অর্থ - বানিজ্য

সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২৪ সংসদে উত্থাপন করলে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরি করা অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য এই সম্পূরক বিল আনা হয়।

সম্পূরক বাজেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াসহ আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন।

তারা পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পাচারকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান। অবশ্য সংসদ-সদস্যদের এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অনেকটা ঢালাও অভিযোগ। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু জানান, আর্থিক বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসাবে তিনি ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছেন। 

তার মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাতকে তদারকি করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কী তদারকি করছে? পিকে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন। বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়, পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়। এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন? 

মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন। চুপ থাকাই ভালো।

তিনি বলেন, ডলার সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না। তিনি চুপ থাকতেন। আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আমলা যেই হোক, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন, তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।

পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে সংযত নীতি পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। 

আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুক‚লে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ৪০টির বাজেট অপরিবর্তিত রয়েছে বা হ্রাস পেয়েছে। সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বাজেট হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সম্পূরক বাজেটে ২০টি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন সরকার ও বিরোধীদলের চারজন সংসদ-সদস্য। এর মধ্যে দুটি মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। সেগুলো হলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। 

আইসিটি খাতে অনিয়মের অভিযোগ : আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না তার খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ প্রকল্পে যারা লার্নিং করতে আসে, তারা সঠিকভাবে আস্থা করতে পারে না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।

ব্যাংক লুটেরা, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি। তিনি বলেছেন, সময় এসেছে-ওদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। জাতীয় সংসদে এমন আইন পাশ করতে হবে যাতে তারা বিমানে উঠতে না পারে, ট্রেনের টিকিট না পায়। কোনো দামি গাড়িতে চড়া তো দূরের কথা-যেন কোনো রিকশাওয়ালা তাদের নিতে ঘৃণা প্রকাশ করে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ করব, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হোক। একই সঙ্গে ওদের বাসাবাড়ির সব ধরনের সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হোক। বিশেষ করে ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সংকট, সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন কঠিন সংকট আমাদের প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও এখন তাকে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত ও অর্থ পাচারকারী ব্যাংক লুটেরা। যারা বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। যদিও সরকার এখন এসব রাঘববোয়ালকে শক্ত হাতে ধরা শুরু করেছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি এবং নানাভাবে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে এই মহান সংসদে এ যাবৎ কম কথা হয়নি। বলতে বলতে সবাই এখন ক্লান্ত। কিন্তু খেলাপিরা ক্লান্ত হয়নি। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হলেও প্রভাবশালী খেলাপিরা আছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় ঋণ পুনর্গঠন করে নেন। ফলে খেলাপির খাতায় তাদের নাম আর ওঠে না। এছাড়া নামে-বেনামে কারা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তা অনেকেই না জানলেও কিছু লোক তো জানেন। কয়েকটি ব্যাংকের একশ্রেণির পরিচালকরা কীভাবে এসব ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন-সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। এজন্য ব্যাংকখেকোদের যদি আমরা আগে শাস্তি দিতে না পারি, তাহলে দেশ আর ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, কারা ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারী, তা সরকারের ভালো করে জানা আছে। আওয়ামী লীগ সরকার খুবই চৌকশ। তারা দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের চেনে না-এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। এছাড়া সমাজে যত ধরনের সিন্ডিকেটসহ বাজিকরদের জন্ম হয়েছে, তাদের হাঁকডাক ও দম্ভ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। আর সরকার চাইলে সব পারে। এক রাতেই এসব ডাকাতকে লকআপে ঢুকাতে পারে। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এমন সাহসী উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় রইলাম। এ কঠিন কাজটা তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা প্রতিকূলতার চিত্র তুলে ধরে জাতীয় পার্টির এই সংসদ-সদস্য বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালাতে প্রায় সবকিছু আমদানি করতে হয়। বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়। সেখানে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন শিল্পের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখন যদি সরকার আয় বাড়াতে সব চাপ দেয় শিল্পের ওপর, তাহলে তা হবে চরম জুলুম। বরং আমি মনে করি, রপ্তানিমুখী শিল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স আরও কমাতে হবে। বিশেষ করে যেসব দেশীয় শিল্প ভালো পারফর্ম করছে, তাদের নানাভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। প্রয়োজনে ওইসব বিদেশি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত কিন্তু দীর্ঘদিন বিদেশি পণ্য বর্জন করেছে। নিজেরা নিজেদের পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা এ ধরনের বৈপ্লবিক পলিসি নিয়ে দেশকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অনেক সফলতাও আছে। টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে শুধু যে দেশে দুর্নীতি-লুটপাট বেড়েছে, তা নয়। দেশে উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। পদ্মা সেতু ছাড়াও এখন আমাদের হাতের নাগালে মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মানুষ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে খুব সহজে যেতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার মধ্যে যানজট অনেক বাড়লেও যারা এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা ভোগ করছেন, তারা তো বেশ শান্তিতে আছেন। কারণ, ১০ মিনিটেই এখন ফার্মগেট কিংবা হাতিরঝিল থেকে এয়ারপোর্ট আসা-যাওয়া করা যায়। এভাবে দেশজুড়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যার সুফল মানুষ পাচ্ছে। তবে ঢাকা শহরকে এখনো আমরা সেভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারিনি। সরকার যদি ১৪ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার উপর দিয়ে গাজীপুর এক্সপ্রেসওয়ে করার প্রকল্প হাতে নিতে পারত, তাহলে আজ ঢাকার ওপর এত চাপ থাকত না। ঘনঘন ওভারপাস আর রাস্তার মাঝখানে ঘর তুলে উত্তরা থেকে গাজীপুর সড়কটাকে রীতিমতো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বরং এখানে যদি শুরুতেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হতো, তাহলে মাত্র ২০ মিনিটে গাজীপুর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করা সম্ভব হতো। 

