অপরাধ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ঘটা ‘গণহত্যা’ তদন্তে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে জাতিসংঘের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সৈন্য নেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন প্রতিনিধিরা। তারা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অবস্থান অক্ষুণ্ণ থাকবে।

বৈঠক শেষে জাতিসংঘের হাইকমিশনার দফতরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন জানান, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত নৃশংসতা তদন্তের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সব অভিযোগের সত্যানুসন্ধান ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সরকার, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ সবাই সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।

আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ‘অনিয়মে’ নাম আসা রাজশাহীভিত্তিক শিল্প গ্রুপ নাবিলের ঋণ গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকায়; যেসব ঋণ দিতে নিয়ম না মানার তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের বৃহত্তম এ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত কয়েকবছরে ঋণ ‘অনিয়মে’ নাম আসা আলোচিত নাবিল গ্রুপকে নামে ও ভিন্ন নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান এবং রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি শাখা থেকে। নিয়ম ভেঙে গ্রুপটিকে বিশেষ সুবিধায় সীমার অতিরিক্ত ঋণ প্রদান করেছে ব্যাংকটি।

ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাবিল গ্রুপ দুইভাবে ঋণ নিয়েছে। প্রত্যক্ষ বা সরাসরি ঋণ, আরেকটি হল পরোক্ষ ঋণ।

আর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে মোট প্রায় তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। একক ঋণ সীমার নিয়ম এক্ষেত্রেও মানা হয়নি।

দেশের বৃহত্তম বেসরকারি এ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় ব্যাংকের প্রভাবশালীদের কথায় কোনো রকম নিরীক্ষা ছাড়াই এসব কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। নামে ভিন্ন হলেও ইসলামী ব্যাংকের নথিপত্রে এ ঋণগুলো স্পষ্ট নাবিল গ্রুপের নামেই রয়েছে।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। আজ সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামীম আহমদ ও প্রচার সম্পাদক আবদুর রহমান জামিল। আবদুর রহমান জামিল রেড ক্রিসেন্ট সিলেট শাখারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে যান। রাত পৌনে নয়টার দিকে ইমিগ্রেশনে গেলে তাঁদের আটক করা হয়। পরে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেট মহানগর পুলিশকে জানানো হয়।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আটক দুজনকে থানায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁদের কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়টি তাঁরা দেখছেন।

‘নারায়ণগঞ্জ-১’ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। 

শনিবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে তাকে শান্তিনগর থেকে আটক করা হয়। গত ২১ আগস্ট, নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

এরপর ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, আনন্দ-মিছিলে রূপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় স্কুলছাত্র রোমান মিয়া। এ ঘটনায়, নিহতের খালা রিনা বাদি হয়ে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলেসহ আসামি করে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

রাজধানীর নিউমার্কেট ও লালবাগ থানার পৃথক হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে ৫ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানা যায়, লালবাগ থানায় দায়ের করা আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় পাঁচদিন এবং নিউমার্কেট থানার আরেকটি হত্যা মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, ঢাকা কলেজের সামনে হতাহতের ঘটনায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে আদালতে তোলা হয়। তাছাড়া, একইসাথে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার শাহজাহান হত্যা মামলায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে জিয়াউল আহসানকেও আদালতে তোলা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট নৌপথে পালানোর সময় কোস্টগার্ডের হাতে গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অপরদিকে, ১৫ আগস্ট জিয়াউল আহসানকে খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ।

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাখা অর্থ অনুমোদন ছাড়াই খরচ, বাড়তি ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ এবং গোপনে প্রকল্পের পরিত্যক্ত লোহা (স্ক্র্যাপ) বিক্রির মাধ্যমে এই অর্থ লোপাট করেছে একটি চক্র। ছয়জনের এই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিক ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কালাম। এ নিয়ে গত মে মাসে একটি অভিযোগও জমা পড়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া  অনুসন্ধানেও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

পাবনার রূপপুরের পরেই বিদ্যুৎ খাতে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মাণে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। দুটি ইউনিটে মোট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট গত বছরের জুলাই মাসে উৎপাদনে এসেছে। কেন্দ্রটিতে ঋণ দিয়েছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। এই প্রকল্পে এর আগে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাও করেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ দামে নাটবল্টু কিনেছে। এসবের পর এবার নতুন করে অভিযোগ এল নয়ছয় করে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাতারবাড়ী প্রকল্পে জরুরি খাতে ব্যয় করার জন্য প্রায় ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এই অর্থ অতি জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করার কথা ছিল। কোনো রকম অনুমতি ছাড়া এই বরাদ্দের পুরোটাই ব্যয় করা হয়েছে। যে ১৫টি কাজের বিপরীতে এই অর্থ ব্যয় হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৪টি কাজের অনুমতি দিয়েছিলেন সিপিজিসিএলের বোর্ড পরিচালকেরা। বাকি ১১টি কাজে কোনো অনুমতির তোয়াক্কাও করেনি ছয়জনের চক্রটি। এই চক্রে আছেন সিপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী অর্থ পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যা, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা) মো. কামরুল ইসলাম, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মতিউর রহমান ও সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আলফাজ উদ্দীন।

