অপরাধ

সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতে ইসলামীর ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তা অন্য কোনো দলের উপর হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

শুক্রবার ৯২৩ আগস্ট) দুপুরে নরসিংদীর ব্রাহ্মন্দীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ১৯ জনের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, একে একে ১১জন দায়িত্বশীল নেতাকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। শত শত কর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার কর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। দুই চোখ খুলে নেয়া হয়েছে। গুলি করে অন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাত কেটে ফেলেছে, পা কেটে ফেলেছে। কী যন্ত্রণা আমরা বুকে নিয়ে চলছিলাম। কিন্তু আমরা পরিষ্কার ঘোষণা করেছি জামায়াতে ইসলামী কারও ওপর প্রতিশোধ নেবে না।

তিনি বলেন, প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়, প্রতিহিংসা সমাজে খুনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা সামগ্রিকভাবে ক্ষমা করে দিতে চাই কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যে অপরাধ করেছেন ইনসাফের দাবি হচ্ছে তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। তাই বলে আমরা কেউ আইন হাতে তুলে নেবো না।

অনুষ্ঠানে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান তুলে দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলার সঙ্গী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। নাম রয়েছে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসেরও।  

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে আদাবর থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। মামলায় সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ১৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদির অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট রুবেল আদাবরের রিংরোডে প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেয়। এসময় অভিযুক্তদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ ও প্ররোচনায় মিছিলে গুলি করা হয়। বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রুবেলকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৭ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। 

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সাথে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। তার এমন আকস্মিক পদত্যাগ ও পালানোর ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। তবে পালিয়ে থাকা এসব নেতাকর্মীরা এবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

পলাতক বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

তাদের একজন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য দলের অভ্যন্তরীণ একটি স্বার্থগোষ্ঠীকে দায়ী করে বলেছেন তিনি (হাসিনা) আমাদের কথা শুনতেন না, তিনি শুনতেন ‘গ্যাং অব ফোরে’র কথা। তারা তাকে বাস্তবতা বুঝতে দিতো না বলে অভিযোগ করেন।

‘গ্যাং অব ফোর’ কারা এমন প্রশ্ন করলে ওই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, চারজনের এই দল তার (হাসিনা) পতনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই ব্যক্তিদের ওপর তার ছিল অন্ধবিশ্বাস। তার যে সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল, তা তিনি তাদের কারণে হারিয়ে ফেলেছিলেন।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে তারা আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে। সেসব বেশিরভাগ নেতারাই নাকি বলেছে, হাসিনা দল ও জনগণকে পরিত্যাগ করেছেন।

আরেক আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি হাসিনার প্রত্যাখ্যান করা ছিল ‘সাংঘাতিক ভুল’। কেননা একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বিএনপি নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে বিরোধীদের রাগ-ক্ষোভ হয়তো মিটে যেত।

ওই নেতা আরও বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, পুলিশের নিষ্ঠুরতায় জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা বুঝছিলাম। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা গেলে সেই ক্ষোভ হয়তো থামানোও যেত। তাতে আমরাই আবার জিততে পারতাম এবং দল ক্ষমতায় থাকত।

হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আত্মগোপন করেছেন, কেউবা গ্রেফতার হয়েছেন। নেতারা বলছেন, ৫০ বছরের পুরনো যে দল টানা ১৫ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে, তারাই এখন অস্তিত্ব সংকটে।

সন্দেহভাজন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানেন অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

প্রথম ধাপে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও সঞ্চয় অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কর ফাঁকির অভিযোগে অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)।

আরও বলা হয়, সিআইসি বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা ও সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজদের তালিকা করেছে। পর্যায়ক্রমে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন-২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর অধীনে ফাঁকি দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধেও আর্থিক খাতে লুটপাট ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে হয়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার। সিঙ্গাপুরে ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন তিনি। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

আহমেদ আকবর সোবহানের বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখল, নানা খাতে অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা নেয়া ও অর্থ পাচারের সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে। কোটা আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে আহমেদ আকবর সোবহান অঙ্গীকার করেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন।

এছাড়া, ওবায়দুল করিমের ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্পে কাজ করে ওরিয়ন গ্রুপ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্ট বাতিল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক অবসর ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হওয়া সচিবদের লাল পাসপোর্টও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বুধবার (২১ আগস্ট) পাসপোর্ট অধিদফতরকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

লাল পাসপোর্ট বাতিল হলে সাধারণ পাসপোর্ট পেতে তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যাদের নামে ফৌজদারি অপরাধের মামলা আছে বা গ্রেফতার হয়েছেন তারা আদালতের আদেশ ছাড়া সাধারণ পাসপোর্ট পাবেন না।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের লাল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ভারতে ৪৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন। এর ফলেই শেখ হাসিনা ভিসা ছাড়াই দেশটিতে অবস্থান করতে পারছেন। তবে ইতোমধ্যে ১৭ দিন পার হয়ে গেছে। আর ২৮ দিন শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করতে পারবেন।

