ছাত্র-জনতার রক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে
আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আয়োজনে 'গণঅভ্যুত্থান- গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র : নাগরিক বিতর্ক' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ আব্দুন নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাচন সংস্কার কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান, শ্রমজীবী নারী মৈত্রী'র সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, এডভোকেট তাসমিন রানা।
বক্তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলেন। জুলাই আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক - জনতার রক্তঝরা অভূতপূর্ব গণজাগরণ ও গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে এক বিরাট সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শেখ আব্দুন নূর তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, একটি বৈষম্যহীন মানবিক ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথও উন্মুক্ত করেছে এই আন্দোলন। একবার মুক্তিযুদ্ধের পর, আরেকবার নব্বই এর গণঅভ্যুত্থানের পর এই সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের অদূরদর্শীতায় এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। এর ফল হয়েছে মারাত্মক। মানুষের অধিকার আর মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল বারে বারে তা প্রতারিত হয়েছে, আশা হতাশায়, আর স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। দেশের মানুষকেই এর মাশুল দিতে হয়েছে।
নূর আরো বলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাধীন দেশের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচারের যে রাজনৈতিক দিশা নির্ধারণ করা হয়েছিল গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশকে তার বিপরীত দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পরিবর্তে চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাম্যের পরিবর্তে বিশাল বৈষম্য, ভোটসহ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। ক্ষমতার নামে এক ধরনের জমিদারী ব্যবস্থার পত্তন করা হয়েছিল। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে বেশুমার লুটপাটের লাইসেন্স হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের অশুভ সিন্ডিকেট সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। অবাধ এই লুন্ঠন ও স্বেচ্ছাচারীতা চালানোর জন্য দেশের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল। এভাবে বিপুল সম্ভাবনায় দেশ ও জনগণকে অনিশ্চিত অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ছিল এই মাফিয়া রাজত্বের বিরুদ্ধে ছাত্র তরুণ, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষসহ জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দেশের মানুষ আর আগের জমানায় ফিরতে চাইবেনা। তারা চায় সাম্যভিত্তিক বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকার- সংবিধান, এক মানবিক সমাজ ব্যবস্থা; যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার, মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করবে।
সংগঠনের সদস্য সচিব বাবর চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ কোন রাজনৈতিক দল নয়। একটি নীতি গবেষণা ও পর্যালোচনা প্লাটফর্ম। এই পরিষদ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহের উপর মনোযোগ রাখবে, নীতি নির্ধারণী ইস্যু নিয়ে কাজ করবে। সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপরও মতামত গঠনের প্রচেষ্টা নেবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ এই পরিষদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন।