অপরাধ

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর সীমান্ত পথে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী। পরে তাকে জুলাই-আগস্টের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে, গত ৮ আগস্ট অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কে কেমন ভূমিকা রেখেছে, সেটি ধরে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি, যেসব গণমাধ্যম আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ফ্যাসিবাদী বয়ান তৈরি করেছে তাও চিহ্নিত করা হবে। বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: জবাবদিহিতা ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, সেই সংবাদ সম্মেলনগুলো থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে প্রথম নেতিবাচক মন্তব্য উপস্থাপিত হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার কথা জানান প্রেস সচিব।

এছাড়া শেখ হাসিনার সময়ে সম্পাদকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হলেও সম্পাদক পরিষদ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।গণমাধ্যমে গত ১৬ বছর কার কী ভূমিকা ছিল তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিকদের অভিন্ন ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন, বেতন-সুরক্ষা বাস্তবায়ন, স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠনসহ ৮টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিদেশ সফর শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা ছিলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিয়মিত ঘটনা। এর উদ্দেশ্য সফরের গুরুত্ব জাতির সামনে তুলে ধরা হলেও বেশিরভাগ সময়েই সেখানে তৈরি হতো বিব্রতকর পরিবেশ।

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে কেন গ্রেফতার করা গেলো না, তা নিয়ে প্রসিকিউশনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর এই নির্দেশ দেন।

আদালতে প্রাথমিক তদন্তে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে বলে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর।

এদিকে, ৫ আসামির পক্ষে লড়তে আসা আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে রাষ্ট্রীয় পদ দেয়া হচ্ছে- তাই আসামিপক্ষের ওকালাতনামা প্রত্যাহার করেছেন তিনি।

এর আগে, সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয় ১২ আসামিকে। আর নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে আনা হয় গোলাম দস্তগীর গাজীকে। এরপর জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকসহ ১৩ আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে অবৈধ চক্রের দৌরাত্ম্য। এ কাজে, ডিএনসিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি জড়িত। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, যেখানেই আপনার বাড়ি হোক- যে কোনো একটি এলাকার নাম দিয়েই মহাখালীর গলি থেকেই বানিয়ে দেবে জন্ম সনদ। ঢাকা উত্তর সিটিতে এর নিয়ন্ত্রণ ডিএনসিসি’র এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা’সহ আরও কয়েকজনের। প্রতি সনদের জন্য তারা নেয় তিন থেকে ৫ হাজার টাকা। যেখানে, সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১০০ টাকা।

উত্তর সিটি এলাকায় এ চক্রটির আদ্যোপান্ত বের করার জন্য একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে চাই আমরা। সন্ধান পাওয়া যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারীর। যার কাছে গেলে, সহজেই মিলবে বার্থ সার্টিফিকেট।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অফিসের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মাসুদুর রহমান, যিনি নমুনা সংগ্রহের কর্মচারী। মোবাইলে ফোনে তিনি তার অফিসে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে ফোন দেয়ার পর, তিনি তার কার্যালয়ে না নিয়ে ডেকে পাঠালেন পাশের গলিতে। একটি জন্ম সনদের জন্য, পরিচয় গোপন করে সে গলিতে যাই।

গোপনে নেয়া ভিডিও কথোপকথনে ডিএনসিসি নমুনা সংগ্রহের কর্মচারী মাসুদ কাজীকে বলতে শুনা যায়, জন্মনিবন্ধন সনদ করে দেয়া যাবে, তবে এড্রেস দিতে হবে সাতারকুল এলাকার।

যে কারও কিংবা যে জেলারই হোক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলেও জন্ম নিবন্ধন করা যাবে এখান থেকেই। প্রতি সনদের জন্য গুণতে হবে তিন হাজার টাকা।

একটি চক্র মিলে কাজটি করে, মহাখালীর ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৩ এর অফিসের পেছনের এই গলিতে। আবেদন থেকে সনদপ্রাপ্তি পর্যন্ত সব কাজ হয় এই কম্পিউটারের দোকানগুলোতে। আদতে, যা হওয়ার কথা অনলাইনে বা কার্যালয়ের ভেতরে।

