অর্থ - বানিজ্য

এবার আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকটি থেকে সালমান এফ রহমানকে সরিয়ে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক  হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবতাদুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংকের অধ্যাপক সাজ্জাদ জহির, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাজী মো. মাহবুব কাশেমকে। আর ব্যাংকটিতে ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সরকারি শেয়ার থাকায় সরকারের দুইজন সরকারি প্রতিনিধিকে পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা এবং অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মুহাম্মাদ মনজুরুল হক।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ঋণ খেলাপির দায়ে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক পদ হারান সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান ফজলুর রহমান।

মূলত খেলাপি থাকায় ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় সায়ানের পরিচালক হিসেবে পুনর্নিয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে তিনি পরিচালক পদ হারান। গত ১১ আগস্ট আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার সালমান এফ রহমানকেও সরানো হলো। উল্লেখ্য, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেসহ বেক্সিমকোর সব পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে ব্যাংকটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালকে আটক করেছে র‍্যাব। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে তাঁর গুলশানের কার্যালয় থেকে তাঁকে আটক করা হয়। 

রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান।

তিনি জানান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালকে রাজধানীর গুলশান থেকে আটক করেছে র‍্যাব–১

র‍্যাব–১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালকে আটক করা হয়েছে। রাতে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। 

র‍্যাব–১ এর অধিনায়ক বলেন, তাঁকে আটক করতেই গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। তাঁকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হবে। 

এর আগে বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান জানান, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়ে ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরো বিক্রি করার অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। 

তিনি বলেন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়ালের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সোনা ও হিরা আমদানির নামে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুম দিয়ে ডায়মন্ডের নামে উন্নতমানের কাচের টুকরো বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

বেসরকারি ৯টি ব্যাংকের পে-অর্ডার, চেক ও ব্যাংক গ্যারান্টি সেবা বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস শাকুর সব বিভাগীয় প্রধানদের চিঠির মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেন।

ব্যাংকগুলো হলো, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, এই ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোর চেকের লেনদেন নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এজন্য সতর্কতা হিসেবে এসব ব্যাংকের চেক না নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দায়মুক্তির আইনে অনুমোদিত ৪৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাতিল হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩১টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এবং ১২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’-এর আওতায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রকল্পগুলোর প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও এগুলোর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়নি। আর রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ শেষ হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়েছিল।

গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এদিকে বিপিসির আওতাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপকে। প্রস্তাবিত ‘ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২’ শীর্ষক প্রকল্পটি বিপিসি ও ইআরএল এবং এস আলম গ্রুপের মধ্যে সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ চুক্তির আওতায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন ছিল। ঐ প্রস্তাব গতকাল বাতিল করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। একই সঙ্গে প্রকল্পটির ডিপিপি বৈদেশিক মুদ্রার হালনাগাদ রেট অনুযায়ী প্রাক্কলন এবং সকল ক্রয় পরিকল্পনা পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী প্রণয়নপূর্বক পরিকল্পনা কমিশনে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠাতে বিপিসিকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

কালো টাকা সাদা করার রীতি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সরকারের তেমন কোনো লাভ হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, এটা থেকে সরকার যেটুকু টাকা আনতে পারে, সেটা টাকা দিয়ে সরকারের খুব আগায় না। তবে মূল্যবোধ অবক্ষয় হয়। এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।

এ দিন গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা নিজে বৃহস্পতিবার এই দলিলে স্বাক্ষর করেন। অন্যান্য উপদেষ্টারা এসময় তাকে স্বাগত জানান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ৭শ’রও বেশি মানুষ এখনও গুমের কারণে নিখোঁজ রয়েছে। আর যেনো কেউ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে না পারে সেজন্যেই কনভেনশনে সই করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন করা হবে বলেও জানান তিনি।

