বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতের পাশাপাশি যেকোনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হওয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে করা প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, মৌলিক অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন সব সরকারের সাথে কাজ করে। এই ইস্যুতে চলমান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, প্রতিটি প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হওয়া উচিত।

বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেফতার ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এই মুখপাত্র বলেন, এই ইস্যুতে স্পষ্টভাবে অবগত নয় মার্কিন প্রশাসন। মামলা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই বলে জানান তিনি।

তবে গ্রেফতার হওয়া যে কোনো ব্যক্তির আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ভেদান্ত প্যাটেল। বলেন, আটক ব্যক্তিদের উপযুক্ত আইনি সুযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে।

আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আরও ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার আশা করছি। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের জন্যই এই বাড়তি সহায়তা চাওয়া হবে। দেশের কল্যাণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ, সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলটির সাথে আলোচনা হয় হয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয়ের অগ্রগতি তাদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তাহবিলের সাথে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তি চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে সেই ঋণের ৩ কিস্তি ছাড় করেছে সংস্থাটি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে অন্তর্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে অবমাননাকর পোস্টার সাঁটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে কারা এসব লাগিয়েছে তার কোনো হদিস বলতে পারছে না সেখানকার পুলিশ।

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে একটি সনাতনী সংগঠনের সমর্থকরা এই পোস্টের লাগিয়েছে। তাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে নানা আপত্তিকর কথা লেখা রয়েছে।

এর আগে, সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপ সহকারী দূতাবাসে হামলার ঘটনায় বিব্রত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন দুষ্কৃতিকারীকে। তার মধ্যেই ফের এই ধরনের ঘটনা গভীর চিন্তায় ফেলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের লোভে শাসক এবং বিরোধী সব রাজনৈতিক দল এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। নিজেদের দেশ ও রাজ্যের শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও কৃষির নানা সমস্যাকে ধামা চাপা দিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালা বদল এবং ধর্মীয় সংঘাতকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ভারত আক্রমণাত্মকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এই অপতথ্যের কারণেই সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর সম্পূর্ণ দায় ভারতের মিডিয়ার। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, পূর্ব নির্ধারিত ধারণা নিয়েই ভারত অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এমন মনোভাব বজায় থাকলে তাদের সাথে আলোচনার উপায় থাকে না। এ সময় বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। অথচ ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদনই আমলে নিচ্ছে। তারা আমাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে। এ সময় ভারতের অপচেষ্টা রুখে দিতে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ভেঙে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে পোড়ানো হয়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করে ঢাকা। এছাড়া, আগরতলাসহ ভারতে বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য গতকাল সোমবার দিল্লিকে নোট পাঠিয়েছে ঢাকা। কঠোর প্রতিবাদের সঙ্গে ওই নোট পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনার পর ৭ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে দেশটির পুলিশ। আর হামলার সময় দূতাবাসের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপরদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।

দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নাটোরে প্রয়াত ছাত্রদল নেতা সাইফুজ্জামান সুজনের স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির এ নেতা অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের জন্য ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা চালানো হয়েছে, তেমনি পতাকাও পোড়ানো হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নষ্টের চেষ্টাকারীদের জনগণ রুখে দিবে বলে এ সময় হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হত্যার বিচারের দাবিও জানান তিনি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করতে থাকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ কারণে অনেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসছেন। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। গত ছয় বছরের সরকারি তথ্যের বিশ্লেষণে এটি নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম, দ্য হিন্দু।

দ্য হিন্দু’র প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার একটি তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে চলতি বছরে গত ৫ আগস্টের পর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ১ হাজার ৩৯৩ বাংলাদেশিকে আটক করে।

দ্য হিন্দু’র প্রতিবেদন।

অরপরদিকে, শেখ হাসিনার পতনের আগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ১৪৪ জনকে অনুপ্রবেশের সময় আটক করেছিল বিএসএফ। এর অর্থ সরকারের পতনের পর হাজার হাজার মানুষের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার কোনো চেষ্টার ঘটনা ঘটেনি।

একই পরিসংখ্যানে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশে অবৈধ প্রবেশের সময় পরিচয়বিহীন ৮৭৩ জন ভারতীয়কে আটক করে। এছাড়া ৫ আগস্ট থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত সেদেশের ৩৮৮ জন নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আটক করা হয়। 

সব মিলিয়ে চলতি বছর সীমান্ত এলাকা থেকে ৩ হাজার ৯০৭ জনকে আটক করা হয়।

বছরভিত্তিক সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের হাতে আটকের সার্বিক পরিসংখ্যান:

বছর আটকের সংখ্যা
২০১৮ ২৯৯৫
২০১৯ ২৪৮০
২০২০ ৩২৯৫
২০২১ ২৪৫১
২০২২ ৩০৭৪

 

