এমপি আনারের মরদেহের খোঁজে ফের তল্লাশি
কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের সন্ধানে আবারও তল্লাশিতে নেমেছে ভারতের সিআইডি। শনিবার (২৫ মে) দুপুরে ১২টার পর থেকে সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানা-পুলিশ এই তল্লাশি অভিযান শুরু করে। তবে এদিনের অভিযানে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে রাখা হয়নি। এদিনও ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা খালে দুর্যোগ মোকাবিলা দল নামানো হয়। পাশাপাশি মরদেহের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।এর আগে শুক্রবার (২৪ মে) এমপি আনারের লাশের টুকরোর সন্ধানে জোর অভিযান চালানো হয়। সেদিন ১২ দিনের হেফাজতে থাকা এই হত্যা মামলার আসামি জিহাদ হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায় অভিযান চালায় সিআইডি।জিহাদকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তার বক্তব্য যাচাইয়ের পাশাপাশি তাকে সঙ্গে নিয়ে খুন হয়ে যাওয়া সংসদ সদস্যের শরীরের অঙ্গগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। মরদেহের অংশ খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি এই খুনের ঘটনায় আর কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়াই এখন গোয়েন্দাদের প্রধান লক্ষ্য। শুক্রবার বিকেলে আদালত থেকে জিহাদকে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণমাটির জিরানগাছা খাল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। সিআইডি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পোলেরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। খালে নামনো হয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল। পাশাপাশি লাশের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়।
সেদিন সন্ধ্যা নামার আগেই একটি ব্যাগ উদ্ধার কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যাগটি একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধারের পর রটনা ছড়ায় ওই থলের মধ্যে এমপি আনারের লাশের টুকরো থাকতে পারে। যদিও তার ভেতর থেকে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
এ ঘটনায় বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস কলকাতার বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। বাবাকে খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীসময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে বাবাকে অপহরণ করেছে। বাবাকে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।