চক্রটির কাজ শুরু হয় এই ডিএনসিসি’র কর্মচারী মাসুদ কাজীকে দিয়ে। মাসুদ প্রথমত কাজটিতে যুক্ত করেন তার ভাগ্নেকে। তিনি নিয়ে যান কম্পিউটার দোকানে। সেখান থেকে আবেদনের প্রক্রিয়া হয়ে গেলে, সিটি কর্পোরেশন অংশের বাকি কাজ করেন চক্রের অন্যতম সদস্য মাসুদ কাজী।

এরপর একটি দোকান থেকে একটি মাত্র আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েই হচ্ছে একের পর এক জন্ম নিবন্ধনের সনদ তৈরির প্রক্রিয়া। এ কী করে সম্ভব? এবার যমুনা টিভির পরিচয় প্রকাশ করে সেই গলিতে গেলে, উপস্থিতি টের পেয়ে লাপাত্তা মাসুদ।

ততক্ষণে বেরিয়ে আসে মাসুদের আরও কিছু তথ্য। কর্মচারী হয়েও রাজনৈতিক পরিচয়ই তার শক্তি। মাস খানেক আগে মাসুদকে বদলি করা হয় উত্তরা জোনে। সেখানে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করছেন এ চক্র।

এ চক্রের ফাইলগুলোর চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তা ও জন্ম নিবন্ধক ডা. ফিরোজ আলম। তার হাতেই থাকে জন্ম নিবন্ধনের রেফারেন্স কপিগুলো সত্যায়িত করার এখতিয়ার। ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন দেয়ার দায়ে ইতোমধ্যে দুইবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল এই ডাক্তার ফিরোজের বিরুদ্ধে। সেই নথিও আসে হাতে।

গোপনে নেয়া ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ডিএনসিসি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, আমরা আসমান থেকে নাজিল হওয়া কোন প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিনিয়ত আমরা ঘষা–মাজার কাজ করছি।

ডাক্তার ফিরোজের বক্তব্য জানতে চাইলেও নাগাল পাওয়া যায়নি তার। নাকের ডগায় এমন ঘটনা নতুন কিছু নয় সিটি করপোরেশনের জন্য। জানা থাকলেও ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই বলে এড়িয়ে যান ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। দায় ঠেলে দেন আঞ্চলিক কর্মকর্তার কাছে।

ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি: জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ফোনে বলেন, এখানে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারাই সবকিছু দেখেন। কিছুই বলতে পারবো না, আমার কোন অথরিটিই নাই।

অভিযোগ খতিয়ে দেখার সেই গতানুগতিক আশ্বাস রেজিস্ট্রার জেনারেলের। তবে, রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসাইনকে প্রশ্ন করা হয়, একটি দোকান থেকে ১টি মাত্র আইডি দিয়ে ১০০টি নিবন্ধন কীভাবে করা যাচ্ছে?

উত্তরে তিনি বলেছেন, এই প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারবেন না। ১টি আইডি দিয়ে ১০০টি নিবন্ধন করা কীভাবে সম্ভব! ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অনেকে সাস্পেনশনে-ও আছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক আব্দুর রশিদকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহীর ইনাম ফিড মিলের মালিক আতিকুর রহমানের দায়ের করা এক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। রশিদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৭ টাকার একটি আর্থিক প্রতারণার মামলা করেছিলেন আতিকুর রহমান। মামলাটির নং : ৬৪৩সি / ২০২৩।

মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, মৎস্য খাদ্যের কাঁচামাল ডি ওয়েল রাইস ব্রান (ডিওআরপি) কেনার জন্য রসিদ অটোমেটিক রাইস মিল লি. এর বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে অগ্রিম ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৬৮ প্রদান করলেও মৎস্যখাদ্যের কাঁচামাল পাননি তিনি। অপরদিকে সেই অর্থও ফেরত না পাওয়ায় চলতি বছরের ২৫শে মার্চ মামলা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ওয়ারেন্ট জারি হলে বিবাদী আব্দুর রশিদ আদালতে হাজির না হওয়া এবং জামিন না নেয়ায় তাকে গ্রেফতার পুলিশ। গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।

শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। গণমাধ্যমের একটি অংশও একই ভূমিকা রেখেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে ঢাকার মাইডাস সেন্টারে আইন বিষয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। টিআইবি ও সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্টাস ফোরাম এ কর্মশালা আয়োজন করে।

টিআইবির এ পরিচালক জানান, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিচার বিভাগের সুফল পেতে হলে রাজনৈতিক সংস্কার আসতে হবে।

এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় আইনি লড়াইয়ে পাশে থাকার ঘোষণা দেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।

অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৮ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। গতকাল বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার খড়দহ ও টিটাগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে আট বাংলাদেশিকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিতে ব্যারাকপুর আদালতে আবেদন করে খড়দহ থানার পুলিশ।

জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাবলু শেখ, ফারুক শেখ ও আলি শেখ বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করছিলেন। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তাদের কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা পাওয়া যায়নি।

দেশটির পুলিশ জানায়, প্রত্যেকেই দালালের মাধ্যমে নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক পালা বদলের পর গোপনে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন তারা। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানায় পুলিশ।

গেল দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য হয়ে উঠে টেলিকম খাত। সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেটের প্রভাব-বলয়ে বন্দি হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা। বেসুমার অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে লুটে নেয়া হয় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সুবিধা।

ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রকৃত দরের চেয়ে কম ঘোষণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয় এসব অর্থ।

প্রাথমিক তদন্তে আইন বহির্ভূতভাবে আইওএফ গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব ভাগাভাগিতে অনিয়ম পেয়েছে বিটিআরসি। আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজিসহ বিভিন্ন খাতের লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম এবং রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, লভ্যাংশ শেয়ার করা হয় লটারিতে, এখানে যে একটি গ্যাপ, এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এটি সিরিয়াসলি দেখার আছে।

২০১৫ সালে আইওএফ সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা দখলে নেয় সালমান এফ রহমানের সিন্ডিকেট। অভিযোগ আছে, ভয়েস কলে নামমাত্র ট্যারিফ নির্ধারণ করার জন্য বিটিআরসিকে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। বিষয়টি আমলে নিয়ে ট্যারিফ কাঠামো পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাজ শুরু করেছে বিটিআরসি।

মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, কল টার্মিনেশন রেট বিশ্বে যেসব দেশে কম, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। তাতে লাভ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারের, আর ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। লাভ পাচ্ছে না সরকার। এই ট্যারিফটা কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে, কিংবা আদৌ করা যাবে কি না তা যাছাই করা দরকার। যা আমরা শুরু করেছি।

রাজস্ব ফাঁফি দেয়ার পাশাপাশি আইওএফ সিন্ডিকেট মোবাইল অপারেটরদেরও টাকা ফাঁকি দিয়েছে। বিটিআরসির কাছে এমন অভিযোগ জানিয়েছে জানিয়েছে অপারেটরা।

রবির করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের চিফ সাহেদুল আলম বলেন, আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরাম ইকো সিস্টেমে যে স্টেপটা করা হয়েছিল, সেটি কিন্তু বিটিআরসির আইএলডিটিএস পলিসি ছিল সেটিরই একটি ব্যত্যয় ছিল। সেক্ষেত্রে আমাদেরও একটি বড় ধরনের লোকসান হয়েছে প্রতি মাসে। আমরা সব অপারেটররা যদি বলি, সরকার প্রথম দিকে যদি ১শ’ থেকে দেড়শ কোটি টাকা লোকসান করে, তাহলে আমরাও ৭০-৮০ কোটি টাকা লোকসান করেছি প্রতি মাসে।

আইওএফসহ টেলিকম খাতের সিন্ডকেটের দৌরাত্ম বন্ধ করতে আইএলডিটিএস পলিসি পর্যালোচনার পরামর্শ প্রযুক্তিবিদদের।

প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে যে ঘটনা ঘটেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হয়, এখন একটা সময় এসেছে, আমাদের এই পলিসিগুলো.. আইএলডিটিএস পলিসি অনেক পুরনো, ২০০৮ সালের পলিসি আজকের বাস্তবতায় পুনর্বিবেচনা করার দাবি রাখে।

আইন করে কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ে দায়মুক্তি দেয়া অবৈধ ছিলো বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

হাইকোর্ট বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধিতে বিশেষ আইন ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি দেয়া হয়। এছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত ৬ ধারা অনুযায়ী মন্ত্রীকে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৯ ধারায় দায়মুক্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলের শুনানি শেষে গত ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সিনথিয়া ফরিদ।

গত ২ সেপ্টেম্বর কুইক রেন্টাল সংক্রান্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধিতে করা বিশেষ বিধান কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর আগে, কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি এবং ক্রয় সংক্রান্ত ৬ (২) ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।