তবে এর আগেই শেখ হাসিনার লাল পাসপোর্ট বাতিল হলে তাকে রাখতে বিকল্প চিন্তা করতে হবে ভারতকে। অপরদিকে, শেখ হাসিনার সাথে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। ভারতে থাকতে তার কোনো সমস্যা নেই। অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধায় তিনি যতদিন খুশি ভারতে থাকতে পারবেন।

একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা ও প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদকে ফ্রান্সে যাওয়ার সময় আটক করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ।

বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে তাদের দেশ ছাড়তে বাধা দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে তাদেরকে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিমানবন্দর সূত্র সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে শাকিল আহমেদ, ফারজানা রূপা ও তার মেয়েকে আটকে দেয়া হয়। তারা তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (টিকে-৭১৩) যোগে ইস্তাম্বুল হয়ে প্যারিস যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে এসেছিলেন।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং সাবেক র‍্যাবের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েলকে আটক করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক হয়। বুধবার (২০ আগস্ট) এ তথ্য জানা যায়।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে এবি তাজুল ইসলামকে রাজধানীর গুলশান থেকে, আহমদ হোসেনকে বনশ্রী থেকে ও সোহায়েলকে বনানী থেকে আটক করা হয়।

প্রসঙ্গত, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম টানা চারবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান তিনি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদেও ছিলেন তিনি।

রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েলকে গতকাল সোমবার (১৯ আগস্ট) নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কলেজ ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় উঠে আসে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নাম। এরপরই তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তদন্ত বন্ধ করে দেয় তদন্ত সংস্থা র‍্যাব- এমন অভিযোগ এনে ত্বকীর বাবা জানিয়েছেন, বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ৭ মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ত্বকী। এর একদিন পরই বের হয় ত্বকীর ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল। পদার্থ বিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ নম্বর পেয়েছিল ত্বকী। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। ছেলের এমন সাফল্য গত এক যুগে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি মা রওনক রেহানা।

তার মা বলেন, ছেলে কত ভালো ফল করেছিল, আজ থাকলে হয়তো অনেক ওপরে অবস্থান হতো তার। জীবন অন্যরকমও হতে পারতো। এসবই মনে পড়ে এখন।

ছেলে হত্যার আসামিদের নাম যখন সামনে আসতে থাকে তখনি তদন্ত হঠাৎ থমকে যায়। তদন্ত বন্ধে তদবির আসতে থাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

বিষয়টি নিয়ে ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বী বলেন, র‌্যাব মামলাটি খুবই আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করেছিল। সেসময় যারা দায়িত্বরত ছিলেন তারা ১৬৪ ধারায় দুইজনের জবানবন্দি নেয় এবং আজমেরী ওসমানের (শামীম ওসমানের ভাতিজা ও নাসিম ওসমানের ছেলে)  টর্চারসেলে অভিযান চালায়। শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন ওসমান পরিবারকে আমি দেখে রাখবো। সেসময় র‌্যাবের ডিজি, এডিজি যারা ছিলেন তাদেরকে শেখ হাসিনা ডেকে নেন। এরপর বলেন, ‘এটা (তদন্ত) বন্ধ রাখেন’।

সত্যিই কী ঘটেছিল সেই সময়? র‌্যাবের তদন্ত-ই-বা কেন থমকে গিয়েছিল সেটি জানতে অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া যায় বেশ কিছু নথিপত্র।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া খুনিদের একজন সুলতান শওকত ভ্রমর। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি আজমেরী ওসমানের অফিস উইনার ফ্যাশনে যাই বিকেলে। তারপর রাজীব ও কালাম ত্বকীকে আজমেরীর রুমে নিয়ে যায়। আজমেরী ওসমান কালামকে বলেন, সব শেষ তোরা যেখানে পারিস লাশটি ফেলে আয়।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার এবং তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম। আমজমেরী ওসামানের টর্চারসেল উইনার ফ্যাশনে অভিযানের কিছুদিন পর-ই বদলি করা হয় র‌্যাবের এই কর্মকর্তাকে।

এ সম্পর্কে ত্বকীর বাবা বলেন, আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে অভিযান চালানো থেকে শুরু করে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সবই করেছিলেন লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর। সেসময় শামীম ওসমান অভিযোগ করে বলেন, র‌্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বিএনপি করে তাই ওসমান পরিবারের পেছনে লেগেছে।

এ পর্যন্ত আদালতের কাছে ৭০ বার সময় চেয়ে তদন্ত শেষ করতে পারেনি র‌্যাব। বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শুধু র‌্যা-১১ নয়, আমাদের মূল অনুসন্ধান দল আন্তরিকতার সাথে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এটি আলোর মুখ দেখবে।

অন্তবর্তীকালীন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা ত্বকীর বাবা-মা’র। তার বাবার দাবি, দ্রুত সময়ে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরীকে গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।