বাংলাদেশ

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে, সেই প্রেতাত্মা আজ কিছুটা হলেও কোটা আন্দোলনের ষড়যন্ত্রের মধ্যে যে লিপ্ত তা আমি অস্বীকার করতে পারব না। সেটা আপনারাও বুঝতেছেন, আমরাও বুঝতেছি।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কোটা আন্দোলন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মেনে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবেন বলে আশাব্যক্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, তারা জনগণের অসুবিধা হোক, জনগণ দুঃখকষ্ট ভোগ করুক এমন কর্মকাণ্ড পরিহার করবেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে না গেলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষা করা ও তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা সরকারের দায়িত্ব। সেখানে যদি কেউ বাধাগ্রস্ত করে, সরকারকে তখন আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সময় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাহাব উদ্দিন বেগ শাপলুসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

উল্লেখ্য, আজ সকালে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার উদ্দেশে রওনা হন আইনমন্ত্রী। সেখানে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সন্ধ্যায় আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে মহানগর গোধূলী ট্রেনে ঢাকা ফিরবেন তিনি।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁসের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) সারডা সোসাইটি নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের পক্ষে রিটটি দায়ের করা হয়। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া রিটটি দায়ের করেন।

রিটে পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে ২৪ থেকে ৪৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ক্যাডার ও নন- ক্যাডারদের তালিকা তৈরিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে দণ্ডারোপের আইন প্রণয়ন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জিও জানানো হয়েছে। এতে পিএসসি, দুদক চেয়ারম্যান ও রেল সচিবকে বিবাদি করা হয়েছে।

আগামী রোববার (১৪ জুলাই) বিচারপতি কে. এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হতে পারে।

 
 

বৃষ্টিতে সবজির বাজারে ক্রেতা কমলেও উত্তাপ রয়েছেই

 

 

ভোর থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টি। জলাবদ্ধতার কারণে ছুটির দিনে বাজারে ক্রেতা সমাগম বেশ কমেছে। কিন্তু দামের উত্তাপ কমেনি। বেগুন, টমেটো, করলা, ঝিঙ্গার দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে।

দোকানদাররা বলছেন, বন্যার কারণে জোগানে কিছুটা ভাটা পড়েছে। পাইকারি মোকামেই বেড়েছে দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। যার প্রভাবে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছেই।

বেশ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের মোকামে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে। পেঁয়াজ আমদানির তেমন কোনও প্রভাব নেই ঢাকার বাজারে। পাইকাররা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আনায় তেমন লাভ হচ্ছে না। তাই অনেকেরই আমদানিতে আগ্রহ নেই।

ক্রেতারা বলছেন, দিন দিন বাজার নিয়ন্ত্রহীন পড়ছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য হচ্ছে না। নিয়মিত বাজার তদারকি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

এদিকে, আলুর চড়া দামে নাকাল ক্রেতারা। মানভেদে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন।

অপর পাঁচ আসামি হলেন- পিএসসির সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির (৪৯), ডিডি আবু জাফর (৫৭), প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায় (৫১), মিরপুরের পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী নোমান সিদ্দিকী (৪৪) ও ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম (২৭)।

উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই গ্রেফতারকৃত ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আবেদ আলীসহ ছয়জন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

কোটা আন্দোলনকারীরা উচ্চ আদালতের আদেশ না মেনে সীমা অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বলেছেন, আদালতের বিষয় আদালতে নিষ্পত্তি হবে, এরপরও জনদুর্ভোগ করলে পুলিশ বসে থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে মাদকের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আদালত কোটা বিষয়ে স্থিতাবস্থা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী এখন কোটা নেই। এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বোঝা উচিত। এখন তাদের সড়কে অবস্থান করার কোনও প্রয়োজন নেই। এরপরও সড়কে অবস্থান করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, অনেকে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করছে। সেই ফাঁদে পা না দিয়ে মিমাংসার পথে থাকা বিষয়টি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, নির্বাহী বিভাগের অনেক নির্দেশনা আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। তাই কোটার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগ সুরাহা করতে পারবে না।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে কোটা বিষয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

ফরহাদ হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার নয়, উচ্চ আদালত কোটার সমাধান করবে। আদালতের স্থিতাবস্থার কারণে কোটা বাতিলের নির্বাহী সিদ্ধান্ত বহাল আছে। পাশাপাশি বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ আদালতের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আদালতে না থাকলে কমিশন গঠন করা যেত। এখন আদালতের বাইরে গিয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছুই করার নেই।

বক্তব্যে, কারো দ্বারা শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত না হওয়ার আহ্বান জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রী। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে ক্লাসে ফেরারও আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া নারী কোটা না থাকায় ৪০তম বিসিএসে কোন নারী পুলিশে চাকরি পায়নি বলেও জানান তিনি। এই অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটার সংস্কার হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন ফরহাদ হোসেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।

সবশেষ গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এরফলে সরকারের জারিকৃত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল হয়। আগামী ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট।

এদিকে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আদালতের রায়ের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তবে, এখনও যারা আন্দোলনে আছে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি।

এ সময় অনতিবিলম্বে ব্লকেড থেকে সরে এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূ্র্ণ কর্মসূচি পালনের আহবান জানান এই ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া এই আন্দোলনের নামে নারী ও নৃতাত্ত্বিকদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাদ্দাম বলেন, পরিসংখ্যানের দিকে না তাকিয়ে গুটি কয়েকের বক্তব্য দেশের ছাত্র সমাজের বক্তব্য বলে চালানো হচ্ছে। যা একেবারেই অনুচিত। এছাড়া মেট্রোপলিটন ভিত্তিক চাকরি ব্যবস্থা গঠনের বিরোধিতাও করেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।

দেশে সিজারের সংখ্যা কমিয়ে আনার ওপর জোড় দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে গর্ভকালীন সময়ের শুরু থেকেই মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান ডা. সামন্ত লাল সেন।

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, অভিযোগ আছে গর্ভবতী নারীদের এন্টিডেন্টাল চেকাপ হয় না। মাতৃমৃত্যু হার এবং জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরকে গুরুত্বের সাথে কাজ করার আহ্বানও জানান মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, জনসংখ্যা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সাম্যের ভিত্তিতে সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ি’।

সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আদালতে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে আপিল বিভাগে একটি মামলার শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তাদের পরামর্শ দিন। তারা কেনো নির্বাহী বিভাগের কথা বলছে? নির্বাহী বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে এসে তুলে ধরতে পারে। আদালতে তা গুরুত্ব সহকারে শোনা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।

সবশেষ গতকাল বুধবার (১০ জুলাই) সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এরফলে সরকারের জারিকৃত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল হয়। আগামী ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট।

এদিকে আজ বিকেলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগে শুনানি শেষে এ রায় দেন আদালত। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।

এর আগে, এদিন সকালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে দুই আবেদনের শুনানির জন্য বেলা সাড়ে ১১টা নির্ধারণ করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সময় নির্ধারণ করেন।

শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। আমাদের রাষ্ট্রপক্ষেরও একটি আবেদন রয়েছে। দুটি আবেদন একসঙ্গে সাড়ে ১১টায় শুনানি হলে ভালো হয়। তখন আপিল বিভাগ শুনানির জন্য বেলা সাড়ে ১১টা নির্ধারণ করেন।

মঙ্গলবার সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন।

দুই শিক্ষার্থী হলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। পরে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

শুধু এ মামলার শুনানির দিন ধার্যের জন্য মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে বসেছিলেন।

এর আগে গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সেদিন রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি করেননি আপিল বিভাগ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।