শিল্প - সাহিত্য

আল মাহফুজ 


‘ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুরবেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে বৃষ্টি কোথায়
বরকতেরই রক্ত।
……………………
প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।’

‘একুশের কবিতা’। বিখ্যাত এই কবিতার জনক আল মাহমুদ। তার রচিত ‘নোলক’ কবিতাটিও পাঠ্যপুস্তকের বদৌলতে অনেকেরই পড়া হয়েছে। শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যায় কবিতাটি। হয়তো তার চেয়েও বেশি কিছু, যা আমাদের ক্রমাগত নস্টালজিক করে তোলে। নোলকের দুয়েক ছত্র এখানে তোলা হলো–

‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে,
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’

কবি আল মাহমুদ। তিতাস পারের কবি। গতকাল (১১ জুলাই) ছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই প্রধান কবির জন্মদিন। আর ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। সেদিন ছিল শুক্রবার। অথচ কি আশ্চর্য, এমন ‘শুভ’ শুক্রবারের রজনী শেষেই ধরাধাম থেকে তিনি বিদায় নিতে চেয়েছিলেন! প্রকৃতি সম্ভবত তার ডাক শুনেছে। প্রকৃতি সম্ভবত কবিদের কথা শুনতে পায়। কি নিঠুর সেই সাধ পোরা সম্ভাষণ, আমরা একটু মিলিয়ে দেখি–

‘কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে
মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;
অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে
ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।’

শুক্রবারে ফিরে যাওয়ার তাকিদ সত্যি হলো কবির।

 

 

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সক্রিয় থেকে আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, শব্দরাশি ও বাক্ভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। কবিতায় উপহার দিয়েছেন লোকজ ভাণ্ডার। শুধুমাত্র ‘সোনালী কাবিন’ লিখেই তিনি শিল্পের চূড়ায় অবস্থান করতে পারতেন। কিন্তু ‘লোক লোকান্তরে’র কলমের খোঁচায় সাজিয়ে তুলেছেন অজস্র ভাণ্ডার। কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও সমান বিচরণ করেছেন।

আল মাহমুদ একাধারে একজন কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। জীবনানন্দ দাশের পর এতো বড় কবি বাংলা সাহিত্যে এসেছিলেন কিনা, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। যুক্তি বা বাহাস চলতে পারে, চলুক। আমরা বরং তার অমর সৃষ্টি ‘সোনালী কাবিন’-এর প্রথম সনেটটি পড়ি–

‘সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিনী
যদি নাও, দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দু’টি,
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;
ভালোবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্ব্ন,
ছলনা জানি না বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি;
দেহ দিলে দেহ পাবে, দেহের অধিক মূলধন
আমার তো নেই সখি, যেই পণ্যে অলঙ্কার কিনি।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইর পাতাও থাকবে না;
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হব চিরচেনা
পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয়না কবিরা;
দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।’

নিজের কবিতা পড়ছেন কবি।

 

ব্যক্তি আল মাহমুদ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। জীবনের ছুটে চলা ট্রেন কখনও ভুল স্টেশনে থেমেছে। কখনও বগি ঠিক করতে সময় একটু বেশি লেগেছে। তবু ছুটে চলেছে ট্রেন। তবু তার পদ্য-গদ্য আবেশ ছড়িয়েছে পাঠকমনে। এক বিন্দু আফসোস করার ফুরসত তিনি রাখেননি।

আমরা জানি, প্রতিটি ব্যক্তির কিছু না কিছু মানবীয় ক্ষুদ্রতা থাকে। আমরা সেভাবেই কবিকে বিবেচনা করতে চাই। শারীরিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবিরও কি সকল ক্ষুদ্রতার সমাপ্তি ঘটে যায়? ব্যক্তি কবি যদি ক্ষুদ্রতার মাইলফলক পাড়ি দিতে না পারে, তবুও তার সৃষ্ট কবিতার মহত্ত্ব হারায় কি?

কবিতাকে ‘কবিতা’ হয়ে উঠতে হলে ‘যদি, কিন্তু, তবে’র পথ দিয়ে না হাঁটলেও চলে। তখন এগুলো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। আল মাহমুদের কবিতাও তেমন। সেগুলো কারও ধার না ধেরেই কবিতা হয়ে ওঠে। তার ‘পানকৌড়ির রক্ত’ দেখে গল্পপাঠকের সম্বিৎ ফেরে। সেগুলো তখন আর অন্য কোনো রাস্তা দিয়ে হাঁটে না। হাঁটার দরকার পড়ে না। আমরা মাহমুদে নন্দনতত্ত্বের যেমন দেখা পাই, তেমনি ফান্ডামেন্টাল রূপও অদেখা থাকে না।

তবে তাকে নিয়ে যতো সমালোচনাই থাকুক, বাংলা সাহিত্য মাহমুদকে মনে রাখবে তার অসীম কাব্য প্রতিভার ক্ষমতাবলে। মাহমুদের পিপাসার্ত কবিতা হয়তো বৃষ্টি হয়ে ঝরবে। আজকের মতো কোনো মেঘলা মেদুর দিনে সিক্ত করবে তপ্ত মাটিকে। সেগুলো সাদা কালো অক্ষর থেকে হয়তো পানকৌড়ির মতো ডানা মেলবে। অক্ষরগুলো বর্ণিল হোক অথবা বিবর্ণ, আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার অজর কবিতায়, অসামান্য গদ্যে।

কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাকে নিয়ে লেখাটির ইতি টানছি তার কবিতা ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ দিয়ে–

‘শেষ ট্রেন ধরবো বলে এক রকম ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে দেখি
নীলবর্ণ আলোর সংকেত। হতাশার মতোন হঠাৎ
দারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।
যাদের সাথে শহরে যাবার কথা ছিল তাদের উৎকণ্ঠিত মুখ
জানালায় উবুড় হয়ে আমাকে দেখছে। হাত নেড়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
আসার সময় আব্বা তাড়া দিয়েছিলেন, গোছাতে গোছাতেই
তোর সময় বয়ে যাবে, তুই আবার গাড়ি পাবি।
আম্মা বলছিলেন, আজ রাত না হয় বই নিয়েই বসে থাক
কত রাত তো অমনি থাকিস।
আমার ঘুম পেলো। এক নিঃস্বপ্ন নিদ্রায় আমি
নিহত হয়ে থাকলাম।
অথচ জাহানারা কোনদিন ট্রেন ফেল করে না। ফরহাদ
আধ ঘণ্টা আগেই স্টেশনে পৌঁছে যায়। লাইলী
মালপত্র তুলে দিয়ে আগেই চাকরকে টিকিট কিনতে পাঠায়। নাহার
কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে আনন্দে ভাত পর্যন্ত খেতে পারে না।
আর আমি এঁদের ভাই
সাত মাইল হেঁটে শেষ রাতের গাড়ি হারিয়ে
এক অখ্যাত স্টেশনে কুয়াশায় কাঁপছি।
কুয়াশার শাদা পর্দা দোলাতে দোলাতে আবার আমি ঘরে ফিরবো।
শিশিরে আমার পাজামা ভিজে যাবে। চোখের পাতায়
শীতের বিন্দু জমতে জমতে নির্লজ্জের মতোন হঠাৎ
লাল সূর্য উঠে আসবে। পরাজিতের মতো আমার মুখের উপর রোদ
নামলে, সামনে দেখবো পরিচিত নদী। ছড়ানোছিটানো
ঘরবাড়ি, গ্রাম। জলার দিকে বকের ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে। তারপর
দারুণ ভয়ের মতো ভেসে উঠবে আমাদের আটচালা।
কলার ছোট বাগান।
দীর্ঘ পাতাগুলো না না করে কাঁপছে। বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন,
ফাবি আইয়ে আলা ই-রাব্বিকুমা তুকাজ্বিবান …।
বাসি বাসন হাতে আম্মা আমাকে দেখে হেসেফেলবেন।
ভালোই হলো তোর ফিরে আসা। তুই না থাকলে
ঘরবাড়ি একেবারে কেমন শূন্য হয়ে যায়। হাত মুখ
ধুয়ে আয়। নাস্তা পাঠাই।
আর আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আমার প্রত্যাবর্তনের লজ্জাকে
ঘষে ঘষে
তুলে ফেলবো।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা আর নেই। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

তিনি জানান, মাঝখানে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অসীম সাহা মোটামুটি সুস্থই ছিলেন। অল্প কয়েকদিন আগেই আমার সঙ্গে দেখা হয়। আজ শুনি তিনি আর নেই। 