তিনি আরও বলেন, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট রয়েছে, এ কথা সত্য। তারপরও আমি বলব, আমাদের মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অনেক ভালো কাজ করছেন। উনি একজন শিল্পবান্ধব প্রতিমন্ত্রী। শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য উনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, সব ভালো কাজ তো একদিনে হবে না। সরকার নিশ্চয় ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। আর আমরা বিরোধী দলের সংসদ-সদস্য হিসাবে জনস্বার্থে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা যেমন করতে চাই, তেমনই সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করব না। 

বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জাতীয় পার্টির এই সংসদ-সদস্য বলেন, বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ এখন রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে চলেছে। যার বাইরে আমরাও নই। তবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমরা ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি। আমার মতে, বাংলাদেশ এখন কঠিন এক সংকটকালীন অবস্থা পার করছে। কিন্তু আমি মনে করি, এ সংকট একদিনে হয়নি। এর অন্যতম কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় চলে এসেছে যে, সাধারণ মানুষ ছাড়াও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। প্রতিদিন তারা ধারদেনা করে দিন পার করছে। ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে গিয়ে ডলার পারচেজ করতে হচ্ছে বেশি দামে। দেশের একজন শিল্পপতি হিসাবে আমরা যারা পণ্য রপ্তানি করে ডলার আয় করছি, তাদের জন্য সমস্যা এখনো বেশি প্রকট না হলেও সামনের দিনগুলো খারাপ সংকেত দিচ্ছে। 

তিনি বলেন, তবে আমি বেশি শঙ্কিত বিদেশি ষড়যন্ত্র নিয়ে। নানা কারণে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষমতাধর বিদেশি মোড়লরা যে যার স্বার্থে আমাদের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে। যদিও এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহস করে বেশকিছু সত্য কথা জনসম্মুখে বলে দিয়েছেন। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা এখন বেশি শঙ্কিত। কারণ, এসব স্বার্থান্বেষী মহল যেখানে একবার হাতছানি দিয়েছে, তারা ছলেবলে সে দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমি এ রকম অঘটনের শঙ্কা নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুকে সামনে এনে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যে সামরিক শক্তির বলয় গড়ে তোলার অপচেষ্টা হচ্ছে তাতে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। কুকি-চিনসহ বেশকিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে। 

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, রাজনীতি এবং কূটনীতিতে কেউ কখনো চিরস্থায়ী বন্ধু হয় না। যে যার স্বার্থ নানা কৌশলে আদায় করে নিতে চায়। ইতোমধ্যে আমরা এ রকম ফাঁদে যদি পা দিয়ে থাকি, তাহলে সামনে আমাদের সবার জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। বাস্তবে সবাই আমাদের ব্যবহার করছে। আমাদের কাছ থেকে অনেকে অনেক কিছু আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু বিপরীতে আমরা কিছুই পাইনি। শুধু ঋণের ভারে দিনদিন জর্জরিত হচ্ছি। মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ নিশ্চয় আগের তুলনায় অনেক বেশি। আজ যে শিশু জš§ নিচ্ছে, তার ঘাড়েও ঋণের বোঝা যুক্ত হচ্ছে। ফলে আমি মনে করি, জাতি হিসাবে আমাদের আরও সতর্ক, সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ করে আমরা যদি দেশের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে না পারি, তাহলে ওরা আরও বেশি করে সুযোগ নেবে। তাই এখনো সময় আছে, দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবার আগে দেশ। 

তিনি বলেন, সামনে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আমাদের বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। অনেকের নজর এখন তিস্তার দিকে। কেউ চায় অস্ত্র বেচতে, কেউ চায় তিস্তা প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ, কেউ আবার বড় ঋণের ঝুলি নিয়ে বসে আছে। কিন্তু তারাও এবার নিজেদের স্বার্থ ষোলো আনা উসুল না করে ঋণ অনুমোদন করবে না। ওদিকে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ডলার সংকটের কারণে আমরা অনেক বিদেশি পাওনা বা দায়দেনা পরিশোধ করতে পারছি না। কারণ, দিতে গেলে ডলারের স্থিতি আরও নিচে নেমে আসবে। কিন্তু পাওনাদাররাও বসে নেই। ঘনঘন তাগাদা দিচ্ছে। এর মধ্যে তারা পাওনা ডলারের জন্য চার্টার্ড বিমানে ঘুরেও গেছে। ফলে পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। বর্গিরা সব চারদিকে ফণা তুলে ঘোরাফেরা করছে।
জাতীয় পার্টির এ সংসদ-সদস্য আরও বলেন, এসব বোঝার জন্য এখন আর অর্থনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে। এর অন্যতম কারণ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। সবার হাতে হাতে প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছেন। সেখানে ইউটিউব, ফেসবুক খুললেই সারা বিশ্বের তথ্য চলে আসে। এখন ঘরে বসেই সব খবর পাওয়া যায়। আর সবাই তো মিথ্যা কথা বলে না। অনেকে হাতেকলমে হিসাব কষে সব ফাঁস করে দিচ্ছে। তাছাড়া মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে নিজেই হালচাল সব বুঝতে পারছে। বাজেট তো ৩০ জুন পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো-এখন যে মানুষগুলো ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেও মাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, তার বাজেটের পর কী হবে। নির্ঘাত বাজেটের পর আরও কয়েক দফা দ্রব্যমূল্য বাড়বে। বেড়ে যাবে যে কোনো সেবার দাম। কিন্তু যার আয় বাড়ানোর সুযোগ বা সক্ষমতা নেই, তার কী হবে? বিশেষ করে যারা সাধারণ চাকরিজীবী, যাদের আয় বাড়ছে না, তাদের তো একেবারে পথে বসতে হবে। ফলে আমরা যারা সংসদে আছি, তাদেরকে এ মানুষগুলোর কথা ভাবতে হবে। এমনভাবে বাজেট দিতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে খরচের বোঝা না বাড়ে। 

