অপরাধ

কোরবানির সময় নির্ধারিত হাট বাদে কোথাও গরু বেচাকেনাতো দূরের কথা প্রদর্শনীতেও মানা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। অথচ নগর কর্তৃপক্ষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রীতিমতো হাট বসিয়েছে বেশ কিছু খামার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার চাঁদ উদ্যানের পাশে রীতিমতো রাস্তা দখল করে বসেছে হাট। অথচ চলতি মাসেই চিঠি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় ও প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

যদিও রাস্তা দখল করে হাট বসানোর পক্ষে যুক্তিও দাঁড় করান সাদেক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের গরু হাটে নিয়ে যেতাম তাহলে যেসব ক্রেতা গরু কিনতো তাদের পাঁচ শতাংশ হাসিল দিতে হতো। কিন্তু আমাদের খামার থেকে কেনার কারণে তাদের আর হাসিল দিতে হচ্ছে না। এতে ক্রেতাদের লাভ হচ্ছে, পয়সা বেচে যাচ্ছে।’

তবে নাকের ডগায় এমন অনিয়ম চোখেই পড়েনি ডিএনসিসির। শেষ বেলায় এসে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন প্রধান নির্বাহী মীর খাইরুল আলম। তিনি বলেন, আমরা ৮টি হাট ইজারা দিয়েছি। এর বাইরে কেউ গরু কেনাবেচা করতে পারবে না।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি অংশকে নিরাপদ রুট (যাত্রাপথ) হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাচালানিরা। প্রশাসনের সহায়তায় এই রুট ব্যবহার করে তারা ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু, মাদকসহ নানা পণ্য আনছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে দু’চারটি চালান আটক হলেও মূল হোতারা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এভাবে দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদের এ অংশটি এখন চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্ন সীমান্তপথে চোরাচালানের বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের কাছে ‘ওপন সিক্রেট’। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের অনেকেই বিষয়টি অবগত। তারপরও নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা অজ্ঞাত কারনে দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। চোরাচালান পণ্যের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ বাধছে। সুন্দরবন ও সংলগ্ন সীমান্তবর্তী কালিঞ্চি, গোলাখালী, কৈখালী, নৈকাটিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার স্থানীয়দের পাশাপাশি চোরাকারবারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্থলভাগ দিয়ে চোরাচালানের সুযোগ কম, ঝুঁকিও বেশি। তাই সীমান্তবর্তী কালিন্দি ও রায়মঙ্গল নদীকে চোরাকারবারীরা চোরাচালানের ‘মুল পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।

কালিঞ্চি গ্রামের আবুল তরফদার জানান, বনদস্যুদের উপদ্রব না থাকায় সুন্দরবনের নৌপথ চোরাচালানের জন্য নিরাপদ। এছাড়া এ রুটে আইন শৃঙ্খল বাহিনীর টহলেরও ভয় থাকে না। এ সুযোগে ভারতীয় গরু, মাদকসহ নানা পণ্য নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে ঢুকছে। একইভাবে বাংলাদেশকে থেকে ওষুধসহ নানা পন্য ভারতে পাচার হচ্ছে।

চোরাচালানের মালামাল পরিবহনে জড়িত কৈখালীর হারুন ও মাহতাব জানান, ভারতীয় চোরাকারবারীরা গরু ও মাদকের চালান কচুখালী, বকচরা, তালপট্রি ও হোগলডুরি এলাকায় রেখে যায়। বড় চালান রায়মঙ্গল এবং ছোট চালান কালিন্দি নদী সংলগ্ন পাঁচ নদীর মোহনা দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে যায়। স্থানীয় চোরাচালান চক্রের সদস্যরা মাছ বা কাঁকড়া শিকারের অজুহাতে স্পট থেকে সেই চালান সংগ্রহ করে। সুবিধাজনক সময়ে সেগুলো কৈখালী ও ভেটখালী স্লুইসগেট, আলম চেয়ারম্যান ও আব্দুর রহমানের বাড়ি ছাড়াও গোলাখালী, কালিঞ্চি এবং পশ্চিম কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পাচার করে। এর আগে ভারতের শমসেরনগর, কালিতলা, ঘুমটে ও গোবন্দকাঠি থেকে মাদকের বস্তা এবং গরু নৌকায় উঠিয়ে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চোরাকারবারীতে জড়িত কয়েকজন জানায়, পাঁচ নদীর মোহনা থেকে কিছুটা দূরত্বে বনবিভাগের কৈখালী স্টেশন, রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও কৈখালী বিজিবি ক্যাম্প। এই অংশ দিয়ে চোরাচালানে ঝুঁকি রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই তারা চোরাচালানের কাজ করছে। এ কাজ নির্বিঘ্ন করতে তারা ‘লাইন ম্যান’ (বাঁধাহীন ভাবে মালামাল পরিবহন)’ দেয়। তাদের গরু প্রতি পাঁচশ থেকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তবে এ অভিযোগ করেছেন বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের একজন কমান্ডার। তিনি বলেন, এমন অনৈতিক কাজের সঙ্গে বিজিবির কোন সদস্য জড়িত আছে এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রায়নগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাইদুল ইসলাম বলেন, চোরাকারবারীরা আগে এই রুট ব্যবহার করলেও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে তারা রায়মঙ্গল নদী হয়ে হোগলডুরি রুটে চলাচল করছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, জনবল সংকট থাকায় সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয়না।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সীমান্ত এলাকা নজরদারির জন্য বিজিবি, নৌ-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে।

