভাবে !একমাত্র স্বাস্থ্যসচেতনতার মাধ্যমেই উন্নততর দেশগুলো স্তন ক্যান্সারের মোকাবিলা করতে পেরেছে।‌‌‌‌‌‌ সবাইকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হতে বলছি না যিনি তাঁর দেহে বিআরসিএ ১ জিনের উপস্থিতি জানতে পেরে (‌স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা ছিল ৮৭%‌)‌ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারের উপায় হিসেবে দুটি স্তনই বাদ দিয়ে দেন। তবে দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে ভারতীয় নায়িকা মুমতাজ কিংবা জেন ফন্ডার মতো অসংখ্য সেলিব্রিটি দিব্যি বেঁচে আছেন বিশ্বজুড়ে।নিকাশ কালো রাতের পর ভোরের আলো আসবেই !

ডাঃ কৃষ্ণারুপা মজুমদার

সহযোগী অধ্যাপক 

জেনারেল এবং ক্যান্সার সার্জারি বিভাগ 

বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় 

চেম্বার ঃ আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল 

ধানমন্ডি , ০১৭৭৭১৩১৩৯১

ত্বক দেহের একক বৃহত্তম অঙ্গ। এ জন্য দেহের সুস্থতার জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক

পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে দেহের খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এ জন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রন্থি নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

স্নান

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে থাকে। কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

মসৃনতা

কোনো রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, লোশন, জেল এমনকি সাবান হিসেবে ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

পোশাক পরিচ্ছদ

টাইট এবং সিনথেটিক পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিলেন, নাইলন ইত্যাদি পরিহার করুন।

হিউমিডিফায়ার

ঘরে জলীয় বাষ্পের অনুপাত ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে রুমের জলীয় বাষ্প ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মনে রাখবেন, একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন শীতে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী জনিত ত্বকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নিন। সর্বোপরি—

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন

২. খোলামেলা ও আলোকিত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন

৩. চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার জন্য অনেক আনন্দ ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

 

 

মেডিভয়েস রিপোর্ট: করোনায় আক্রান্ত ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মা অপরিণত সন্তান প্রসব করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হননি এমন গর্ভবতী নারীর তুলনায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের প্রায় অর্ধেকের মাতৃত্বজনিত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। 

মঙ্গলবার ( ১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশে মহামারিকালে গর্ভধারণকারী নারীদের মাতৃত্ব এবং প্রসূত শিশুর পরিণতির সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের সম্পর্ক’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেওয়া হয়।

ফলাফল উপস্থাপনা করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম‌‍'র) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ। 

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৯০ জন নারীকে নিয়ে পরিচালিত ঢাকার চারটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী নারীদের অতীত রেকর্ড এবং তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বয় ২৫ থেকে ৩৪ বছর। সাত শতাংশের বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। ৩৯ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছর।

অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, এ গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভকালীন সময়ে করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৫৪ শতাংশের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। বাকি ৪৬ শতাংশের নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে প্রিটার্ম ডেলিভারি অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে সন্তান প্রসব হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ আর জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হয়েছে চার দশমিক চার শতাংশের।

গবেষণার ফলাফলে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া গর্ভবতীদের ৮৩ শতাংশের প্রসব সম্পন্ন হয়েছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আর করোনাতে আক্রান্ত হননি তাদের তুলনায় আক্রান্তদের ঝুঁকি ছিল এক দশমিক দুই শতাংশ। নন কোভিড গর্ভবতী নারীদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ৬৮ শতাংশের। গবেষণাতে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের প্রসবজনিত জটিলতা অন্যদের তুলনায় ছিল এক দশমিক পাঁচ গুণ। সেইসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, আক্রান্ত নারীদের ৯১ দশমিক দুই শতাংশের করোনার লক্ষণ উপসর্গ ছিল, বাকি আট দশমিক চার শতাংশের কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না।

অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ আরো জানান, এই গবেষণা দলে তিনি ছিলেন প্রধান গবেষক। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা আক্তার, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রাশিদুল আলম, নবজাতক ডা. উম্মুল খায়ের আলম, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. কামরুন্নাহার এবং ডা. আজমেরি শারমিন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিঞা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ওজিএসবি-(অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ হাসপাতাল) এর সাবেক দুই সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ও অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী।

