অর্থ - বানিজ্য

দেশে অপরিশোধিত লবণের উৎপাদন বেড়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে চলতি মৌসুমে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। তবে এই বাড়তি উৎপাদনের সুফল মিলছে না। চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে সাত টাকা দরে। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে মাঝারি মানের লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়।

দেশের মুদি দোকান ও সুপার শপগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে এখন ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ কেজিপ্রতি ৪২ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও সাধারণ লবণ ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের এস এস খালেদ রোড এলাকার গ্রোসারি শপ জান্নাত স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরুল আবছার বলেন, বাজারে থাকা প্রচলিত ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি লবণ খুচরায় ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা কোম্পানির কাছ থেকে ৩৫-৩৭ টাকা দরে কিনতে হয়।

লবণ শিল্প উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান ও বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভ‚ঁইয়া বলেন, চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। মৌসুমের শেষ দিন (গত ২৫ মে) পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন, যা গত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত বছরের তুলনায় দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। গত (২০২২-২৩) মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।

কৃষক ও বিসিকের তথ্যমতে, সম্প্রতি শেষ হওয়া মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে মণপ্রতি (৪০ কেজি) অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, যা বর্তমানে ৩৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সেই হিসাবে মাঠ পর্যায়ে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট দশমিক ৭৫ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লবণ পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সল্টের স্বত্বাধিকারীর আসাদ আহমদ বলেন, কৃষকের কাছ থেকে অপরিশোধিত লবণ কিনে এনে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে তা প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে; যার কেজি প্রতি দাম পড়ে ১০ টাকা। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিশোধন শেষে তা আমরা মিল গেটে ৯৭০ থেকে ৯৮০ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি করছি, যা কেজিতে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ২৫ পয়সা। আমাদের থেকে কিনে বিভিন্ন হাত বদলে তা খোলাবাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। তারপরও কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু ফের ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। তবে তদারকি জোরদার করায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫, যা সাতদিন আগেও ১৪৫-১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৬৭, যা সাতদিন আগেও ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪-১৭৬, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৭৬ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা। 

কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা খালেক বলেন, বাজারে কোনো নিয়ম নেই, এটা বলা যাবে না। একটি নিয়ম খুব ভালোভাবে চলছে। বিক্রেতারা সবই এক। তারা চালের দাম বাড়ালে আটার দাম বাড়ায় না। আটার দাম বাড়ালে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় না। আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে অন্য আরেকটি পণ্যের দাম কমিয়ে রাখে। তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার। বছরে একেক মাসে একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে একচেটিযা বাড়তি মুনাফা করা হয়। 

বাজারে যারা তদারকি করে, তারাও ভোক্তার সঙ্গে অসহায়। কারণ, ব্যবসায়ীরা পাওয়ারফুল। মনে হচ্ছে, তারা দেশ চালাচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে কোনো কিছুই হয়নি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো ক্রেতাকে ফের নাজেহাল করে ফেলছে।

একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। পণ্যের দাম আমরা কোনোভাবেই বাড়াই না। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তারা সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম নির্ধারণ করে মূল্য বাড়ায় বা কমায়। আবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও সেটাই করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মিল থেকে বাড়তি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছে।

এদিকে রাজধানীর সবকটি খুচরা বাজারে আলুর সরবরাহ থাকলেও বেড়েছে দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৫, যা সাতদিন আগেও ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সপ্তাহখানেক আগেও ৯০-১০০ টাকা ছিল। কৌশলে বিক্রেতারা ৫ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়ে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ এবং ছোট দানার ১১০ টাকায়।

বাজারে কমেছে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাতদিন আগে ২৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৩০০ টাকা, যা সাতদিন আগে ৩৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেজিতে ৫০ টাকা কমে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকা।

অন্যদিকে বাজারে তদারকি জোরদার করার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২, যা সাতদিন আগেও ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫, যা সাতদিন আগে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ধারাবাহিকভাবে ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে একই স্থানের ডিম তিনবার হাতবদলের জন্য দাম বাড়ছে। 

