অর্থ - বানিজ্য

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই এভাবে ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তারা তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া ও একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে। ফলে ব্যাংক অধিগ্রহণ তাদের কাছে নতুন কিছু না।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধিগ্রহণ বিষয়ে গত মাসে ব্যাংক এশিয়া ও ব্যাংক আলফালাহ সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এ অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন ও অতিরিক্ত এমডি এ এন এম মাহফুজ উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আলফালাহকে অধিগ্রহণের অর্থ কয়েক ধাপে পরিশোধ করবে ব্যাংক এশিয়া। তারা প্রথম ধাপে একটা অংশ দেওয়ার এক বছর পর আরেকটি অংশ দেবে। এভাবে বাকি অর্থ দেবে পরে। তবে ব্যাংক আলফালাহর দেওয়া কোনো ঋণ এক বছরের মধ্যে খারাপ হয়ে পড়লে তাদের পাওনা অর্থের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে এই অধিগ্রহণে ব্যাংক এশিয়ার ঝুঁকি কম বলে মনে করছেন এর কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত বছর থেকে ব্যাংক আলফালাহ তাদের বাংলাদেশের কার্যক্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ক্রেতা খুঁজছিল। এ জন্য তারা অবশ্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করেনি। ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচন হয়েছে। বনিবনা হওয়ায় গত এপ্রিলে ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত বার্তায় তাদের বাংলাদেশ কার্যক্রম ব্যাংক এশিয়ার কাছে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এতে সায় দেয়। ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবের আলোকে পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে দিয়ে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রায় ১০ বছর ধরে নিজের ৫ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করতেন কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামের আলমগীর হোসেন। বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ বসিয়ে ঘেরে লবণ পানি তুলে বাগদা চিংড়ি চাষ করতেন তিনি। কিন্তু চলতি বছর বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় সেই পাইপ অপসারণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ওই এলাকার সব চিংড়ি ঘের।

আলমগীর হোসেন বলেন, আগে জমিতে বছরে একবার আমন ধান চাষ করতাম। কিন্তু মাটিতে লবণাক্ততার কারণে ধান উৎপাদন ভালো হতো না। সে কারণে চিংড়ি চাষ শুরু করি এবং ভালো লাভ হতো। কিন্তু এখন চিংড়ি চাষ করতে না পারায় কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এ গ্রামের অর্ধশত চিংড়ি চাষি বেকার হয়ে পড়েছেন। 

পার্শ্ববর্তী মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের মঞ্জুর আলম বলেন, এখন আর ঘেরে লবণ পানি তুলতে পারছি না। ফলে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। আর জমি যে পরিমাণ লবণাক্ত তাতে ধান বা অন্য ফসলও ভালো হয় না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। জমিও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিকল্প কোনো উপায়ও দেখছি না। 

শুধু এ দুটি গ্রামেই নয়, খুলনার ৯টি উপজেলায় লবণ পানি তুলতে না পারায় অনেক চাষি চিংড়ি চাষ করতে পারছে না। আবার অনেকে স্বেচ্ছায় চিংড়ি চাষ ছেড়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছে। পুঁজি সংকট, ভাইরাস ও দাবদাহে চিংড়ির মড়কের কারণে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়েছে। কয়েকটি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় লবণ পানি পাচ্ছে না চাষিরা। এছাড়া চিংড়ি ঘেরের বেশ কিছু জমিতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় খুলনা জেলায় চিংড়ি চাষ কমে গেছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। সে কারণে কমেছে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানির পরিমাণ।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ির ঘের ছিল ২০ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাষের জমি কমেছে ১ হাজার ১৮ হেক্টর এবং চিংড়ি উৎপাদন কমেছে ২ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় লবণ পানির বাগদা চিংড়ির ঘের ছিল ৩৬ হাজার ১৫১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাষের জমি কমেছে ৩ হাজার ৭৬৮ হেক্টর এবং চিংড়ি উৎপাদন কমেছে ১ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন। গত ৫ বছরের ব্যবধানে বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন। 

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, খুলনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কারখানাগুলো চাহিদা অনুযায়ী গলদা ও বাগদা চিংড়ি পাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকদের-কর্মচারীদের মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় একই রকম রয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়ছে। 

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি এক চিঠিতে এ তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন অথবা অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি এবং অনুসন্ধনকালে প্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রের্কডপত্র আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণ করতে বলা হয়।

২০২২ সালে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে এ ঋণ দেয়া হয়। তবে ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নামসর্বস্ব এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া এসব ঋণ ফেরত অথবা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সরেজমিনে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয়। বাকি টাকা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আগের ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়।

সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ঘুরিয়ে এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করা হয়। এভাবে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন ঋণের মাধ্যমে পুরোনো ঋণের অর্থ পরিশোধ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং ইসলামী শরিয়াহ পরিপন্থী। এছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে মালপত্র না থাকায় এসব বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে। দুই সংস্থার তথ্যে বরাবরই দেখা গেছে বড় ধরনের ফারাক। সম্প্রতি হিসাব পদ্ধতি সংশোধন করে রফতানি আয় থেকে ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো পরিমাপের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো এ রফতানি আয়ের তথ্য। সংশোধনের মাধ্যমে রফতানি আয় কমে আসায় দেশের জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ এসব সূচকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের জিডিপিতে রফতানি আয়ের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাব রয়েছে। ফলে এতে রফতানি আয় হ্রাসের উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যয়ভিত্তিক জিডিপি হিসাবের সময় রফতানি আয় থেকে আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে রিসোর্স ব্যালান্স হিসাব করা হয়ে থাকে। এখন রফতানি আয় কমে যাওয়ায় রিসোর্স ব্যালান্সের পরিমাণ আরো বাড়বে। এতে মোট দেশজ ব্যয় ও জিডিপির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে এবং এর প্রভাবে পরিসংখ্যানগত ফারাকও বাড়তে যাচ্ছে।

বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানি আয়ের পরিসংখ্যানে পরিবর্তনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে সংস্থাটি এ নিয়ে কাজ শুরু করবে। ব্যয়ভিত্তিক জিডিপি হিসাবের সময়ও এতে রফতানি আয়ের তথ্য বদলের প্রভাব পড়বে। বেড়ে যাবে পরিসংখ্যানগত ফারাক। তাছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানেও পরিবর্তন আসবে।

গত দুই মৌসুম দেশে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এজন্য গত অর্থবছর শুরু থেকে চাল আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় পরবর্তীতে সীমিত আকারে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। যদিও তাতে সাড়া দেননি কোনো আমদানিকারক। ফলে বিদায়ী অর্থবছর কোনো চালই আমদানি হয়নি। গত তিন দশকের মধ্যে এবারই প্রথম এ ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল। এটি ছিল তিন দশকের মধ্যে চাল আমদানির সর্বনি¤œ রেকর্ড। যদিও সদ্যবিদায়ী অর্থবছর চালের ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে গম আমদানির ক্ষেত্রে। টানা তিন বছর কমার পর গত অর্থবছর গম আমদানি বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বিদায়ী অর্থবছর এ খাদ্যশস্যটি আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। এতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গম আমদানির রেকর্ড হয়ে যায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, তিন দশক আগে ১৯৯০-৯১, ১৯৯১-৯২ ও ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর টানা তিন বছর বাংলাদেশকে কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি। তবে ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর থেকে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছরই কম-বেশি চাল আমদানি হয়েছে। আর গম প্রতি বছরই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। এ খাদ্যশস্যে কখনোই বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। তবে ২০১৯-২০ সালের পর বিদায়ী অর্থবছর গম আমদানিতে বড় উল্লম্ফন হয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছর গম আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৮ লাখ আট হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে আমদানি করা হয় প্রায় সাত লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। আর বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয় ৬০ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছর গম আমদানি হয়েছিল ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছর গম আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৯ লাখ ৩৩ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর গম আমদানি হয়েছিল ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন।

তথ্যমতে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছর আমদানি করা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। পরের অর্থবছর এক লাফে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১১-১২ অর্থবছর তা আবার কমে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টনে।

২০১২-১৩ অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। পরের দুই অর্থবছর চাল আমদানি আবার দ্রুত বাড়ে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছর আমদানি হয় তিন লাখ ৭১ হাজার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১৪ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর চাল আমদানি আবারও কমে। ওই দুই অর্থবছর চাল আমদানি করা হয় যথাক্রমে দুই লাখ ৫৬ হাজার ও এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

দেশে অপরিশোধিত লবণের উৎপাদন বেড়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে চলতি মৌসুমে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। তবে এই বাড়তি উৎপাদনের সুফল মিলছে না। চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে সাত টাকা দরে। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে মাঝারি মানের লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়।

দেশের মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও সাধারণ লবণ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের এস এস খালেদ রোড এলাকার গ্রোসারি শপ জান্নাত স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, বাজারে থাকা প্রচলিত ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি লবণ খুচরায় ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা কোম্পানির কাছ থেকে ৩৫-৩৭ টাকা দরে কিনতে হয়।

