অপরাধ

রাত পৌনে ৯টার দিকে ডুমুরিয়া থেকে মোটরসাইকেলে খুলনায় আসছিলেন ডুমুরিয়ার শরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম (৪২)। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদা সেতুর কাছে এলে তাঁকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। পিঠের নিচে বাঁ পাশে গুলি লাগলে তিনি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর হেডলাইট না জ্বালিয়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

মেহেদী হাসান নামের প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক এসব তথ্য জানান। ঘটনাস্থলের পাশে ব্র্যাক তেলাপিয়া হ্যাচারিতে তিনি চাকরি করেন। ঘটনার সময় তিনি সেতুর পশ্চিম পাশের দোকান থেকে মালামাল কিনে হেঁটে হ্যাচারিতে ফিরছিলেন। তাঁর ঠিক ২০ থেকে ৩০ গজ পেছনে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

মেহেদী হাসান বলেন, মহাসড়কে প্রায়ই ছোট-বড় যানবাহনের টায়ার ফাটার ঘটনা ঘটে। এ জন্য এমন শব্দ সাধারণ মানুষকে খুব বেশি আকর্ষণ করে না। শনিবার রাতে সেতু পার হয়ে ২০ গজের মতো সামনে যাওয়ার পর বিকট শব্দ শুনতে পান তিনি। ফিরে দেখেন, মোটরসাইকেল থেকে একজন ছিটকে পড়েছেন। এর পরপরই তাঁরই সামনে দিয়ে আরেকটি মোটরসাইকেল খুলনার দিকে চলে যায়। সেই মোটরসাইকেলে দুজন ছিলেন। কিন্তু তাঁদের মোটরসাইকেলের হেডলাইট জ্বলছিল না। তিনি ভেবেছিলেন, দ্রুতগতিতে যাওয়া মোটরসাইকেলটি হয়তো পড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়েছে। এ জন্য দ্রুত ছুটে গিয়ে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন।

ওয়াপদা সেতুর উত্তর পাশে গুটুদিয়া কমলপুর নুরানিয়া হাফিজিয়া আশরাফিয়া কওমি মাদ্রাসা। পশ্চিমে কয়েকটি দোকান। ঘটনার সময় দোকানের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মো. ফারুক গোলদার। শব্দ শুনে তিনিও মনে করেছিলেন, হয়তো কোনো গাড়ির চাকা ফেটে গেছে। পরক্ষণে মোটরসাইকেল পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান। দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দেখেন, একজন পড়ে আছেন। কিছুটা দূরে পড়ে আছে মোটরসাইকেলটিও।

এবার পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের রূপগঞ্জের আনন্দ হাউজিংয়ে থাকা প্রায় ২৪ কাঠার ডুপ্লেক্স বাড়িটি দখলে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। 
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হাইকোর্টের আদেশে শনিবার দুপুরে বাড়িটি জব্দ করে জেলা প্রশাসন। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম, দুদকের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিমন সরকার প্রমুখ। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম বলেন, বেনজীর আহমেদের মেয়ের নামের সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ করার আদেশ দেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে সম্পত্তিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। 

দুদকের আঞ্চলিক পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী বলেন, বাড়িটি অত্যাধুনিক তালাবদ্ধ থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে ভেতরে প্রবেশ করা যায়নি। তবে একটি কমিটি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোরশেদ আলমের হেফাজতে আগামী ৩ দিনের জন্য রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এর ভেতরে থাকা মালামালসহ সবকিছু জব্দ তালিকা করব। 

তিনি আরও জানান, দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১২ জুন আদালত তৃতীয় দফায় বেনজীরের আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করা হয়। সে তালিকায় এ বাংলোটিও রয়েছে। 

জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশের নানাস্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দক্ষিণবাগ চোরাবো মোড়ের ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন বেনজীর। আনন্দ হাউজিং নামীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের গড়া আবাসন কোম্পানিতে ২৪ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। যেখানে সাধারণের প্রবেশ রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বেনজীর এ বাড়িতে যেদিন এবং যতক্ষণ অবস্থান করতেন বন্ধ রাখা হতো এখানকার রাস্তা। পুলিশ পাহারায় এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হতো সেখানে। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে বেনজীরের লাল রঙের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িটি অবস্থিত। এটি দেখলে নজর কাড়বে সবারই। তবে ভেতরে প্রবেশ করে দেখার সুযোগ মেলেনি কারও।  

স্থানীয় সূত্র জানায়, আট বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন বেনজীর। পরে ২০১৯ সালের দিকে এই আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। তবে তার এই বাড়ি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা গল্প, রহস্য। 

অভিযোগ রয়েছে, বেনজীরের অবৈধ সম্পদের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এই বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ ভেতরে থাকা মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সময়ই পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির বহর নিয়ে বাড়িতে আসতেন বেনজীর। পুলিশের নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে তখন বাড়ির পাশের সড়ক দিয়ে লোকজনের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হতো। বেনজীরের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আসতেন চেনা-অচেনা সংগীতশিল্পী ও নাটক-সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। তখন বাড়িতে গানের আসর বসত। গানের উচ্চ শব্দে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটত স্থানীয়দের, তবুও ভয়ে কখনো কেউ মুখ খুলতেন না। 

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার তিন আসামি দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তারা হলেন, ঝিনাইদাহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, শিমুল ভূইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ ও তানভীর ভূইঁয়া।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাবুবুর রহমানের আদালতে উল্লেখিত আসামিদের জবানবন্দি প্রত্যাহারের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত করা হয় আসামিদের। তাদের পক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীসহ আরও অনেক আইনজীবী শুনানি করেন। পরে আদালত আবেদনগুলো নথিভুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আসামিরা রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ বলে চিকিৎসার আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী কারাকর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন।

আসামিদের পক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

মঙ্গলবার এমনটা জানিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের একটি অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চিন্তার একটি বিষয়। কেননা সে স্বাধীনতার স্বপক্ষে গড়ে ওঠা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তৈরি সংগঠনের একটি শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের যে অভিযোগ, সেটি প্রশাসন দেখেছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলায় এ বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ছাত্রত্বও পর্যালোচনা করা হবে। যেটুকু আমি জানতে পেরেছি, সে এখন প্রফেশনাল প্রোগ্রামে ভর্তি রয়েছে, রেগুলার শিক্ষার্থী নয়। তবে এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজের সঙ্গে সম্পর্কিত। সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে এমন একটি অভিযোগ খুবই মারাত্মক।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম আরও বলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগটি তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও একটি কমিটি হবে। কমিটিতে শিক্ষকরা থাকবেন। তবে এটি জাতীয় কনসার্ন। যেহেতু ২০১৬-১৭ সালের মেডিকেল কলেজের প্রশ্নফাঁস ছিল, তখনও আমরা বেশ কয়েকটা ঘটনা দেখেছি। সেহেতু আমি মনে করি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে, তারাও দেখবে। আর ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যারা আছেন, তাদেরও বিষয়টি দেখা উচিত বলে মনে করি।

তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ একটি গুরুতর বিষয়। আমরা যদি কারও বিরুদ্ধে এমন সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। 

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেছেন, যে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান। অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র বিরোধী, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও আদর্শ বিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলে অবশ্যই সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

নরসিংদীর রায়পুরার উপজেলা চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন।

রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এই আবেদন করেন। আদালত আগামী ২৮ জুলাই এই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম। 

এদিকে গত সোমবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল আদালত মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তাদের ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ইফাতের কথিত বাবা জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের সদস্য মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চারবার অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবারই অনুসন্ধান পর্যায় থেকে শেষ হয়েছে কার্যক্রম। এক ধরনের অলিখিত ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হয়েছে মতিউরকে। মতিউরের বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