এছাড়া আড়তদারা এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রতিদিন ডিমের মূল্য নির্ধারণ করছে। এসব কিছু হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় আনার কারণে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে কমছে ব্রয়লার মুরগির দামও। তিনি জানান, শুধু ডিম নয়, অন্যান্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিতরণ কোম্পানি লোকসান করলেও গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিদ্যুৎ বিভাগে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

 
ঝড় ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩০ হাজার পোল বিনষ্ট হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে সবক’টি সাবস্টেশন পানির নিচে চলে গেছে। আমরা এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা সাজানোর চেষ্টা করছি. যাতে গ্রাহককে ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।

আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোন কোন সমঝোতা স্মারক সই হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মহেশখালী থেকে সমান্তরালভাবে আটটি পাইপলাইন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি চীন সফরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা ও বিতরণব্যবস্থার কিছু প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে যেসব বিষয়ে অনুদান পাবে, সেগুলোর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। টাকার অঙ্কে এই বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই আমরা গ্যাস-সংকট দূর করতে পারবো বলে আশা করছি। এ জন্য আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এর বাইরে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে নতুন করে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই হতে পারে।

নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট আট টাকা। এটি বেশি কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবিধা হচ্ছে কুড়ি বছর ৮ টাকা ইউনিটেই বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়লে যেমন বিদ্যুতের দাম বাড়ে, এখানে এটা হবে না।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই হিসাবে এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াট হলে ২৬০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। এই পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে।

নসরুল হামিদ বলেন, সঙ্গত কারণে এখানে বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা তাদের জমি দেবো। তারা সেই জমি উন্নয়ন করে দেবে। একইসঙ্গে গ্রিড লাইন নির্মাণ করে দেবে। এরপর আমরা দরপত্র আহ্বান করবো। এতে সৌর বিদ্যুতের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের গ্রিডে ছয় হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ যোগ হবে।

সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ডাকা দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে জানালেও কতদিন বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযান চালিয়ে ছয়টি ব্রাহমা জাতের গরু জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানসংলগ্ন কাঠের পুলের ১৬ নম্বর রোডে অভিযান চালায়। তারা নিষিদ্ধঘোষিত কোটি টাকা মূল্যের ৬টি ব্রাহমা গরু উদ্ধার করে। অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আক্তার।

দুদক সূত্র জানায়, তথ্যের ভিত্তিতে সাদিক অ্যাগ্রোতে দুদকের দল গিয়ে ছয়টি ব্রাহমা গরুর সন্ধান পায়, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে। ব্রাহমা গরু আমদানি নিষিদ্ধ। অভিযানের সময় সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ও ব্যবস্থাপক—কাউকে পাওয়া যায়নি।

অভিযানের বিষয়ে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১ জুলাই কেরানীগঞ্জের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ও সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করে। এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিত আজ আবারও অভিযান পরিচালনা করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

গতকাল আমদানিকৃত নিষিদ্ধ গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউসে গিয়েছিল ওই টিম। তালিকা সংগ্রহের পরই বেশ কিছু নতুন তথ্য উঠে আসে। এ কারণে আবারও মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।

ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বেশি হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জাতটির উৎপত্তি ভারতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই থেকে তিনটি জাতের সংমিশ্রণে এটিকে উন্নত করা হয়। দুই থেকে আড়াই বছরের দেশি গরুর ওজন যেখানে ২৫০ থেকে ৩৫০ কেজি হয়, সেখানে ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে পালনের অনুমতি দেওয়া হলে দুধ বেশি দেওয়া গরুর পালন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ব্রাহমা নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এর আগে সোমবার মো. ইমরান হোসেনের মালিকানাধীন কেরানীগঞ্জের সাদিক অ্যাগ্রো ও সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে বিশেষ অভিযান চালায় দুদক। অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্রাহমা জাতের গরু ও ব্রাহমাসহ প্রাণী প্রজননের নিষিদ্ধ ওষুধ আমদানি করার প্রমাণ পেয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ১৮টি আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন। তবে ব্রাহমা নিষিদ্ধ হওয়ায় তিনি ফ্রিজিয়ান গরুর মিথ্যা ঘোষণা দেন। পরে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা কাস্টমস। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সেগুলোকে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কাস্টমসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গরুগুলো সাদিক অ্যাগ্রোতে নিয়ে যান ইমরান।

বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো থেকে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে গ্যারান্টি ফি ৫০ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রথম বছরে দশমিক ৫০ শতাংশ গ্যারান্টি ফি দিতে হবে। আগে ১ শতাংশ গ্যারান্টি ফি দিতে হতো। এই ফির অন্যান্য খাতেও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বাড়াতে এবং এ খাতে খরচ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, করোনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক তহবিল গঠন করে। কিন্তু ওইসব তহবিল থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছিলেন না যথাযথ গ্যারান্টি বা জামানত দিতে না পারার কারণে। ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোও এসব উদ্যোক্তাকে ঋণ দিতে আগ্রহী ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ সুবিধা পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করে। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের যেসব ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি ঋণ দেবে তার একটি অংশের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই স্কিম থেকে গ্যারান্টি দেবে। ওই ঋণ আদায় না হলে স্কিম থেকে ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করা হবে।

এ স্কিমের আওতায় ঋণ দিতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুক্তি করে। এর আওতায় গ্যারান্টি নিবন্ধন পাওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো থেকে নির্ধারিত হারে গ্যারান্টি ফি নেওয়া হয়। এর মধ্যে আগে মোট ঋণের স্থিতির বিপরীতে প্রথম বছরে ১ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। এখন তা অর্ধেক কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

আগে কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ বা এর কম থাকলে প্রথম বছরের পরের বছর দশমিক ৫০ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ বা এর কম থাকলে দশমিক ৭৫ শতাংশ গ্যারান্টি ফি নেওয়া হতো। এখন দুই খাতেই নেওয়া হবে দশমিক ২৫ শতাংশ। 

১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওইসব ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি এ তহবিলের আওতায় ঋণ দিতে পারে না।

গ্যারান্টি ফি ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পর্র্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে। এর বেশি হলে গ্রাহকের কাছ থেকে ফি আদায় করা যাবে। ছোট ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো গ্যারান্টি ফি আদায় করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ বাবদ ১১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার বৃহস্পতিবার রাতে ছাড় করা হয়েছে। ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে যোগ হয়েছে। ফলে নিট রিজার্ভ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের কিস্তির অর্থ পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর নিট রিজার্ভ আবার ২ হাজার কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করল। 

এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে ছিল। গত মে মাসে এ রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ডলারের ঘরে নেমে গিয়েছিল।

সূত্র জানায়, গত সোমবার আইএমএফের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশের অনুক‚লে ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ছাড় করা হয়েছে ১১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ওই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে। ফলে রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ৬২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। 

এর আগে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের অনুক‚লে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর আগে দুটি কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। এখন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড় করা হলো। তিন কিস্তিতে আইএমএফের ঋণ বাবদ বাংলাদেশ পেল ২৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের মূল্যায়ন করতে আগামী নভেম্বরে আইএমএফ মিশন আবার বাংলাদেশে আসবে। শর্ত বাস্তবায়ন ও সংস্কারের অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট হলে ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হতে পারে। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশকে আরও বেশ কিছু কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। 

আইএমএফের ঋণের অর্থ ছাড় করার আগে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এক সপ্তাহ আগে গত ২০ জুন ছিল ১ হাজার ৯৫৩ কোটি ডলার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ৬ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের কিস্তি যোগ হওয়ায় রিজার্ভ বেড়ে গেছে। 

এদিকে আগামী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ প্রায় ১৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। তখন আবার রিজার্ভ কমে যাবে।

দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ কর অবকাশ সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে।

একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক আগের মতো শূন্য শতাংশ রাখা হচ্ছে। পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে না, তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ভাড়া নিতে চাইলে স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে। আগামী ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২৪ পাশ হবে। সেখানে আয়কর, কাস্টমস সংক্রান্ত এসব পরিবর্তন আসতে পারে। 

গত ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর সাধারণ করহার ২০ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশ বা তারও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনি আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ বা উন্নয়নের জন্য ডেভেলপার কর্তৃক আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়। 

এনবিআর সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে করসুবিধা প্রত্যাহারসহ ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অর্থবিল সংশোধনে কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। 

