অর্থ - বানিজ্য

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। জুলাই মাসে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা; যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কয়েকটি পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করা হয়। এর মধ্যে একটি মোট রিজার্ভ। অন্যটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী হিসাব। এর বাইরে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভেরও হিসাব রয়েছে।

বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ কমার পাশাপাশি মোট রিজার্ভের পরিমাণও কমেছে। গত জুন শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৮২ কোটি ডলার। জুলাই শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯২ কোটি ডলারে।

আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে হিসাব করে, তাতে গত জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। জুলাই শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯ কোটি ডলারে।

আমদানিকৃত লুব্রিকেন্ট অয়েলের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম আমদানি শুল্কায়নমূল্য নির্ধারণ করায় দেশ থেকে ডলার পাচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এইচএস কোড প্রণয়ন করায় হয়রানির শিকার হবেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে লুব্রিকেন্টস ইম্পোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লিয়াব) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে প্রতিকার দাবি করেন সংগঠনের নেতারা।

সংগঠনের সভাপতি জমসের আলী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি করা সব ধরনের লুব্রিকেন্টস অয়েলের এনবিআর আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (অ্যাসেসমেন্ট) অস্বাভাবিক হারে নির্ধারণ করায় বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার পাচারের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। 

তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে সব ধরনের ফিনিশড লুব্রিকেন্টস একটিমাত্র এইচএস কোড ব্যবহার করা হতো। যার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ২০০০ ডলার নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১ সঙ্গে আরও নতুন দুটি এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ এবং ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সংযোজন করা হয়েছে। 

এই সংযোজিত ৩৪ সিরিয়াল এইচএস কোড আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচলিত ফিনিশড লুব্রিকেন্টস এইচএস কোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বাজেটে এইচএস কোড ২৭.১০.১৯.৩১ মিনারেল প্রতি মেট্রিক টন ২৫০০ ডলার। এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.২০ সেমি সিনথেটিক প্রতি মেট্রিক টন ৩২০০ ডলার, এইচএস কোড ৩৪.০৩.৯৯.৩০ সিনথেটিক প্রতি টন ৫০০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। 

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওই মিনারেল, সেমি সিনথেটিক, সিনথেটিক লুব্রিকেন্টসের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকৃত মূল্য যথাক্রমে ১৬০০, ১৭০০, ২০০০ ডলার। সেই হিসাবে মিনারেল লুব্রিকেন্টস শুল্কায়ন মূল্য ৫৭ শতাংশ, সেমি সিনথেটিক ৮৯ শতাংশ, সিনথেটিক ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্কায়ন মূল্য (অ্যাসেসমেন্ট) বাড়ানো হয়েছে। 

বাজারমূল্য থেকে শুল্কায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে প্রতি মেট্রিক টন মিনারেলে ১২০০ ডলার, সেমি সিনথেটিক ১৫০০ ডলার ও সিনথেটিক ৩০০০ ডলার পাচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে সরকারি সুবিধায় ওভার ইনভয়েসের সুযোগ থাকায় নিশ্চিতভাবে ডলার পাচার বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের ওপর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের ফলে পরিবহণ, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট, কৃষি উৎপাদন, গার্মেন্টশিল্পে খরচ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকারের বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। লুব্রিকেন্টস মূল্যবৃদ্ধি হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে সব নিত্যপণ্য সামগ্রীতে। তাছাড়া নিম্নমানের লুব্রিকেন্টে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে এবং মেশনারিজের জীবনকাল কমে আসবে। তিনি এই সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসেন, পরিচালক আবুল কাশেম জামাল, মো. দেলোয়ার হোসেন, আসলাম পারভেজ, সানোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন ও আবু সাঈদ প্রমুখ।

শিক্ষামূলক অনলাইন প্লাটফর্ম টেন মিনিট স্কুলের জন্য পাঁচ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে। প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে বাতিল করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা এক স্ট্যাটাসে এই তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, টেন মিনিট স্কুল- এর জন্য ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব স্টার্টআপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাতিল করা হলো।

