বাংলাদেশ

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদের বিপরীতে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে, ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে ৩০ বছরের কম বয়সী প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। তাই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হেসেন।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী এ কথা বলেন। 
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট নেই উল্লেখ করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী আরও বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কোনো সেশনজট নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা ১৬ বছরে এসএসসিসহ ২৩-২৪ বছরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে থাকে। 

তিনি বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর হওয়ার ফলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা চাকরিতে আবেদনের জন্য কমপক্ষে ৬-৭ বছর সময় পেয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০ বছর বয়সসীমার মধ্যে একজন প্রার্থী আবেদন করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ২-১ বছর লেগে যায়। ফলে চাকরিতে যোগদানের জন্য ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করার যে দাবি করা হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে তার কাছাকাছি পর্যায়ে উপনীত হয়।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় বিভিন্ন স্তরে উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের বয়স ও জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী কম বয়সী (২৩-২৫) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি (৩৭.৬৮%) এবং বেশি বয়সী (২৯–এর ঊর্ধ্বে) সুপারিশকৃত প্রার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে কম ১.৭১%)।

কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ নিয়ে মন্ত্রী জানান, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত হওয়ায় বর্তমানে শূন্যপদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হলে বিভিন্ন পদে বিপরীতে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। 

তিনি বলেন, এতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে যাদের বয়স বর্তমানে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে তারা চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পেলেও অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের প্রার্থীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।

এসব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে মন্ত্রী জানান।

দেশের ৫ বিভাগ এখন সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আট লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৩৯ হাজারেরও বেশি। এ পর্যন্ত ৫৮টি জেলা এবং ৪৬৪টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী এ ৫টি বিভাগ এখন সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত। অর্থাৎ এসব জেলা, উপজেলা ও বিভাগে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ নেই।

তিনি বলেন, ব্যারাক হাউজের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছি। ব্যারাক হাউজ ছাড়াও আমরা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩টি পরিবারকে নিজ জমিতে বিনামূল্যে গৃহনির্মাণ করে দিই। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫টি পরিবারের কাছে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর হস্তান্তর করেছি। 

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, মুজিববর্ষে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে জমির মালিকানাসহ ঘর করে দেওয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ৬ হাজার ৯৪৫ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা।

সাতক্ষীরা-৪ আসনের এসএম আতাউল হকের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা থেকে ৯.১২ গুণ বাড়িয়ে সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ১১৯টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে অধস্তন আদালতে এক হাজার ৪২৯ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংসদ নেতা।

বাপেক্সে মেধাবী প্রার্থীদের বাদ দিয়ে কৌশলে শীর্ষ কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাসনদ ছাড়াই অনেক ব্যক্তি নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হয়েছেন। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সাতজন ভুক্তভোগী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার ফল ২ মে প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, যাদের নাম তালিকায় উঠেছে, তাদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকজন। তাদের মধ্যে অনেকেই মোটা অঙ্কের ঘুস বা উৎকোচ দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন। আর যারা সত্যিকারের অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করেছেন, তাদের নানা অজুহাতে বাদ দেওয়া হয়েছে।

রিটে জ্বালানি বিভাগের সচিব, পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন), ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন), জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) ও সালদা রিভার গ্যাস ফিল্ডের প্রকল্প পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব বলেন, তার আমলে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নিয়োগ হয়নি। আগের কয়েকটি নিয়োগের বিষয়ে হাইকোর্টের কিছু নির্দেশনা ছিল, সেগুলোরও বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হয়ে যাবে। নানা কারণে কিছু বাদ পড়েছেন, তারা আদালতে গেছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টে যে রিট হয়েছে, সেটি তিনি এখনো দেখেননি। তিনি বলেন, বর্তমানে যে নীতিমালা করা হয়েছে, তাতে কোনো অনভিজ্ঞ কর্মী বা কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ঢুকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া এসব নিয়োগে একটি শক্তিশালী নিয়োগ কমিটি আছে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে ২/৩ জন বাদে বাকি সবাই মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলাসহ বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। কাজেই ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন বা অদক্ষ, অনভিজ্ঞ কেউ ঢুকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