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিয়ে, জন্মদিন বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার কারণে শর্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়মে, শুধু ৮টি সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে লাগবে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে। পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি সেন্টার বা মিলনায়তনে সামাজিক অনুষ্ঠান করতে ভাড়া নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে না।

অবশ্য নানা মহলের সমালোচনার পরও কালোটাকা সাদা করার বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা ও বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপের বিধান বহাল রাখা হচ্ছে। ফলে বছরে শেয়ারবাজার থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকা বেশি আয় করলে বর্ধিত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। 

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার ও সুশাসন নিশ্চিতে সংস্কার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের আর্থিক খাতের ঋণ প্রতিবেদন প্রণয়নে স্বচ্ছতা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মানকে সংস্থাটি অতিমূল্যায়িত বা টাকার মান বেশি বলে মনে করে। এ কারণে টাকার মান বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে ডলারের দাম আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

এদিকে দুর্নীতি কমাতে প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের তালিকা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে তাদের দেওয়া সম্পদের তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ করতেও বলেছে। সংস্থাটি মনে করে, এতে সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ে দুর্নীতির প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে।

গত সোমবার রাতে প্রকাশিত আইএমএফের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ডিসেম্বরের মধ্যে আর্থিক খাতের বেশ কিছু শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ও সুদের হারে যে সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে আইএমএফ সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সব খাতে নিশ্চিত করতে হবে সুশাসন ব্যবস্থা। এজন্য দ্রুত চলমান সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে আর্থিক খাতে ঋণসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকমানের করতে হবে। ঋণবিষয়ক যেসব প্রতিবেদন ব্যাংকগুলো তৈরি করে সেগুলোতেও সংস্কার আনতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন ব্যবস্থাও আধুনিকমানের করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে জোর দিয়েছে আইএমএফ।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বলেছে, আইএমএফ ঝুঁকিভিত্তিক যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা বলেছে, সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে থেকেই করছে। ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এখন একে আরও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।  

সূত্র জানায়, বর্তমানে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকমানের নয়। এখানে অনেক ছাড় দিয়ে সংজ্ঞা করা হয়েছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য হলেও তার কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাস পর বাংলাদেশে খেলাপি হচ্ছে। এছাড়া ঋণ বিতরণের পর যেসব প্রতিবেদন করা হয় সেগুলোতে যথেষ্ট ফাঁকফোকর রয়েছে। প্রতিবেদন দেখে বোঝার উপায় নেই যে, ঋণটি কি আদৌ ভালো অবস্থায় আছে নাকি খেলাপির দিকে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের বিপরীতে টাকার মান এখনও অতিমূল্যায়িত। অর্থাৎ বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারিত হচ্ছে না। এ কারণে তারা ডলারের দাম আরও বাড়ানো ও টাকার মান কমানোর সুপারিশ করেছে। এ লক্ষ্যে বাজারের মৌলিক উপাদানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, তারা ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে কাজ করছে। এর অংশ হিসাবেই ক্রলিং পেগ (একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলারের দাম বেঁধে দিয়ে ওঠানামার সুযোগ দেওয়া) চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলো অভ্যস্ত হলেই বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকে যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশীয় ব্যাকিং ব্যবস্থার শাসন কাঠামো, স্বচ্ছতা এবং আর্থিক সুস্থতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় খেলাপি ঋণ কমানোর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে এমডি, পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধিবিধান জারি করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের শুরু থেকে উচ্চ এবং অস্থির খাদ্যমূল্য, জ্বালানি ও সারের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্র হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাষ্টিক অর্থনীতিতে বড় চাপের সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফের ঋণ এই চাপকে মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগোতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। সংস্থাটির ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে যেসব সংস্কার কার্যক্রম চলমান তার আলোকে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা করার সুপারিশ করবে আইএমএফ।

