অর্থ - বানিজ্য

মেডিভয়েস রিপোর্ট: করোনায় আক্রান্ত ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ মা অপরিণত সন্তান প্রসব করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হননি এমন গর্ভবতী নারীর তুলনায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের প্রায় অর্ধেকের মাতৃত্বজনিত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। 

মঙ্গলবার ( ১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশে মহামারিকালে গর্ভধারণকারী নারীদের মাতৃত্ব এবং প্রসূত শিশুর পরিণতির সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের সম্পর্ক’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেওয়া হয়।

ফলাফল উপস্থাপনা করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম‌‍'র) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ। 

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৯০ জন নারীকে নিয়ে পরিচালিত ঢাকার চারটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী নারীদের অতীত রেকর্ড এবং তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বয় ২৫ থেকে ৩৪ বছর। সাত শতাংশের বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। ৩৯ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছর।

অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, এ গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভকালীন সময়ে করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৫৪ শতাংশের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। বাকি ৪৬ শতাংশের নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আর এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে প্রিটার্ম ডেলিভারি অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে সন্তান প্রসব হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তানের মৃত্যু ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ আর জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হয়েছে চার দশমিক চার শতাংশের।

গবেষণার ফলাফলে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া গর্ভবতীদের ৮৩ শতাংশের প্রসব সম্পন্ন হয়েছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। আর করোনাতে আক্রান্ত হননি তাদের তুলনায় আক্রান্তদের ঝুঁকি ছিল এক দশমিক দুই শতাংশ। নন কোভিড গর্ভবতী নারীদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ৬৮ শতাংশের। গবেষণাতে আরও পাওয়া গেছে, করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের প্রসবজনিত জটিলতা অন্যদের তুলনায় ছিল এক দশমিক পাঁচ গুণ। সেইসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীদের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, আক্রান্ত নারীদের ৯১ দশমিক দুই শতাংশের করোনার লক্ষণ উপসর্গ ছিল, বাকি আট দশমিক চার শতাংশের কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না।

অধ্যাপক ডা. বায়েজীদ খুরশীদ রিয়াজ আরো জানান, এই গবেষণা দলে তিনি ছিলেন প্রধান গবেষক। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাহমিদা আক্তার, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রাশিদুল আলম, নবজাতক ডা. উম্মুল খায়ের আলম, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডা. কামরুন্নাহার এবং ডা. আজমেরি শারমিন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিঞা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ওজিএসবি-(অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ হাসপাতাল) এর সাবেক দুই সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ও অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী।

শীতকাল এলেই বিভিন্ন দিক থেকে নানা বয়সের মানুষের আগুনে দগ্ধ হওয়ার খবর আসে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পোড়া রোগীদের সংখ্যাও। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এসব রোগী বেশি দেখা যায়। 

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতের মৌসুমে প্রায় চারগুণেরও বেশি মানুষ দগ্ধ হয়। প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসেন। বিশেষ করে শিশুরা এ সময় বেশি দগ্ধ হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটটির সহকারী পরিচালক ডা. হোসাইন ইমাম মেডিভয়েসকে জানান, শীতকালে পোড়া রোগীর পরিমাণ হাসপাতালে অনেক বেড়ে যায়। তিনটি কারণে এ মৌসুমে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সেগুলো হলো: 

২. ফ্লেইম বার্ন, আগুনে পোড়ার মাধ্যমে যেসব বার্ন হয়, সেগুলোকে ফ্লেইম বার্ন বলা হয়। সাধারণত শীতকাল আসলে বিশেষ করে গ্রামে কোন কিছু পুড়িয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। এ সময় অসাবধানতায় কাপড়ে বা শরীরে আগুন লেগে বিপর্যয় নেমে আসে।

৩. শীতকালে আরেকটি ভয়াবহ বার্ন হয়। অনেক সময় নতুন মায়েদের বাচ্চা হওয়ার পর ঘাঁ শুকানোর জন্য আগুনের তাপ নেওয়ার সময় কাপড়ে আগুন লেগে শরীরে নিম্নাংশ পুড়ে যায়। এ সময় তলপেট, উরুসহ নিম্নাংশগুলো আগুনে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে।

প্রাথমিক চিকিৎসা 

 

জানতে চাইলে ডা. হোসাইন ইমাম বলেন, আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক এবং জরুরি চিকিৎসা হচ্ছে পানি, পানি এবং পানি। এ সময় রোগীর শরীরে যত সম্ভব বেশি বেশি পানি ঢালতে হবে। তবে বরফ ও বরফ শীতল পানি ব্যবহার করা যাবে না। এতে ক্ষতের গভীরতা আরো বেড়ে যায়। তাই বহমান ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পোড়া জায়গা অন্তত ৩০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। পোড়া জায়গা অধিক হারে পানি দেওয়ার মাধ্যমে পোড়ার মাত্রা ২০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১৫ বা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।

খ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি), দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

আজ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গার্লস গাইড এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও বিশ্ব মানবাধিকার ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় এডভোকেসি সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তান প্রসবের আগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা সেই বাচ্চাকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব করাতে পারবো, আমাদের চিকিৎসকরা সেই সক্ষমতা অর্জন করেছেন। আমাদের হাতে যে কয়জন আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তান প্রসব হয়েছে, তারা সকলেই নেগেটিভ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে। 

দেশে এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে কাঁচের সিরিঞ্জ ব্যবহার বন্ধ করে ডিসপোজাল সিরিঞ্জ ব্যবহার করে হচ্ছে। মাদকাসক্তদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে। এখন সেটাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে তাদের মধ্যে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের হার অধিক।’

এইচআইভি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একদিনই কোভিড টিকা দেওয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড টিকা দেওয়ার পরিকল্পানা সাজানো হয়েছে।

শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কোভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ৬ থেকে ১২ নভেম্বর এই কর্মসূচিতে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড-১৯ টিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া যাবে।

দেশের ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে এই বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

“ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এ ক্যম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে বয়স্ক ও নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।”

এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচিতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে। আগামী মাসের একই সময়ে দেওয়া হবে এ টিকার দ্বিতীয় ডোজ।

এর আগেও দুটি বিশেষ কর্মসূচিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম কর্মসূচিতে ৭ অগাস্ট প্রথম ডোজ দেওয়ার পর ৭ সেপ্টেম্বর দেওয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ।

আর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর হয় দ্বিতীয় কর্মসূচি। সে সময় যারা প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন, ২৮ ও ৩০ অক্টোবর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আগামী সাত দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত টিকাদান চলবে। পাশাপাশি ঢাকার নির্ধারিত স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াও অব্যাহত থাকবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।