‘রাফসান দ্য ছোট ভাই’ নামে পরিচিত কনটেন্ট নির্মাতা ইফতেখার রাফসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ‘ব্লু ড্রিংকস’ নামে একটি পানীয় বাজারজাত করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা হয়।

ঢাকার বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের বিচারক আলাউল আকবর সম্প্রতি এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কামরুল ইসলামই ‘ব্লু ড্রিংকস’ বাজারজাত করার অভিযোগে সম্প্রতি ইফতেখার রাফসানের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলাটি করেছিলেন।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ‘রাফসান দ্য ছোট ভাই’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে। সম্প্রতি একটি বিষয় ঘিরে তাঁকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত কনটেন্টের আয়ের অর্থ দিয়ে তিনি একটি গাড়ি কিনে মা–বাবাকে উপহার দিয়েছিলেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। 

আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মামলায় অভিযোগ গঠনের পর বেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উষ্মা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। বলা হয়েছিল, আপনি থাকেন। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ লোহার খাঁচার মধ্যে ছিলাম। আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এটা ন্যায্য হলো কিনা? আমি যতদূর জানি, যতদিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, ততদিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।’

ক্রমাগত হয়রানির মধ্যে আছেন দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। অথচ এসব শব্দ আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সারাজীবন তো আমরা মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসেছি। কিন্তু আমাদের বোধে আসছে না কেন এই হয়রানি করা হচ্ছে? আমি রক্তচোষা, আমি সুদখোর, আমি দেশের শত্রু, আমি পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই– কথার কথা এভাবেই বলা হচ্ছে। এগুলোই হচ্ছে হয়রানি। আমাকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, একজন নিরপরাধ মানুষকে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।

 

এর আগে গতকাল সকালে ড. ইউনূসসহ অপর আসামিরা আদালতে হাজির হন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। পরে বিচারক বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য রাখেন। তবে অভিযোগ গঠনের এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে রাজধানীর বনানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে করে মহাখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় সব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।শনিবার (৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে উত্তরা বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক  বলেন, নেপারেল গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ করছেন শ্রমিকরা। তারা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সৈনিক ক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাদের বোঝানো হয়েছে তবুও সড়ক থেকে সরে যাচ্ছেন না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা গার্মেন্টসটির মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ঘটনাস্থলে এলে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সড়ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি।

বাবার হত্যার বিচার চান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেছেন, আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দেখতে চাই। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে তাদের আমি দেখতে চাই। বুধবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে তিনি এ কথা বলেন।বাবার হত্যার বিচার চান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে জেনেছি যে, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুনেই আমি ডিবি প্রধান হারুন আঙ্কেলের কাছে এসেছি। তারা তিনজনকে ধরেছেন। মূলত, আমি মামলা করবো। ডিএমপি কমিশনার, ডিবিপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ডিবি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছে। ডরিন বলেন, আমার কোনো ভাই নেই। আমরা দুই বোন। বড় বোন ডক্টর। আমি এলএলবি পড়ছি। আমি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্ডারে এলএলবি পড়ছি। আমি নিজেই আজ এখানে এসেছি। ডিবি পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছে বলে আমি অনেক তথ্য পাচ্ছি।গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে ডরিন বলেন, ‘আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। আপনারা এ বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করুন। আপনারা নিউজ করুন, অনুসন্ধান করুন। আপনাদের নিউজে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হোক। আমি যেন বিচার পাই, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন জানতে পারি।’

ডরিন বলেন, আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, কেন করেছে, এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমি এর শেষ দেখতে চাই, তারা কেন বাবাকে হত্যা করেছে? আমি যেন দেখতে পাই আমার বাবার হত্যাকারীদে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে।ডরিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ আমি এতিম হয়ে গেছি। আজ আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। আমি মাঝপথে। সবার পরিবার আছে, সন্তান আছে। সবাই জানেন, যার বাবা থাকে না তার কেউ থাকে না তারা এতিম হয়ে যায়। যতই কাছের আত্মীয়, আপন মানুষ থাকুক না কেন বাপ, বাবাই। বাপের মতো কেউ আপন হয় না।

