মনির - সলু সিন্ডিকেট থেকে কবে মুক্তি পাবে ঢাকা উদ্যানবাসী
রাজধানী মোহাম্মদপুর এলাকাতে অপরাধ জগতের বিশাল এক সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। ডিএনসিসি এর ২৯ নং এর ওয়ার্ড কমিশনার সলিমুল্লাহ সলুর নেতৃত্বে। যার প্রধান সহযোগী ছিল ঢাকা উদ্যানের মনিরুজ্জামান মনির। এবং বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগীতা করতো ডিএনসিসি এর ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজীব। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুনে প্রায় ৩০০ দোকান পুড়ে যায়। এই ঘটনায় অনেকেই সলুকে সন্দেহ করছে। সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকায় সুজন নামক একজনকে হত্যার অভিযোগে ১লা সেপ্টেম্বর আটক হয় সলু। এরপরই কাটাশুর এলাকার বাসিন্দা বরকত মার্ডারের প্রধান আসামী বর্তমানে জামিনপ্রাপ্ত শামীম বেপারী গোপনে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে যায়। সলুর প্রধান সহযোগী মূর্তমান আতঙ্ক মনিরুজ্জামান মনির। মনিরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জিম্মি থাকতো ঢাকা উদ্যান সহ আশপাশের বাসিন্দারা এবং ব্যবসায়ীরা। সাবেক কমিশনার সলুর সাথে পারিবারিক সম্পর্কের কারনে সিন্ডিকেট করে, বিভিন্ন সাধারণ মানেুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও বিআইডাব্লিউটি এর জমি দখল এর অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানা ও আদালতে প্রায় ৮০ টি মামলা ও সাধরণ ডায়েরী (জিডি) রয়েছে। কয়েকবার ইয়াবা সহ গ্রেফতার হয় মনির।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, বাড়ীদখল, ভাংচুর, ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগসহ ৭৫ টির বেশী মামলা জিডি রয়েছে।
মোহম্মদপুরের শেখের টেক ও বেড়িবাধ সংলগ্ন প্রায় ১০ টি হাউজিং প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্লট দখলের অভিযোগ এই সন্ত্রাসী মনিরের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময়, সাবেক কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজীব আটক হলেও আমেরিকায় পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করে মনির।
মোহাম্মদপুর থানায় একটি চাদাঁবাজী মামলায় ২০১৭ সালে প্রথম গ্রেফতার হয় মনির । জামিন পেয়ে ঐ বছরই দখলদারিত্ব বাড়াতে গেলে ৩৩ নং ওয়ার্ডের তখনকার কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজীবের বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় হয় মনির বাহিনীর সাথে। পরে সমঝোতার মাধ্যমে দুই বাহিনীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
স্থানীয়রা ও ভুক্তভোগীরা জানায় মনিরের বাগান বাড়ীতে ছিল একটা ভয়ংকর টর্চার সেল। টর্চারের সময় উচ্চ ভলিউমে গান বাজানো হতো সাউন্ডবক্সে।
২০১৬ সালে ঢাকা উদ্যানে বালুর ঘাট দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে মনির বাহিনীর হাতে নির্যাতনের স্বীকার হয় হাজী বরকত উল্লাহ্ আজহার এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সুবল চন্দ্র দাশ, রুহুল আমিন, পাটোয়ারী, ইয়ামিন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর আঘাত করা হয়। ভীতি প্রদর্শনের সময় মনিরের অস্ত্রধারী বাহিনীর মধ্যে হুমায়ূন, হোসেন, শাহাবুদ্দীন, শাহিন, মাহিন, আকবর, সুলতান, ফালান, শুভ, ওলী ও ম্যানেজার আনোয়ার মাসুদ উপস্থিত থেকে নির্যাতনের মাত্রা পরিচালনা করতেন।
২০১৩ সালে প্রথম মনির বাহিনী ঢাকা উদ্যানে বালুর ঘাটে জমির মালিকানা দাবি করে একের পর এক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে হটিয়ে টিন ও বাঁশ দিয়ে বেড়া নির্মান করে দখল বাণিজ্য শুরু করে। ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীদের বলেন, যে কেউ তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই নেমে আসতো শাস্তির খড়গ।
কাজী আশরাফ আল কাদীর নামের এক ভুক্তভোগী জানান ২০১১ সালে ঢাকা উদ্যানের ডি বøকে সাড়ে ০৬ কাঠার ৫৪ নং প্লটের দোতলা বাড়ী নির্মানের কাজ শুরু করেন, এর মধ্যেই মনির তার কাছে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় মনির জাল দলিল তৈরী করে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বাড়ীটি দখলে নিয়ে নেয়। এ বিষয়ে সে সময় মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারন ডাইরী করেও সুফল পাননি। দখলের পর আদালতে মামলা করেন এ ভুক্তভোগী আজও আলোর মুখ দেখেনি। পূর্বের সরকারের প্রভাব বিস্তার করে এসব করতো বলে জানান তিনি।
একইভাবে অন্য ভুক্তভোগী কে এম মোস্তফা নাজিম ২০০৩ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর ঢাকা উদ্যানের সি বøকে ১ নং সড়কে ২নং প্লটে ২.২৫ কাঠা জমি ক্রয় করে। বাড়ীর পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, হোল্ডিং টেক্স নিয়মিত পরিশোধ করে আসছিলেন এবং এরই মধ্যে বহুতল বাড়ী নির্মানের কাজ শুরু করেন। কাজ শুরু করার পরপরই মনিরের সন্ত্রাসী বাহিনী মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করবার পরপরই মনিরের সন্ত্রাসী বাহিনী জোরপূর্বক কাজ বন্ধ করে দেয় এবং মুখ খুললে বা প্রতিরোধের আগ্রহ দেখালে পুরো পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মোস্তফা নাজিম জানায়, টিন ও বাস দিয়ে প্লটের চারিদিকে বেড়া নির্মাণ করে, শাকিল নামের একজনকে মালিক বানিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। ৫ই নভেম্বর অন্য মামলায় সন্ত্রাসী মনির গ্রেফতার হলে আমি তাৎক্ষনিক প্লটে গিয়ে নিজের সাইনবোর্ড লাগিয়ে পুনঃদখলের চেষ্টা করি কিন্তু মনিরের বাহিনী সেই সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করে আবার তাদের দখলে নেয়।
ঢাকা উদ্যান এলাকাবাসীর কাছে মূর্তমান আতংক এ মনির, তার কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। সেসময় গ্রেফতারের পর এ কালামনির অস্ত্র আইনে ৩ দিন ও মাদক মামলায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর মধ্যে কালা মনিরের সন্ত্রাসী বাহিনী তার অবৈধ কাজগুলোর তদারগি করে যাচ্ছে মনিরের মা সাবিয়া বেগম সহ।
০৫ তারিখ সরকার পতনের মাধ্যম অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হলে মনির বাহিনী ভীত হয়ে গা ঢাকা দেয় এবং আড়াল থেকে অপরাধমুলক কাজগুলো পরিচালনা করে। আমি এবং আমার মত ভুক্তভোগীরা জনগনের সরকার কায়েম হওয়ায় আশার আলো দেখছি এবং জমি ফেরত পাওয়ার আশা করছি।
আরেক ভুক্তভোগী হাজি বরকত উল্লাহ্ জানান ২০১৫ সালে মনিরের নের্তৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্রসস্ত্রে নিয়ে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান ইট-বালু ব্যবসায়ী ও সমবায় সমিতিতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। একই সময়ে সেখানে অবস্থিত ৮ টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের গদি ভাংচুর করা হয়। এসব গদিতে প্রায় ৪০ জন মালিক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। এছাড়া ২০১৬ সালে একই কায়দায় আজহার এন্টাপ্রাইজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া নিলামের কাগজ দেখিয়ে, সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কয়েক ট্রাক ইট, বালু সরিয়ে নেয় মনির। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মনির।
অন্য ভুক্তভোগী হেদায়েতুল্লাহ্ ঢাকা উদ্যানে তার পৈত্রিক জমিতেও বসবাস করতে পারেনি সন্ত্রাসী মনির বাহিনীর দখল বাণিজ্যের কারণে ভুক্তভোগীর ছেলে হেমায়েত উল্লাহ্ প্রিন্স জানায় রোড নং ঃ ০১, প্লট নং ঃ২৪, বøক ঃডি তার বাবার পৈত্রিক সম্পদ কিন্তু গত ১৬/০৮/২০২০ সালে রাত প্রায় ০৮ টার সময় ৫০-৬০ জন সশস্ত্র লোক নিয়ে তাদের বাড়ীতে আক্রমণ করে চরম নির্যাতন করে পরিবারের সদস্যদের এবং দাবি করে ২৫ লক্ষ টাকা। তাৎক্ষনিক টাকার সংস্থান না থাকায় আমাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে আপোসনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে যাতে উল্লেখ থাকে ২ কিস্তিতে ১৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এরই মধ্যে সরকার পরিবর্তনে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দেয়।