এছাড়া ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে পোস্টটি শেয়ার করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক কোনো মন্তব্য করেননি।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সোমবার একটি স্ট্যাটাস দেন আয়মান সাদিক। তিনি লেখেন, ‘রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই।’

এছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকের কভার ফটোও পরিবর্তন করেন আয়মান সাদিক। টেন মিনিট স্কুলের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজের প্রোফাইলও পরিবর্তন করে কালো রঙের ছবি দেওয়া হয়।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প উপায় হিসেবে ডলারের খোঁজে সরকার। এক-দেড় বছর ধরে ডলার প্রাপ্তির প্রধান উৎস রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি ঋণ। বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। ফলে ঘাটতি মেটাতে বাজেট সহায়তার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। তারপরও গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার কোটি বা ১০ বিলিয়ন ডলার। মূলত প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে শ্লথগতি এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণেই রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে।

এ অবস্থায় ডলার খরচের চাপ কমাতে চীনের কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ইউয়ান ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চীনের ঋণের উদ্যোগটি আপাতত আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এ নিয়ে একটি ইতিবাচক ঘোষণার প্রত্যাশা ছিল। এ জন্য দুই পক্ষের মধ্যে দুই মাস ধরে দর-কষাকষি চলছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরে আলোচিত এই ঋণের বিষয়ে ঘোষণা না থাকায় রিজার্ভ ধরে রাখার সমস্যা আপাতত থেকেই গেল। ফলে বাজেট সহায়তা পাওয়ার ভরসা এখন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)।

২০২৩ সালের ৩০ জুন দেশের রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি বা ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ কমে হয়েছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি বা ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিবিদেরাও মনে করেন, ভবিষ্যতে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে; ডলারের চাহিদাও বাড়বে। কারণ, সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চায়। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি উৎপাদন বাড়াতে হবে। ফলে আমদানি বাড়বে, যা ডলারের চাহিদা বাড়িয়ে দেবে। আবার লাফিয়ে লাফিয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধও বাড়ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আসার প্রবণতা কমেছে। তারপরও প্রায় এক যুগ পর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করেছে বেনাপোল স্থলবন্দর। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি আদায় হয়েছে ২১৬ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন পণ্য। অন্যান্য বছরের তুলনায় পণ্য আমদানি কম হলেও রেকর্ড রাজস্ব কীভাবে আদায় হলো তা নিয়ে আলোচনা নানা মহলে।

ব্যবসায়ীদের মতে, বন্দর কর্তৃপক্ষ যে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে, তাতে স্বতঃস্ফূর্ত রাজস্ব লক্ষ্য আদায় হয়েছে। ৬-৭ মাস ধরে আমাদানি অর্ধেকে কমে এসেছে। কারণ, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না। এনবিআরের যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা তা দশ বছর পর পূরণ হলো।

এক বছর আগেও বেনাপোল স্থলবন্দরের ওজন স্কেলে কারচুপি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। রাজস্ব কর্মকর্তাদের দাবি, এখন পণ্যের ওজন নেয়া হচ্ছে অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে। তার ওপর ডলারের দাম বাড়ায় আমদানির পণ্য আনতে খরচ হয়েছে বেশি। ফলে বাড়তি রাজস্ব এসেছে কাস্টম হাউজের হিসাবেও।