লবণ শিল্প উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান ও বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভ‚ঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। মৌসুমের শেষ দিন (গত ২৫ মে) পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন, যা গত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের তুলনায় দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। গত (২০২২-২৩) মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।

কৃষক ও বিসিকের তথ্যমতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে মণপ্রতি (৪০ কেজি) অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, যা বর্তমানে ৩৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সেই হিসাবে মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট দশমিক ৭৫ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সল্টের স্বত্বাধিকারীর আসাদ আহমদ বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অপরিশোধিত লবণ কিনে এনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে তা প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে; যার কেজি প্রতি দাম পড়ে ১০ টাকা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিশোধন শেষে তা আমরা মিল গেটে ৯৭০ থেকে ৯৮০ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি করছি, যা কেজিতে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২৫ পয়সা। আমাদের থেকে কিনে বিভিন্ন হাত বদলে তা খোলাবাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। তারপরও কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু ফের ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। তবে তদারকি জোরদার করায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫, যা সাতদিন আগেও ১৪৫-১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৬৭, যা সাতদিন আগেও ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪-১৭৬, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৭৬ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। 

কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা খালেক বলেন, বাজারে কোনো নিয়ম নেই, এটা বলা যাবে না। একটি নিয়ম খুব ভালোভাবে চলছে। বিক্রেতারা সবই এক। তারা চালের দাম বাড়ালে আটার দাম বাড়ায় না। আটার দাম বাড়ালে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় না। আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে অন্য আরেকটি পণ্যের দাম কমিয়ে রাখে। তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার। বছরে একেক মাসে একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে একচেটিযা বাড়তি মুনাফা করা হয়। 

বাজারে যারা তদারকি করে, তারাও ভোক্তার সঙ্গে অসহায়। কারণ, ব্যবসায়ীরা পাওয়ারফুল। মনে হচ্ছে, তারা দেশ চালাচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে কোনো কিছুই হয়নি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো ক্রেতাকে ফের নাজেহাল করে ফেলছে।

একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। পণ্যের দাম আমরা কোনোভাবেই বাড়াই না। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তারা সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম নির্ধারণ করে মূল্য বাড়ায় বা কমায়। আবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও সেটাই করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মিল থেকে বাড়তি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছে।

এদিকে রাজধানীর সবকটি খুচরা বাজারে আলুর সরবরাহ থাকলেও বেড়েছে দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৫, যা সাতদিন আগেও ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সপ্তাহখানেক আগেও ৯০-১০০ টাকা ছিল। কৌশলে বিক্রেতারা ৫ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়ে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ এবং ছোট দানার ১১০ টাকায়।

বাজারে কমেছে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাতদিন আগে ২৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৩০০ টাকা, যা সাতদিন আগে ৩৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেজিতে ৫০ টাকা কমে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকা।

অন্যদিকে বাজারে তদারকি জোরদার করার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২, যা সাতদিন আগেও ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫, যা সাতদিন আগে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ধারাবাহিকভাবে ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে একই স্থানের ডিম তিনবার হাতবদলের জন্য দাম বাড়ছে। 

এছাড়া আড়তদারা এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রতিদিন ডিমের মূল্য নির্ধারণ করছে। এসব কিছু হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় আনার কারণে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে কমছে ব্রয়লার মুরগির দামও। তিনি জানান, শুধু ডিম নয়, অন্যান্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিতরণ কোম্পানি লোকসান করলেও গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিদ্যুৎ বিভাগে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

 
ঝড় ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩০ হাজার পোল বিনষ্ট হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে সবক’টি সাবস্টেশন পানির নিচে চলে গেছে। আমরা এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা সাজানোর চেষ্টা করছি. যাতে গ্রাহককে ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।

আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোন কোন সমঝোতা স্মারক সই হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মহেশখালী থেকে সমান্তরালভাবে আটটি পাইপলাইন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি চীন সফরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা ও বিতরণব্যবস্থার কিছু প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে যেসব বিষয়ে অনুদান পাবে, সেগুলোর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। টাকার অঙ্কে এই বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই আমরা গ্যাস-সংকট দূর করতে পারবো বলে আশা করছি। এ জন্য আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এর বাইরে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে নতুন করে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই হতে পারে।

নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট আট টাকা। এটি বেশি কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবিধা হচ্ছে কুড়ি বছর ৮ টাকা ইউনিটেই বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়লে যেমন বিদ্যুতের দাম বাড়ে, এখানে এটা হবে না।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই হিসাবে এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াট হলে ২৬০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। এই পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে।

