বিশ্ব

সৌদি আরবে এবারের পবিত্র হজ মৌসুমে অন্তত সাড়ে পাঁচ শ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন মিসরের হজযাত্রী। চরম উষ্ণ আবহাওয়া ও প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে তাঁদের অনেকেই মারা গেছেন বলে গতকাল মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট অন্তত দুজন আরব কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে মিসরের অন্তত ৩২৩ জন আছেন। তাঁদের অধিকাংশই প্রচণ্ড গরমে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।

একজন কূটনীতিক বলেন, মিসরের যেসব হজযাত্রী মারা গেছেন, তাঁদের প্রায় সবাই প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থ হয়েছিলেন। একজন সামান্য ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, মারা যাওয়া হজযাত্রীর মোট সংখ্যা মক্কার পার্শ্ববর্তী আল-মুয়াইসেম এলাকার মর্গ থেকে পাওয়া।

কূটনীতিকেরা আরও জানান, মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে জর্ডানের অন্তত ৬০ জন নাগরিক আছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার জর্ডান জানিয়েছিল, এবারের হজে তাঁদের ৪১ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

তবে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে জানানো তথ্য সমন্বয় করে এএফপি বলছে, এবারের পবিত্র হজে গিয়ে মোট ৫৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সৌদি আরবে এবারের হজের সময় বেশ গরম পড়েছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য, গত সোমবার মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এলাকার তাপমাত্রা ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল।

গত বছর পবিত্র হজ মৌসুমে সৌদি আরবে অন্তত ২৪০ জন হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছিলেন।

দুই দশকের বেশি সময় পর উত্তর কোরিয়ায় গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে গিয়েই দেশটিকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার পুতিন অঙ্গীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তিনি উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করবেন। খবর রয়টার্সের।  

এছাড়া পুতিন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধনে বলা হয়েছে, পুতিন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের প্রশংসা করেছেন। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি, ব্ল্যাকমেইল ও অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় উত্তর কোরিয়ায় প্রশংসা করেন পুতিন। 

অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও রাশিয়ার প্রশংসা করেছে এবং ইউক্রেনে তার সামরিক অভিযানকে সমর্থন করে আর্টিকেল প্রকাশ করে। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধকে সকল রাশিয়ানদের পবিত্র যুদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১১ হাজারের বেশি কন্টেইনার অস্ত্র সরবরাহ করেছে উত্তর কোরিয়া- যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগের পরেই পুতিন দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন।  

ছয় সদস্যের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সরকার থেকে মধ্যপন্থী সাবেক জেনারেল বেনি গ্যান্টজের বিদায়ের পর নেতানিয়াহুর এ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। 

এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারসহ মন্ত্রীদের একটি ছোট প্রতিনিধি দলের সাথে গাজা যুদ্ধের বিষয়ে নেতানিয়াহু পরামর্শ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

গত সপ্তাহে সরকার থেকে পদত্যাগ করেন গ্যান্টজসহ দুই মন্ত্রী। তাদের অভিযোগ, গাজা যুদ্ধের কৌশল তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছেন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আগের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ও পুরো মন্ত্রিসভা এখন থেকে গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবে। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বলে কিছু আর এখন থাকছে না। 

যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে নেতানিয়াহু দেশ ও দেশের বাইরের মিত্রদের সঙ্গে কৌশলগত একটা খেলা খেলেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। আর প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের এক মুখপাত্র বলছেন, এতে যুদ্ধের কার্যক্রমের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ মঙ্গলবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন। এই সফরে  দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তিসহ নানা ধরনের অংশীদারী চুক্তি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সর্বশেষ ২০০০ সালে উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন। সেই হিসেবে ২৪ বছর পর আজ তিনি পারমাণবিক শক্তিধর দেশটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন।

গত বছরের সেপ্টেমম্বরে রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিং জং উন। ওই সময়ে তিনি পুতিনকে পিয়ংইয়ংয়ে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে পুতিন আজ উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন।

দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে পুতিনের সফরসঙ্গী হিসেব রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও পুতিনের জ্বালানিবিষয়ক প্রধান উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক থাকবেন বলে জানা গেছে।

সফরটি সম্পর্কে পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। এতে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে।’

কোনও দেশকে লক্ষ্য করে এসব চুক্তি হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ  বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যা হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেই এই চুক্তি সই করা হবে।’

তবে পুতিনের এই সফরকে সহজ চোখে দেখছেন না আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া। এরই মধ্যে গত শুক্রবার মার্কিন উপ-রাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম হং-কিউন পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফর নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কিম হং-কিউন বলেন, ‘পুতিন এই সফরে হয়তো রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে এমন সব চুক্তি করবে, যাতে দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা বাড়ে। যদি তাই হয়, তবে তা হবে জাতিসংঘের প্রস্তাবের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়া সফর শেষে ১৯ ও ২০ জুন ভিয়েতনাম সফরে যাবেন পুতিন।

ইতালির দক্ষিণ উপকূলে দুটি নৌকা ডুবে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ শিশুসহ নিখোঁজ রয়েছে ৬৬ জন। এ ঘটনায় সোমবার ৫১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জার্মান দাতব্য সংস্থা রেসকিউশিপের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, লিবিয়া উপকূল থেকে ছেড়ে আসা নৌকায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও মিশরের নাগরিক ছিল। তবে নৌকায় ঠিক কতজন যাত্রী ছিল তা জানা যায়নি।

রেসকিউশিপের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডুবতে থাকা একটি কাঠের নৌকা থেকে ৫১ জনকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের ইতালির কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌকাটির নিচের ডেক থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ডুবে যাওয়া অপর নৌকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার নাগরিক থাকার তথ্য দিয়েছো জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। তুরস্ক থেকে ছেড়ে আসা ওই নৌকায় ইতালির ক্যালাবরিয়া থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে আগুন ধরলে সেটি উল্টে যায়। নৌকায় থাকা ৬৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। আর একজনের মরদেহ ও ১১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে মধ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি মৃত্যু ও নিখোঁজ হয়েছে। আইওএম জানায়, ২০২৩ সালেই ভূমধ্যসাগরীয় পথ অতিক্রমের চেষ্টা করার সময় মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।

দক্ষিণ গাজায় নির্দিষ্ট একটি সময়ে হামলা চালাবে না বলে জানিয়েছে ইসরাইলি প্রশাসন। তবে ইসরাইল অবশ্য এটিকে সংঘর্ষ-বিরতি বলছে না। তাদের ভাষায় এটি হলো ‘ট্যাকটিক্যাল পস’ বা কৌশলগত বিরতি। এদিকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

ইসরাইল জানিয়েছে দক্ষিণ গাজায় যাতে ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাতে পারে, সেজন্যই এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এই ছাড় দেওয়া হবে। সে সময় ইসরাইলের সেনারা দক্ষিণ গাজার কোথাও হামলা চালাবে না। ত্রাণকর্মীরা নিরাপদে প্রয়োজনীয় জিনিস বিলি করতে পারবেন। তবে উত্তর বা মধ্য গাজায় এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। 

এদিকে ঈদের দিন সংঘর্ষ-বিরতির আর্জি জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক বিবৃতিতে বাইডেন লিখেছেন, ‘বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু শিশু নিহত হয়েছে। পরিবার ধ্বংস হয়েছে। মানুষ প্রতিবেশীকে হারিয়েছেন। এ এক চূড়ান্ত যন্ত্রণা।’

বাইডেন আরও জানিয়েছেন, তিন ধাপের যে সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা দ্রুত কার্যকর হোক। তাহলেই একমাত্র এই লড়াই বন্ধ হবে। ইসরাইল প্রাথমিকভাবে এই চুক্তি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। কারণ চুক্তির অনেক পয়েন্টই ইসরাইল প্রস্তাব করেছিল। যদিও ইসরাইলের অতি দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকেরা এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন। নেতানিয়াহুর সমালোচনাও করছেন তারা। 