তিনি বলেন, বক্তব্য আর বেশি দীর্ঘায়িত করব না। সবশেষে একটা কথা বলতে চাই। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের প্রত্যেককে নিজেকে একটা প্রশ্ন করতেই হবে। সেটি হলো-আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছি। এই যে আমরা একটু ভালো থাকার জন্য কেউ কেউ নির্দ্বিধায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছি, পারলে পুরো বাংলাদেশটা রেজিস্ট্রি করে নিতে চাই। ঢাকা শহরের সব দামি প্লট ও ফ্ল্যাটগুলো নিজের স্ত্রী-সন্তানদের দিতে চাই। আরও বেশি ভালো থাকতে বিদেশে বিলাসী জীবনের জন্য দেশটাকে বিক্রি করে দিতেও পিছপা হব না। আমি বলব, তারা কিন্তু সবাই বোকা। কারণ, প্রতিটি মানুষ সারা জীবন এত দৌড়ঝাঁপ করে যা আয়রোজগার করে, তার ৩০ ভাগ অর্থসম্পদও নিজে ভোগ করে যেতে পারে না। তাহলে আমার প্রশ্ন-এতসব ভয়াবহ পাপ এবং দেশবিরোধী কাজ আমরা কার জন্য করছি?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বাজেট আলোচনার শুরুতেই অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। স্মরণ করেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান জাতীয় পার্টির সুযোগ্য চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতিও। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জনগণের পাশে থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গঠনমূলক সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন। নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যিনি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শক্ত হাতে দল পরিচালনার পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

খুলনা নগরীর শেরে বাংলা রোড। সড়কের দুপাশজুড়ে এখন লেদ মেশিনের যন্ত্রাংশ থাকলেও, এক সময়ে কাঁচা চামড়ার স্তূপ থাকতো এখানে। অর্ধশতাধিক দোকান থাকায় এলাকাটিও পরিচিত ছিল চামড়াপট্টি হিসেবে। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়া বাজারের একটি ছিল খুলনায়। কোরবানির ঈদ বাদেও এই মার্কেটে প্রতিদিন চলতো চামড়া বেচাকেনা।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকরা এখান থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন। বছরে কোটি টাকার ব্যবসা হতো এখান থেকে। এলাকাটি ধীরে ধীরে জনবহুল হয়ে ওঠায়, কাঁচা চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্রশাসনের চাপে ২০১৯ সালে শেখপাড়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

এরপর থেকেই চামড়া সংরক্ষণ ও বেচাকেনার নির্ধারিত স্থান নেই খুলনাতে। কোথাও সড়কের পাশে উন্মুক্ত স্থানে, নগর সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় অস্থায়ীভাবে চামড়া জড়ো করেন তারা। কোরবানির সময় বিপুল সংখ্যক চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনেক চামড়াই নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।
 
খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘোষ বলেন, সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় প্রতিদিন কসাইখানা থেকেই চামড়া বিক্রি করে দেয়া হয়। কিছু কসাই মাংসের দোকানে স্বল্প পরিসরে চামড়া সংরক্ষণ করেন। সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
 
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে বিক্রয় উপযোগী করতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। আমাদের নির্ধারিত স্থান না থাকায় সড়কের উপর রেখে চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়। দুই তিন দিন পরেই পুলিশ আমাদের উঠিয়ে দেয়। এতে চামড়া নষ্ট হয়। বিক্রি করতে পারি না।’

যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা ও স্বল্প মজুরিতে কর্মী নিয়োগ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। দেশটির শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪১ লাখ, যা একটি নতুন রেকর্ড। খবর দ্য গার্ডিয়ান। 

দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিইউসি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১১-২৩ সালের মধ্যে অনিশ্চিত কর্মপরিবেশে জনবলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ। অনিশ্চিত কর্মপরিবেশের মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম কর্মঘণ্টার অনুল্লেখ, স্বল্প মজুরিতে আত্মকর্মসংস্থান ও নৈমিত্তিক বা মৌসুমি কাজ। এর মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যা কর্মীদের জন্য শারীরিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া শ্রম অধিকারের নিয়মগুলো এসব ক্ষেত্রে মানা হয় না।

২০১১-২৩ সালের মধ্যে বিধিসম্মত কাজের তুলনায় অনিশ্চিত কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ দ্রুত বেড়েছে। আগের এক পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের প্রতি আটজন কর্মীর মধ্যে একজন এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। ২০১১ সালের পর থেকে চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া কর্মসংস্থান বাড়ার পেছনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে স্বল্প মজুরি দেয় এমন খাতগুলো।

টিইউসি বলছে, অনিশ্চিত ও স্বল্প মজুরির কাজ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের অধিকার ও মজুরির বিষয়গুলো এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সবার আগে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সংস্থাটির জেনারেল সেক্রেটারি পল নোভাক বলেন, ‘আমাদের এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যারা কাজের মূল্যায়ন করবে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে আমরা অনিরাপদ ও স্বল্প মজুরির কর্মসংস্থানের বিস্ফোরণ দেখছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌শ্রমিক অধিকারের অপর্যাপ্ততা ও স্বল্প মজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যা দেশের প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শ্রমিকদের বর্তমান প্রকৃত মজুরি ২০০৮ সালের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া সারা দেশে মানুষ এমন সব চাকরিতে আটকা পড়েছে, যেখানে কোনো সুরক্ষা নেই, এমনকি বেতনও কম।’

পেশাদারদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে ইনস্টিটিউশন অব অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ। সংস্থাটির নীতিনির্ধারণ বিভাগের প্রধান রুথ উইলকিনসন বলেন, ‘অস্থায়ী কাজগুলো মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌বিষয়টি খুবই শোচনীয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। চুক্তিভিত্তিক কিংবা স্থায়ী সব শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রতিটি কোম্পানির একটি মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে।’

