অপরাধ

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কলেজ ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় উঠে আসে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নাম। এরপরই তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তদন্ত বন্ধ করে দেয় তদন্ত সংস্থা র‍্যাব- এমন অভিযোগ এনে ত্বকীর বাবা জানিয়েছেন, বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ৭ মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ত্বকী। এর একদিন পরই বের হয় ত্বকীর ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল। পদার্থ বিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ নম্বর পেয়েছিল ত্বকী। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। ছেলের এমন সাফল্য গত এক যুগে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি মা রওনক রেহানা।

তার মা বলেন, ছেলে কত ভালো ফল করেছিল, আজ থাকলে হয়তো অনেক ওপরে অবস্থান হতো তার। জীবন অন্যরকমও হতে পারতো। এসবই মনে পড়ে এখন।

ছেলে হত্যার আসামিদের নাম যখন সামনে আসতে থাকে তখনি তদন্ত হঠাৎ থমকে যায়। তদন্ত বন্ধে তদবির আসতে থাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

বিষয়টি নিয়ে ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বী বলেন, র‌্যাব মামলাটি খুবই আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করেছিল। সেসময় যারা দায়িত্বরত ছিলেন তারা ১৬৪ ধারায় দুইজনের জবানবন্দি নেয় এবং আজমেরী ওসমানের (শামীম ওসমানের ভাতিজা ও নাসিম ওসমানের ছেলে)  টর্চারসেলে অভিযান চালায়। শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন ওসমান পরিবারকে আমি দেখে রাখবো। সেসময় র‌্যাবের ডিজি, এডিজি যারা ছিলেন তাদেরকে শেখ হাসিনা ডেকে নেন। এরপর বলেন, ‘এটা (তদন্ত) বন্ধ রাখেন’।

সত্যিই কী ঘটেছিল সেই সময়? র‌্যাবের তদন্ত-ই-বা কেন থমকে গিয়েছিল সেটি জানতে অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া যায় বেশ কিছু নথিপত্র।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া খুনিদের একজন সুলতান শওকত ভ্রমর। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি আজমেরী ওসমানের অফিস উইনার ফ্যাশনে যাই বিকেলে। তারপর রাজীব ও কালাম ত্বকীকে আজমেরীর রুমে নিয়ে যায়। আজমেরী ওসমান কালামকে বলেন, সব শেষ তোরা যেখানে পারিস লাশটি ফেলে আয়।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার এবং তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম। আমজমেরী ওসামানের টর্চারসেল উইনার ফ্যাশনে অভিযানের কিছুদিন পর-ই বদলি করা হয় র‌্যাবের এই কর্মকর্তাকে।

এ সম্পর্কে ত্বকীর বাবা বলেন, আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে অভিযান চালানো থেকে শুরু করে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সবই করেছিলেন লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর। সেসময় শামীম ওসমান অভিযোগ করে বলেন, র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বিএনপি করে তাই ওসমান পরিবারের পেছনে লেগেছে।

এ পর্যন্ত আদালতের কাছে ৭০ বার সময় চেয়ে তদন্ত শেষ করতে পারেনি র‌্যাব। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শুধু র‌্যা-১১ নয়, আমাদের মূল অনুসন্ধান দল আন্তরিকতার সাথে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এটি আলোর মুখ দেখবে।

অন্তবর্তীকালীন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা ত্বকীর বাবা-মা’র। তার বাবার দাবি, দ্রুত সময়ে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরীকে গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজক্যলাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতারের কথা জানায় ডিএমপি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর তাকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নেয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় চাঁদপুরে দীপু মনির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চপদস্থ হিসেবে ঢাকার হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীপু মনিকে শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়, এরপর শিক্ষামন্ত্রী এবং সবশেষ সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চাঁদপুরে তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচুত্যির পর আত্মগোপনে ছিলেন দীপু মনি। বারিধারায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আজ তাকে গ্রেফতার করা হলো।

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ১৪ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসানের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কারের দাবি আদায়ে গত ১৬ জুলাই দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাট ডাউন’-এর ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই কর্মসূচি দমনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সারাদেশে শত শত শিক্ষার্থী-সাধারণ মানুষ নিহত হয়। আন্দোলন চলা অবস্থায় গত ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুরের দেশ পলিটেকনিক কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার হাসান আলভিও নিহত হয়।

হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিতে শেখ হাসিনা ছাড়াও রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক আইজিপিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নামে মামলা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ ৪১ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১৯ আগস্ট) কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দুদক জানায়, সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে আছেন, আনিসুল হক, টিপু মুনশি, নসরুল হামিদ, হাছান মাহমুদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ডা. দীপু মনি, জাহিদ মালেক, তাজুল ইসলাম, জুনাইদ আহমেদ পলক, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, হাসানুল হক ইনুসহ আরও অনেকে।

এছাড়া সাবেক এমপিদের মধ্যে আছেন, শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ আফিল উদ্দিন, কাজী নাবিল আহমেদ, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মেহের আফরোজ চুমকি, স্বপন ভট্টাচার্য, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন।

রোববার দুদক চেয়ারম্যানের কাছে তাদের তালিকা ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়ে অনুসন্ধানের আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন।

পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ বছরে মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে কারও আয় বেড়েছে, কারও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ গুণ থেকে কয়েক হাজার গুণ বেড়েছে সম্পদ।