ছাগলকাণ্ডের পর মতিউরের নামে-বেনামে শতশত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য সামনে এসেছে। এছাড়া মতিউরের সন্তানদের বিলাসবহুল গাড়িও, পাখি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এবার পঞ্চম বারের মতো তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলো।

রাজধানীতে ছিনতাই রোধে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ছিনতাইবিরোধী টাস্কফোর্স। এর অংশ হিসাবে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের নাম, মোবাইল নম্বর এবং ছবি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাদের নজরদারির আওতায় আনার। কারণ, চাকরিচ্যুত কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে ছিনতাই হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, পুলিশের সব টহল গাড়িতে লাগানো হবে ট্র্যাকার। এর মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে গাড়ি। এছাড়া ছিনতাইয়ের হটস্পটগুলোতে ছদ্মবেশে বসে থেকে হাতেনাতে ছিনতাইকারীদের ধরার কৌশল নেওয়া হয়েছে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা সবসময়ই ছিল। গত বছরের মে থেকে তারা হয়ে উঠে বেপরোয়া। তাদের হাতে প্রাণহানি ঘটে সাধারণ মানুষের। এমনকি পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাননি ছিনতাইকারীদের কবল থেকে। ওই বছরের ১ জুলাই ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান নিহত হন। এরপর ওই মাসেই শুরু হয় পুলিশের বিশেষ অভিযান। ১৫ দিনে ডিএমপির ৫০ থানায় বিশেষ অভিযানে ৮ শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়। তাদের অনেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার নেমে পড়ে ছিনতাইয়ে। এমন বাস্তবতায় গত বছরের ৯ অক্টোবর ছিনতাইবিরোধী টাস্কফোর্স গঠন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। গ্রেফতার করা হয় অনেক ছিনতাইকারীকে। এর পরও বন্ধ হয়নি তাদের তৎপরতা।

ডিএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, টাস্কফোর্স গঠনের আগের পাঁচ মাসে ডিএমপিতে ছিনতাইয়ের মামলা হয় ৯২টি। আর টাস্কফোর্স গঠনের পর গত আট মাসে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ১৮৭টি।

ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমরা রাজধানীতে ছিনতাইয়ের হটস্পট চিহ্নিত করেছি। সে অনুযায়ী অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানীর ব্যাংকপাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ড, স্টপেজ, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, লেক, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, গার্ডেন, উদ্যান, পার্ক, বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর, গুলিস্তান, সদরঘাট, বেড়িবাঁধ, ৩০০ ফুট, দিয়াবাড়ী, ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসসহ বিভিন্ন স্পট থেকে গত কয়েক দিনে বেশকিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছি। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের রাস্তা কভার করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারিতে আনা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাইভেটকারে বসে ছিনতাইকারীরা ওঁৎ পেতে থাকছে। তাই ওইসব গাড়ির বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আগে গ্রেফতার করা ছিনতাইকারীদের বসবাসের স্থান চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। থানার রাত্রীকালীন সব পেট্রল গাড়ির মুভমেন্ট নিশ্চিত করা হয়েছে।

ডিএমপির অপরাধ বিভাগের একজন উপকমিশনার জানান, ছিনতাই প্রতিরোধে থানায় থানায় পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। চৌকশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মোটারসাইকেল টহল মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর যেসব জায়গায় আলোর স্পল্পতা রয়েছে সেসব জায়গায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা, মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতারে থানা পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বিভিন্ন পাইকারি আড়তের সভাপতি সাধারণ সম্পদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি ও সন্দেহভাজনদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেসব প্রাইভেটকার, সিএনজি ও মাইক্রোবাসে ছিনতাই হয় সেসব যানবাহনের মালিকানা যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম আপডেটের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা নিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফুট ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা অযাচিত ব্যক্তিদের তল্লাশির পাশাপাশি সব ধরনের ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করা হবে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের আটক করা হবে। নজরদারিতে রাখা হবে জামিনপ্রাপ্ত ছিনতাইকারীদের।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খ. মহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর ছিনতাই রোধে আমরা সবসময়ই তৎপর থাকি। তার পরও ছিনতাইকারীরা অপতৎপরতা চালায়। তাদের অপতৎপরতা বন্ধের জন্যই আমরা ছিনতাইবিরোধী টাস্কফোর্স গঠন করেছি। টাস্কফোর্স গঠনের পর ছিনতাই ছিনতাইকারীদের তৎপরতা অনেকাংশে কমে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, বড় কোনো উৎসবকে ঘিরে ছিনতাইকারীরা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। টাস্কফোর্সের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে গত দুটি ঈদে খুব একটা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।

ডিএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ডিএমপিতে বর্তমান কমিশনার যোগদানের পর প্রথম ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘ঢাকা শহরকে ছিনতাইমুক্ত করা আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়টি মাথায় রেখে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তিনি বলেন, গত বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে ঢাকায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রামপুরায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রযোজনা সহকারী রাকিবুল হাসানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আদনান সাঈদ এবং ফার্মগেটে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান খুন। এসব ঘটনার পর পুলিশ বিশেষ অভিযান চালায়। এর পরও প্রতিনিয়ত পথচারীদের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছিল ছিনতাইকারী চক্র। মাঝেমধ্যে প্রাণও যাচ্ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ছিনতাইবিরোধী টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ইতোমধ্যেই নগরবাসী এই টাস্কফোর্সের সুফল পেতে শুরু করেছে।

ছাগলকাণ্ডের ১৪ দিন পর বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে জনসম্মুখে আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। জানা গেছে, বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দুটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন। তবে সভাকক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেননি। সভা শেষে কালো রংয়ের পাজেরো জিপে তিনি উপজেলা থেকে বেরিয়ে যান। তখন সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িতে ওঠার সময় দাম্ভিকতার সুরে লাকী বলেন, ‘পাছে লোকে কত কিছুই বলে। তাতে আমার কিছু আসবে যাবে না।’

এসব বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লায়লা কানিজ লাকীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

উপজেলা পরিষদের দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তার দম্ভোক্তি ছিল-‘ঢাকার ও নরসিংদীর জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকদের কিনেই উপজেলা পরিষদে এসেছি। তারা আর কিছু করতে পারবে না। সব থেমে যাবে।’

লাকীও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাকী বর্তমানে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। 

স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত রাজাকার আব্দুল কাদিরের নাতনি এই লাকী। তিনি এখন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। রাজাকার ও বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়ে কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন তা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা রয়েছে। 

মেয়ে ইপ্সিতার মতো মা লায়লা কানিজ লাকীরও অঢেল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আয়কর নথিতে তার মাত্র ১২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য আছে। বিপরীতে তিনি ২ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন। তাকে পাজেরো, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জরোভার মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা গেলেও আয়কর নথিতে তার নামে কোনো গাড়ির তথ্য নেই। তবে গাড়ির বিপরীতে মাত্র পৌনে তিন লাখ টাকার সম্পদ মূল্য দেখিয়েছেন তিনি। 

নরসিংদীর গ্রামে বিশাল প্রাসাদোপম বাড়ি আছে লায়লা কানিজের। ট্রিপ্লেক্স বাড়িটিতে একাধিক বিশালাকৃত্রির ড্রইংরুম ও ডজনখানেকের বেশি অভিজাত শয়নকক্ষ রয়েছে। অথচ এই বাড়ির কোনো তথ্য তার আয়কর ফাইলে নেই। তবে বাড়ির ফার্নিচার ক্রয় বাবদ মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। নরসিংদীতে দেড় একর জমি তিনি হেবামূলে পেয়েছেন। এ কারণে এই জমির কোনো দাম উল্লেখ নেই। মিরপুর এলাকার একটি অত্যাধুনিক ভবনে চারটি ফ্ল্যাটের মালিক লাকী। 

