বাংলাদেশ

দেশে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামীকাল সোমবার (৫ আগষ্ট) থেকে বুধবার (৭ আগস্ট) পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আজ রোববার (৪ আগস্ট) এ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সাধারণ ছুটির ফলে এই তিন দিন সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। এছাড়া, অনির্দিষ্ট কালের জন্য হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের সব বিচারিক এবং দাফতরিক কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে, আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সব বিভাগীয় শহর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হলো।

আন্দোলনকারীদের ওপর তাজা গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশনা চাওয়ার রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৪ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকার ১০ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয় আবেদনটি।

আদালত রিট খারিজ করে আন্দোলন দমনে পুলিশকে পিআরবি অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

এর আগে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশনা চাওয়ার রিট আবেদনটি আদেশের জন্য সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় তোলা হয়। 

দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি লাইভ রাউন্ড (তাজা গুলি) ব্যবহার না করার নির্দেশনা চেয়ে গত ২৯ জুলাই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। 

তারা হলেন, মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিচালক, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তাজা গুলির ব্যবহার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাজা গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, জানতে বিবাদীদের প্রতি রুল জারির আরজি জানানো হয় রিটে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মুন্সিগঞ্জ। এক দফা দাবিতে সকাল থেকেই মাঠে নামে আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত দুজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবু হেনা জামাল।

আজ রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিন শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভের কর্মসূচি পালনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে একই চত্ত্বরে অবস্থান নেয় দলীয় কর্মীরা।

বেলা ১০টার দিকে কৃষি ব্যাংক চত্ত্বর থেকে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করলে ধাওয়া দেয় ক্ষমতাসীনরা। পরে শিক্ষার্থীরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে শুরু হয় সংঘাত। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটলে কৃষি ব্যাংক চত্ত্বরসহ পুরো সুপারমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। চলতে থাকে দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এসময় টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিত।

এক দফা দাবির ডাক দিয়েছে ছাত্র আন্দোলন। এই এক দফা বাস্তবায়নে আজ রোববার (৪ আগস্ট) থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, এই সরকার ও তার মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সময় আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো-

  • ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে। যেখানে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা হবে যাতে বাংলাদেশে আর কখনই স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।
  • অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে
  • রোববার সকল জেলা, উপজেলা, পাড়ায়, মহল্লায় বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে
  • সকল খুনের বিচার এবং সকল রাজবন্দিকে মুক্ত করা হবে
  • সকল ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেয়ার সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা। রোববারের মধ্যে হল খোলা না হলে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্ব হল খুলে প্রবেশ করবে।
  • সর্বস্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে শিগগির ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রুপরেখা হাজির করা হবে।
  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।

এর আগে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শুধু শিক্ষার্থী নয়, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। একসময় ওই এলাকা রূপ নেয় জনস্রোতে। ছাত্র-জনতার নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ।

গতকাল সকালে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, রামপুরা, মিরপুর, শান্তিনগর, আফতাবনগর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীর সঙ্গে অভিভাবকরাও ছিলেন। ঢাকার অনেক এলাকায় পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেলে কোথাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়নি।

আজ রোববার সারাদেশে সব রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আপাতত এক দিনের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে রোববার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ কয়েকটি শহর থেকে আশপাশের গন্তব্যে মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তিতাস কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, তুরাগ কমিউটার, কর্ণফুলী কমিউটার ও নারায়ণগঞ্জ কমিউটার চলাচল করে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার ও নাজিরহাট কমিউটার; ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ এবং ঝারিয়া রুটে দুই দিক থেকেই লোকাল ট্রেন চলাচল করে। আর খুলনা-ঈশ্বরদী, রাজশাহী-রহনপুর, খুলনা-বেনাপোল, বেনাপোল-মোংলা, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা এবং রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে ১২টি লোকাল ট্রেন চলাচল করে।

তবে, আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেন কবে থেকে চলবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিন সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন ঢাকার মহাখালীতে রেললাইনে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করা হয়। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও একই ঘটনা ঘটে।

সরকার ধৈর্য্য ও সংযমের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিএনপি জামায়াত সহিংসতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। বলেন, সামাজিক মাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বেহাত হয়ে তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে গেছে। এই অশুভ শক্তির তৎপরতা আওয়ামী লীগ সফল হতে দিতে পারে না বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারীদের সাথে বসতে চেয়েছেন উল্লখ করে কাদের বলেন, আমরা সংঘাত চাই না, আমরা ঐক্যে বিশ্বাসী। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যারা দেশের গণতন্ত্র উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে এ সময় আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