হুদা জানান, বর্তমানে অসীম সাহাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাকে সেখানেই দেখতে যাচ্ছি। 

 

চলতি বছরের শুরুর দিকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কবি অসীম সাহা। চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, বিষণ্ণতায় ভুগছেন কবি। এছাড়া পারকিনসন (হাত কাঁপা রোগ), কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন তিনি।

১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নানাবাড়ি নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা। পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগে। সামগ্রিকভাবে সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। পরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। 

দেশের সামুদ্রিক মাছে সুষ্ঠু প্রজনন, মজুদ, সংরক্ষণ ও সহনশীল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকার করা বন্ধ থাকবে।  বঙ্গোপসাগরে একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকায় সকল যান্ত্রিক অযান্ত্রিক নৌযান এবং বাণিজ্যিক ট্রলার দিয়ে মাছ, চিংড়ি ও চিংড়ি জাতীয় মাছ আহরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।এ অবস্থায় জেলে পাড়ায় হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। এমনিতেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। এমন অবস্থায় উৎকণ্ঠায় উপজেলার কয়েক হাজার জেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৃষ্টি না হওয়া, তাপমাত্রার কারণে সাগর নদীর পানি গরম থাকায় ইলিশ তো দূরের কথা গত দুই মাস ধরে জালে মাছ ধরা পড়ছে না। জেলেদের এমন দুঃসময়ের মধ্যেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে সংসারের খরচ, দাদন ও ঋণের টাকার জোগান হবে কোথা থেকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা।  

এছাড়া বরাবরের মতো এবারও জেলেদের অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে। যেদিন ভারতে শেষ, সেদিন বাংলাদেশে শুরু; প্রতি বছরই ভারতের জেলেরা বাংলাদেশি জলসীমায় নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা এক সময় দেওয়াসহ আন্তঃদেশীয় একটি ব্যবস্থাপনা দরকার বলে দাবি করছেন জেলেরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে জেলেদের তেমন তৎপরতা নেই। শেষ মুহূর্তে এসেও জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। তবুও বলেশ্বর বিষখালী নদীর তীরে জাল সেলাই করছেন একদল জেলে। সাগরে মাছ ধরতে না গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে জাল মেরামত করছেন তারা। এমন অবস্থায় জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

চরলাঠিমারা গ্রামের বেলায়েত হোসেন, আকবর আলী, ছগির হোসেনসহ একাধিক জেলে বলেন, দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে জেলেদের চরম অর্থকষ্টে পড়তে হবে। এমনিইে প্রতি বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। আবার ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা।   এ নিষেধাজ্ঞা ইলিশ বৃদ্ধির জন্য নয়; জেলেদের পেটে লাথি মারা ছাড়া আর কিছুই না বলে অভিযোগ জেলেদের।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশি পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ বাড়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভারতীয় জেলেরা প্রতি বছরের ন্যায় ইলিশ ধরবেন।১৯৮৩ সালের সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় সংযোজিত ১৯নং বিধিমোতাবেক ‘সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও মজুদ, সংরক্ষণ এবং সহনশীল মৎস্য আহরণ’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান এবং বাণিজ্যিক ট্রলার দিয়ে মাছ ও ক্রাস্টাশিয়ান্স (কাঁকড়াজাতীয় জলজ প্রাণী) আহরণ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে মৎস্যজীবীরা জানান, ২০১৯ সাল থেকে এ আইন পাথরঘাটার তীরবর্তী বঙ্গোপসার কেন্দ্রিক উপকূলে কার্যকর শুরু হয়েছে। এর আগে কখনই এ আইন বাস্তবায়ন হয়নি। মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলিং জাহাজ মালিকদের চাপের কারণে এ আইনের আওতায় উপকূলের ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারগুলোকেও আনা হয়েছে। ২০১৫ সালে এসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য-২ (আইন) অধিশাখা এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সমুদ্রগামী ইঞ্জিনচালিত কাঠের ট্রলারের জেলেরা সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ইঞ্চি ফাঁসের বৈধ জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করেন। আর ট্রলিং জাহাজ সম্পূর্ণ অবৈধ জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছ শিকার করছে এবং ওই ট্রলিং জাহাজের ৪০ মিটার পানি গভীরতায় মাছ ধরার কথা থাকলেও উপকূলের মাত্র ৪ থেকে ৫ মিটার গভীরতায় এসে মাছ শিকার করে। অথচ যে জাল দিয়ে ছোট পোনা মাছ ধ্বংস হয় না  এ আইনে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যা যুক্তিসংগত নয়। এ আইন আমাদের জেলেদের ওপর অমানবিক এবং অন্যায়।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপকূলীয় এলাকায় সব জেলে, ফিশিং বোট ও নৌকার মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পোস্টার, লিফলেটসহ মাইকিং করেও জেলেদের সচেতন ও সতর্ক করা হয়েছে।

দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। সোমবার (২০ মে) দিনগত রাতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটি করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুস নিয়েছেন।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো।

করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী কাজে বিশেষ অবাদান রাখায় শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পেয়েছেন ফরিদপুরের ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল প্রফের শিক্ষার্থী মো. আরমান হোসেন দীপ্ত।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম মোমেন, আইসিওয়াইএফ'র সভাপতি তাহা আয়হান, মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ ও বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।

এ সময় অনুষ্ঠানে ‘মোস্ট ইন্সপ্রায়ারিং ভলান্টিয়ার স্টোরি’ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন মো. আরমান হোসেন দীপ্ত। তাঁকে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

আরমান হোসেন দীপ্ত ফরিদপুর জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুপ্রয়াসের সভাপতি। ২০১২ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। করোনাকালীন সময়ে জরুরি অক্সিজেন সেবা ও লকডাউনে অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌছে দেওয়াসহ বন্যার্তদের মাঝে জরুরি খাদ্য ও ওষুধ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড -২০২০ ছাড়াও করোনাকালে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক আয়োজিত আইভিডি ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০, কোভিড-১৯ হিরো অ্যাওয়ার্ড, ইয়ুথ স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড, ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন আরমান হোসেন দীপ্ত।

করোনাকালে স্বেচ্ছাসেবী কাজে বিশেষ অবাদান রাখায় শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পেয়েছেন ফরিদপুরের ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল প্রফের শিক্ষার্থী মো. আরমান হোসেন দীপ্ত।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ঢাকা ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সভায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম মোমেন, আইসিওয়াইএফ'র সভাপতি তাহা আয়হান, মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ ও বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।

এ সময় অনুষ্ঠানে ‘মোস্ট ইন্সপ্রায়ারিং ভলান্টিয়ার স্টোরি’ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন মো. আরমান হোসেন দীপ্ত। তাঁকে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

আরমান হোসেন দীপ্ত ফরিদপুর জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুপ্রয়াসের সভাপতি। ২০১২ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। করোনাকালীন সময়ে জরুরি অক্সিজেন সেবা ও লকডাউনে অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌছে দেওয়াসহ বন্যার্তদের মাঝে জরুরি খাদ্য ও ওষুধ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড -২০২০ ছাড়াও করোনাকালে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক আয়োজিত আইভিডি ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০, কোভিড-১৯ হিরো অ্যাওয়ার্ড, ইয়ুথ স্পিরিট অ্যাওয়ার্ড, ইয়ুথ ভলান্টিয়ার এক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন আরমান হোসেন দীপ্ত।

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, বাংলাদেশের বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। যেসব কীর্তিমান মানুষের আত্মত্যাগে এই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল এই দিনে সারা দেশে তাদেরকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাই দিনটিকে গৌরবময় বিজয় দিবস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। তবে একইসঙ্গে দিনটি বেদনারও, বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের জন্য। অগনিত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের, যেসব নারী ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের।

বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হলেও এই ভূখন্ডের বাঙালির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আসেনি। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয় এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তান নামে একটি অসম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বাঙালির উপর তাদের শাসন, শোষণ এবং নির্যাতন চালায়। অত্যাচার, অনাচার, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, বাংলা ভাষার জন্য ১৯৪৭ সালের পর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে উপনীত হয়। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু রেডকোর্স ময়দানে তার অমর ভাষনে জাতিকে নির্দেশনা দিয়ে স্বাধীনতার পথকে সুগম করেন। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তিনি ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলে, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি জাতি। ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে আন্দোলনকামী বাংলার মানুষের উপর লেলিয়ে দেয়া পাকিস্তানী বাহিনী এক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তখন থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার যুদ্ধ।

দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে এই যুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিতে শুরু করে চরম নির্যাতন ও গণহত্যা। নির্যাতন, গণহত্যার পাশাপাশি ধর্ষণ, শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় পাকবাহিনীরা। বাংলাদেশ পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অদম্য কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নারীসহ সব শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের বাঙালি।

সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও এদেশের কিছু মানুষ, জাতির কুলাঙ্গার সন্তান পাক বাহিনীর পক্ষ নেয়। রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠে। পরাজয়ের চুড়ান্ত পরিনতি বুঝতে পেরে বিজয়ের দুইদিন আগে জাতির সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবিদের বেছে বেছে হত্যা করে। এ কাজেও সহযোগিতা ও সরাসরি অংশ নেয় এ দেশীয় রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্যরা।

স্বাধীনতার এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত। খাদ্য, আশ্রয়, অস্ত্র, সৈন্যসহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশাল ভূমিকা রাখে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন)।

জনাব মাশরাফি বিন মুর্তজার নড়াইল হাসপাতালের ঝটিকা সফর আমার কাছে একটা ইতিবাচক প্রয়াস বলে মনে হয়। আপনি যে নড়াইলবাসীর চিকিৎসার উন্নয়ন নিয়ে ভাবছেন, এটা খুবই ভালো কথা। তবে আপনার সফরের তরিকাটা ভুল।

আসলেই আপনি যদি কিছু করতে চান, তাহলে নড়াইল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আসাদ-উজ-জামান স্যারের টিমের সাথে একটা সারাদিনের (সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) মিটিংয়ের ব্যবস্থা করুন। এই ধরনের মিটিংকে বলা হয় স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং মিটিং, যেমন: একটা টুর্নামেন্টের আগে আপনারা পুরো দলকে নিয়ে করে থাকেন।

মিটিংয়ের ভেন্যু হতে পারে চিত্রা রিসোর্টের সেমিনার কক্ষে। এই ধরনের মিটিং শুরু হয় সকালের নাস্তা দিয়ে, মাঝে মাঝে থাকে নিউট্রিশন ব্রেক ১০-১৫ মিনিটের, মধ্যাহ্ন ভোজ, বিকালের চা এবং সঙ্গে টাও।

পুরো মিটিংটা আপনি চাইলে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনায়াসে স্পন্সর করতে পারেন।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের ১ নম্বর গোল হলো: Health Care system Development in Narail. Please focus on it and start working on it.

প্ল্যানিং মিটিংয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আসাদ-উজ-জামান স্যার হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১১ জনের একটা একটা টিম নিয়ে আসবেন, যেখানে ডাক্তার, নার্স, এডমিন ও ক্লিনার সবার প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন থেকে আপনি, অনিক (Founder GS) এবং এলাকার শিক্ষক, উকিল, ইনজিনিয়ার, প্রাইভেট ফিজিসিয়ান ও রোগীর প্রতিনিধিসহ ১১ জনের একটি টিম থাকবে।

এম্প্যায়ার হিসেবে বাংলাদেশের হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ দুই জন ডাক্তার স্যারকে আমন্ত্রণ জানাবেন যথাযথ সন্মানিসহ। এখানে আমি ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিরের নাম প্রস্তাব করছি, যিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আমূল পরিবর্তন করেছেন।

মিটিংয়ে বসে সমস্যা শুনুন, সমাধান বের করুন। পাঁচ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা করুন। প্রতি ৩-৪ মাস পর পর ফলোআপ মিটিং করুন এবং সমস্যার সমাধান করুন।

তবে মনে রাখবেন প্রিয় ক্যাপ্টেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ নয়, এটি একটি দীর্ঘ (কমপক্ষে পাঁচ বছর) পরিক্রমা।

আপনার লিডারশিপ ক্যাপাবিলিটি আছে, সম্পদ আছে এবং কানেকটিভিটি আছে। মূলত এই জনসম্পৃক্ততাই হলো উৎপাদনশীলতা। 

পরিশেষে বলবো, দেশের সেরা সন্তান ডাক্তারদের নিয়ে অহেতুক ভাইরাল ভিডিও না করে তাঁদেরকে সাহায্য করুন, যাতে নড়াইল হাসপাতাল দেশের একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে ভাইরাল হয়।

