অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করল বিজেপি
১৪ বছর আগে দেওয়া বক্তৃতার রেশ টেনে বিশিষ্ট লেখক অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা সন্ত্রাস দমন আইনে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাক্সেনা। সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
বিরোধীরা মনে করছেন, সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট শরিকদের সহায়তায় সরকার গড়ে বিজেপি কিছুটা সংযত হবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছিল, তা ভুল। বরং তারা যে আগের মতোই দমন–পীড়ন নীতি আঁকড়ে থাকবে, এই সিদ্ধান্ত সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।
২০১০ সালে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে অরুন্ধতী যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক শওকত হোসেন, হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানি, সংসদে হামলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এসএআর গিলানিও।
এক যুগ পুরোনো সেই মামলা খুঁচিয়ে তোলা হয় গত বছরের অক্টোবরে। দিল্লির উপরাজ্যপাল ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় সম্প্রীতি হানি ও জাতীয় সংহতির পরিপন্থী আচরণের অভিযোগে মামলার অনুমতি দেন। এরপর গতকাল শুক্রবার দিল্লির রাজনিবাস (উপরাজ্যপালের বাসভবন) থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, অরুন্ধতী ও শওকতের বিরুদ্ধে উপরাজ্যপাল এবার ইউএপিএ আইনে মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ এবার মামলা হবে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে।
সিপিএম বলেছে, ‘সেই অনুমতি এমন সময় দেওয়া হলো, যখন আদালতে ছুটি চলছে। আইনজীবীরাও ছুটিতে। এই সিদ্ধান্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়।’
উপরাজ্যপালের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানিয়েছে কংগ্রেসও। দলের নেতা বি কে হরিপ্রসাদ আজ শনিবার সকালে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে বলেন, ‘মানুষের কণ্ঠস্বর চাপা দেওয়ার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা অব্যাহত। বিশেষ করে সেই স্বর যদি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও আন্দোলনকর্মীদের হয়। নিজেদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা থেকে জনগণের চোখ সরাতে বিজেপি প্রতিদিন মনগড়া সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। বাক্স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিরোধীদের এই প্রতিবাদের পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। তাদের মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা আজ শনিবার ‘এক্স’ হ্যান্ডলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘তারা এত চিৎকার-চেঁচামেচি কেন করছে? তারা এখন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য কাঁদছে! ওরা কি কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে না? আফজল থেকে ইয়াকুব, কংগ্রেসের কাছে দেশের আগে জরুরি তার ভোটব্যাংক নীতি।’
আইন বদল করে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির উপরাজ্যপালকে প্রভূত ক্ষমতা দিয়েছে। এতটাই যে উপরাজ্যপাল সম্মতি না দিলে নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্তও রূপায়িত হবে না। এই নিয়ে দিল্লির আম আদমি পার্টির (এএপি) সরকারের সঙ্গে উপরাজ্যপালের খটমট নিত্যবিষয়। সেই উপরাজ্যপাল এত বছর পর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া এমন ধরনের একটা সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে, ভাবা কঠিন।
এ কারণেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যে ঢঙে এতকাল নরেন্দ্র মোদির সরকার চলছিল, যেভাবে বিরুদ্ধ স্বর দমিয়ে আসছিল, নির্বিচার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করছিল, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েও তারা হয়তো সেই পথ থেকে সরবে না। এ সিদ্ধান্ত সম্ভবত সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।