রিট মামলার কাগজপত্র (এনেক্সর-জে)-এর সঙ্গে দেওয়া একাধিক অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে একজনের অভিজ্ঞতার সনদ ভুয়া। তিনি বাপেক্সের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং নিয়োগ কমিটির এক সদস্যের আত্মীয়। আলী নামের একজন প্রার্থী যিনি বাপেক্সের অনুমোদিত কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না। রিগম্যানের ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে গ্যাস ড্রিলিং রিগের কোনো ইনস্টিটিউট না থাকায় তার কোনো অভিজ্ঞতার সনদ থাকার কথা নয়। ওই প্রার্থীর বাবা বাপেক্সের এমপ্লোয়েজ ইউনিয়নের একজন শীর্ষ নেতা। তার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য এবং প্রশাসন বিভাগের একজন মহাব্যবস্থাপক। আরেক প্রার্থী আছেন, যিনিও বাপেক্সের অনুমোদিত কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না। তিনিও রিগম্যানের যে অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়েছেন, তা ভুয়া। তার জন্য সুপারিশকৃত কর্মকর্তা হলেন বাপেক্সের একজন ড্রিলিং ইনচার্জ। রিগম্যানের ভুয়া সনদ জমা দিয়ে আরেকজন প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে, যার জন্য সুপারিশ করেছেন নিয়োগ কমিটির সদস্য ও একজন প্রকল্প পরিচালক ও ডিলিং সুপারিনটেনডেন্ট। ওই প্রার্থী সুপারিশকৃত এই কর্মকর্তার আত্মীয়।

একই অভিযোগ তোফাজ্জল হোসেন নামে অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তিনি একজন উপ-মহাব্যবস্থাপকের আত্মীয়। নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া বাপেক্সের একজন অফিস সহকারীও রয়েছেন। তার অভিজ্ঞতার সনদটিও ভুয়া। এই অফিস সহকারীর জন্য সুপারিশ করেছেন একজন টুলপুশার কর্মকর্তা। বাপেক্সে কোনোদিন কাজ না করলেও এই অফিসে কাজ করার অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়েছেন একজন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন একজন ডিলিং ইনচার্জ। বাপেক্সের সিমেন্টিং অপারেটর হিসাবে কর্মরত থাকলেও রিগম্যান হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে একজন চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন বাপেক্সের একজন উপ-মহাব্যবস্থাপক। একইভাবে স্টোরকিপার হিসাবে চাকরি করে জমা দিয়েছেন রিগম্যানের সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতার ভুয়া সনদ। ট্রেড কোর্স সনদ দিয়ে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তার জন্য সুপারিশ করেছেন বাপেক্সের একজন ড্রিলিং সুপারিনটেনডেন্ট। একই কায়দায় বাপেক্সের সিমেন্টিং অপারেটর হিসাবে কর্মরত থাকলেও রিগম্যানের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

বুধবার (৩ জুলাই)  সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।

এদিকে নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও সদর উপজেলার নদ-নদীর তীরবর্তী চর-দ্বীপ চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে এবং  ১৫টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

 
 

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ধরলার পানি বাড়ার কারণে এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আরো দু’একদিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকতে পারে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি, পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি ও তালুকশিমুল বাড়ি পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’-এর কিছু বিষয় স্পষ্ট করে মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা বলেছেন, তাদের চলমান এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে অচল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলো। ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি, হয়নি দাপ্তরিক কোনো কার্যক্রমও। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিও বন্ধ ছিল। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। 

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যয় স্কিম সম্পর্কে এক ব্যাখ্যায় বলেছে, ১ জুলাই থেকে এই স্কিম যাত্রা করেছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই বা এর পর যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। ১ জুলাইয়ের আগে যোগদানকারীরা পুরোনো নিয়মেই পেনশন পাবেন। অনুরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষও। এক বার্তায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া মঙ্গলবার রাতে 