সাতদিন সময় টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সময় মিডিয়া লিমিটেডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আহসানুল করিম।

সময় টিভির এমডি ও সিইও পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১৪ আগস্ট আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতে সিটি গ্রুপের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করীম। আহমেদ জোবায়েরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, গত শনিবার (১০ আগস্ট) গুলশানের সিটি হাউজে সময় মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, সভায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই সভায় পরিচালক শম্পা রহমানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সময় মিডিয়া লিমিটেডের সব কার্যক্রম এখন থেকে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে। পরে এ অব্যাহতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে আবেদন করেন আহমেদ জোবায়ের।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিচারক, রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতর (আইএসপিআর)। রোববার (১৮ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যপক অবনতি হয়। সে সময় প্রাণহানির শঙ্কায় ৫জন বিচারক, ২৪ জন রাজনীতিবিদ, ২৮ জন পুলিশের কর্মকর্তা, ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ ১২ জন ও তাদের পরিবারর ৫১ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৬১৫ জন নিজ উদ্যোগে সেনানিবাস থেকে চলে যায়। এছাড়া এখন পর্যন্ত চারজনকে অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনজন ও তাদের পরিবারের চারজন সদস্যসহ মোট সাতজন সেনানিবাসে রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ’র বাবা।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী’সহ ৯১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’এর শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহও অংশ নেয়।

গত ১৮ জুলাই, আসামিদের প্রত্যক্ষ মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান খালিদ।

পরে ২০ জুলাই, হাসপাতালে তার লাশ সনাক্ত করা হয়। মামলার বাদীর অভিযোগ, মামলা নিয়ে শুরু থেকেই গড়িমসি করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাত দু’টা নাগাদ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মামলার এজাহার গ্রহণ করা হয় বলে জানান বাদী কামরুল হাসান।

পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে এনে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা হবে। শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

এসময় মিনু বলেন, আওয়ামী লীগ যে লুটপাট করেছে, তার জবাব দিয়েছে ছাত্র জনতা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে রাজশাহীতে যে তিনজন শহীদ হয়েছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের হত্যার পেছনে হুকুম দাতাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত রাজশাহীতে মামলা হবে।

আন্দোলনের সময় পুলিশের পাশাপাশি, একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে তারও বিচার হবে। বর্তমান সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলেও আশা করেন বিএনপি’র এই নেতা।

বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো বিশৃঙ্খলার মধ্যে জড়ালে, দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মিনু। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা দলীয় হাইকমান্ড বরদাস্ত করবে না বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। 

সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান আদালতে বলেছেন, গত ৭ আগস্ট রাতে আমাকে বাসা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল নিয়ে যায়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৮ দিন আয়নাঘরে বন্দি রাখা হয়।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ কথা বলেন জিয়াউল আহসান। এ সময় তিনি দাবি করেন, আয়নাঘর তার সৃষ্টি নয়। তিনি কোনো গুম, খুনের সাথে জড়িত নন।

জিয়াউল আহসান বলেন, যেসব ব্যক্তি আয়নাঘর থেকে বের হয়ে আসছে, তাদের কেউ বলুক আমি তাদের সেখানে রেখেছি। যেভাবে আমাকে নিয়ে দোষারোপ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। আমি অসুস্থ। হার্টেসহ অন্যান্য সমস্যা রয়েছে।

প্যাগাসাস সফটওয়ারের বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, প্যাগাসাস বলে কিছু নাই। মোবাইল ট্র্যাকিং করিনি।

আদালতে তার কথা বলা নিয়ে বিরোধিতা করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা বলেন, তিনি গণহত্যার আসামি। তার কথা বলার অধিকার নেই। এর তীব্র বিরোধিতা করেন জিয়াউল আহসানের বোন অ্যাডভোকেট নাজনীন নাহার।

এরই মাঝে জিয়াউল আহসান বলেন, র‍্যাবে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি হয়নি। এরপর আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এছাড়া, তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সম্পর্কে আদালতকে বলেন, আন্দোলন চলাকালে যে সংস্থায় তিনি কাজ করেছেন, সেটার কোনো অস্ত্র নেই। সুতরাং গুলি চালাতে বলার প্রশ্নই ওঠে না বা সেরকম কমান্ড তিনি দেননি।

আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে জিয়াউল আহসান বলেন, নিউমার্কেট থানার যে মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। সেই নিউমার্কেট সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ওই সময়ে তিনি যাননি।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি খন্ডন করে বলেন, গণহত্যায় পরিকল্পনাকারী হিসেবে জিয়ার নাম শুরু থেকেই আছে। মোবাইলে আড়ি পেতে বিরোধী মতের সবাইকে তিনি ধরাশায়ী করেছেন। এছাড়া র‍্যাবে থাকাকালীন তিনি নিজ হাতে বহু গুম, খুন ও ক্রসফায়ার করেছেন।

হকার শাহজাহান হত্যার ঘটনায় রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা মামলায় আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক খুদে বার্তায় বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা হতে জিয়াউল আহসানকে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয়।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর গত ৬ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে জানিয়েছিল।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী শিবির ও আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতা এবং গুপ্তহত্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সহযোগিতা করার অভিযোগ তুলেছিলেন।

জিয়াউল আহসান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার। ২০০৯ সালের ৫ মার্চ র‍্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক ও একই বছর লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক হন তিনি।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।

২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক আদেশে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।