ডরিন আরও বলেন, আমার বাবা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাকে এলএলবিতে ভর্তি করিয়েছে। আমি পরীক্ষাও দিয়েছি। সামনে রেজাল্ট দেবে। বাবা আমাকে বলে গেছে ইন্ডিয়া থেকে ফিরে আমার রেজাল্ট চেক করবে। আমার কোনো কথাই সে রাখতে পারেনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডরিন বলেন, আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা আমার বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার করুন। একটা সময় আমার বাবা ১৪টা বছর মিথ্যা মামলায় পালিয়ে থেকেছেন। তখন আমি অনেক ছোট। তখনো আমি আমার বাবাকে কাছে পাইনি। যখন একটু বুঝতে শিখেছি তখন আমার বাবাকে কাছে পেয়েছি। এখন আবার আমার বাবাকে হারিয়ে ফেললাম। আপনারা কেউ আমার বড় ভাই কেউ বাবার মতো। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করলো, কেন করলো।আপনি বা আপনার পরিবার কাউকে সন্দেহ করছে কি না? তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এর মধ্যে একজনের নাম আনোয়ারুল আরেকজনের নাম ফয়সাল। আপনি তাদের চেনেন কি না? জানতে চাইলে ডরিন বলেন, ‘আমি চিনি না কিন্তু চিনতে চাই আমি হারুন আঙ্কেলকে বলেছি, আপনি আইডেন্টিফাই করুন কেন এরকমটি হলো। আমি নিজেও আইন পড়ছি আইনের কিছু বিষয় আমি জানি। আপনি দেখুন আমাকে চেনান তারা কারা। আমি তাদের চিনতে চাই; আমি তাদের প্রকাশ্যে মৃত্যু দেখতে চাই। আমাকে এভাবে এতিম করে দিলো!’

বাবার সঙ্গে আপনার বা পরিবারের সবে শেষ কি কথা হয়েছিল জানতে চাইলে ডরিন বলেন, ‘আমার সঙ্গে বাবার সর্বশেষ ভিডিওকলে কথা হয়েছে। সে বলেছে আম্মু আমি ইন্ডিয়ায় যাচ্ছি। দু-একদিনের মধ্যে চলে আসবো। তোমার দাঁতের ডাক্তার দেখানোর কথা। আমি ফিরে এসে তোমাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তুমি যেও না। ডাক্তার ফোন করলে বলবে যে বাবা ইন্ডিয়ায় গেছে বাবা ফিরে এলে যাবো। তুমি থাকো আমি আসছি। তারপর আর বাবার সঙ্গে কথা হয়নি।’এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভারতে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের বাংলাদেশের মানুষ জড়িত। আজীমকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের সন্ধানে আবারও তল্লাশিতে নেমেছে ভারতের সিআইডি। শনিবার (২৫ মে) দুপুরে ১২টার পর থেকে সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানা-পুলিশ এই তল্লাশি অভিযান শুরু করে। তবে এদিনের অভিযানে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে রাখা হয়নি। এদিনও ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা খালে দুর্যোগ মোকাবিলা দল নামানো হয়। পাশাপাশি মরদেহের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।এর আগে শুক্রবার (২৪ মে) এমপি আনারের লাশের টুকরোর সন্ধানে জোর অভিযান চালানো হয়। সেদিন ১২ দিনের হেফাজতে থাকা এই হত্যা মামলার আসামি জিহাদ হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায় অভিযান চালায় সিআইডি।জিহাদকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তার বক্তব্য যাচাইয়ের পাশাপাশি তাকে সঙ্গে নিয়ে খুন হয়ে যাওয়া সংসদ সদস্যের শরীরের অঙ্গগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। মরদেহের অংশ খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি এই খুনের ঘটনায় আর কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়াই এখন গোয়েন্দাদের প্রধান লক্ষ্য। শুক্রবার বিকেলে আদালত থেকে জিহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণমাটির জিরানগাছা খাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। খালে নামনো হয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল। পাশাপাশি লাশের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়।

সেদিন সন্ধ্যা নামার আগেই একটি ব্যাগ উদ্ধার কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যাগটি একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধারের পর রটনা ছড়ায় ওই থলের মধ্যে এমপি আনারের লাশের টুকরো থাকতে পারে। যদিও তার ভেতর থেকে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

এ ঘটনায় বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।