রিজওয়ানা বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে হজের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা বৈষম্যমূলক। তাই এই আইনটি বাতিল করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বেসরকারি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশের (এক্সিম) পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) এক আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ বাতিল ঘোষণা করে। একইসাথে তিনজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকসহ দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো আদেশে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং সুশাসন নিশ্চিত ও জনস্বার্থে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

নতুন পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন, মো. নজরুল ইসলাম স্বপন, মো. নুরুল আমিন ও অঞ্জন কুমার সাহা। এছাড়া, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে রয়েছেন, এস এম রেজাউল করিম ও খন্দকার মামুন।

আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ‘অনিয়মে’ নাম আসা রাজশাহীভিত্তিক শিল্প গ্রুপ নাবিলের ঋণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকায়; যেসব ঋণ দিতে নিয়ম না মানার তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের বৃহত্তম এ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত কয়েকবছরে ঋণ ‘অনিয়মে’ নাম আসা আলোচিত নাবিল গ্রুপকে নামে ও ভিন্ন নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান এবং রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি শাখা থেকে। নিয়ম ভেঙে গ্রুপটিকে বিশেষ সুবিধায় সীমার অতিরিক্ত ঋণ প্রদান করেছে ব্যাংকটি।

ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাবিল গ্রুপ দুইভাবে ঋণ নিয়েছে। প্রত্যক্ষ বা সরাসরি ঋণ, আরেকটি হল পরোক্ষ ঋণ।

আর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে মোট প্রায় তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। একক ঋণ সীমার নিয়ম এক্ষেত্রেও মানা হয়নি।

দেশের বৃহত্তম বেসরকারি এ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় ব্যাংকের প্রভাবশালীদের কথায় কোনো রকম নিরীক্ষা ছাড়াই এসব কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। নামে ভিন্ন হলেও ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্রে এ ঋণগুলো স্পষ্ট নাবিল গ্রুপের নামেই রয়েছে।

চলতি বাজেটে দেয়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে কিনা তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এ কথা জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তবে কালো টাকা যেন আর তৈরি না হয়, সরকার তা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (২৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান তিনি।

এর আগে, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠকে সাধারণত মানুষের টেকসই উন্নয়ন হয় এমন প্রকল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় সমতা ভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে আগাম প্রস্তুতির পরামর্শ দেন উন্নয়ন সহযোগীরা। আমন চাষে করণীয়ও তুলে ধরেন তারা।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে ঢালাওভাবে নয় বরং যাচাই-বাছাই করে ঋণ নেয়া হবে। সরকারি বিভিন্ন দফতরে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, এতদিন বৈষম্য থাকলেও কথা বলার সুযোগ ছিলো না। সরকার তাদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। ধীরে ধীরে সব বৈষম্য দুর হবে। কালো টাকা যেন তৈরি না হয় তা সরকার নিশ্চিত করবে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাখা অর্থ অনুমোদন ছাড়াই খরচ, বাড়তি ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ এবং গোপনে প্রকল্পের পরিত্যক্ত লোহা (স্ক্র্যাপ) বিক্রির মাধ্যমে এই অর্থ লোপাট করেছে একটি চক্র। ছয়জনের এই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিক ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কালাম। এ নিয়ে গত মে মাসে একটি অভিযোগও জমা পড়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া  অনুসন্ধানেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

পাবনার রূপপুরের পরেই বিদ্যুৎ খাতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মাণে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। দুটি ইউনিটে মোট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গত বছরের জুলাই মাসে উৎপাদনে এসেছে। কেন্দ্রটিতে ঋণ দিয়েছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। এই প্রকল্পে এর আগে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাও করেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ দামে নাটবল্টু কিনেছে। এসবের পর এবার নতুন করে অভিযোগ এল নয়ছয় করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাতারবাড়ী প্রকল্পে জরুরি খাতে ব্যয় করার জন্য প্রায় ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এই অর্থ অতি জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করার কথা ছিল। কোনো রকম অনুমতি ছাড়া এই বরাদ্দের পুরোটাই ব্যয় করা হয়েছে। যে ১৫টি কাজের বিপরীতে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৪টি কাজের অনুমতি দিয়েছিলেন সিপিজিসিএলের বোর্ড পরিচালকেরা। বাকি ১১টি কাজে কোনো অনুমতির তোয়াক্কাও করেনি ছয়জনের চক্রটি। এই চক্রে আছেন সিপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী অর্থ পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যা, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা) মো. কামরুল ইসলাম, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মতিউর রহমান ও সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আলফাজ উদ্দীন।