বলেন, আমরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চাচ্ছি। আমাদের তিনটি মূল দাবি রয়েছে- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল। ২০১৬ সালে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সুপার গ্রেডে বেতন দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এখনো পাইনি। এখন এটাকে যেহেতু সর্বজনীন পেনশন স্কিম বলা হচ্ছে, তাই সরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে একসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে তিন মাস ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, অর্ধদিবসের কর্মবিরতি পালন করেছি। সাড়ে তিন মাসেও তাদের টনক নড়েনি। এখন আমরা যখনই আন্দোলনে গেলাম, তখন বললেন এটা ঠিক, ওটা ঠিক না। আমাদের দাবি- সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের দাবি আর তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়, সেটার একটা সমাধান হোক। 

এর আগে বিকালে গণমাধ্যমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু বিষয় স্পষ্ট করে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, আমরা তা দেখেছি। আমরা দুপুরে আন্দোলনরত অবস্থায়ই তা দেখেছি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটি মানি না। আমাদের আন্দোলন ও কর্মসূচি চলবে।

ছাদ কৃষির প্রদর্শনীর আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর গুলশান নগর ভবনে রিবেটযোগ্য ছাদবাগানকারী বা বৃক্ষরোপণকারীদের যোগ্যতা ও বাছাই পদ্ধতি নির্ধারণ এবং মশকবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে নীতিমালা প্রণয়নবিষয়ক এক সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

মেয়র আতিকুল বলেন, ঢাকায় বাগান বা কৃষির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ছাদই কৃষির জন্য একটি বড় ক্ষেত্র হতে পারে। কোনো ছাদে বাগান বা কৃষি থাকলে সেই ছাদে উঠতে ভালো লাগে। এর মাধ্যমে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি পাওয়া যায়। এটি বিল্ডিংয়ের তাপমাত্রা কমাতেও সহায়তা করে। ছাদ কৃষি পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও ভ‚মিকা রাখে। নভেম্বরে প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ছাদবাগান করলে ১০ শতাংশ কর ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সব সিটি করপোরেশনের জন্য পরিকল্পিত ছাদবাগানের ওপর কর ছারের অনুমোদন দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। রিবেটযোগ্য ছাদবাগানকারী বা বৃক্ষরোপণকারীদের যোগ্যতা ও বাছাই পদ্ধতি নির্ধারণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন হলে হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড় পাবেন নগরবাসী।

চ্যানেল আই’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ সভায় অংশ নিয়ে বলেন, আমার আহবান থাকবে সিটি করপোরেশন যেন পরে ছাদ কৃষি নিয়ে এলাকাভিত্তিক প্রদর্শনী করার উদ্যোগ নেয়।

সভায় আরও অংশ নেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল, ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল­াহ আল বাকী প্রমুখ।

বাংলাদেশে আরও সৌদি বিনিয়োগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার রিয়াদে অনুষ্ঠিত এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের নেতৃত্বে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ গুরুত্বারোপ করেন। 

এ বৈঠকে বাংলাদেশে বিশেষত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং দেশের অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৌদি বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. মু. নজরুল ইসলাম, মহাপরিচালক (পশ্চিম এশিয়া) মো. শফিকুর রহমান ও মহাপরিচালক (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তর) মো. আরিফ নাজমুল হাসান এবং সৌদি কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদকে (জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল-জেবিসি) দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। সৌদি আরব থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়েও তারা আলোচনা করেন।

সৌদি আরবে ৩০ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি আরবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিতে আরও স্বচ্ছতা আনা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের শ্রমিক হয়রানি বন্ধে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সৌদি আরবে ব্যবসারত বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনের বিশেষ সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানান।

পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা চাইলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা নিরসনকল্পে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপরও তারা গুরুত্বারোপ করেন। 

দেড় ঘণ্টাব্যাপী হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠকে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও আলোচনা হয়। পাশাপাশি তারা আগামী বছর সৌদি-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে যৌথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ-সৌদি আরব যৌথ কমিশনের বৈঠককে মন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন।

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে।

রোববার এই বিষয়ে আদেশ জারি করে এনবিআর। বগুড়া কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-১ হবে তার নতুন কর্মস্থল।

এনবিআরের আদেশে বদলির কারণ বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে ‘জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে’। 