অনিয়ম-১:  প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (পিডিপিপি) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরের সড়ক বিটুমিন বা পিচের মাধ্যমে করার কথা ছিল, এতে ৮০ কোটি টাকার মতো ব্যয় নির্ধারণ করা ছিল। কিন্তু চক্রটি এই সড়ক বিটুমিনের মাধ্যমে না করে সিমেন্ট ও কংক্রিটের ঢালাই দেয়। এতে বাড়তি ব্যয় হয় ১৭০ কোটি টাকা। এই কেনাকাটায় সিপিজিসিএলের বোর্ড সভার অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অনিয়ম-২: মাতারবাড়ী প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ একর জমিজুড়ে স্ক্র্যাপ বা বাতিল লোহা স্তূপাকারে ছিল। এসব লোহা ছিল মূলত বিভিন্ন ধরনের শাটার। ঢালাই কাজে এসব শাটার ব্যবহার করা হয়। শাটারের দামসহ ধরে ঠিকাদারদের নির্মাণ খরচ দেওয়া হয়। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের বাতিল লোহা প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। ফলে মাতারবাড়ী প্রকল্পে যা কিছুই পরিত্যক্ত হবে, তার মালিক সিপিজিসিএল। কিন্তু পরিত্যক্ত এসব লোহার বড় অংশই বিক্রি করে দিয়েছেন সিপিজিসিএলের এমডি ও তাঁর সহযোগীরা, যার মূল্য কম করে হলেও ৩০০ কোটি টাকা। লোহা বেচার এই অর্থ সিপিজিসিএলের কোষাগারে যায়নি। পুরোটাই লোপাট করেছে এমডির নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। 

অনিয়ম-৩: মাতারবাড়ী প্রকল্পে সাগরের সুরক্ষা ও ভূমি সুরক্ষার কাজটি করেছে বিদেশি ঠিকাদার হুন্দাই। প্রকল্পের ভেতর তাদের ৭৮ হাজার ৫০০ বর্গফুটের তিনটি স্টিল নির্মিত ভবন ছিল, যেখানে তাদের লোকেরা থাকতেন। সবার আগে হুন্দাইর কাজ শেষ হয় এবং তারা এই তিনটি ভবন রেখে প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করে। তিনটি ভবনে অন্তত ১৫ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ লোহা ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এই ভবন তিনটির মালিক সিপিজিসিএল। কিন্তু হুন্দাইর নাম বলে তা বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

একইভাবে প্রকল্পে পসকোর ১২ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বাইরে বিক্রি করা হয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হিসেবে প্রচার করে। অথচ পসকো ও হুন্দাই এসব বিক্রির অনেক আগেই প্রকল্প এলাকা ত্যাগ করেছে।

সিপিজিসিএলের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা 

জানিয়েছেন, এর আগে পায়রা, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাতিল লোহা ওই কেন্দ্রের মালিকপক্ষ দরপত্র করে বিক্রি করেছে। এ ছাড়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপও দরপত্র আহ্বান করে বিক্রি করা হয়েছে। মাতারবাড়ী প্রকল্পেরও ৯ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ প্রথমে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এরপর বলা হয়, এটি প্রকল্পের ঠিকাদার জাপানি কোম্পানির মালিকানাধীন স্ক্র্যাপ। ফলে তারা এই বাতিল লোহালক্কড় বিক্রি করবে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে থাকা প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার লোহা বিক্রি করা শুরু হয়। এসব লোহা বিক্রির অর্থ সিপিজিসিএলের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল করা হয়। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু ২২ আগস্ট পর্যন্ত তিনি কোনো জবাব দেননি। 

কান্ট্রি অব অরজিন পরিবর্তন করার অভিযোগ: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী যে দেশ থেকে যন্ত্রপাতি দেওয়ার কথা, সে দেশ থেকে না এনে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আনা হয়েছে। সিপিজিসিএলের এমডি আবুল কালাম আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নিয়েছে। তবে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা 

পক্ষে সম্ভব হয়নি। 

দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মতামত চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যত বড় প্রকল্প তত বড় দুর্নীতি। বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ী সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এতে খরচের মাত্রাও অনেক বেশি। এখানে জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে, এখানে নাটবল্টু অস্বাভাবিক দামে কেনা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এই প্রকল্পের পুরোনো লোহালক্কড় বেচে দিচ্ছে প্রকল্পের কর্মকর্তারা। দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।

সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে কড়া নিরাপত্তায় সিলেটে নেয়া হয়েছে। আজ তাকে আদালতে তোলা হবে। এর আগে, শুক্রবার অবৈধভাবে পারাপারের সময় সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে মানিকের ধরা পড়ার একটি ভিডিও ফুটেজ আসে যমুনা নিউজের হাতে। একজন বিজিবি সদস্য ভিডিওতে তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি জানান, তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ এবং তার নাম বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক। এ সময় তাকে দেশত্যাগের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, প্রশাসনের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন।