সেতুমন্ত্রী বলেন, সংঘাত বা সংঘর্ষ হতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। তবে আগামীকাল ঢাকা সিটির সব ওয়ার্ডে জমায়েত এবং সকল নগর ও মহানগরে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আর ৫ তারিখ আওয়ামী লীগ শোক মিছিল করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের

তিনি বলেন, অবুঝ শিশুর লাশ ঝরিয়ে আমাদের কী লাভ? এতে সরকারের কোনো লাভ নেই। লাভ তাদের যারা শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এটাই হলো বাস্তবতা।

তিনি আরও বলেন, ইউনিসেফ যে ৩২ শিশুর নিহতের তথ্য জানিয়েছে, আমরা তাদের কাছে এসব শিশুদের নাম-পরিচয় জানতে চেয়েছি। বলেছি তাদের পরিচয় পেলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন দূতাবাস। মার্কিন নাগরিকদের ঢাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। এছাড়া অনিরাপদ বোধ করলে নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলেছেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সতর্কবার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন নাগরিকদের যেকোনো বিক্ষোভ ও বড় সমাবেশের আশপাশে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে হবে। স্থানীয় ঘটনাসহ আশপাশের পরিস্থিতির বিষয়ে সচেতন থাকুন এবং কী ঘটছে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক অবহিত থাকার জন্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। জরুরি যোগাযোগের জন্য সবসময় চার্জ করা মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখুন।

দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশে এতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিকাল ৩টায় (৩ আগস্ট) ঢাকার গুলশান-২ এর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কে একটি শান্তিপূর্ণ জমায়েত হতে পারে। সেখানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিলের সম্ভবনা দেখছেন তারা। কাল রোববার থেকে শিক্ষার্থীদের ডাক দেয়া ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের বিষয়েও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। আগামীতে আরও বিক্ষোভের সম্ভবনা দেখছে মার্কিন দূতাবাস।

মার্কিন দূতাবাস জানায়, ঢাকায় সীমিত পরিসরে কনস্যুলার পরিষেবা প্রদান করছে। দূতাবাসের কর্মীদের কূটনৈতিক এলাকায় চলাচলে সীমাবদ্ধ এবং দুপুর ১২টা থেকে গুলশান- ২ এর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্ক এড়ানোর জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বরখাস্ত করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। রংপুরের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বরখাস্তকৃত দুইজন হলেন, তাজহাট থানার এএসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র।

এর আগে, সাঈদের মৃত্যু বিক্ষোভকারীদের ছোড়া গুলি ও ইট-পাটকেলের আঘাতে হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। মামলার এজাহারে এ তথ্য দেয় তারা। তবে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাতে কোনো পুলিশ সদস্যের দায় পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এজন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে বলছে তারা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন সাঈদ। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত আবু সাঈদ (২৫) রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছোট ছেলে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। গণভবনের দরজা খোলা।

চলমান পরিস্থিতির মধ্যে শনিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে বসেন সরকারপ্রধান। তাতে তিনি এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থা বাতিল করেছে সরকার। ওই বৈঠকেই পেনশন ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। অন্যদিকে, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে ছিল সরকার। একপর্যায়ে এ সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথেও বৈঠক করেন শিক্ষকেরা। এবার এই পেনশন ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা এলো।

অপরদিকে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে আজ শনিবার (৩ আগস্ট) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আগামীকাল রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার তারা এই কর্মসূচি দেয়। প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্বানের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কী পদক্ষেপ নেয় তা এখন দেখার বিষয়।

জানা গেছে, দেশে সৃষ্ট পরিস্থিতে আজ বিকেল ৪টায় গণভবনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও বৈঠক রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির। আগামীকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় গণভবনে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গেও বসবেন তিনি।

আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটটি হাইকোর্টের আগামীকালের কার্যতালিকায় এসেছে। আজ শনিবার (৩ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য পাওয়া যায়।

সেখানে দেখা যায়, হাইকোর্টের আগামীকাল রোববারের কার্যতালিকায় রিটটির অবস্থান ১০ নম্বরে রয়েছে। এর আগে, বুধ ও বৃহস্পতিবার বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি এস. এম. মাসুদ হোসাইন দোলন অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় বসেনি ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে, ঝুলেই ছিলো আলোচিত এই রিটের শুনানি ও আদেশ।

এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরাসরি গুলি না করা নিয়ে দু’দিন ধরে হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানি চলে। যুক্তি, পালটা যুক্তি, বাক-বিতণ্ডা আর হট্টগোলে উত্তেজনাও ছড়ায় এজলাসে। তাছাড়া, দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে এ রিটের আদেশ নিয়ে সবারই আগ্রহ রয়েছে।

এদিকে, আন্দোলনের সময় গুলিতে ১৬ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয় রিটে। সেটির শুনানি আগামী সপ্তাহে হওয়ার কথা।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।