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন হামাসের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে। হামাস এই প্রস্তাব মেনে নিলে দীর্ঘকালীন সংঘর্ষ-বিরতির রাস্তায় যাওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

অপরদিকে হামাস অধিকৃত গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, গত আট মাসের যুদ্ধে সেখানে অন্তত ৩৭ হাজার ৩৪৭ জন নিহত হয়েছে। 

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৩৭ হাজার ৩৪৭ জন নিহতের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ জন মারা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে আক্রমণ করার পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে আট মাসে গাজা উপত্যকায় ৩৭ হাজারের বেশি নিহতের পাশাপাশি মোট ৮৫ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তোলাছবি: এএফপি

সুইজারল্যান্ডে এ সপ্তাহের শেষে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সম্মেলন নিয়ে বেশ উচ্চাশা পোষণ করছেন। ভালো কিছুর প্রত্যাশা তাঁর। তবে ইউক্রেনের সম্মুখসারির সেনা ও কিয়েভের যুদ্ধক্লান্ত বাসিন্দাদের মতে, সম্মেলন থেকে বড় কোনো অর্জনের সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। এ সময়ে এসে সুইজারল্যান্ডের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৯০টি দেশ ও বৈশ্বিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এমন এক সময়ে তাঁরা বসছেন, যখন ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রুশ বাহিনীর সঙ্গে জোরালো লড়াই চলছে।

২৩ বছর বয়সী দিনাইলো পেশায় ড্রোন পরিচালক। তিনি বলেন, এ জমায়েত ‘যুগান্তকারী’ কোনো পরিবর্তন আনবে না। এটা বরং প্রতীকী একটি আয়োজন হবে।

সীমিত সম্পদ থাকার পরও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশটির পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে গ্রামের পর গ্রামে রুশ বাহিনীর সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলক বেসামরিক স্থানান্তর ঘোষণায় বাধ্য করেছে।

১৪ বছর আগে দেওয়া বক্তৃতার রেশ টেনে বিশিষ্ট লেখক অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বা সন্ত্রাস দমন আইনে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাক্সেনা। সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

 

বিরোধীরা মনে করছেন, সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট শরিকদের সহায়তায় সরকার গড়ে বিজেপি কিছুটা সংযত হবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছিল, তা ভুল। বরং তারা যে আগের মতোই দমন–পীড়ন নীতি আঁকড়ে থাকবে, এই সিদ্ধান্ত সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।

২০১০ সালে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে অরুন্ধতী যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষক শওকত হোসেন, হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানি, সংসদে হামলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এসএআর গিলানিও।

এক যুগ পুরোনো সেই মামলা খুঁচিয়ে তোলা হয় গত বছরের অক্টোবরে। দিল্লির উপরাজ্যপাল ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় সম্প্রীতি হানি ও জাতীয় সংহতির পরিপন্থী আচরণের অভিযোগে মামলার অনুমতি দেন। এরপর গতকাল শুক্রবার দিল্লির রাজনিবাস (উপরাজ্যপালের বাসভবন) থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, অরুন্ধতী ও শওকতের বিরুদ্ধে উপরাজ্যপাল এবার ইউএপিএ আইনে মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ এবার মামলা হবে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে।

সিপিএম বলেছে, ‘সেই অনুমতি এমন সময় দেওয়া হলো, যখন আদালতে ছুটি চলছে। আইনজীবীরাও ছুটিতে। এই সিদ্ধান্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়।’

উপরাজ্যপালের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানিয়েছে কংগ্রেসও। দলের নেতা বি কে হরিপ্রসাদ আজ শনিবার সকালে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে বলেন, ‘মানুষের কণ্ঠস্বর চাপা দেওয়ার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা অব্যাহত। বিশেষ করে সেই স্বর যদি কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও আন্দোলনকর্মীদের হয়। নিজেদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা থেকে জনগণের চোখ সরাতে বিজেপি প্রতিদিন মনগড়া সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। বাক্‌স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিরোধীদের এই প্রতিবাদের পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। তাদের মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা আজ শনিবার ‘এক্স’ হ্যান্ডলে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, ‘তারা এত চিৎকার-চেঁচামেচি কেন করছে? তারা এখন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য কাঁদছে! ওরা কি কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে না? আফজল থেকে ইয়াকুব, কংগ্রেসের কাছে দেশের আগে জরুরি তার ভোটব্যাংক নীতি।’

আইন বদল করে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির উপরাজ্যপালকে প্রভূত ক্ষমতা দিয়েছে। এতটাই যে উপরাজ্যপাল সম্মতি না দিলে নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্তও রূপায়িত হবে না। এই নিয়ে দিল্লির আম আদমি পার্টির (এএপি) সরকারের সঙ্গে উপরাজ্যপালের খটমট নিত্যবিষয়। সেই উপরাজ্যপাল এত বছর পর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া এমন ধরনের একটা সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছে, ভাবা কঠিন।

এ কারণেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যে ঢঙে এতকাল নরেন্দ্র মোদির সরকার চলছিল, যেভাবে বিরুদ্ধ স্বর দমিয়ে আসছিল, নির্বিচার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করছিল, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েও তারা হয়তো সেই পথ থেকে সরবে না। এ সিদ্ধান্ত সম্ভবত সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার জোট সরকার গড়তে হয়েছে তাঁকে।

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে রাষ্ট্রপ্রধান হন তিনি। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হলো।

রামাফোসার ‘জাতীয় ঐক্যের’ সরকারে জোট গড়েছে দেশটির ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি), মধ্যডানপন্থী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) এবং আরও কয়েকটি ছোট দল।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রামাফোসা বলেন, ‘আমাদের দেশের সবার ভালোর জন্য নতুন জোট সরকারের নেতারা একসঙ্গে কাজ করবেন—এমনটাই চাওয়া ভোটারদের।’

দিনভর নানা নাটকীয়তা, সন্ধ্যায় বিলম্বে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসার পর রামাফোসাকে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য নির্বাচিত করেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনপ্রণেতারা।

এর আগে গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় নেলসন ম্যান্ডেলার ঐতিহাসিক দল এএনসি।

নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পায় ক্ষমতাসীন এএনসি। ডিএ পায় ২২ শতাংশ ভোট। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় জোট সরকার গড়ার বিকল্প ছিল না রামাফোসার। রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়েই জাতীয় ঐক্যের সরকার গড়ার ডাক দেন তিনি। আইনসভায় আসনসংখ্যায় এএনসির পর দ্বিতীয় বড় দল ডিএ।

ইলন মাস্ক এবং উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী ডেভিড স্যাক্স গত মাসে হলিউডে ধনকুবেরদের একটি গোপন সান্ধ্যভোজের আয়োজন করেন। এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল, জো বাইডেনকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরিয়ে আনা।

ওই সান্ধ্যভোজে অতিথিদের তালিকায় ছিলেন পিটার থিয়েল, রুপার্ট মারডক, মাইকেল মিলকেন, ট্রাভিস কালানিক এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানচিন। ইলন মাস্ক অবশ্য এরই মধ্যে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার)  তাঁর বাইডেনবিরোধী বক্তব্যের সংখ্যা ও আওয়াজ দুই–ই বাড়িয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাস্ক এ বছর প্রতি মাসে গড়ে অন্তত সাতবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বয়স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও অভিবাসন নীতিসহ নানা বিষয়ে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। জো বাইডেনকে ‘অতি বাম রাজনীতি-যন্ত্রের করুন মুখ’ আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইলন মাস্ক একই সময়ে ট্রাম্পের পক্ষে ২০টির বেশি পোস্ট দিয়েছেন। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফৌজদারি মামলা সংবাদমাধ্যম ও প্রসিকিউটরদের পক্ষপাতের ফল বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বিষয়টিকে ছোটখাটো ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার অবকাশ নেই। কারণ, এক্সে মাস্কের ১৮ কোটি ৪০ লাখ অনুসারী রয়েছে। তা ছাড়া যেহেতু তিনি এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মালিক সে কারণে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ যাতে তাঁর পোস্ট দেখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে অ্যালগরিদমে ওলটপালট করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