একই আদেশে বগুড়া কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-১–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানকে এনবিআরের প্রথম সচিব (কর) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে গিয়ে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। তার সহকর্মীরা জানান, তিনি অফিসে আসেননি। 

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিবরণ তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

এ ছাড়া ফয়সাল ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

আদালতের আদেশে বলা হয়, এই জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় এসব সম্পদ হস্তান্তর বা বিনিময় করা যাবে না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গ্র্যাজুয়েট বেকারদের সবচেয়ে বড় কারখানা! তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন শিল্প–কারখানা মালিকদের প্রতি। 

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘স্মার্ট অর্থনীতি বিনির্মাণে স্মার্ট শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বক্তব্য দিলে সভাস্থল শান্ত হয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটুআই, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক উজ্জ্বল অনু চৌধুরী এবং এটুআই–এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী সম্পাদিত ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং ইন স্মার্ট এডুকেশন: পার্সপেক্টিভ ফ্রম সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

সভা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গটি তোলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজেস লিমিটেডের হেড অব এইচআর মো. আমিনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়ছে। ভালো শিক্ষকেরাই পড়ান। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির এক্সপোজার হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো চাকরিপ্রার্থীদের ডেকে ডেকে আনতে পারব না। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্ট লেকচারার নামে একটি পোস্ট ক্রিয়েট করা যায় কিনা। ক্যারিয়ার ম্যানেজমেন্ট নামে কোর্সও থাকতে পারে। এগুলো শিক্ষকেরা পড়াবেন না, ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা পড়াবেন। এটা করতে পারলে হয়তো ভালো কিছু হবে। এতে শিক্ষার্থীরা হয়তো বুঝবে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা আসলে কী।’

এটুআই–এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গ্র্যাজুয়েট বেকারদের সবচেয়ে বড় কারখানা। এখানে যেহেতু ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়ে, সংখ্যাটি বিশাল। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে।’

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘তরুণদের স্কিলড (দক্ষ) করতে হলে আগে যারা তাদের হ্যান্ডেল করছি, তাদের স্কিলে মনোযোগ দিতে হবে। আমি বলি না যে ৩৫ লাখকে আমি তৈরি করতে পারব। এর মধ্য থেকে হয়তো ৫ লাখকে একরকম নতুন ধাপে নিতে পারব। দশ বছরের মধ্যে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রির কথা বলা হচ্ছে। আমি যদি অন্যভাবে বলি, কেন বেতন শুরু হবে ২০ হাজার ৩০ হাজার টাকা দিয়ে? বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসা ছেলেকেও ৩০ হাজার টাকা অফার করবেন! কিন্তু ১০ বছরে ইন্ডাস্ট্রির মালিক কত টাকার মালিক হয়েছেন! কোনো ইন্ডাস্ট্রির মালিক নেই, যার সম্পদ ১ হাজার কোটি টাকার কম। একদিকে ব্যাংক খাবেন, ইন্ডাস্ট্রি খাবেন, কিন্তু বেতন দেবেন ২০ হাজার! এত কম বেতন দিয়ে কোন স্কিলড লোকটা রাখবেন? কিন্তু যারা করছে, তারা মডেল, এটাই বাস্তবতা।’ 

তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে সভায় কিছুটা বাগ্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। অনেককেই বলতে শোনা যায়, এই ফোরামে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সমীচীন নয়। 

এরপর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘মনে হচ্ছে, উপাচার্য এটি পারসোনালি নিয়েছেন। এটি করা যাবে না। উপাচার্যের এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমরা তাঁকে আক্রমণ করছি। আমাদের বক্তব্য হলো, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্সের কথা বলেছেন। এগুলো তো আমরা সবাই বলি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এগুলো বলছে না। লেবার মার্কেট প্রাইস অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রি বেতন নির্ধারণ করে বলেই আমরা জানি।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মার্কিং (নম্বর পদ্ধতি) নর্থ আমেরিকান করেছি অর্থাৎ জিপিএ। কিন্তু টিচিং–লার্নিং সেটি নয়। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের যে স্কিল থাকা দরকার সেখানে ঘাটতি থাকছে। এরপর বিশাল অংশ রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো। সেখানে ৩৫ লাখ শিক্ষার্থী। আসলেই আমরা যা পড়াচ্ছি, সেটির প্রয়োজনীয়তা আসলে কী, তা নিরূপণ করতে পারছি না।’