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, প্রয়োগ এবং সবার প্রচেষ্টায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, কাস্টমসের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষের যে অটোমেশন সফটওয়্যার এবং ওজন স্কেলের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণপূর্বক সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণই সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই এভাবে ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তারা তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া ও একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে। ফলে ব্যাংক অধিগ্রহণ তাদের কাছে নতুন কিছু না।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধিগ্রহণ বিষয়ে গত মাসে ব্যাংক এশিয়া ও ব্যাংক আলফালাহ সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এ অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন ও অতিরিক্ত এমডি এ এন এম মাহফুজ উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, আলফালাহকে অধিগ্রহণের অর্থ কয়েক ধাপে পরিশোধ করবে ব্যাংক এশিয়া। তারা প্রথম ধাপে একটা অংশ দেওয়ার এক বছর পর আরেকটি অংশ দেবে। এভাবে বাকি অর্থ দেবে পরে। তবে ব্যাংক আলফালাহর দেওয়া কোনো ঋণ এক বছরের মধ্যে খারাপ হয়ে পড়লে তাদের পাওনা অর্থের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে এই অধিগ্রহণে ব্যাংক এশিয়ার ঝুঁকি কম বলে মনে করছেন এর কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত বছর থেকে ব্যাংক আলফালাহ তাদের বাংলাদেশের কার্যক্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত ক্রেতা খুঁজছিল। এ জন্য তারা অবশ্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করেনি। ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচন হয়েছে। বনিবনা হওয়ায় গত এপ্রিলে ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত বার্তায় তাদের বাংলাদেশ কার্যক্রম ব্যাংক এশিয়ার কাছে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এতে সায় দেয়। ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবের আলোকে পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে দিয়ে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রায় ১০ বছর ধরে নিজের ৫ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করতেন কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামের আলমগীর হোসেন। বেড়িবাঁধের নিচে পাইপ বসিয়ে ঘেরে লবণ পানি তুলে বাগদা চিংড়ি চাষ করতেন তিনি। কিন্তু চলতি বছর বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় সেই পাইপ অপসারণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ওই এলাকার সব চিংড়ি ঘের।

আলমগীর হোসেন বলেন, আগে জমিতে বছরে একবার আমন ধান চাষ করতাম। কিন্তু মাটিতে লবণাক্ততার কারণে ধান উৎপাদন ভালো হতো না। সে কারণে চিংড়ি চাষ শুরু করি এবং ভালো লাভ হতো। কিন্তু এখন চিংড়ি চাষ করতে না পারায় কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এ গ্রামের অর্ধশত চিংড়ি চাষি বেকার হয়ে পড়েছেন। 

পার্শ্ববর্তী মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের মঞ্জুর আলম বলেন, এখন আর ঘেরে লবণ পানি তুলতে পারছি না। ফলে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। আর জমি যে পরিমাণ লবণাক্ত তাতে ধান বা অন্য ফসলও ভালো হয় না। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। জমিও পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিকল্প কোনো উপায়ও দেখছি না। 

শুধু এ দুটি গ্রামেই নয়, খুলনার ৯টি উপজেলায় লবণ পানি তুলতে না পারায় অনেক চাষি চিংড়ি চাষ করতে পারছে না। আবার অনেকে স্বেচ্ছায় চিংড়ি চাষ ছেড়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছে। পুঁজি সংকট, ভাইরাস ও দাবদাহে চিংড়ির মড়কের কারণে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়েছে। কয়েকটি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় লবণ পানি পাচ্ছে না চাষিরা। এছাড়া চিংড়ি ঘেরের বেশ কিছু জমিতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় খুলনা জেলায় চিংড়ি চাষ কমে গেছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। সে কারণে কমেছে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানির পরিমাণ।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ির ঘের ছিল ২০ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১৪ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাষের জমি কমেছে ১ হাজার ১৮ হেক্টর এবং চিংড়ি উৎপাদন কমেছে ২ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় লবণ পানির বাগদা চিংড়ির ঘের ছিল ৩৬ হাজার ১৫১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। চলতি অর্থ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাষের জমি কমেছে ৩ হাজার ৭৬৮ হেক্টর এবং চিংড়ি উৎপাদন কমেছে ১ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন। গত ৫ বছরের ব্যবধানে বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের কমেছে ৪ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন কমেছে ৩ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন। 

হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, খুলনার হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কারখানাগুলো চাহিদা অনুযায়ী গলদা ও বাগদা চিংড়ি পাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকদের-কর্মচারীদের মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয় একই রকম রয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়ছে। 

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি এক চিঠিতে এ তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন অথবা অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত ফটোকপি এবং অনুসন্ধনকালে প্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রের্কডপত্র আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণ করতে বলা হয়।

২০২২ সালে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে এ ঋণ দেয়া হয়। তবে ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নামসর্বস্ব এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া এসব ঋণ ফেরত অথবা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সরেজমিনে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয়। বাকি টাকা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আগের ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়।

সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ঘুরিয়ে এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করা হয়। এভাবে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন ঋণের মাধ্যমে পুরোনো ঋণের অর্থ পরিশোধ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং ইসলামী শরিয়াহ পরিপন্থী। এছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে মালপত্র না থাকায় এসব বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে। দুই সংস্থার তথ্যে বরাবরই দেখা গেছে বড় ধরনের ফারাক। সম্প্রতি হিসাব পদ্ধতি সংশোধন করে রফতানি আয় থেকে ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলো পরিমাপের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো এ রফতানি আয়ের তথ্য। সংশোধনের মাধ্যমে রফতানি আয় কমে আসায় দেশের জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ এসব সূচকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের জিডিপিতে রফতানি আয়ের উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাব রয়েছে। ফলে এতে রফতানি আয় হ্রাসের উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যয়ভিত্তিক জিডিপি হিসাবের সময় রফতানি আয় থেকে আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে রিসোর্স ব্যালান্স হিসাব করা হয়ে থাকে। এখন রফতানি আয় কমে যাওয়ায় রিসোর্স ব্যালান্সের পরিমাণ আরো বাড়বে। এতে মোট দেশজ ব্যয় ও জিডিপির মধ্যে ব্যবধান বাড়বে এবং এর প্রভাবে পরিসংখ্যানগত ফারাকও বাড়তে যাচ্ছে।

বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানি আয়ের পরিসংখ্যানে পরিবর্তনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলে সংস্থাটি এ নিয়ে কাজ শুরু করবে। ব্যয়ভিত্তিক জিডিপি হিসাবের সময়ও এতে রফতানি আয়ের তথ্য বদলের প্রভাব পড়বে। বেড়ে যাবে পরিসংখ্যানগত ফারাক। তাছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানেও পরিবর্তন আসবে।

গত দুই মৌসুম দেশে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এজন্য গত অর্থবছর শুরু থেকে চাল আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকায় পরবর্তীতে সীমিত আকারে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। যদিও তাতে সাড়া দেননি কোনো আমদানিকারক। ফলে বিদায়ী অর্থবছর কোনো চালই আমদানি হয়নি। গত তিন দশকের মধ্যে এবারই প্রথম এ ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছিল। এটি ছিল তিন দশকের মধ্যে চাল আমদানির সর্বনি¤œ রেকর্ড। যদিও সদ্যবিদায়ী অর্থবছর চালের ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে গম আমদানির ক্ষেত্রে। টানা তিন বছর কমার পর গত অর্থবছর গম আমদানি বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বিদায়ী অর্থবছর এ খাদ্যশস্যটি আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। এতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গম আমদানির রেকর্ড হয়ে যায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, তিন দশক আগে ১৯৯০-৯১, ১৯৯১-৯২ ও ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর টানা তিন বছর বাংলাদেশকে কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি। তবে ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর থেকে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছরই কম-বেশি চাল আমদানি হয়েছে। আর গম প্রতি বছরই বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। এ খাদ্যশস্যে কখনোই বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। তবে ২০১৯-২০ সালের পর বিদায়ী অর্থবছর গম আমদানিতে বড় উল্লম্ফন হয়েছে।

বিদায়ী অর্থবছর গম আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৮ লাখ আট হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে আমদানি করা হয় প্রায় সাত লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন। আর বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয় ৬০ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছর গম আমদানি হয়েছিল ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছর গম আমদানি বেড়েছে প্রায় ২৯ লাখ ৩৩ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছর গম আমদানি হয়েছিল ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন।

তথ্যমতে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছর আমদানি করা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। পরের অর্থবছর এক লাফে চাল আমদানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১১-১২ অর্থবছর তা আবার কমে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টনে।

২০১২-১৩ অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। পরের দুই অর্থবছর চাল আমদানি আবার দ্রুত বাড়ে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছর আমদানি হয় তিন লাখ ৭১ হাজার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছর ১৪ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর চাল আমদানি আবারও কমে। ওই দুই অর্থবছর চাল আমদানি করা হয় যথাক্রমে দুই লাখ ৫৬ হাজার ও এক লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।