অনিয়ম-১:  প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (পিডিপিপি) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরের সড়ক বিটুমিন বা পিচের মাধ্যমে করার কথা ছিল, এতে ৮০ কোটি টাকার মতো ব্যয় নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু চক্রটি এই সড়ক বিটুমিনের মাধ্যমে না করে সিমেন্ট ও কংক্রিটের ঢালাই দেয়। এতে বাড়তি ব্যয় হয় ১৭০ কোটি টাকা। এই কেনাকাটায় সিপিজিসিএলের বোর্ড সভার অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অনিয়ম-২: মাতারবাড়ী প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ একর জমিজুড়ে স্ক্র্যাপ বা বাতিল লোহা স্তূপাকারে ছিল। এসব লোহা ছিল মূলত বিভিন্ন ধরনের শাটার। ঢালাই কাজে এসব শাটার ব্যবহার করা হয়। শাটারের দামসহ ধরে ঠিকাদারদের নির্মাণ খরচ দেওয়া হয়। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের বাতিল লোহা প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। ফলে মাতারবাড়ী প্রকল্পে যা কিছুই পরিত্যক্ত হবে, তার মালিক সিপিজিসিএল। কিন্তু পরিত্যক্ত এসব লোহার বড় অংশই বিক্রি করে দিয়েছেন সিপিজিসিএলের এমডি ও তাঁর সহযোগীরা, যার মূল্য কম করে হলেও ৩০০ কোটি টাকা। লোহা বেচার এই অর্থ সিপিজিসিএলের কোষাগারে যায়নি। পুরোটাই লোপাট করেছে এমডির নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। 

অনিয়ম-৩: মাতারবাড়ী প্রকল্পে সাগরের সুরক্ষা ও ভূমি সুরক্ষার কাজটি করেছে বিদেশি ঠিকাদার হুন্দাই। প্রকল্পের ভেতর তাদের ৭৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের তিনটি স্টিল নির্মিত ভবন ছিল, যেখানে তাদের লোকেরা থাকতেন। সবার আগে হুন্দাইর কাজ শেষ হয় এবং তারা এই তিনটি ভবন রেখে প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করে। তিনটি ভবনে অন্তত ১৫ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ লোহা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এই ভবন তিনটির মালিক সিপিজিসিএল। কিন্তু হুন্দাইর নাম বলে তা বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

একইভাবে প্রকল্পে পসকোর ১২ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বাইরে বিক্রি করা হয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হিসেবে প্রচার করে। অথচ পসকো ও হুন্দাই এসব বিক্রির অনেক আগেই প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করেছে।

সিপিজিসিএলের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা 

জানিয়েছেন, এর আগে পায়রা, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাতিল লোহা ওই কেন্দ্রের মালিকপক্ষ দরপত্র করে বিক্রি করেছে। এ ছাড়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপও দরপত্র আহ্বান করে বিক্রি করা হয়েছে। মাতারবাড়ী প্রকল্পেরও ৯ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ প্রথমে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এরপর বলা হয়, এটি প্রকল্পের ঠিকাদার জাপানি কোম্পানির মালিকানাধীন স্ক্র্যাপ। ফলে তারা এই বাতিল লোহালক্কড় বিক্রি করবে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে থাকা প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার লোহা বিক্রি করা শুরু হয়। এসব লোহা বিক্রির অর্থ সিপিজিসিএলের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল করা হয়। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু ২২ আগস্ট পর্যন্ত তিনি কোনো জবাব দেননি। 

