বাংলাদেশ

ভয়ে-আতঙ্কে সচিবালয় থেকে বের হয়ে গেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ১২টা বাজার কিছু সময় আগে কর্মস্থল ছাড়তে শুরু করেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক ঘণ্টার মধ্যে দুপুর ১টার আগেই ফাঁকা হয়ে যায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ভয়ে ও আতঙ্কে কর্মসংস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ কারণে অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সবাই কর্মসংস্থান ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে কে ছুটি দিয়েছেন তার উত্তর কেউ দিতে পারেননি।

 

সরেজমিনে সচিবালয়ে অবস্থান করে দেখা যায়, দুপুর ১২টা বাজার কিছু আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল থেকে বের হতে শুরু করেন। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে কর্মকর্তাদের বের হয়ে যাওয়ার লম্বা লাইন বাঁধে সচিবালয়ের প্রধান ফটকে।

তার আগে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ মিষ্টি বিতরণ করেন। তাদের বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে। 

আবার কেউ কেউ একে অন্যের সঙ্গে কানাঘুষা করেন। 

এদিকে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের নেমপ্লেট তুলে ফেলা হয়েছে। 

সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে এসে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের একটি অংশ পায়ে হেঁটে সচিবালয় ছাড়ছেন। আর একটা অংশ তাদের গাড়িতে করে সচিবালয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে সচিবালয় খালি হয়ে যায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দুপুর ১টার আগেই খালি হয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের অফিসগুলো খালি পড়ে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলছে। নেমপ্লেটগুলো তুলে ফেলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে রূপরেখা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছে।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভোর রাত ৪টার পর ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়করা।

এ সময় ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সকালের মধ্যে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই। রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও আমরা সকালের মধ্যে ঘোষণা করবো।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বিলুপ্ত করে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারের অধীনে দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার (৫ জুলাই) রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে। প্রতিহিংসা ভুলে দেশকে এগিয়ে নিতে দলমত সকলকে এক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি আরও বলেন, চলমান এই ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এ সময় জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারি সম্পদ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের অর্থনিতি, প্রশাসন, শিল্প-কলকারখানা চালু রাখার লক্ষ্যে সকলকে কাজ করার আহ্বানও জানান তিনি।

ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র, নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সোমবার সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-নাগরিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। ছাত্র-নাগরিক প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে আলোচনা ব্যতীত কোনো প্রকার সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যাবে না। অভ্যুত্থানে অংশীজন ছাত্র, নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী বা সুবিধাভোগীদের এ সরকারে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান অর্জন হয়েছে। কোনো ধরণের উস্কানি, সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত যারা ঢাকায় আছেন, তারা রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করুন। 

আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেমন হবে, সে বিষয়ে রাতে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় সংবাদ সম্মেলন করে একটি রূপরেখা তুলে ধরা হবে। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

নিজেদের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই গত ১৬ বছরে যত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। 

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত ও দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, আজ সোমবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে দোভাল তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাননি। চেয়েছেন যুক্তরাজ্যের কাছে। তা গ্রাহ্য হলেই তিনি লন্ডনে রওনা হবেন। ততক্ষণ ভারত তাঁকে সাময়িক আশ্রয় দেবে।

শেখ হাসিনা যে সময় দিল্লির অদূরে পৌঁছান, প্রায় সেই সময়েই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ ও বাংলেদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি অবহিত করেন।

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, আগামীকাল মঙ্গলবার সংসদে জয়শঙ্কর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিতে পারেন। বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে এযাবৎ যত কিছু ঘটেছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা সত্ত্বেও ভারত সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। দুই সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে শুধু বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ যা চলছে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

দেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাতীয় জীবনে শান্তি, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও দৈনন্দিন জীবন যাপনে স্বস্তি আনতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার দিবাগত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এতে বলা হয়, সব পর্যায়ে সাংবিধানিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসরণে জনগণের অধিকার সংরক্ষণ ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ।

কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে সারা দেশে বহুসংখ্যক মূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে, যা অত্যন্ত মর্মপীড়াদায়ক। এত বেদনাদায়ক ঘটনার পরেও আন্দোলনের তীব্রতা কমছে না। এ অবস্থায় পরস্পর বিরোধী পক্ষগুলোর মারমুখী অবস্থান শান্তি আনার পরিবর্তে ভবিষ্যতে আরও নির্মমতা বয়ে আনতে পারে। এ জন্য সহমর্মিতামূলক মনোভাব পোষণ করে সব পক্ষের সংলাপে অংশ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় সংস্কৃতি বিরাজ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং মর্যাদার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত সব সংকট নিরসনের আশা কমিশনের।