যানবাহনে দুর্ঘটনা পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি ঘটে থাকে। উন্নত বিশ্বেও ঘটে। তবে বাংলাদেশে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তার পুরোটাই অসাবধানতা এবং নিয়ম না মানার কারণে ঘটে। আর প্রতিবার এর শিকার হয় সাধারণ মানুষগুলো। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। 

লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে জীবন গেলে প্রায় ৪১ জন নিরীহ মানুষের। আরো শতখানেক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে হয়তো কোন রকমে বেঁচে আছে। জীবনের বাকিটা সময় হয়ত বেঁচে থাকবে বিকলাঙ্গ হয়ে।

প্রাথমিক খবরে জানা গেল, লঞ্চটির ফিটনেস রয়েছে ২০২২ পর্যন্ত। কিন্তু নিউজ পেপারে ঘটনার বিবরণ পড়ে বোঝা গেল লঞ্চটিতে সেইফটি লেভেল ছিল শূন্যের ঘরে! লঞ্চটি কোনভাবেই নিরাপদ ছিল না।

লঞ্চের নিচতলার ইঞ্জিন রুমে রাখা ছিল প্রায় পনেরো বিশ ব্যারেল ডিজেল। যেখানে ইঞ্জিন চলে সেই একই ঘরে কিভাবে এতো পরিমাণ অত্যন্ত দাহ্য ডিজেল রাখা হয়? এভাবেই কি অন্য সব লঞ্চে ডিজেল রাখা হচ্ছে? তারপর ইঞ্জিন রুমের পাশেই ছিল কিচেন, যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছিল সিলিন্ডার গ্যাস। ওই গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণেই আগুনের সূত্রপাত।

এতবড় একটি লঞ্চের পাশাপাশি দুইটি রুমে ইঞ্জিন, ২০ ব্যারেল ডিজেল আর অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডার, আগুন তো লাগবেই।

এখন কথা হচ্ছে, সেইফটি অফিসার কিভাবে এই ধরনের অবকাঠামোগত ব্যবস্থার ছাড়পত্র দেয়? পৃথিবীর কোনো দেশেই এই ধরনের ব্যবস্থাকে সেইফ বা নিরাপদ বলবে না। এর ফলে কোনো ছাড়পত্রও দিবে না। 

তেলের ব্যারেলগুলো খুব সহজেই রাখা যেত কিচেন থেকে দূরে একটি ফায়ারপ্রুফ কক্ষে।

খবরে জানা গেছে, আগুন নিচতলা থেকে ছড়িয়ে পড়ে ২য়তলায়। সেখানকার চায়ের দোকানে ছিল আরেকটি গ্যাস সিলিন্ডার। সেটারও বিস্ফোরণ ঘটে এবং ২য়তলায়ও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

আর এই আগুন নিয়ে লঞ্চটি চলতে থাকে। কি বিভৎস এক অবস্থা! লঞ্চে কি আদৌ কোনো ফায়ার এলার্ম ছিল? ইঞ্জিন রুমে থাকার কথা বেশ কয়েকটি অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার। সেগুলোর কি কোন ব্যবহার হয়েছে? লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের দায়িত্বে থাকা লোকটির কি যথাযথ অগ্নিনির্বাপনের ট্রেইনিং দেওয়া আছে?

আমার ধারণা এগুলোর কিছুই নেই। অন্যান্য লঞ্চেও হয়তো একই অবস্থা। তারপরও দেখা যাবে সব লঞ্চেরই হয়তো ফিটনেস রয়েছে! এ ধরনের ফিটনেসের কোনো ভ্যালু নেই। যেখানে সেইফটি কনসার্ন রয়েছে সেখানে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, যানটি ফিট।

গত ২৩ ডিসেম্বর লঞ্চে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো তা কোনোভাবেই নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটা অব্যবস্থাপনার এক চেইন অব ইভেন্ট। এগুলোর সুরাহা না করলে এ রকম ঘটনা ভবিষ্যতে আরো ঘটবে। মাঝখান থেকে জীবন যাবে নিরীহ মানুষের।

