বাংলাদেশ

রাজধানীর উত্তরার গণহত্যার মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে হাজির করা হয়েছে।

রোববার (৯ মার্চ) সকাল দশটার পর আসামিদের কাশিমপুর ও কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

আওয়ামী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর মিয়া, উওরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী সহ অনেকেই। আর পুলিশের মধ্যে রয়েছেন ওসি মশিকুর রহমান, কনস্টেবল হোসেন আলী, এসি জাবেদ ইকবাল এবং ওমর আলী।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে ওই মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশন জানায়, আতিকুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় সাক্ষীরা জবানবন্দিতে এ আসামিদের নাম বলেছে। সেসময় উত্তরায় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। এর দায় আতিকুল এড়াতে পারেন না বলে আদালতকে জানায় প্রসিকিউশন।

হাজির করা অন্য আসামিরা হলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর আওয়ামী লীগের সভাপতি বশির উদ্দিন, মহানগর উত্তরের এক নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন রুবেল, ওসি মশিকুর রহমান, কনস্টেবল হোসেন আলী, এসি জাবেদ ইকবাল এবং ওমর আলী।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে গোটা নাগরিক নাগরিক সমাজ। এরই মাঝে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু কন্যা ধর্ষণের ঘটনা নারীর নিরাপত্তাকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এবার মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশুটিকে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের আমির জানালেন দলের অবস্থান।

রোববার (৯ মার্চ) সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। পোস্টে তিনি বলেন, মাগুরার সেই আট বছরের মেয়ে শিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত চাই।

তিনি বলেন, এরকম ধর্ষক নামের আরো যত নিকৃষ্ট প্রাণী আছে, যে যেখানেই থাকুক তাদেরকে পাকড়াও করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

পোস্টে ধর্ষকদের ঘৃণা ও সামাজিকভাবে বয়কেরও আহ্বান জানান এই জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ইমাম, খতিব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদেরকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

সম্প্রতি নারীদের ওপর জঘন্য হামলার যে খবর আসছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ বিপরীত— এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান সরকার নারীপুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ সময় নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকার ব্যাপারেও গুরুত্ব দেন তিনি।

তাছাড়া, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল অর্থ খরচ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এবং ৬ অদম্য নারীর হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে সংযোগ বাড়াতে একটি নতুন আন্তঃসীমান্ত অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তুলতে চায় মেঘালয় সরকার। সম্প্রতি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা একথা বলেছেন। শুক্রবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি নিউজ এ তথ্য জানায়।

এই করিডোরটি হিলি (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে মেহেন্দ্রগঞ্জ (মেঘালয়ের গারো পাহাড়) পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। যা কলকাতা থেকে তুরা, বাঘমারা, দালু ও ডাউকির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে দূরত্ব ও সময় ২৫ থেকে ৬০% কমিয়ে আনবে।

মেঘালয়ার মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানান, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে এই করিডোর হলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে মেঘালয়, বরাক উপত্যকা এবং ত্রিপুরার দূরত্ব ৬ থেকে ৭শ’ কিলোমিটার কমবে।

এটির বাণিজ্যিক সম্ভবনার কথাও উল্লেখ করেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, এটা শুধু মেঘালয় চাইলেই হবে না। এর সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সরকারও। সাবেক সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নয়াদিল্লি এ নিয়ে কথা বলেছিল ঢাকার সঙ্গে। আমরা এটাকে আরেকবার সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

রাজধানী বায়তুল মোকাররম এলাকায় মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর। শুক্রবার (৭ মার্চ) জুমার নামাজের পর মিছিলটি শুরু হয়।

এ সময় মিছিলটি পল্টন মোড় দিয়ে বিজয় নগরের দিকে অগ্রসর হয়। ব্যারিকেড থাকলেও পুলিশের সদস্য কম থাকায় তা ভেঙে সামনে দিকে আগায় মিছিলটি। এরপর আবারও সামনে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলটি আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তবে এ যাত্রায়ও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পল্টন মোড় থেকে মিছিলটি ফিরে আসার সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে যায়। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী। বর্তমানে বায়তুল মোকাররম, নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এর আগে, আজ শুক্রবার নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ‘মার্চ ফর খিলাফত’–এর ডাক দেয়। সংগঠনটির এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের তল্লাশি করে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত যেকোনো সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ ও অন্যান্য উপায়ে প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠন সভা, সমাবেশ ও যেকোনো উপায়ে প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে ডিএমপি প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন– মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) এবং মাহমুদুল হাসান (২১)।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। 

আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন সেক্টর-১১ ও সেক্টর-১২ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসি জানতে পারে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কিছু সক্রিয় সদস্য ৭ মার্চ বাইতুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় ‌‌‘মার্চ ফর খিলাফত’ নামে একটি সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩)  মামলা করা হয়েছে।

সিটিটিসি জানায়– প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। এসময় তাদের কাছ থেকে সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে সিটিটিসির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও ডিএমপি জানায়।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে কয়লা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় শিশুরা। সরেজমিন ওই এলাকার স্কুলের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকার প্রায় অর্ধেক ছাত্র এমন কাজে জড়িত। লেখাপড়ার বদলে টাকা উপার্জনের দিকেই তাদের মনোযোগ। আর, সেটা তারা করছে অবৈধভাবে। দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের নরজদারিও তেমন নেই।

তাহিরপুর এলাকাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। এখানকার মানুষের লেখাপড়ার চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করাই প্রধান লক্ষ্য। বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে চোরাই পণ্য আনার সাথে জড়িত।

স্থানীয় স্কুল টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে। এক শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিন স্কুলে না আসার কারণ জানতে চাওয়া হয় প্রধান শিক্ষক হালিমা বেগমের কাছে। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছাত্রদের উপস্থিতি কম। স্কুলে আসলেও টিফিনের পর তারা উপস্থিত থাকে না।

এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেও তেমন একটা প্রতিকার পাননি বলেও জানান, প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসার ব্যাপারটি অভিভাবকরা জানে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, কাছেই পাহাড় হওয়ায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ে চলে যায় ছাত্ররা।

স্কুল থেকে বেরিয়ে পাহাড়ি পথে সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ নিতে যায় যমুনা টেলিভিশন। দেখা যায় মাথায় কয়লা ভর্তি বস্তা নিয়ে ফিরছে সেই ছাত্র।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তে এই শিশুর মত শত শত শিশু এমন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে গেছে। মূলত ভারতের খনি থেকে চোরাই পথে কয়লা আনার কাজ করে তারা। মাঝেমধ্যে শিক্ষকরা ধরে এনে ক্লাসে বসালেও, তাতে কাজ হয় না।

এ ব্যাপারে কারণ ব্যাখ্যা করেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা ভারতীয় সমাজকর্মী হাসিনা খারবাহি। তিনি বলেন, এখানে খনিগুলোতে লোভনীয় পারিশ্রমিকে কাজ করে ভারতীয় ও নেপালি শিশুরা। বিভিন্ন সময়ে খনিতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বহু শিশু। এসব ঘটনা মিডিয়াতে আসে না বলেও জানান তিনি।

সীমান্তে নজরদারির অভাবের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে বিজিবি জানায়, সীমান্তে নজরদারি অব্যাহত আছে।

২৮ বিজিবির সিও লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন কেউ অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। সীমান্তে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জীবিকা নির্বাহের সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

২০২৫ সালের সরকারি জরিপ বলছে, এই টেকেরহাট নামের গ্রামটিতে শিশুর সংখ্যা ৫৬৮ জন। ২০৬ জন স্কুলে গেলেও বাকিরা যায় না।

মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। কেবল শেখ হাসিনাই নয় তার সহযোগীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ আছে সরকারের কাছে। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করছে ভারত এবং আন্তর্জাতিক আইনের ওপর।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বলাও হয়েছে দিল্লিকে। এ বিষয়ে ভারতের জবাবের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

স্কাই নিউজের সাথে আয়নাঘর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আয়নাঘরগুলোতে ভয়ঙ্করভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এলাকার মধ্যে হওয়ায় সেগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। আয়নাঘরগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হবে।

টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাটি খুবই গুরুতর। দেশে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও সীমান্ত সেনাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন মনে করেছি তাই পদত্যাগ করেছি— এমন মন্তব্য করেছেন সদ্য পদত্যাগ করা অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বলেন, আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি, সব কমিটি থেকেও ইস্তফা দিয়েছি। 

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেই। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করা আমাদের কাছে মনে হয়েছিল যৌক্তিক। গত সাড়ে ছয় মাসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কাজ করছে। হয়ত আমরা আশানুরূপ ফলাফল এখনও পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সরকারে একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা করি, সে আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা অংশগণ করেছে সেই শক্তিকে সংহত করতে আমি মনে করছি, সরকারের থেকে সরকারের বাইরে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে। বাইরে যে আমাদের সহযোগী যোদ্ধা রয়েছে তারাও এটি চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকে মূলত পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। 

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। না হয় পরে বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করতে না পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলতে পারবেন না যে সতর্ক করিনি।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত ফটো এক্সিবিশনে তিনি এসব কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, আমরা সুখে শান্তিতে থাকতে চাই, সে উদ্দেশে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ করবেন না। আমাদের প্রতি কারো কারো বিদ্বেষের কারণে আজও খুজে পায়নি। আমাদের সাহায্য করেন, আক্রমণ নয়। প্রয়োজন হলে আমাদের উপদেশ দেন। ভালো উপদেশ হলে আমরা গ্রহণ করবো। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি আরও বলেন, নিজেরা ভেদাভেদ না করে এক হয়ে থাকি। যদি কোনো বিভেদ থাকে আলোচনা করে ঠিক করবো। ডানে-বায়ে গিয়ে লাভ হবে না। কেউ অপরাধ করলে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এটা একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী, এটিকে সুশৃঙ্খল থাকতে দিন।

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা দেশ ও জাতিকে সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসবো। আই হ্যাড এনাফ, ওয়াজ লাস্ট সেভেন-এইট মান্থ এনাফ।

দেশের আইনশৃঙ্খলা খারাপের পেছনে বেশকিছু কারণ আছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, প্রথমত আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে ব্যস্ত। অপরাধীদের জন্য এটি চমৎকার একটি সুযোগ। আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, তারা জানে এই সময়ে অপরাধ করলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সে কারণে এসব অপরাধ হচ্ছে। আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে এগুলো এগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই এগুলো দেশের জন্য অতীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। খারাপ কাজের সাথে অনেকগুলো ভালো কাজ করেছে। দেশকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সিভিলিয়ানরা মিলে অর্গানাইজেশনগুলো ইফেক্টিভ রেখেছে। এজন্য আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। এর মধ্যে কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হবে। অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। না হয় এই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা এসব চিরতরে বন্ধ রাখতে চাই। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, এমনভাবে কাজটা করবো, যাতে এসব অর্গানাইজেশন আন্ডারমাইন্ড না হয়। আপনারা যদি মনে করেন, এসব অর্গানাইজেশনকে আন্ডারমাইন্ড করে শান্তিতে থাকবেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বিরাজ করবে, এটি সম্ভব না।

ওয়াকার-উজ-জামার বলেছেন, আমরা নির্বাচনের দিকেই ধাবিত হচ্ছি, তার আগে যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সরকার সেগুলো করবে। আমি যতবার ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং সেটা ডিসেম্বরের মধ্যেই। আমি প্রথমেই ১৮ মাসের কথা বলেছিলাম। মনে হয় সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। আমরা উনাকে সহযোগিতা করবো। আমাদের মধ্যে চিন্তা-চেতনায় বিরোধ, মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু দিনশেষে দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে সবাই এক থাকতে পারি।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, এ বর্বতায় সেনাসদস্যরা দায়ী নন। তৎকালীন বিজিবি সদস্যরা এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। বিচারিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করবেন না। যারা শাস্তি পেয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। রাজনীতিবিদ ও বাইরের কেউ যুক্ত ছিল কি না তার জন্য কমিশন করা হয়েছে, কমিশন তদন্ত করে জানাবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।