২০০২ সালের শুরু থেকে টানা ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৯ বছর আট মাস। ওই সময়ে দেশের শাসনভার ছিল বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে। আলোচ্য সময়ে দেশের অর্থনীতির সূচকগুলোয় অনেক উত্থানপতন ঘটেছে। তবে একটি সূচক সর্বদাই গড়ে ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সেটি হলো দেশের বৈদেশিক গ্রস মুদ্রার রিজার্ভ। ১০০ কোটি ডলারের কম থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এ নিয়ে সরকারগুলোর মধ্যেও তৃপ্তির ঢেকুর কম ছিল না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার রিজার্ভকে অর্থনৈতিক আলোচনার টেবিল থেকে রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসে। তাদের আমলে রিজার্ভ বেশি বাড়ায় গর্ব করে দলের নোতারাও রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তৃতা করতে ভুল করেননি। রিজার্ভ নিয়ে সফলতার গল্প দেশবাসী শুনে অনেকের মধ্যেই একটি আশার বাণী সঞ্চার করেছিল-রিজার্ভ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। যে কোনো সংকটে এই রিজার্ভ দিয়ে উতরে যাওয়া যাবে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেড় মাসও টিকল না সেই গর্বের জায়গাটি। দ্রুত কমতে থাকল। চার মাসের মাথায় সরকারকে ভাবিয়ে তুলে বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি। সরকার দ্রুত আইএমএফ-এর কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এর ধারাবাহিকতায় নিট রিজার্ভ এখন কমে ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমেছে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকারের মধ্যেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রিজার্ভ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ কমে ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পরবর্তী সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ সংকটের কারণে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধ করতে পারছিল না। ফলে এক কিস্তির দেনা পরিশোধ স্থগিত করে ঋণ হিসাবে ৩৯ কোটি ডলার নেয় আকুর কাছ থেকে। পরের কিস্তিতে তা পরিশোধ করে।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে রাজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ২০০১ সালের শেষদিকে গ্রস রিজার্ভ ছিল ১৩০ কোটি ডলার। ২০০৬ সালে দলটি ক্ষমতা ছাড়ার সময় রিজার্ভ ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। রিজার্ভ বেড়েছিল ২ দশমিক ৬৮ গুণ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ বাড়িয়েছে। ২০০৮ সালে তারা ৭০০ কোটি ডলার রিজার্ভ রেখে যায়। ওই দুই বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ২ গুণের বেশি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে রিজার্ভ বাড়ানোর জোরালো পদক্ষেপ নেয়। তাদের সময়ে ২০১০ সালের জুনে রিজার্ভ প্রথম এক হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০১৪ সালের জুনে ২ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০১৬ সালের জুনে ৩ হাজার কোটি ডলার এবং ২০২০ সালের অক্টোবরে ৪ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০২১ সালের আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ। আওয়ামী লীগ সরকারের ওই ১৩ বছরে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। রিজার্ভ বাড়ায় সরকারের পক্ষ থেকে অনেক গর্ব করা হয়। তীব্র সমালোচনাকে উপেক্ষা করে রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। এরপর থেকেই রিজার্ভ কমতে থাকে। তবে তা কমছিল খুবই ধীরগতিতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এতে আমদানি ব্যয়ও বাড়তে থাকে। ফলে ডলার খরচ বেড়ে যায়। চাপে পড়ে ডলার। এর দাম বাড়তে থাকে। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ ছয় মাসে রিজার্ভ কমেছিল ২১১ কোটি ডলার। বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় ওই বছরের মার্চে ৯৫১ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। যে কারণে রিজার্ভ আরও চাপে পড়ে যায়। এ চাপ কমাতে এবং রিজার্ভ সাশ্রয় করতে ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন আরোপ করে। এতেও রিজার্ভের নিম্নগতি রোধ করা সম্ভব না হলে এক মাসের মাথায় এলসি মার্জিন আরও বাড়িয়ে দেয়। ১০ মে থেকে বিলাসী পণ্যে ৭৫ শতাংশ ও বাণিজ্যিক পণ্যে ৫০ শতাংশ মার্জিন আরোপ করে। এর ৫৫ দিনের মাথায় ৫ জুলাই বিলাসী পণ্যে শতভাগ মার্জিন আরোপ এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে ঋণ বন্ধ করে দেয়। ওই বছরের জুলাইয়ে রিজার্ভ নেমে আসে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে। ৫ মাসে রিজার্ভ কমে যায় ৬৪০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গর্বের রিজার্ভ টিকল না চার মাস। এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের রিজার্ভ ঝুঁকিতে চলে যায়। এখনো রিজার্ভ নিম্নমুখী। গত ১২ জুন গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি ডলার এবং নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৯২১ কোটি ডলার। প্রায় তিন বছরে দেশের গ্রস রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলার।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রিজার্ভ হচ্ছে বিপদে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু রিজার্ভ বাড়ায় সরকার এর অপব্যবহার শুরু করে। একদিকে অপব্যবহার করে রিজার্ভ ক্ষয় করেছে, অন্যদিকে এসেছে মন্দা। এ দুইয়ে মিলে রিজার্ভ সংকট প্রকট হয়েছে। রিজার্ভ ভালো থাকলে ডলারের দাম এত বাড়ত না। পণ্যের দামও এত আকাশচুম্বী হতো না। মূল্যস্ফীতিও হতো না এত ঊর্ধ্বমুখী। এখন যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশ, এর সূত্রপাত হচ্ছে সুশাসনের অভাব এবং রিজার্ভ সংকট থেকে। এছাড়া বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবও রয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জুলাইয়ে সরকার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আইএমএফ-এর ঋণ চায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে দুটি কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এতে রিজার্ভের বেশি উন্নতি হয়নি। তবে সাময়িক উপশম হয়েছে। ২৫ বা ২৬ জুন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার পাওয়া যেতে পারে।