শীতকাল এলেই বিভিন্ন দিক থেকে নানা বয়সের মানুষের আগুনে দগ্ধ হওয়ার খবর আসে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পোড়া রোগীদের সংখ্যাও। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এসব রোগী বেশি দেখা যায়। 

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতের মৌসুমে প্রায় চারগুণেরও বেশি মানুষ দগ্ধ হয়। প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসেন। বিশেষ করে শিশুরা এ সময় বেশি দগ্ধ হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটটির সহকারী পরিচালক ডা. হোসাইন ইমাম মেডিভয়েসকে জানান, শীতকালে পোড়া রোগীর পরিমাণ হাসপাতালে অনেক বেড়ে যায়। তিনটি কারণে এ মৌসুমে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সেগুলো হলো: 

২. ফ্লেইম বার্ন, আগুনে পোড়ার মাধ্যমে যেসব বার্ন হয়, সেগুলোকে ফ্লেইম বার্ন বলা হয়। সাধারণত শীতকাল আসলে বিশেষ করে গ্রামে কোন কিছু পুড়িয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। এ সময় অসাবধানতায় কাপড়ে বা শরীরে আগুন লেগে বিপর্যয় নেমে আসে।

৩. শীতকালে আরেকটি ভয়াবহ বার্ন হয়। অনেক সময় নতুন মায়েদের বাচ্চা হওয়ার পর ঘাঁ শুকানোর জন্য আগুনের তাপ নেওয়ার সময় কাপড়ে আগুন লেগে শরীরে নিম্নাংশ পুড়ে যায়। এ সময় তলপেট, উরুসহ নিম্নাংশগুলো আগুনে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে।

প্রাথমিক চিকিৎসা 

 

জানতে চাইলে ডা. হোসাইন ইমাম বলেন, আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক এবং জরুরি চিকিৎসা হচ্ছে পানি, পানি এবং পানি। এ সময় রোগীর শরীরে যত সম্ভব বেশি বেশি পানি ঢালতে হবে। তবে বরফ ও বরফ শীতল পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ক্ষতের গভীরতা আরো বেড়ে যায়। তাই বহমান ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পোড়া জায়গা অন্তত ৩০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। পোড়া জায়গা অধিক হারে পানি দেওয়ার মাধ্যমে পোড়ার মাত্রা ২০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১৫ বা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।

খ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি), দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

আজ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গার্লস গাইড এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও বিশ্ব মানবাধিকার ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় এডভোকেসি সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান প্রসবের আগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা সেই বাচ্চাকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব করাতে পারবো, আমাদের চিকিৎসকরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছেন। আমাদের হাতে যে কয়জন আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান প্রসব হয়েছে, তারা সকলেই নেগেটিভ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে। 

দেশে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে কাঁচের সিরিঞ্জ ব্যবহার বন্ধ করে ডিসপোজাল সিরিঞ্জ ব্যবহার করে হচ্ছে। মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। এখন সেটাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে তাদের মধ্যে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের হার অধিক।’

এইচআইভি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একদিনই কোভিড টিকা দেওয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড টিকা দেওয়ার পরিকল্পানা সাজানো হয়েছে।

শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ৬ থেকে ১২ নভেম্বর এই কর্মসূচিতে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে।

দেশের ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে এই বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এ ক্যম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে বয়স্ক ও নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।”

এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচিতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। আগামী মাসের একই সময়ে দেওয়া হবে এ টিকার দ্বিতীয় ডোজ।

এর আগেও দুটি বিশেষ কর্মসূচিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম কর্মসূচিতে ৭ অগাস্ট প্রথম ডোজ দেওয়ার পর ৭ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ।

আর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর হয় দ্বিতীয় কর্মসূচি। সে সময় যারা প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, ২৮ ও ৩০ অক্টোবর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আগামী সাত দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত টিকাদান চলবে। পাশাপাশি ঢাকার নির্ধারিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াও অব্যাহত থাকবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।