এই সমর্থনের পেছনে ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। ভারতে তিনি তাঁর টেসলা গাড়ির জন্য কম শুল্কারোপ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। ব্রাজিলে তিনি তাঁর স্পেসএক্স স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংকের জন্য একটি বড় বাজার খুঁজে পেয়েছেন। আর্জেন্টিনা থেকে তিনি লিথিয়াম পাওয়া নিশ্চিত করেছেন। টেসলার ব্যাটারির জন্য লিথিয়াম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

তবে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থই নয় বরং এর গভীরে কিছু একটা চলছে। মাস্ক, থিয়েল, মারডক ও তাঁদের সঙ্গে যুক্ত ধনকুবেররা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রযুক্তি খাতের বড় বিনিয়োগকারী পিটার থিয়েল একবার লিখেছিলেন, ‘আমি আর বিশ্বাস করি না যে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে।’

স্বাধীনতা যদি গণতন্ত্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, তাহলে এটা কিসের সঙ্গে চলতে পারে?

থিয়েল রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের দৌড়ে থাকা অ্যারিজোনার ব্লেক মাস্টার্সের তহবিলেও অন্তত এক কোটি ডলার দিয়েছেন। ব্লেক দাবি করেছিলেন যে ট্রাম্পই ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। আধুনিক সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃত্ববাদী লি কুয়ান ইউয়েরও ভক্ত তিনি।

মাস্ক, থিয়েলের মতো ধনকুবেরদের অর্থ এখন ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রচারণায় যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ে কাজ করা ‘আমেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির মাত্র ৫০টি পরিবার এরই মধ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের জন্য ৬০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে। ওই অর্থের বেশির ভাগই গেছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টিতে।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকেরা যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আক্রমণ করে তখন ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ধনকুবের স্টিফেন এ শোয়ার্জম্যান একে ‘বিদ্রোহ’ বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের প্রিয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবমাননা।’ সেই শোয়ার্জম্যানই এখন ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক, অভিবাসন ও পররাষ্ট্র নীতি দেশকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে।’

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের জন্য ১০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহে সম্প্রতি জ্বালানি তেল খাতের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর একদল নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জানা গেছে, সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে নির্বাচিত হলে বাইডেনের নেওয়া পরিবেশ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক ডজনখানেক বিধান ও নীতি উল্টে দেবেন।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, তেল কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হবে, যাতে তাঁরা করছাড় পাবেন এবং তাঁদের শিল্পের ওপর আরোপিত বিধিবিধান এড়িয়ে যেতে পারেন।

গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সম্মেলনে একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও বেশি লাভজনক ব্যাংক জেপি মরগান চেজ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান জেমি ডিমন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্পের নেওয়া  বিভিন্ন নীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। জেমি ডিমন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিইওদের একজন।

তিনি বলেছিলেন, ‘সততার সঙ্গে একটি পেছনে তাকিয়ে দেখুন। ট্রাম্প অর্থনীতিকে ভালোই বড় করছিলেন। (তাঁর) কর সংস্কার কাজে লেগেছিল।’

বাস্তবে জেমি ডিমনের এই বক্তব্য কিন্তু সত্য নয়। বরং ট্রাম্পের আমলে দেশের অর্থনীতি থেকে প্রায় ২৯ লাখ চাকরি হারিয়ে যায়। এমনকি করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগেও ট্রাম্পের সময়ে কর্মসংস্থান যে হারে বেড়েছে, তা ছিল বাইডেনের আমলের চেয়ে ধীরগতির।