এদিকে টিইউসির পল নোভাক বলেন, ‘‌বিরোধী দলের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। তারা ঘণ্টা চুক্তি ও ছাঁটাই-পুনর্নিয়োগ কৌশলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, অসুস্থতাকালীন বেতন এবং অন্যায্য বরখাস্ত থেকে সুরক্ষার মৌলিক অধিকার প্রবর্তন করার কথা জানিয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো কোনো কর্মীর চাকরিতে যোগদানের প্রথম দিন থেকেই যেন তার অধিকার সমুন্নত থাকে।

টিইউসি যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ফেডারেশন, যা সম্মিলিতভাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বেশির ভাগ ইউনিয়নবদ্ধ শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটিতে প্রায় ৫৫ লাখ সদস্য ও ৪৮টি অনুমোদিত ইউনিয়ন রয়েছে।

ভিত্তিপ্রস্তর বা ফলক স্থাপনের পর সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা, যা জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নে অবস্থিত। জায়গাটি আবার ত্রিশাল উপজেলার সীমান্তেও পড়েছে। এর ফলে দুই উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
 

এ নিয়ে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এটি বাস্তবায়ন না হওয়াটা আমাদের দুর্ভাগ্য। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের জন্য চেম্বারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু অগ্রগতি হচ্ছে না। এটি বাস্তবায়ন হলে শিল্পায়নের পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো।’

দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ।

দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৬ সালের এপ্রিলে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন করে ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে সরকারিভাবে পাঁচটি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাকি চারটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। এই ৯টিরই একটি ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেটি সরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে ময়মনিসংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিফলকও উদ্বোধন করেছিলেন।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। জায়গাটি মাটি ভরাট করে রাখা আছে। নতুন কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় ভূমি অফিসের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ মে ৪৮৭ দশমিক ৭৭ একর জমি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৪ দশমিক ৮৪ একর বন্দোবস্ত ও ৩২ দশমিক ৯৩ একর অধিগ্রহণ করার কথা। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার অনুকূলে সেই জমি বন্দোবস্ত দিতে ও প্রয়োজনী কিছু তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়। একই মাসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির স্থান পরিদর্শন করে। তারা কিছু জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ৪৯২ দশমিক ৩৬ একর জমি নিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-২ থেকে ২০২০ সালের ১ মার্চ পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চররামমোহন মৌজায় ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন দাগের ৪২৩ দশমিক ৬১ একর খাস জমি ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও প্রস্তাবিত জমি নিয়ে মামলা চলছে। তাই বন্দোবস্ত দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই।

পরে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে মামলার কারণে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ২০০ একর জমি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ৫ জুন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিকল্প হিসেবে নিষ্কণ্ঠক ২০০ একর জমির প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। তারপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্বাচিত স্থানে ব্র‏হ্মপুত্র নদ খনন করে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। এর বাইরে দৃশ্যমান আর কোনো অগ্রগতি নেই।

উচাখিলা মরিচারচর গ্রামের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হলে স্থানীয় অনেকের জীবিকার ব্যবস্থা হবে, এমন আশাই করেছিলাম আমরা। কিন্তু কাজ আগায়নি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হবে কি হবে না, তা বলতে পারছি না। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়িত হলে ব্রহ্মপুত্র নদের পারের মানুষের জীবন পাল্টে যেত।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাইল হোসাইন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ২০০ একর জমির বন্দোবস্তের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী অধিগ্রহণ করতে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। এটি হয়তো এখনো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেও ভূমিসংক্রান্ত জটিলতায় সেটি বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই। এ অঞ্চলে কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়িত হলে এলাকায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূর হবে, মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। দ্রুত যেন এটি বাস্তবায়ন হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত এবং জ্বালানি খাত নিয়েও কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনার কথা নেই। বাজেটে ‘সুখী, ‘সমৃদ্ধ’, ‘উন্নত’—এসব শব্দ আছে। কিন্তু এসব করার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট–উত্তর আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটে ‘সুখী, ‘সমৃদ্ধ’, ‘উন্নত’—এসব শব্দ আছে। কিন্তু গরিব মানুষের সুখী হওয়ার মতো কিছু নেই। বাজেট জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব করলেই সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি। এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক খাত ঠিক না হলে বেশি দূর এগোনো যাবে না।’

সাবেক গভর্নর আরও বলেন, ‘বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও জ্বালানি—এসব খাত নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। বেসরকারি খাতের ঋণ কাদের কাছে যায়, তা আমরা জানি। এ জন্য ভবিষ্যতে গুলশান, বনানীর রেস্টুরেন্টে ভিড় আরও বাড়বে। একটি রুটি কিনলে আপনাকেও ১০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আবার “শাহ আলম’কেও ১০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের পথের বাধা দূর করতে হবে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে পদে পদে বাধা আছে।

‘বাজেটে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে প্রবৃদ্ধির মোহ দেখা যায়’—এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, পৌনে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বিনিয়োগ লাগবে। বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত জিডিপির তুলনায় ২৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ১০ বছর ধরে এই অনুপাত ২৩-২৪ শতাংশেই থমকে আছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও কমানো হয়েছে। তাহলে এত বিনিয়োগ আসবে কীভাবে—এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হলে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সরকারি তরফে তেমন উদ্যোগ নেই। আবার ডলারের বাড়তি দামে আমদানি খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থায় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা অসম্ভব। প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, ব্যাংক খাত ভঙ্গুর ও খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। এই খাত সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগকে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অনৈতিক সুবিধা হিসেবে দেখেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, তিন মাস পরপর জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয়ের ফলে মানুষের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আবার ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অস্থিরতাও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে। এই প্রত্যাশাজনিত মূল্যবৃদ্ধি কমানো না গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে প্রভাবশালীরা ব্যবসা করছেন না। এই টাকায় তাঁরা ব্যাংক কিনে ফেলছেন। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি দেশের ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কারণে শিল্প খাতে ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, এক ব্যাংকের ৬০ শতাংশ ঋণ গেল ৬ জনের কাছে। এমন ব্যাংকের এমডির মেয়াদ পাঁচবার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্র যদি লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে কাজ করে, তাহলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর কেন খেলাপি ঋণের দোষ চাপানো হয়? তাঁর মতে, বসুন্ধরায় জমি কিনলে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়, আর অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি কিনলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়। এটা কি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ?