নসরুল হামিদ বলেন, সঙ্গত কারণে এখানে বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা তাদের জমি দেবো। তারা সেই জমি উন্নয়ন করে দেবে। একইসঙ্গে গ্রিড লাইন নির্মাণ করে দেবে। এরপর আমরা দরপত্র আহ্বান করবো। এতে সৌর বিদ্যুতের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের গ্রিডে ছয় হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ যোগ হবে।

সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ডাকা দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে জানালেও কতদিন বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযান চালিয়ে ছয়টি ব্রাহমা জাতের গরু জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন কাঠের পুলের ১৬ নম্বর রোডে অভিযান চালায়। তারা নিষিদ্ধঘোষিত কোটি টাকা মূল্যের ৬টি ব্রাহমা গরু উদ্ধার করে। অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার।

দুদক সূত্র জানায়, তথ্যের ভিত্তিতে সাদিক অ্যাগ্রোতে দুদকের দল গিয়ে ছয়টি ব্রাহমা গরুর সন্ধান পায়, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে। ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ। অভিযানের সময় সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ও ব্যবস্থাপক—কাউকে পাওয়া যায়নি।

অভিযানের বিষয়ে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১ জুলাই কেরানীগঞ্জের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ও সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে। এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিত আজ আবারও অভিযান পরিচালনা করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

গতকাল আমদানিকৃত নিষিদ্ধ গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউসে গিয়েছিল ওই টিম। তালিকা সংগ্রহের পরই বেশ কিছু নতুন তথ্য উঠে আসে। এ কারণে আবারও মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।

ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বেশি হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জাতটির উৎপত্তি ভারতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই থেকে তিনটি জাতের সংমিশ্রণে এটিকে উন্নত করা হয়। দুই থেকে আড়াই বছরের দেশি গরুর ওজন যেখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ কেজি হয়, সেখানে ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে পালনের অনুমতি দেওয়া হলে দুধ বেশি দেওয়া গরুর পালন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্রাহমা নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এর আগে সোমবার মো. ইমরান হোসেনের মালিকানাধীন কেরানীগঞ্জের সাদিক অ্যাগ্রো ও সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে বিশেষ অভিযান চালায় দুদক। অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্রাহমা জাতের গরু ও ব্রাহমাসহ প্রাণী প্রজননের নিষিদ্ধ ওষুধ আমদানি করার প্রমাণ পেয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ১৮টি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন। তবে ব্রাহমা নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি ফ্রিজিয়ান গরুর মিথ্যা ঘোষণা দেন। পরে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা কাস্টমস। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সেগুলোকে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কাস্টমসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রোতে নিয়ে যান ইমরান।

বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো থেকে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে গ্যারান্টি ফি ৫০ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রথম বছরে দশমিক ৫০ শতাংশ গ্যারান্টি ফি দিতে হবে। আগে ১ শতাংশ গ্যারান্টি ফি দিতে হতো। এই ফির অন্যান্য খাতেও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বাড়াতে এবং এ খাতে খরচ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, করোনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক তহবিল গঠন করে। কিন্তু ওইসব তহবিল থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছিলেন না যথাযথ গ্যারান্টি বা জামানত দিতে না পারার কারণে। ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোও এসব উদ্যোক্তাকে ঋণ দিতে আগ্রহী ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ সুবিধা পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করে। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের যেসব ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি ঋণ দেবে তার একটি অংশের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই স্কিম থেকে গ্যারান্টি দেবে। ওই ঋণ আদায় না হলে স্কিম থেকে ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করা হবে।

এ স্কিমের আওতায় ঋণ দিতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুক্তি করে। এর আওতায় গ্যারান্টি নিবন্ধন পাওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো থেকে নির্ধারিত হারে গ্যারান্টি ফি নেওয়া হয়। এর মধ্যে আগে মোট ঋণের স্থিতির বিপরীতে প্রথম বছরে ১ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। এখন তা অর্ধেক কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

আগে কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ বা এর কম থাকলে প্রথম বছরের পরের বছর দশমিক ৫০ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ বা এর কম থাকলে দশমিক ৭৫ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। এখন দুই খাতেই নেওয়া হবে দশমিক ২৫ শতাংশ। 

১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওইসব ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি এ তহবিলের আওতায় ঋণ দিতে পারে না।

গ্যারান্টি ফি ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পর্র্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে। এর বেশি হলে গ্রাহকের কাছ থেকে ফি আদায় করা যাবে। ছোট ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো গ্যারান্টি ফি আদায় করা যাবে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।