রেকর্ড রিজার্ভ দিয়ে ওই সময়ে প্রায় ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। কিন্তু তা তিন মাসের মধ্যেই কেন ঝুঁকির পর্যায়ে নেমে গেল, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আইএমএফও সরকারের রিজার্ভের ওই হিসাব মানতে নারাজ। তারা বারবার নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি করেনি দীর্ঘ সময়। গত বছরের জুলাই থেকে নিট হিসাব প্রকাশ করলেও এটিও আইএমএফ মানতে নারাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৯২১ কোটি ডলার। কিন্তু আইএমএফ মনে করে এ থেকে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দেনা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বাদ দিতে হবে। এগুলো বাদ দিলে নিট রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো। ওই সময়ে রিজার্ভের হিসাব বাড়িয়ে দেখানো হলেও নিট রিজার্ভ কম ছিল। যে কারণে রিজার্ভ কমতে থাকায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। একই সঙ্গে সরকারের মধ্যেও রিজার্ভ নিয়ে অস্থিরতা বাড়ছিল। সরকার এখনো অস্থির। রিজার্ভ বাড়াতে এখন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট দেশের ৬ কোটি শ্রমিকের নিত্যদিনের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে এসব মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।

তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে শ্রমিক উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ এবং শ্রমিকদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু না করার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হবে।  এ সময় শ্রমিকদের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান তারা।

লিখিত বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। 

শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সরকারের অর্থ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে এবং জাতীয় সংসদে ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। সরকার শ্রমিকদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে না এবং ক্ষমতার রাজনীতির জন্য তাদের শুধুমাত্র ভোটার হিসেবে ব্যবহার করে। এই বাজেট ৬ কোটি শ্রমিকের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে এবং তাদেরকে আরও দরিদ্র করে তুলবে। এই বাজেটে শ্রমিকদের প্রতি অবিচার হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং সকল শ্রমিক সংগঠন, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জিডিপির উন্নয়নের সূচক ৫.৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড ৫ জন শ্রমিক পরিবারের জন্য ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা একজন শ্রমিকের মাসিক আয় মাত্র ২৫০০ টাকা দাঁড়ায়। এই বৈষম্যমূলক আয় নির্ধারণ শ্রমিকদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।

মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের নিজস্ব আবাসন নেই এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ ও খাদ্য বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক পরিবারগুলো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে।
সরকারি ১৪ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতার বরাদ্দ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অথচ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কোনো পদক্ষেপ নেই। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ৩০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, ৫ কেজি চিনি, ৫ লিটার তেল রেশনিং চালু করলে বছরে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

এছাড়া আগামী ২৫ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্প অঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক টিইউস’র আইন বিষয়ক সম্পাদক কেএম মিন্টু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এফএম আবু সাঈদ, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন প্রমুখ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।