কান্ট্রি অব অরজিন পরিবর্তন করার অভিযোগ: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী যে দেশ থেকে যন্ত্রপাতি দেওয়ার কথা, সে দেশ থেকে না এনে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আনা হয়েছে। সিপিজিসিএলের এমডি আবুল কালাম আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নিয়েছে। তবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা 

পক্ষে সম্ভব হয়নি। 

দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মতামত চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যত বড় প্রকল্প তত বড় দুর্নীতি। বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ী সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এতে খরচের মাত্রাও অনেক বেশি। এখানে জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে, এখানে নাটবল্টু অস্বাভাবিক দামে কেনা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এই প্রকল্পের পুরোনো লোহালক্কড় বেচে দিচ্ছে প্রকল্পের কর্মকর্তারা। দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।

প্রথমে শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল। তারপর নতুন-পুরাতন কোম্পানি দেখিয়ে ঋণের পর ঋণ। এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বলা হচ্ছে, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছিল তারা। নিয়ম-নীতি ভেঙে ছয়টি ব্যাংক থেকে এস আলম সংশ্লিষ্টরা বের করে নিয়েছেন ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এসব অপকর্মে গ্রুপটির সহযাত্রী ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ৯৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নন-এসি বাস সার্ভিসের জন্য পরিচিত গ্রুপটি সরকারি জনতা ব্যাংক থেকেও নিয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যাংকগুলো থেকেও কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ বা বেনামে সরিয়েছে এস আলম।

ব্যাংক থেকে তারা কীভাবে বের করলেন এসব টাকা? বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর পর্ষদে নিজের লোক বসিয়েছেন আগে। পরে তারাই পথ বের করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ডকে দিয়ে ঋণ পাশ করিয়েছে। এগুলো একটাও তো বৈধ না। বোর্ডে যেহেতু সব এস আলমের লোকজন ছিল, সুতরাং ওরা বোর্ড থেকে পাশ করিয়ে বৈধভাবে নিয়ে গেছে। তারা আইনগতভাবে দেখাবে, বৈধভাবে পাশ করিয়েছে। কিন্তু বোর্ডে তো সব ওদেরই লোক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সমস্ত নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজেরাই প্রভাবিত করে ঋণ দিচ্ছে। এইটা করে পুকুর চুরির মতো ব্যবস্থা করেছে।

এস আলম সরাসরি নিজেদের নামে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও নিয়েছে। তাতেও থামেনি, তৈরি করে ছায়া কোম্পানি। আর বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডই হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘন করে। অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, তারা আসলে যেগুলো করেছেন, এর উদ্দেশ্যটা তো ঠিক না। ওরা যে টাকা বের করে নিছে, সবগুলো এনপিএল, তা ফেরত না আসলে কী হবে? ফান্ড তো ঘুরে আসবে না। মূলধনের ওপর চাপ পড়বে। লাভের ওপর চাপ পড়বে। সমস্ত দিক থেকে চাপের মুখে পড়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত অনিয়ম-লুটপাট কি শুধু এস আলম আর তাদের পুতুল পর্ষদ দিয়েই সম্ভব ছিল? জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মোটেই না। জেনে-বুঝেও উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো সহযোগিতা করেছেন সাবেক দুই গভর্নরসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকে লুটপাট হচ্ছে, নিয়ন্ত্রকরা কোথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোথায়, কী করেছে তারা? কেউ তো থামানোর জন্য কিছু করে নাই। তারা কোনো পদক্ষেপ নেই, সহযোগিতা করেছে।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় কারও না কারো তো দেখার কথা ছিল, কেউ যদি বন্ধ করার চেষ্টা করতো, তাহলে তাকে বলা হতো, আপনি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। সেটা তো করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বরং তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য যেভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেভাবে সেভাবে সাকুর্লার দিছে।

সঠিক হিসাব বের হলে এস আলমের নামি-বেনামি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। আর জালিয়াতির পথ এখন বন্ধ করে দেয়ায় সামনে আসবে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।