নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কলেজ ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় উঠে আসে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নাম। এরপরই তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তদন্ত বন্ধ করে দেয় তদন্ত সংস্থা র্যাব- এমন অভিযোগ এনে ত্বকীর বাবা জানিয়েছেন, বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ৭ মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ত্বকী। এর একদিন পরই বের হয় ত্বকীর ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল। পদার্থ বিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ নম্বর পেয়েছিল ত্বকী। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। ছেলের এমন সাফল্য গত এক যুগে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি মা রওনক রেহানা।
তার মা বলেন, ছেলে কত ভালো ফল করেছিল, আজ থাকলে হয়তো অনেক ওপরে অবস্থান হতো তার। জীবন অন্যরকমও হতে পারতো। এসবই মনে পড়ে এখন।
ছেলে হত্যার আসামিদের নাম যখন সামনে আসতে থাকে তখনি তদন্ত হঠাৎ থমকে যায়। তদন্ত বন্ধে তদবির আসতে থাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
বিষয়টি নিয়ে ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বী বলেন, র্যাব মামলাটি খুবই আন্তরিকতার সাথে তদন্ত করেছিল। সেসময় যারা দায়িত্বরত ছিলেন তারা ১৬৪ ধারায় দুইজনের জবানবন্দি নেয় এবং আজমেরী ওসমানের (শামীম ওসমানের ভাতিজা ও নাসিম ওসমানের ছেলে) টর্চারসেলে অভিযান চালায়। শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন ওসমান পরিবারকে আমি দেখে রাখবো। সেসময় র্যাবের ডিজি, এডিজি যারা ছিলেন তাদেরকে শেখ হাসিনা ডেকে নেন। এরপর বলেন, ‘এটা (তদন্ত) বন্ধ রাখেন’।
সত্যিই কী ঘটেছিল সেই সময়? র্যাবের তদন্ত-ই-বা কেন থমকে গিয়েছিল সেটি জানতে অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া যায় বেশ কিছু নথিপত্র।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া খুনিদের একজন সুলতান শওকত ভ্রমর। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমি আজমেরী ওসমানের অফিস উইনার ফ্যাশনে যাই বিকেলে। তারপর রাজীব ও কালাম ত্বকীকে আজমেরীর রুমে নিয়ে যায়। আজমেরী ওসমান কালামকে বলেন, সব শেষ তোরা যেখানে পারিস লাশটি ফেলে আয়।
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতার এবং তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম। আমজমেরী ওসামানের টর্চারসেল উইনার ফ্যাশনে অভিযানের কিছুদিন পর-ই বদলি করা হয় র্যাবের এই কর্মকর্তাকে।
এ সম্পর্কে ত্বকীর বাবা বলেন, আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে অভিযান চালানো থেকে শুরু করে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সবই করেছিলেন লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর। সেসময় শামীম ওসমান অভিযোগ করে বলেন, র্যাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর বিএনপি করে তাই ওসমান পরিবারের পেছনে লেগেছে।
এ পর্যন্ত আদালতের কাছে ৭০ বার সময় চেয়ে তদন্ত শেষ করতে পারেনি র্যাব। বিষয়টি নিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শুধু র্যা-১১ নয়, আমাদের মূল অনুসন্ধান দল আন্তরিকতার সাথে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এটি আলোর মুখ দেখবে।
অন্তবর্তীকালীন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা ত্বকীর বাবা-মা’র। তার বাবার দাবি, দ্রুত সময়ে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরীকে গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।