এগুলোও তিনি হেবাসূত্রে পেয়েছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। ফলে এগুলোর কোনো দাম লেখা নেই। এছাড়াও ৩২ বছর বয়সের মেকআপ আর্টিস্ট মেয়ের কাছ থেকে তিনি কোটি টাকার উপহার পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, সহজে যাতে তার সম্পদের খোঁজ পাওয়া না যায় তার কৌশল হিসাবে আয়কর নম্বর (টিআইএন) নিতেও চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। টিন ফাইলে দিয়েছেন ভুয়া ঠিকানা। 

জানা গেছে, তিতুমীর কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষক থেকে রাতারাতি রাজনীতির মাঠে নেমে সাড়া ফেলে দেন লাকী। স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার (সাবেক মন্ত্রী) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। নেতার সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি স্বামী মতিউরের অবৈধ টাকার জোরেই রাজনীতির ময়দানে তিনি জায়গা করে নেন।

আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে এবার চাকরি হারাচ্ছেন সাবেক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনারের (এডিসি) দায়িত্বে থাকা গোলাম সাকলায়েন।

পরীকাণ্ডে আলোচনা শুরুর পর প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়।

গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপসচিব পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত এক স্মারকে তাকে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ করার বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার শৃঙ্খলা-২ শাখার স্মারকটি গণমাধ্যমের কাছে আসে।

এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন সাকলায়েনের বিষয়ে কথা বলেছেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যেকোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, অভিযোগটি প্রমাণিত হওয়ায় সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রায় ১০০ বছরের ওপরে দায়িত্ব পালন করে আসছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে আসছি। এক সময় খুলনা অঞ্চল সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সেই নীতির আলোকে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে ভিন্নমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। পুলিশের ইউনিট প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিটিয়ে থাকে। পুলিশের থানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো তালা লাগানো থাকে না। সব সময় থানার দরজা খোলা থাকে, মানুষ সেখানে আসে। মানুষের সমস্যা শোনার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি। সব ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা প্রস্তুত আছি। বিল্ডিং এবং জনবল বাড়বে এটা আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়, জনসেবার মধ্য দিয়েই ঋণ পরিশোধ করতে চাই।

ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসার পর থেকেই ব্যাপক অর্থ-সম্পদ ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্যসাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি তার। এমনকি ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও আর অফিসে আসেননি। যাচ্ছেন না নতুন অফিসেও।

প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ‘ম্যানেজ করে’ তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। সম্প্রতি আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তার দেশ ছাড়ার খবর সূত্রের বরাতে জানিয়েছে একটি জাতীয় গণমাধ্যম।

দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চমবারের মতো মতিউরের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে চারবার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পায় সংস্থাটি। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে নানা প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ক্লিন চিট পেয়েছিলেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর।

২০০৪ সালে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের।

হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়র মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়ে দিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।

২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন চিট পান মতিউর।

এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরও দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারও ক্লিন চিট।

অপরাধী অপরাধ আড়াল করতে নানা পন্থার আশ্রয় নেবে। প্রশ্ন ওঠে: দুদক কেন খতিয়ে দেখেনি বিষয়গুলো?

তাই পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনা করার আশ্বাস দিয়েছে। একইসঙ্গে আশ্বাস দিয়েছে, যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের।

মতিউরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজারও। তার ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার বিও অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিও হিসাব জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে শেয়ারবাজারে জড়িত ছিলেন মতিউর রহমান। দুভাবে তিনি বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এগুলো হলো-প্লেসমেন্ট বাণিজ্য এবং কারসাজির আগাম তথ্য জেনে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুসারে এ ধরনের কাজ বেআইনি এবং অনৈতিক। বিশ্লেষকদের মতে, একই সঙ্গে তিনি কয়েকটি অপরাধ করেছেন। প্রথমত, তিনি সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন। দ্বিতীয়ত, বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন। তৃতীয়ত, তিনি সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন করেছেন। চতুর্থত, তিনি শেয়ার লেনদেন করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এনবিআর। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিচতলা ও দোতলায় লাশ পাওয়া গেলেও চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা গেছে।

পরিবারের অভিযোগ, ফেনীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ জানায়, আজ সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। তারা বাসার নিচতলার পার্কিংয়ে শফিকুরের (৬২) লাশ দেখতে পায়। তাঁর গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা দোতলায় গিয়ে শোবার ঘরে মশারির ভেতর ফরিদার (৫৫) লাশ পান। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, শফিকুর রহমান জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক। শফিকুর-ফরিদা দম্পতি যাত্রাবাড়ী থানার কোনাপাড়া এলাকার পশ্চিম মোমেনবাগের আড়া বাড়ি বটতলায় নতুন একটি চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন। তাঁরা দোতলায় থাকতেন। বাড়ির নিচতলার এক পাশ এবং তিন ও চারতলা ভাড়া দেওয়া। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে পুলিশের বিশেষ শাখার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন ওরফে ইমন ও তাঁর স্ত্রী একই বাসায় মা-বাবার সঙ্গে থাকেন। গতকাল বুধবার আল আমিন তাঁর দাদাবাড়ি ফেনী এবং তাঁর স্ত্রী নিজের বাবার বাড়িতে চলে যান। আর শফিকুরের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিনি ও তার স্বামী মোমেনবাগের কাছেই থাকেন।

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় ফেরেন শফিকুরের ছেলে আল আমিন। শফিকুরের জামাতা আরিফুর রহমান ওরফে বাপ্পী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞার রামচন্দ্রপুরে জমিজমা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটনো হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ঘরের আলমারির মালামাল এলোমেলো করা হলেও কিছু খোয়া যায়নি।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে। শফিকুর পানির মোটর ছাড়তে নামার পর পরিচিত খুনিরা গেট খুলিয়ে ভেতরে ঢুকে তাঁকে প্রথমে হত্যা করেছে। পরে তারা দোতলায় উঠে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে। বাড়ির ভাড়াটেরা দাবি করেছেন, তাঁরা কেউ বিষয়টি টের পাননি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ি ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কলাপসিবল গেট লাগিয়ে আলামত সংগ্রহ করছে এবং বাড়ির ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলছে। পুলিশ এ সময় কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। প্রতিবেশীরা বলেন, তাঁদের জানামতে শফিকুরের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না।  

প্রতিবেশী মো. পারভেজ বলেন, শফিকুর রহমান প্রতিদিন ভোরে নামাজ পড়তে যান। এর আগে তিনি পানির মোটর চালু করেন। আজ সকালে শফিকুরের বাড়ির ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংক উপচে বাইরে পানি গড়াতে থাকলে বাইরের লোকজন চিৎকার করে তা বলতে থাকেন। শফিকুরের বাসার চতুর্থ তলার ভাড়াটে এক নারী নিচতলায় নেমে পানির মোটরের সুইচ বন্ধ করেন। এ সময় তিনি গাড়ি রাখার পার্কিংয়ের এক পাশে শফিকুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনেন। এরপর ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তা জানানো হয়।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনিরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে শফিকুরের গলায় অনেকগুলো কোপ দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক শত্রুতাও থাকতে পারে। ওই বাড়ি থেকে কিছু খোয়া যায়নি। খুনিরা ঘটনাটি ডাকাতি বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, চারতলা পর্যন্ত পায়ের রক্তাক্ত ছাপ দেখা যায়। এমনও হতে পারে, খুনিরা হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ির ছাদ দিয়ে পেছনের দিক থেকে নেমে যেতে পারে।

পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন আরও বলেন, ঘটনা তদন্তে যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। শফিকুরের বাড়িতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) নেই। তবে আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।