আর ট্রাম্পের কর কমানোর বেশির ভাগ সুবিধা গেছে জেপি মরগান চেজের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং জেমি ডিমনের মতো ধনকুবেরদের পকেটে। বিনিময়ে বেড়েছে বাজেট ঘাটতি।

তবে শুধু কর কর্তন বা নিয়ন্ত্রণ গুটিয়ে নেওয়া হবে এই প্রত্যাশা থেকে মার্কিন ধনকুবেরেরা ট্রাম্প ও তাঁর দলের পক্ষে অর্থ ঢালছেন না। বরং এসব মার্কিন ধনকুবেরের লক্ষ্য গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরা।

গত বছর নভেম্বরে এক পডকাস্টে মাস্ককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি আরও বেশি রাজনীতিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন কি না। জবাবে মাস্ক তা স্বীকার করে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি নিপীড়নমূলক মানসিকতার (ওয়োক মাইন্ড ভাইরাস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বিবেচনা করেন, যেটিকে আমি সভ্যতার জন্য একটি হুমকি বলে মনে করি, তা রাজনৈতিক হলে আমার উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। এই মানসিকতা কমিউনিজমের নতুন রূপ হিসেবে ফিরে আসছে।’

বর্তমান রক্ষণশীল মার্কিন ধনকুবেরদের পূর্ব প্রজন্ম ব্যারি গোল্ডওয়াটারের মতো প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। কারণ তাঁরা আমেরিকান সমাজব্যবস্থার অনেক কিছুই ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

মাস্ক, থিয়েল, শোয়ার্জম্যান, মরডক ও তাঁদের মিত্র ধনকুবেরেরা নিজেদের গণতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সেগুলোর অনেক কিছুরই ধার ধারেন না। অন্তত উনিশ শতকের বিশের দশকের পর যেগুলো হয়েছিল, যার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার, এমনকি নারীদের ভোটদানের অধিকারের মতো বিষয় রয়েছে।

যেমনটি থিয়েল লিখেছেন, ‘উনিশ শতকের বিশের দশক ছিল আমেরিকার ইতিহাসে শেষ দশক যখন রাজনীতি নিয়ে কেউ সত্যিকার অর্থে আশাবাদী হতে পারতেন। ১৯২০ সালের পর থেকে কল্যাণমূলক ব্যবস্থার সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি এবং নারীদের নাগরিক অধিকারের সম্প্রসারণ—এই দুই ঘরানার ভোটাররা স্বাধীনতাবাদীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছে-‘পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের’ ধারণাকে একটি বিপরীতমুখী ধারণায় পরিণত করেছে।  

যদি ‘পুঁজিবাদী গণতন্ত্র’ একটি বিপরীতমুখী ধারণায় পরিণত হয়ও, তা সরকারের জনকল্যাণমূলক খাতে ব্যয় বা নারীদের ভোটাধিকার পাওয়ার কারণে হয়নি। বরং মাস্ক ও থিয়েলের মতো পুঁজিবাদী ধনকুবেরদের কারণে হয়েছে, যাঁরা ট্রাম্প ও তাঁকে ঘিরে থাকা নব্য ফ্যাসিবাদীদের সমর্থন দিয়ে গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে চান।

ঘটনাক্রমে নয়, উনিশ শতকের বিশের দশক ছিল এক ক্রান্তিকাল। সে সময় আমেরিকার লুটেরা ব্যবসায়ীরা এত বেশি সম্পদ কুক্ষিগত করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি বাসিন্দাদের জীবন চালাতে বিপুলভাবে ঋণগ্রস্ত হতে হয়। ১৯২৯ সালে এই ঋণের প্রভাব স্পষ্ট হলে দেখা দেয় মহামন্দা। এ সময়ে বিশ্বমঞ্চে আবির্ভূত হন বেনিতো মুসোলিনি ও অ্যাডলফ হিটলার, যাঁরা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তৈরি করেন। যেমনটি আর দেখেনি আধুনিক বিশ্ব। ফ্যাসিবাদী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সময়ে কেউ-ই নিরাপদ নয়—এমনকি সমমনারাও নয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।