মানুষের হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কীসের লক্ষণ?
জুনের মাঝামাঝি হয়ে গেলেও বর্ষার বৃষ্টির দেখা নেই। এই ভ্যাপসা গরমে আপনার পাশে লাইনে দাঁড়ানো কেউ যদি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তাহলে কী করবেন? কিংবা ধরুন আপনার পরিচিত কেউ, বাসায় আপনার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আসুন জেনে নিই কী করা উচিত।
মানুষের চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। আর এই মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহের। এই রক্তপ্রবাহে সঠিক পরিমাণে রয়েছে দ্রবীভূত অক্সিজেন, গ্লুকোজ, লবণসহ আরো কিছু রাসায়নিক পদার্থ। আপনার আমার অজান্তেই, আমাদের শরীর তা বজায় রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এর কোনো কিছুতে ব্যত্যয় ঘটলে মানুষ অচেতন হয়ে পড়তে পারে। কারণের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি অজ্ঞান অবস্থায় থাকতে পারেন অল্প সময় থেকে দীর্ঘমেয়াদি।
মোটা দাগে দুই ধরনের কারণে এই অচেতন হওয়া ঘটতে পারে। যেমন:
১. রক্ত দেখলে, খারাপ খবর শুনলে, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ঢুকানোর আগেই সুঁই দেখে কেউ কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। এটি তাৎক্ষণিক ঘটে এবং খুব অল্প সময়ে চেতনা ফিরে আসে। এটি খুব মারাত্মক কিছু নয়।
২. এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গ্র্যাভিটির কারণে শরীরের নিচের অংশের রক্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে পৌঁছাতে না পারলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য এক ধরনের ওষুধ আছে সেটা খেলেও এমন হতে পারে। তবে, এ ধরনের ওষুধ শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
এবার আসি গুরুতর সমস্যাগুলোতে, যেগুলোতে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে:
১. আমাদের দেশের বয়স্কদের একটি বড় অংশের রয়েছে ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা। হার্টের যেকোনো ধরনের সমস্যায় রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলেও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এই দুই কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত্যুঝুঁকি সর্বাধিক।
২. শরীর থেকে একসঙ্গে অনেক পরিমাণ রক্তপাত হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
৩. ডায়রিয়া কিংবা অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ, পানি বেরিয়ে গিয়েও অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন।
৪. একটি বিশেষ ধরনের খিঁচুনি আছে যেখানে ব্যক্তি শুধু অজ্ঞান হয়ে পড়েন, সেটিও হতে পারে। এছাড়া লিভার-কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা, পারকিনসন ডিজিজ জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত থাকলে মাঝে মাঝে এমন অচেতন হয়ে যেতে পারেন।
অজ্ঞান হয়ে পড়া খুব সাধারণ একটি রোগলক্ষণ। হাসপাতালে আসা রোগীর প্রতি দশজনে একজন অজ্ঞান হয়ে আসেন। এর পিছনে রয়েছে খুব সাধারণ দৈনন্দিন কারণ থেকে জীবনঘাতি ব্যাধি পর্যন্ত নানা ধরনের সমস্যা। তাই এর প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি বারবার এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রয়োজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী, এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