ভিডিওতে মানিক আরও জানান, তারসাথে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি পাসপোর্টের পাশাপাশি ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, নগদ ৪০ হাজার টাকাও ছিল। কয়েকজনের সাহায্যে ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তাকে বর্ডার পার করে দেয়ার পরিকল্পনা হয়। তবে সেই টাকা নেয়ার পরও দুজন যুবক তাকে প্রহার করেন বলেও জানান সাবেক এই বিচারপতি। এছাড়া তার ৬০-৭০ লাখ টাকা তারা নিয়ে গেছে বলেও ভিডিওতে দাবি করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দীর্ঘদিন ধরেই দেশে বেশ আলোচিত। নানা কারণে তুমুল সমালোচিতও তিনি। সবশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে নারী উপস্থাপিকার সাথে বাজে আচরণ করে আবার আলোচনায় আসেন। ওই অনুষ্ঠানে নারী উপস্থাপিকাকে রাজাকারের বাচ্চা বলে সম্বোধন করেন। আবার যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা সংস্কার চায় সেসব শিক্ষার্থীরাও রাজাকারের বাচ্চা বলে মন্তব্য করেন এই সাবেক বিচারপতি।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) অবৈধভাবে পারাপারের সময় সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল আসাদ উন নবি যমুনা নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত এলাকায় রাত ৯টার দিকে এক ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। সে সময়ই টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

প্রথমে শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল। তারপর নতুন-পুরাতন কোম্পানি দেখিয়ে ঋণের পর ঋণ। এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বলা হচ্ছে, ঋণের নামে ব্যাংক লুটের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছিল তারা। নিয়ম-নীতি ভেঙে ছয়টি ব্যাংক থেকে এস আলম সংশ্লিষ্টরা বের করে নিয়েছেন ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এসব অপকর্মে গ্রুপটির সহযাত্রী ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারা।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ৯৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।

এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নন-এসি বাস সার্ভিসের জন্য পরিচিত গ্রুপটি সরকারি জনতা ব্যাংক থেকেও নিয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রণে রাখা ব্যাংকগুলো থেকেও কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ বা বেনামে সরিয়েছে এস আলম।

ব্যাংক থেকে তারা কীভাবে বের করলেন এসব টাকা? বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর পর্ষদে নিজের লোক বসিয়েছেন আগে। পরে তারাই পথ বের করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ডকে দিয়ে ঋণ পাশ করিয়েছে। এগুলো একটাও তো বৈধ না। বোর্ডে যেহেতু সব এস আলমের লোকজন ছিল, সুতরাং ওরা বোর্ড থেকে পাশ করিয়ে বৈধভাবে নিয়ে গেছে। তারা আইনগতভাবে দেখাবে, বৈধভাবে পাশ করিয়েছে। কিন্তু বোর্ডে তো সব ওদেরই লোক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সমস্ত নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজেরাই প্রভাবিত করে ঋণ দিচ্ছে। এইটা করে পুকুর চুরির মতো ব্যবস্থা করেছে।

এস আলম সরাসরি নিজেদের নামে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও নিয়েছে। তাতেও থামেনি, তৈরি করে ছায়া কোম্পানি। আর বেশিরভাগ কর্মকাণ্ডই হয়েছে নিয়ম লঙ্ঘন করে। অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত পাবার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, তারা আসলে যেগুলো করেছেন, এর উদ্দেশ্যটা তো ঠিক না। ওরা যে টাকা বের করে নিছে, সবগুলো এনপিএল, তা ফেরত না আসলে কী হবে? ফান্ড তো ঘুরে আসবে না। মূলধনের ওপর চাপ পড়বে। লাভের ওপর চাপ পড়বে। সমস্ত দিক থেকে চাপের মুখে পড়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত অনিয়ম-লুটপাট কি শুধু এস আলম আর তাদের পুতুল পর্ষদ দিয়েই সম্ভব ছিল? জবাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মোটেই না। জেনে-বুঝেও উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো সহযোগিতা করেছেন সাবেক দুই গভর্নরসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকে লুটপাট হচ্ছে, নিয়ন্ত্রকরা কোথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোথায়, কী করেছে তারা? কেউ তো থামানোর জন্য কিছু করে নাই। তারা কোনো পদক্ষেপ নেই, সহযোগিতা করেছে।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় কারও না কারো তো দেখার কথা ছিল, কেউ যদি বন্ধ করার চেষ্টা করতো, তাহলে তাকে বলা হতো, আপনি চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। সেটা তো করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বরং তাদের সুবিধা দেয়ার জন্য যেভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেভাবে সেভাবে সাকুর্লার দিছে।

সঠিক হিসাব বের হলে এস আলমের নামি-বেনামি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। আর জালিয়াতির পথ এখন বন্ধ করে দেয়ায় সামনে আসবে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।