ইআরএফের ঢাকার পল্টনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম।

২০১৭ সালের অক্টোবরের পর থেকে বুলগেরিয়ার রুজা ইগনাতোভার ছবি এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে ঝুলছে। বিশ্বব্যাপী বড় বড় গণমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন কম হয়নি। ইউরোপেও শীর্ষ অপরাধীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। অভিযোগ, উধাও হওয়ার আগে তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণার মাধ্যমে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এখন রুজা কোথায় বা তাঁর কী হয়েছে—সেই উত্তর খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড প্যানোরমা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছে, তাঁর সঙ্গে বুলগেরিয়ার শীর্ষ এক অপরাধীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ রয়েছে, রুজা ইগনাতোভাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এখন এই অভিযোগ ঘিরে অনেক প্রশ্ন চারপাশে। কে তাঁকে হত্যা করল? নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এত দিন যাঁদের অর্থ দিয়েছেন, তাঁদের হাতেই কি তিনি খুন হলেন? রুজা কি চুরির সেই শত শত কোটি ডলার ভোগ করতে পেরেছেন?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক রুজা ইগনাতোভার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জার্মানিতে। ২০১৪ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান ওয়ানকয়েন চালুর আগে আর্থিক বিভাগে তাঁর সফল ক্যারিয়ার ছিল। রুজা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে ওয়ানকয়েনে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেছিলেন।

রুজার দাবি ছিল, বিটকয়েনের বিনিয়োগকারীদের তুলনায় ওয়ানকয়েনে বিনিয়োগকারীরা বেশি লভ্যাংশ পাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রুজা অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে এই বিনিয়োগ নিয়ে প্রতারণা করেছেন। বিটকয়েনে লেনদেনে ডিজিটাল রেকর্ড থাকলেও ওয়ানকয়েনে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

২০১৭ সালে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা যখন রুজাকে প্রায় ঘিরে ফেলছিলেন, তখনই বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়া থেকে গ্রিসের রাজধানীর এথেন্সের  উদ্দেশে উড়োজাহাজে চড়ে বসেছিলেন। আর এরপরই তিনি ‘নাই’ হয়ে যান। এখনো তাঁর কোনো হদিস মেলেনি।

গত এক বছর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের আই ইনভেস্টিগেশনস এবং প্যানোরমা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে, আসলে রুজার সঙ্গে কী হয়েছে, তিনি এখনো বেঁচে আছেন কি না। তদন্তের মূল বিষয় ছিল রুজার চারপাশের লোকজন কারা ছিল, সেটা খুঁজে বের করা।

এফবিআইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের রিচার্ড রেইনহার্ডও ওয়ানকয়েন নিয়ে তদন্ত করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তদন্তের সময় অন্যতম এক মূল চরিত্রের সন্ধান পাওয়া যায, আগে যার নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

রুজাকে যখন খোঁজা হচ্ছে তখনই তদন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে অন্যদিকে মোড় নেয়। শুনতে পাওয়া যায়, তিনি খুন হয়েছেন। কিন্তু এটি কি সত্যি? বিবিসি যা বুঝতে পেরেছে তা হলো, রুজাকে নিরাপদে রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রিস্টোফোরস নিকোস আমানতিদিস হলেন সেই মূল চরিত্র; যিনি তাকি নামে পরিচিত।

২০২৩ সালে অবসরে যাওয়ার পর রিচার্ড রেইনহার্ড প্রথম বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করছেন, এমন একজন।’ তিনি আরও বলেন, তদন্তে তাকির নাম বেশ কয়েকবার এসেছে।

বিবিসি জানায়, রিচার্ড যা বলেছেন, এমন তথ্য তাঁদের কাছে আগেও ছিল। কারণ, মার্কিন সরকারি কৌঁসুলিরা ২০১৯ সালে তাঁদের বলেছিলেন, রুজার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দলের প্রধান ছিলেন বুলগেরিয়ার একজন বড় অপরাধী। তবে তাঁর নাম বলেননি তাঁরা।

একজন সহকারী অ্যাটর্নি বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, বুলগেরিয়ার মাদক পাচারকারী ওই ব্যক্তি ওয়ানকয়েনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন, তিনি রুজার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে ছিলেন।’ মার্কিন সরকারের আরেক আইনজীবী বলেছেন, তাকি সেই নিরাপত্তা দলের প্রধান। রুজার নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত।

রিচার্ডের মতে, মানুষ যতটা মনে করে, রুজা ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি চতুর অপরাধী। বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, উধাও হওয়ার আগেই রুজা ও তাকির মধ্যে যে যোগাযোগ ছিল, সেটি বুলগেরিয়ার পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ইউরোপোলের ফাঁস হওয়া নথিতেও সেই কথা রয়েছে। সেসব নথিতে বলা হয়, পুলিশের ধারণা, মাদক পাচারের অর্থ লেনদেনের জন্য তাকি ওয়ানকয়েনের আর্থিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছেন।

বুলগেরিয়ায় তাকিকে দেশটির সবচেয়ে সংগঠিত  অপরাধ চক্রের প্রধান ও বড় ধরনের মাদক কারবারি হিসেবে সন্দেহ করা হয়। অস্ত্র লুট, মাদক পাচার ও খুনের মামলায় তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের নাম এসেছে। কিন্তু কোনো অপরাধেই তাঁর বিচার হয়নি।

