অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ সুবিধা বহাল থাকছে
দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ কর অবকাশ সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে।
একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক আগের মতো শূন্য শতাংশ রাখা হচ্ছে। পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে না, তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ভাড়া নিতে চাইলে স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে। আগামী ২৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থবিল-২০২৪ পাশ হবে। সেখানে আয়কর, কাস্টমস সংক্রান্ত এসব পরিবর্তন আসতে পারে।
গত ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর সাধারণ করহার ২০ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশ বা তারও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনি আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ বা উন্নয়নের জন্য ডেভেলপার কর্তৃক আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়।
এনবিআর সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে করসুবিধা প্রত্যাহারসহ ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অর্থবিল সংশোধনে কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিয়ে, জন্মদিন বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার কারণে শর্তে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়মে, শুধু ৮টি সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিতে লাগবে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে। পৌর এলাকা বা গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি সেন্টার বা মিলনায়তনে সামাজিক অনুষ্ঠান করতে ভাড়া নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার স্লিপ প্রদর্শন করতে হবে না।
অবশ্য নানা মহলের সমালোচনার পরও কালোটাকা সাদা করার বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা ও বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারের ক্যাপিটাল গেইনের ওপর কর আরোপের বিধান বহাল রাখা হচ্ছে। ফলে বছরে শেয়ারবাজার থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকা বেশি আয় করলে বর্ধিত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে।