যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা ও স্বল্প মজুরিতে কর্মী নিয়োগ ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। দেশটির শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে এ ধরনের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪১ লাখ, যা একটি নতুন রেকর্ড। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে টিইউসি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১১-২৩ সালের মধ্যে অনিশ্চিত কর্মপরিবেশে জনবলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ। অনিশ্চিত কর্মপরিবেশের মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম কর্মঘণ্টার অনুল্লেখ, স্বল্প মজুরিতে আত্মকর্মসংস্থান ও নৈমিত্তিক বা মৌসুমি কাজ। এর মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যা কর্মীদের জন্য শারীরিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া শ্রম অধিকারের নিয়মগুলো এসব ক্ষেত্রে মানা হয় না।
২০১১-২৩ সালের মধ্যে বিধিসম্মত কাজের তুলনায় অনিশ্চিত কর্মক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ দ্রুত বেড়েছে। আগের এক পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্যের প্রতি আটজন কর্মীর মধ্যে একজন এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। ২০১১ সালের পর থেকে চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া কর্মসংস্থান বাড়ার পেছনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে স্বল্প মজুরি দেয় এমন খাতগুলো।
টিইউসি বলছে, অনিশ্চিত ও স্বল্প মজুরির কাজ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের অধিকার ও মজুরির বিষয়গুলো এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সবার আগে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সংস্থাটির জেনারেল সেক্রেটারি পল নোভাক বলেন, ‘আমাদের এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যারা কাজের মূল্যায়ন করবে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে আমরা অনিরাপদ ও স্বল্প মজুরির কর্মসংস্থানের বিস্ফোরণ দেখছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শ্রমিক অধিকারের অপর্যাপ্ততা ও স্বল্প মজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যা দেশের প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শ্রমিকদের বর্তমান প্রকৃত মজুরি ২০০৮ সালের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া সারা দেশে মানুষ এমন সব চাকরিতে আটকা পড়েছে, যেখানে কোনো সুরক্ষা নেই, এমনকি বেতনও কম।’
পেশাদারদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে ইনস্টিটিউশন অব অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ। সংস্থাটির নীতিনির্ধারণ বিভাগের প্রধান রুথ উইলকিনসন বলেন, ‘অস্থায়ী কাজগুলো মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এগুলো কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি খুবই শোচনীয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। চুক্তিভিত্তিক কিংবা স্থায়ী সব শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য প্রতিটি কোম্পানির একটি মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে।’
এদিকে টিইউসির পল নোভাক বলেন, ‘বিরোধী দলের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। তারা ঘণ্টা চুক্তি ও ছাঁটাই-পুনর্নিয়োগ কৌশলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, অসুস্থতাকালীন বেতন এবং অন্যায্য বরখাস্ত থেকে সুরক্ষার মৌলিক অধিকার প্রবর্তন করার কথা জানিয়েছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো কোনো কর্মীর চাকরিতে যোগদানের প্রথম দিন থেকেই যেন তার অধিকার সমুন্নত থাকে।
টিইউসি যুক্তরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ফেডারেশন, যা সম্মিলিতভাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বেশির ভাগ ইউনিয়নবদ্ধ শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। সংস্থাটিতে প্রায় ৫৫ লাখ সদস্য ও ৪৮টি অনুমোদিত ইউনিয়ন রয়েছে।