২০২২ সাল থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় তাকি অপরাধ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছেন, এমন অভিযোগ তদন্ত করেছিলেন তৎকালীন উপমন্ত্রী ইভান রিস্তানভ। তিনি এখন তাকির সম্পর্কে বিবিসিকে বলছেন, ‘আমরা যখন তাকিকে নিয়ে তদন্ত করি, তখন তিনি বুলগেরিয়ার মাফিয়াপ্রধান। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাধর।’

ইভান রিস্তানভ বলেন, ‘তাকি ছিলেন প্রেতাত্মা। আপনি তাঁকে কখনোই দেখতে পাবেন না। আপনি কেবল তাঁর সম্পর্কে শুনতে পাবেন। তিনি আপনার সঙ্গে অন্য লোকের মাধ্যমে কথা বলবেন। আপনি যদি তাঁর কথা না শোনেন, তবে পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বিদেশি সংস্থাগুলোসহ সব ধরনের তদন্ত থেকে রুজাকে রক্ষা করতে পারতেন।’

তাকি এখন দুবাইয়ে আছেন বলে মনে করা হয়। সেখানে রুজা বেশ বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। সেখানে তাঁর বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওয়ানকয়েন প্রতারণার মাধ্যমে সেগুলোতে শত শত কোটি ডলার জমা হয়েছে।

তবে তাকি ও রুজার কীভাবে দেখা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। ওয়ানকয়েনে তাঁরা শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন কি না, সেটাও জানা যায়নি। বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, তাঁদের দুজনের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তাকি ছিলেন তাঁর মেয়ের গডফাদার।

রুজার ঘনিষ্ঠ বুলগেরিয়ার একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছিলেন, রুজা সম্ভবত নিরাপত্তার বিনিময়ে তাকিকে এক লাখ ইউরো করে দিতেন। এ ছাড়া এ দুজনের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। দ্য ইউরোপোলের নথিতে বুলগেরিয়ায় কৃষ্ণসাগরের উপকূলে একটি প্লট বিক্রি নিয়ে জটিল এক চুক্তির কথা বলা হয়। সেখানে দেখা যায় চুক্তিতে রুজার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাকির স্ত্রী জড়িত।

পুলিশের গোপন কিছু নথি বিবিসিকে সরবরাহ করেছেন রুজার সাবেক এক গুপ্তচর এবং উপদেষ্টা ফ্রাঙ্ক স্নাইডার। তিনি বলেন, তাঁর বস অপরাধী ও গ্যাংস্টারদের সঙ্গে কাজ করেন।

ফ্রান্সে যখন স্নাইডারের বাড়িতে বসে এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি ছিলেন গৃহবন্দী। ওয়ানকয়েন কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তবে তিনি সেই অপরাধীদের নাম প্রকাশের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।  তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে তাদের নাম বলব না। কারণ, আমার পরিবার আছে...এটি সত্যি, এরা ভয়ংকর সংগঠিত অপরাধ করত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে হয়তো রুজার রক্ষাকারীরাই আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন।’

২০২২ সালে বুলগেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক দিমাতার স্টোয়ানভ এবং তাঁর সহকর্মীদের হাতে পুলিশের একটি প্রতিবেদন এসেছিল। সেটি পাওয়া গিয়েছিল খুন হওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়। সেখানে দেখা যায়, পুলিশের এক তথ্যদাতা তাকির শ্যালককে মদ্যপ অবস্থায় বলতে শোনেন তাকির নির্দেশে রুজাকে ২০১৮ সালে হত্যা করা হয়েছে। এরপর মরদেহ টুকরা টুকরা করে ইয়টে করে নিয়ে আয়োনিয়ান সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।

দিমাতার বলেন, ‘এটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। দেশটির কর্মকর্তারা পুলিশের এই নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাকির অপরাধের একাধিক সহযোগীও এটি বিশ্বাস করেন।’

তবে বিবিসি নিজেদের পক্ষ থেকে এসব দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ওই সহযোগীদের একজন ক্রাসিমির কামেনোভ, যিনি কুরো নামে পরিচিত, তিনিও খুনের দায়ে ইন্টারপোলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আছেন।

দিমাতার বলেন, ‘কুরো তাকে বলেছেন, তাকিকে রুজার সামনে তাঁর অপরাধজগতের ব্যবসায় নিয়ে আলাপ করতে তিনি শুনেছেন। তখন তিনি তাকিকে এটা করা ঠিক হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, চিন্তা কোরো না, তিনি বেশি দিন থাকবেন না।’

কুরো আরও দাবি করেছিলেন, তিনি তাকির প্রসঙ্গে সিআইএ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে রুজাকে হত্যার প্রসঙ্গও ছিল। কুরোর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বৈঠকটি হয়েছিল ২০২২ সালে। ২০২৩ সালে কুরো স্ত্রী ও দুই সহযোগীসহ কেপটাউনের বাড়িতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ হত্যাকারীদের খুঁজছে।

কিন্তু বুলগেরিয়ার সাবেক উপমন্ত্রী হরিসতানোভ বিশ্বাস করেন, কুরোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাকি জড়িত। হরিসতানোভ বলেন, তাকির সম্পর্কে যাঁরা বেশি জানেন, তাঁদের সরিয়ে ফেলা তাঁর জন্য জরুরি ছিল।

রুজার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক দিমিতার ও তাঁর সহকর্মীরা হত্যার হুমকি পেয়েছেন। তিনি চতুর্থবারের মতো সাময়িক সময়ের জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। রুজাকে হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য কী, সেই বিষয়ে দিমিতার কিছু দাবি না করলেও সম্পত্তির রেকর্ড ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, বুলগেরিয়ায় থাকা রুজার অনেক সম্পদ তাকির লোকজন ভোগ করছে।

