বাড়ছে ভোজ্যপণ্যের দাম
বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। তারপরও কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু ফের ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। তবে তদারকি জোরদার করায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫, যা সাতদিন আগেও ১৪৫-১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৬৭, যা সাতদিন আগেও ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪-১৭৬, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৭৬ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা।
কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা খালেক বলেন, বাজারে কোনো নিয়ম নেই, এটা বলা যাবে না। একটি নিয়ম খুব ভালোভাবে চলছে। বিক্রেতারা সবই এক। তারা চালের দাম বাড়ালে আটার দাম বাড়ায় না। আটার দাম বাড়ালে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় না। আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে অন্য আরেকটি পণ্যের দাম কমিয়ে রাখে। তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার। বছরে একেক মাসে একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে একচেটিযা বাড়তি মুনাফা করা হয়।
বাজারে যারা তদারকি করে, তারাও ভোক্তার সঙ্গে অসহায়। কারণ, ব্যবসায়ীরা পাওয়ারফুল। মনে হচ্ছে, তারা দেশ চালাচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে কোনো কিছুই হয়নি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো ক্রেতাকে ফের নাজেহাল করে ফেলছে।
একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। পণ্যের দাম আমরা কোনোভাবেই বাড়াই না। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তারা সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম নির্ধারণ করে মূল্য বাড়ায় বা কমায়। আবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও সেটাই করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মিল থেকে বাড়তি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছে।
এদিকে রাজধানীর সবকটি খুচরা বাজারে আলুর সরবরাহ থাকলেও বেড়েছে দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৫, যা সাতদিন আগেও ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সপ্তাহখানেক আগেও ৯০-১০০ টাকা ছিল। কৌশলে বিক্রেতারা ৫ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়ে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ এবং ছোট দানার ১১০ টাকায়।
বাজারে কমেছে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাতদিন আগে ২৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৩০০ টাকা, যা সাতদিন আগে ৩৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেজিতে ৫০ টাকা কমে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে তদারকি জোরদার করার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২, যা সাতদিন আগেও ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫, যা সাতদিন আগে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ধারাবাহিকভাবে ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে একই স্থানের ডিম তিনবার হাতবদলের জন্য দাম বাড়ছে।
এছাড়া আড়তদারা এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রতিদিন ডিমের মূল্য নির্ধারণ করছে। এসব কিছু হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় আনার কারণে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে কমছে ব্রয়লার মুরগির দামও। তিনি জানান, শুধু ডিম নয়, অন্যান্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।