একজন ছাত্র উপজেলায় ফাঁকি দেওয়া বা কাজ না করে বেতন নেওয়ার নিয়ত করে মেডিকেলে ভর্তি হয় না। পাস করার পর নিরেট এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। তৃণমূলে কোয়াক। উপরে অধ্যাপক। মাঝখানে এমবিবিএস চিকিৎসকের অমানুষিক পরিশ্রমের পরও কোনো অবস্থান নাই। তাকে জনগণের সংস্পর্শে যেতেই সম্পূর্ণ অরক্ষিত এক শ্বাপদ সংকুল জনপদে। কিছুটা রেহাই চাইলে করতে হবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন, সে আরেক অমানবিক পরিশ্রম। তখন উপজেলা বা গ্রামের চাকরিতে ন্যূনতম সময় দিয়ে শুরু হয় সেই কোর্স, তখন পড়াশোনাই তার লক্ষ্য হয়ে যায়।

কনসালটেন্ট হয়ে গেলে আবার আরেক সমস্যা। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। ভালো প্রতিষ্ঠান নেই। পড়াশোনা অনুযায়ী মূল্যায়ন নেই। বারো বছর একই পদে। আস্তে আস্তে আন্তরিকতা নষ্ট হতে থাকে। ঢাকায় পরিবারের পিছুটান। তারসাথে গৌণ ফ্যাক্টর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শিথিল নজরদারি। এসবের জন্য ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও সবার জন্য সমান সুযোগ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমি উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় একবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ডিরেক্টর আমাদের উপজেলায় যান। আমরা সুষ্ঠু ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও উপজেলা পর্যায়ে আবাসন ও নিরাপত্তার কিছু প্রস্তাব তৈরি করে প্রস্তুতি নিলাম।

মহাপরিচালক মহোদয় ঢুকেই একদিক থেকে ধমকাধমকি শুরু করলেন। আবার ধমকাধমকি দিয়েই শেষ করলেন। আমাদের প্রস্তাব, আমাদের মনেই রইল। অথচ আমি যে, ছয় বছর এই উপজেলায় ছিলাম। একজন চিকিৎসকের নামে কোনো অভিযোগ আসেনি। একটাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোনো কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) শুধু মানুষ হিসেবে নয়, প্রশাসক হিসেবেও ছিলেন অনন্য। তাঁর মাঝে স্থানীয় সংসদ সদস্য জনসভা করে চিকিৎসকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলেন। কিছুদিন পর আবার আমাদের ডেকে বললেন, ‘আপনারা কিছু মনে করবেন না। জনগণকে উদ্দীপ্ত করার জন্য মাঠে-ঘাটে আমাদের অনেক কথা বলতে হয়।’

অনেক সময় গেছে। তবে প্রভাবশালীরা একই নীতিতে রয়ে গেছে এখনো, (কেউ আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইরেন না।) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কী করা যায়?

ক. পদোন্নতির জন্য পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে হবে।

খ. সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসকদের বদলি করে পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজে পদায়ন করতে হবে। চাকরি জীবনের বারো বছরের মধ্যেই অন্তত তিন বছর যেন মেডিকেল কলেজে কাটে।

গ. প্রত্যেক স্বাস্থ্যস্থাপনাকে ‘কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন’ ঘোষণা করে, সে অনুযায়ী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঘ. নিয়মিত নজরদারি ও কঠোর শাস্তিবিধানের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। হঠাৎ কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি এসে যেন কোনো নাটক সৃষ্টি করতে না পারে।

ঙ. স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত মাসিক সভা করে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এতে তাঁরাও বকাবকি করার চেয়ে, বরং সমস্যা সমাধানের চাপে থাকবেন।

চ. অন্য সার্ভিসের মতোই একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে প্রত্যেকেরই দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন না করলেও)।

ছ. চিকিৎসকদের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রাখতে হবে। তাহলে এর দোহাই দিয়ে ফাঁকির সুযোগ কমে যাবে।

জ. কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিতি, বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় অবস্থানের জন্য বাড়িভাড়া না কেটে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঝ. কোনো যন্ত্রপাতি কেনার আগে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

ঞ. ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি বন্ধ করতে হবে, রোগীর যথাযথ চিকিৎসার স্বার্থেই।

ট. চিকিৎসকদের অধীনস্থ কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ঠ. কিছুদিন আগে এক হাসপাতালে পলস্তারা খসে গুরুতর আহত হন ডা. সুতপা রানী সাহা। এইসব বিপজ্জনক ভবন ও অবকাঠামোগুলো ভেঙে যথাযথভাবে নির্মাণ করতে হবে। এটাই এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট হওয়া উচিত।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।