রুজাকে হত্যার দায়ে তাকিকে কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। রুজার মরদেহও কেউ দেখেনি। আর তদন্তকারীরাও বলেন, তাকিকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগের সাবেক তদন্তকারী রিচার্ড রেইনহার্ড মনে করেন, রুজা সম্ভবত মারা গেছেন। যদিও তিনি এই হত্যার সঙ্গে তাকির সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ দেখতে পাননি। তিনি বলেন, ‘চোরদের মধ্যে কোনো সম্মান নেই।...যদি তিনি (তাকি) মনে করেন, রুজা তাঁর জন্য হুমকি...তখন তিনি ধরা পড়ার চেয়ে তাঁকে সরিয়ে ফেলাকেই উপযুক্ত মনে করেন।’

বিবিসি তাকির আইনজীবীদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে লিখে জানতে চেয়েছিল। তবে তাঁরা কোনো জবাব দেননি। ২০২২ সালে রুজা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় শীর্ষ দশে ছিলেন। এখনো তাঁর অবস্থান সেখানেই। কারণ, রুজা মারা গেছেন। সেটার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই।

সবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হবার প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা “স্তন ক্যান্সার নিয়ে আতংক নয় ,চিকিৎসার চেয়ে জরুরি সচেতনতা !সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মূলত জিনঘটিত কারণে ৩৫–‌৪০ বছর বয়স পেরনো মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে !আলোচনাসভা, সচেতনতামূলক প্রচারের মধ্যে দিয়ে  অক্টোবর মাসেই আমরা পালন করেছি ‘‌স্তন ক্যান্সার সচেতনতা’‌ মাস। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। তবুও অনেক ক্ষেত্রে আজও সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যান্সারকে বশে আনা যাচ্ছে না। তবে সঠিক সময়ে এই রোগ ধরা পড়লে আধুনিক চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে সম্পূর্ণ আয়ত্তের মধ্যে আনা সম্ভব।