প্যানেল আলোচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম ‘স্মার্ট অর্থনীতির জন্য শিক্ষা’ বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই–এর সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিডিজবস–এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ফাহিম মাশরুরসহ সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, একাডেমিয়া ও শিল্পের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিত্তবানদের ‘করভার লাঘবে’ আয়কর হার কমিয়ে অর্থবিল পাশ হচ্ছে আজ। কর ‘ন্যায্যতা নিশ্চিত’ করতে সম্পদশালীদের কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করা হচ্ছে। এছাড়া রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলবে না। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে করের আওতার বাইরে রাখার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে আয়কর আইনে।

তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এরপর ৩ বছর এ করহার অব্যাহত ছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করহার বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বার্ষিক ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে এ হার প্রযোজ্য। কিন্তু প্রভাবশালীদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে এনবিআর। এক্ষেত্রে এনবিআর-এর যুক্তি হলো-‘করভার লাঘবে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিত্তবানদের গাড়িতেও করছাড় দেওয়া হচ্ছে। সমাজের বিত্তবানরা সাধারণত নিজ নামে গাড়ি কেনেন না। তারা কোম্পানির নামে কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন। কোম্পানির নামে কেনা গাড়ির সারচার্জ মওকুফ করে তাদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে অনেক মধ্যবিত্ত একাধিক গাড়ি নিজ নামে কিনে রেন্ট-এ-কার বা উবার-পাঠাওয়ে ভাড়ায় চালান। তারা এ সুবিধা পাবেন না। তাদের পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে। সরকারি গাড়ির পরিবেশ সারচার্জও বাতিল করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৭ মে এনবিআর একই মালিকানাধীন একাধিক গাড়ি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গাড়ির অগ্রিম কর নিয়মিত আয়করের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ধার্য করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে সেটি পুরোনো আয়কর অধ্যাদেশে এবং সর্বশেষ নতুন আয়কর আইনে পরিবেশ সারচার্জ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অডিটে ছাড় : হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নিয়মে আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলা হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।

আগের নিয়মেই হেবা দলিল : প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট-ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছিল বিধায় সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তন্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎসে কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাই-বোন, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে। বর্তমানে হেবা দলিলে ২ হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০, স্ট্যাম্প শুল্ক ১০০০, হলফনামা স্ট্যাম্প ৩০০, কোর্ট ফি ১০ টাকা প্রভৃতি।

ট্রাস্ট-তহবিলের মূলধনি আয়ে কর : কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনি আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে। প্রথমত, শেয়ার কেনার ৫ বছরের মধ্যে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলে ব্যক্তি করদাতার স্ল্যাব অনুযায়ী ট্যাক্স দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি শেয়ার কিনে ৬ মাস বা এক বছর পর বিক্রি করে ৫১ লাখ টাকা মুনাফা করল, এক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। তাকে এক লাখ টাকার ওপর গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এই এক লাখ টাকা করদাতার মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং করদাতাকে স্ল্যাব অনুযায়ী আয়কর পরিশোধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই ব্যক্তি শেয়ার কিনে ৫ বছর পর একই মুনাফা করলে তার করের হিসাব হবে ভিন্ন। এক্ষেত্রেও তার ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি ১ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ১৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর অবকাশ বহাল : ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর করহার ২০-২৭.৫ শতাংশ বা এরও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনি আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থাৎ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতোই কর অবকাশ সুবিধা পাবে।

কালোটাকায় ট্যাক্স অ্যামনেস্টি থাকছে : নানা মহলের সমালোচনার পরও কালোটাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা এবং বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর বাজেটে অর্থ আইনের মাধ্যমে সরকার আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস আইনে পরিবর্তন এনে থাকে। ২০২৪ সালের অর্থ আইন জাতীয় সংসদে পাশ হবে আজ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।