আজ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রোববার (৪ আগস্ট) নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

এদিকে, মঙ্গলবার এ কর্মসূচি করার কথা থাকলেও তা একদিন এগিয়ে আনা হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, দুপুর ২টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হবে তারা। এজন্য সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়করা।

শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ হত্যার বিচার দাবিতে রোববার অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা ও শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে সরকার।

উল্লেখ্য, কারফিউ এর মধ্যে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পরিবর্তনের এক দফা আন্দোলনে রূপ নেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নজীরবিহীন সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় ১০১ জনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জেলার এনায়েতপুর থানার ১৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এছাড়া, লক্ষ্মীপুরে ১১, ফেনী ৮, নরসিংদী ৬, কিশোরগঞ্জ ৬, মাগুরা ৪, রংপুর ৪, বগুড়া ৪, মুন্সীগঞ্জ ৩, কুমিল্লা ৩, শেরপুর ৫, সিলেট ৪, পাবনা ২, জয়পুরহাটে ২, এবং ভোলা, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, বরিশাল ও গাজীপুরের শ্রীপুর ও সাভারে একজন করে নিহত হয়েছেন।

এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত আটজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, একজন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জে তেরো পুলিশ সদস্যকে হত্যা

সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২৪ জন নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে তেরো জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বিকেলের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়।

নরসিংদীতে নিহত আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মীসহ নিহত ৬

নরসিংদীর মাধবদিতে আন্দোলনকারীদের গণপিটুনিতে আওয়ামী লীগের ৫ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার পৌরসভা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া জেলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন, মাধবদী থানার চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৩৬), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোটভাই ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেব দেলু, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভুইয়া (৪৫), পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল, আওয়ামী লীগের কর্মী কামাল মিয়া (৪৫)।

জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদি এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পরে তারা মাধবদি সদরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পৌরসভা মোড়ে জড়ো হয়। আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে তাদের ধাওয়া ও গুলি ছোঁড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ৮-১০ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে, ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনকারীরা আবারও মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌরসভার সামনে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে । এ সময় তাদের গণপিটুনিতে মারা যায় ৫ আওয়ামী লীগ নেতা।

ফেনীতে নিহত ৮:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফেনীর মহিপালে গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৫০ জন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল ৫ জনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আশংকাজনক অবস্থায় অনেককে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও, রোববার সন্ধ্যার পর আরও তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ ‍নিহত ৪:

সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আন্দোলনকারীরা রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় পারনান্দুয়ালী এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেয়। অভিযোগ, এ সময় তাদের বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে গুলিতে রাব্বি নিহত হন। এছাড়াও, সংঘর্ষে সুমন শেখ, ফরহাদ নামের ২ যুবক মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। তাছাড়া, জেলায় সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

মুন্সিগঞ্জে যা হলো:

সকালে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়, একইস্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেখা দেয় উত্তেজনা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাছাড়া, জেলায় সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পাবনায় গুলিতে দু’জনের মৃত্যু:

সহিংসতায় পাবনাতেও মারা গেছেন দু’জন। জেলা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় দু’জন। প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।

বগুড়ায় চারজন নিহত:

বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতেই তারা নিহত হয়েছেন। দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

জানা যায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার সদরের বড়গোলা এলাকায় বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ আহত হয়ে ১১ জন ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তাছাড়া, জেলায় সংঘর্ষে আরও দুইজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু:

বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের পাশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান তিনি।  

জানা গেছে, নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার (৫ আগস্ট) থেকে হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের সব বিচারিক এবং দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অর্থাৎ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকছে আদালতের কার্যক্রম। রোববার (৪ আগস্ট) রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহম ভূঞা স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক ও দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি যেকোনো সময় জরুরি বেঞ্চ গঠনপূর্বক বিচারকার্য পরিচালনার আদেশ প্রদান করবেন।

আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দেশের সকল অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ও দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতি যেকোনো সময় যেকোনো আদালত/ট্রাইব্যুনালকে বিচারকার্য পরিচালনার আদেশ প্রদান করবেন।

এক্ষেত্রে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক আ একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকবেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।