স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখনই স্তনে ক্যান্সার দেখা দেয়। মূলত মহিলাদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও পুরুষরাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মহিলারা এ অসুখের ঝুঁকির মধ্যে যতটা রয়েছেন, পুরুষরা ততটা নন। স্তন ক্যান্সারের রোগীরা সাধারণত বুকে চাকা বা পিন্ডের  মতো কিছু অনুভব করেন। তবে স্তনে চাকা বা মাংস পিন্ডের মতো কিছু মানেই ক্যান্সার, এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্তনবৃন্ত থেকে লালরঙের রস নিঃসরণ বা রক্তক্ষরণ, স্তনের ত্বকে অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ও সেখান থেকে চামড়া উঠতে থাকা ইত্যাদিকে এই রোগের লক্ষণ বলে ধরা হয়। যাঁরা এ ধরনের উপসর্গ উপেক্ষা করেন বা ভয়ে ও লজ্জায় চিকিৎসকের কাছে যান না, তাঁদের ক্ষেত্রে বগলের তলায় চাকা বা স্তনের ওপরের চামড়ায় কোঁচকানো ভাব বা ঘা নিয়ে উপস্থিত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে, রোগটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে এই রোগে কখনই স্তনে ব্যথা অনুভূত হয় না। স্তন ক্যান্সার সাধারণভাবে ৩৫ বা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলাদের সমস্যা হলেও আমাদের দেশে ৩০–এর ঘরের মহিলারাও এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিঃসন্তান মহিলা বা যাঁরা কোনও কারণে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া স্তন ক্যান্সারের বংশগত বা জেনেটিক দিকও আছে। পরিবারের কোনও মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর মা বা বোন অথবা মেয়ের (ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ) ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি ২২%‌–‌৩৩% বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ৮টি স্তন ক্যান্সারের জিন আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে বিআরসিএ ১ এবং বিআরসিএ ২ উল্লেখযোগ্য। লক্ষণ দেখা দিলে ডায়াগনসিসের জন্য সবচেয়ে ভাল ট্রিপল অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি। যেখানে প্রথমে একজন স্তন ক্যান্সার সার্জেন রোগীর পরীক্ষা করবেন ও তাঁর পরিবারিক ইতিহাস জানবেন। এরপর রোগীর ম্যামোগ্রাম বা স্তনের আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হবে এবং সার্জেন রোগীর লাম্প বা স্তনের ডেলা থেকে এফএনএসি বা কোর বায়োপ্সি করবেন। এখন এফএনএসি–র বদলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোর বায়োপ্সি করা হয়। কারণ এফএনএসি–র চেয়ে কোর বায়োপ্সি অনেকটাই উন্নত পদ্ধতি। অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে সাধারণত আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করা হয়। ৩৫ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের ক্ষেত্রে রোগ শনাক্তকরণের জন্য ম্যামোগ্রাম করা হয়। স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে প্রথমে কিছু রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বুকের এক্স–রে, বোন স্ক্যান এবং লিভারের আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত। যদি দেখা যায়, ক্যান্সার এই সমস্ত অঙ্গে ছড়ায়নি তবেই একমাত্র কিউরেটিভ সার্জারি এবং কেমোথেরাপি করে রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে সম্পূর্ণ স্তন বাদ না দিয়েও স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব। এক্ষেত্রে অপারেশনের পরে রোগীকে রেডিওথেরাপি নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে শুধুমাত্র টিউমারটি বাদ দিয়ে স্তনের বাকি অংশে রেডিওথেরাপি বা রে দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই সার্জারির সময় বগলের নীচের অংশের গ্ল্যান্ডগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয় এবং বায়োপ্সির রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে রোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন আছে কিনা। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা না পড়ে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ে, তখন নিও–অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি দিয়ে সার্জারি করাটাই ভাল। বয়স যেমনই হোক প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে প্রায় সমস্ত রোগীকেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। অপারেশন, কেমোথেরাপি ছাড়াও রয়েছে হরমোন থেরাপি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হরমোন রিসেপ্টর সেন্সেটিভ হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের অ্যান্টি–ইস্ট্রোজেন হরমোন জাতীয় কোনও ওষুধ দিলে, তা খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেয়। হরমোন ছাড়াও ‘হার টু নিউ’ নামে এক ধরনের রিসেপ্টর রয়েছে। এক্ষেত্রে হারসেপ‌টিন নামে একটি ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধটি ব্যয়বহুল হলেও, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় যার সাফল্য খুবই আশানুরূপ। যাঁদের বয়স খুব বেশি সে সব রোগীর সার্জারি বা কেমোথেরাপি না করে, হরমোন থেরাপির মাধ্যমে বেশ কিছুটা সময় রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর আছে ইমিউনোথেরাপি। তবে এই ধরনের চিকিৎসা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্রেস্ট সার্জেনের তত্ত্বাবধানেই করা উচিত। এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৮০–৮৫ শতাংশ মহিলাকে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।  প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যান্সার ধরতে প্রত্যেক মহিলাকেই নিজের শরীর নিজেকেই নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা ৪০–ঊর্ধ্ব মহিলা, বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আছেন, তাঁদের উচিত নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করানো। এই পরীক্ষায় এক বিশেষ ধরনের এক্স–রে–র সাহায্যে স্তনে চাকা অনুভব করার অনেক আগেই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ক্যান্সারের জীবাণু আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে কিনা সেটা আগে থেকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়াটাই ভাল। মাসে একবার নিজেই নিজের পরীক্ষা করুন। অর্থাৎ সেলফ অ্যাসেসমেন্ট। পিরিয়ডের এক সপ্তাহ পরে, সাধারণভাবে স্নান করার সময় বা জামাকাপড় পরার সময়ে এই পরীক্ষা করতেই পারেন। আয়নার দু’পাশে হাত রেখে দাঁড়ান। দু’দিকের স্তনের মধ্যে কোনও অসামঞ্জস্য আছে কিনা লক্ষ করুন। এবার মাথার ওপর দু’হাত তুলুন। মাথার পাশে রাখুন। দেখুন দু’দিকে কোনও অসামঞ্জস্য নজরে পড়ে কিনা। হাতের চেটো দিয়ে প্রথমে একদিকের ও পরে অন্যদিকের স্তন পরীক্ষা করুন। কোনওরকম চাকা বা ফোলা ভাব আছে কিনা ভাল করে লক্ষ করুন। এবারে দেখুন নিপ্‌ল বা স্তনবৃন্তে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা। পরিবর্তন বলতে একদিকের নিপ্‌ল ভেতর দিকে ঢুকে গিয়েছে কিনা বা নিপ্‌লের পাশে কোনও ঘা আছে কিনা। যদি ঘা–এর সন্ধান পান তাহলে অবিলম্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জেনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে সুস্থ জীবনে ফেরাটা কঠিন নয়। এই অসুখের চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম। এই টিমের তত্ত্বাবধানে স্তন ক্যান্সার ও এই সংক্রান্ত সবরকম সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। অসুখ–বিসুখ নিয়ে কোনওরকম লজ্জা বা তা চেপে না রাখাই ভাল। এতে রোগের বাড়বাড়ন্তটা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তখন তাকে নিয়ন্ত্রণে আনাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্তন ক্যান্সারের মতো অসুখ নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে, উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করুন। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতিতে গত দশ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পশ্চিম দুনিয়ায় ব্রেস্ট সার্জারি আলাদা বিষয় বা স্পেশ্যালিটি বলে গণ্য করা হচ্ছে। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক অথবা নার্সরা শুধুমাত্র ব্রেস্ট সংক্রান্ত সমস্ত চিকিৎসা করা হয় ! আমাদের দেশে এর অত্যাধুনিক চিকিৎসা শুরু হয়েছে সফলভাবে !একমাত্র স্বাস্থ্যসচেতনতার মাধ্যমেই উন্নততর দেশগুলো স্তন ক্যান্সারের মোকাবিলা করতে পেরেছে।‌‌‌‌‌‌ সবাইকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হতে বলছি না যিনি তাঁর দেহে বিআরসিএ ১ জিনের উপস্থিতি জানতে পেরে (‌স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা ছিল ৮৭%‌)‌ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারের উপায় হিসেবে দুটি স্তনই বাদ দিয়ে দেন। তবে দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে ভারতীয় নায়িকা মুমতাজ কিংবা জেন ফন্ডার মতো অসংখ্য সেলিব্রিটি দিব্যি বেঁচে আছেন বিশ্বজুড়ে।নিকাশ কালো রাতের পর ভোরের আলো আসবেই !

ডাঃ কৃষ্ণারুপা মজুমদার

সহযোগী অধ্যাপক 

জেনারেল এবং ক্যান্সার সার্জারি বিভাগ 

বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় 

চেম্বার ঃ আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল 

ধানমন্ডি , ০১৭৭৭১৩১৩৯১

ত্বক দেহের একক বৃহত্তম অঙ্গ। এ জন্য দেহের সুস্থতার জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক

পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে দেহের খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এ জন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রন্থি নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

স্নান

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে থাকে। কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

মসৃনতা

কোনো রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, লোশন, জেল এমনকি সাবান হিসেবে ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

পোশাক পরিচ্ছদ

টাইট এবং সিনথেটিক পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিলেন, নাইলন ইত্যাদি পরিহার করুন।

হিউমিডিফায়ার

ঘরে জলীয় বাষ্পের অনুপাত ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে রুমের জলীয় বাষ্প ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মনে রাখবেন, একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন শীতে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী জনিত ত্বকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নিন। সর্বোপরি—

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন

২. খোলামেলা ও আলোকিত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন

৩. চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার জন্য অনেক আনন্দ ও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

 

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।