গত সাড়ে ১৫ বছরে আর্থিক খাতে বিস্ময়কর দুর্নীতি করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ৩ টার্মে দেশের জনগণ দেখেছে ছোট, মাঝারি এবং মেগা প্রকল্পের হিড়িক। কিন্তু এসব প্রকল্পের অনেকগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনমনে। অভিযোগ ছিল বাস্তবতা ও জনস্বার্থ বিবেচনা না করে কেবল লুটপাটের জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

দেখা গেছে, বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে হয়েছে পুকুর চুরি। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং মূল্যস্ফীতির কাছে হার মেনেছে বাজেট। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় একাধিক সময়ে অস্থিতিশীল হয়েছে পণ্যের বাজার।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতের লুট হওয়া অর্থ দিয়ে তৈরি করা যেত ২৪টি পদ্মা সেতু। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কারমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে তছনছ হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পে নয়-ছয়ের কারণে ব্যয় বেড়েছে শতকরা ৭০ ভাগ। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বাস্তবায়ন না হওয়ার আগেই অর্থ ছাড়, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে পাথর স্থাপন বা ফিতা কেটে তছরুপ করা হয় অর্থ। অর্থাৎ দৃশ্যমান একটি আনুষ্ঠানিকতা জানান দেয়াই ছিলো এসবের মূল লক্ষ্য।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে প্রকল্পগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো, সেসব প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। প্রকল্পগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আসল উদ্দেশ্য ছিলো কোনো গোষ্ঠিকে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া। একাধিকবার একই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে সেই বিশেষ গোষ্ঠিকে সুবিধা করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কৌশলগুলোকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এর ফলে যেসব জায়গায় বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। ব্যাংক খাতে অর্থ লুটপাট বন্ধে সেগুলোর আগের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে ব্যাংক খাতের হরিলুট অবস্থা। বলা হয়, ব্যাংক খাত ভঙ্গুর করেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এই খাতে লোপাট হওয়া অর্থে ১৪টি মেট্রোরেল অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। ঋণ খেলাপি এবং আর্থিক অনিয়ম নষ্ট করেছে আর্থিক স্থিতিশীলতা। ব্যহত হয়েছে উৎপাদনশীলতা। বছরে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

রিপোর্টে বলা হয়, পদ্ধতিগত কর ফাঁকি, ছাড়ের অপব্যবহার এবং দুর্বলভাবে কর প্রশাসন পরিচালনায় রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র। গেল ১ দশকে ভিসা ক্রয়, রিক্রুটিং এজেন্সির হুন্ডিতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে ৪টি ঢাকা এমআরটি-৬ (মেট্রোরেল) উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ সম্ভব।

উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরী করার কথা বলা হলেও, সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে ছিল প্রকৃত সুফলভোগী। দলীয় বিবেচনার পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকে তাকে ফের পুন:তদন্তের জন্য আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। দলের স্হায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ মনে করেন স্বাধীন বিচারলয় থেকে ন্যায় বিচারই পেয়েছেন তারেক-বাবর।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।

হাফিজ বলেন, পুন:তদন্তের জন্য গ্রেনেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ আদালতে পুন:তদন্তের জন্য আবেদন করলে বিএনপি সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার পেছনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বরং পাশের দেশের সহযোগিতায় ধর্মীয় উগ্রবাদী কোন সংগঠন এই হামলা ঘটাতে পারে।

আরও চারটি মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়ার পরই তারেক রহমান দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন বলেও জানান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান তারেক রহমাহসহ সকল আসামিকে খালাস দেয় উচ্চ আদালত। পাশাপাশি এই মামলার অভিযোগপত্রও অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, বাংলাদেশের মিডিয়া সত্যটা জানে, সত্য তুলেও ধরে। আমি অনুরোধ করবো আপনারা তাদের মিথ্যার বিরুদ্ধে কাউন্টার সত্যটা তুলে ধরুন। তাহলে যারা অপপ্রচার করছে তাদের মুখে চুনকালি পড়বে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রংপুরের পীরগঞ্জের বাবুনপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং পরিবারের খোঁজখবর শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইসকন নিষিদ্ধের ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। পরিকল্পনা হলে জানতে পারবেন। কোনো মামলায় হয়রানিমূলকভাবে কাউকে জড়ানো হলে ভুক্তভোগী অবশ্যই ছাড়া পাবেন। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি ডিসিদের সমন্বয়েও কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুপুরে রংপুর পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। বিকেলে বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যে অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করা হয়।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেন।

কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র রিপোর্টে পাওয়া গেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাপক দুর্নীতির প্রভাব লক্ষ্যনীয়। এমনকি রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে জোট বেঁধেছিলেন সেই সময়ের শীর্ষ আমলারাও।

সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে বলে জানান কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে। কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭,৮০,০০০ কোটি টাকা।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।

আগামীকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর ওই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।