রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপির নেতারা। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আজ সোমবার বিকেল ৪টায় তাঁর রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে বঙ্গভবনে ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ ১৪ জন শপথ নেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাঁদের শপথ পড়ান। এ দিন তিনজন উপদেষ্টা ঢাকায় উপস্থিত না থাকায় শপথ নিতে পারেননি। 

শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে এটি পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। রোববার (১১ আগস্ট) রাতে টুইটার বার্তায় এ কথা জানান তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় রোববার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া বার্তায় লেখেন, আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি এক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি একটু আগে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা ঢাকা ছাড়ার পরে এ পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেননি।

এর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা হারানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেয়ায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে উপস্থিতি জোরদার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চেয়েছিল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।

এদিকে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক ও ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমেও একের পর এক সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তিনি।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট। কিন্তু, কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এই সরকার, এ ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দলসমূহের। এরইমধ্যে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল ৩ মাস পর নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় পার্টির রয়েছে ভিন্নমত। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দ্রুত ও দৃশ্যমান হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে আপত্তি নেই তাদের। তবে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

যমুনা টেলিভিশনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জি এম কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত নতুন সরকারকে জনগণের প্রতিনিধি হতে হবে। এক্ষেত্রে আস্থার সংকট হলে অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও জটিলতা বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া আইন-প্রশাসন ও বিচারবিভাগ সংস্কারসহ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। অর্থনীতি চাঙা করা এই মুহূর্তে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তবর্তীকালীন সংস্কারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে। এক্ষেত্রে দ্রুত রুপকল্প না দিলে মানুষ হতাশ হবে। বাড়তে পারে সাংবিধানিক ও অভ্যন্তরীন সংকটও। এসময় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম মনিটরিং এ সহ-উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তারা যেন অযাচিত হস্তক্ষেপ না করেন-এ নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জিএম কাদের।

এছাড়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অন্য দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতির ওপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জোর দেবার কথাও বলেন তিনি।

সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ৭টায় তিনি শ্রদ্ধা জানান।

সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান বিচারপতি সকাল পৌনে ১০টার দিকে জাতীয় শহীদ মিনারে পৌঁছে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। একইসাথে জাতীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। ওই বৈঠকে পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগোয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে পুলিশের ১১ দফা দাবির কয়েকটি অল্প সময়ের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অন্য দাবিগুলো পূরণ করা হবে দীর্ঘ মেয়াদে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে পুলিশের ওপর কোনো ধরনের হামলা চালানো যাবে না। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বসার আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। গত কয়েক দিনের ঘটনায় পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে বলে বৈঠক শেষে  জানান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘তারা যে দাবিদাওয়া পেশ করেছে, সেগুলো যৌক্তিক। তাই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আমরা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে তাদের দাবিগুলো মেনে নেব। কিছু দাবি আমরা এখনই মেনে নেব।’  

রাজনৈতিক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের যতখানি না দোষ, তার চেয়ে বেশি দোষ তাদের যারা কমান্ড করেছে। তাদের দিয়ে অনেক রাজনৈতিক কাজ করানো হয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা করব। পুলিশ সদস্যরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এখন থেকে তাঁরা ঠিকমতো কাজ করবেন। এর আগে বিকেলে আমি ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্ররা আমাকে বলেছে, পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’

পুলিশ সদস্যদের জন্য স্বাধীন একটি কমিশন গড়ে তোলার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কমিশন হওয়া উচিত। সেই কমিশনের অধীনে পুলিশ পরিচালিত হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। পুলিশকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যাঁরা ঢাকায় থাকার পরও ভয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন না, তাঁদের ব্যপারে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই তাঁর নিজের কাজের জায়গায় যাবেন। তাঁরা নিজেদের কাজ করবেন। তাঁদের মধ্যে কেউ যদি অন্যায় করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে এবং শাস্তি হবে। সরকার তাঁদের কথা শুনবে। এরপর ব্যবস্থা নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বসার চেয়ার দেখিয়ে বলেন, ‘এই চেয়ারে তো একজন হাই কমান্ড (শীর্ষ কর্মকর্তা) ছিলেন। তিনি কী করেছেন? তাঁর উপরেও হাই কমান্ড ছিল। এখন আমি যদি বলি, এই কাজ না করলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেব, তখন কী করবেন? অনেকেই তো হুকুম পালন করেছেন। একজনের ওপরে একজন হাই কমান্ড ছিলেন। সবই তদন্ত করা হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম, লোগো সব পরিবর্তন করা হবে। পুলিশের অনেকের মন ভেঙে গেছে। এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না। খুব দ্রুতই তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৈঠক শেষে পুলিশের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়েবুর রহমান। তাঁরা বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছিলাম তার বেশির ভাগই মেনে নেওয়ার আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করি, সবাই সুন্দরভাবে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরবেন।’

পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা বলেন, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। পুলিশের দাবিগুলো বেশির ভাগই মেনে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশ নিয়ে স্বাধীন একটি কমিশন হওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে কারা জড়িত, তা জানতে চান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে তাঁর কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকুর রহমানকে নির্দেশ দেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আজ রোববার প্রথম কার্যদিবসে সকাল ১০টায় সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে যান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উঠে আসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি। এ সময় তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আন্দোলনের সময় মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় শেখ হাসিনা সরকার। পাঁচ দিনের মাথায় ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত পরিসরে চালু করা হয় এবং ১০ দিন পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়।

এরপর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে আবারও সরকারের নির্দেশে মোবাইল অপারেটররা দেশজুড়ে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেয়।

আজকের বৈঠকে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, কার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, তা বের করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির কোন কোন কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে ইন্টারনেট বন্ধে সহযোগিতা করেছেন, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্ত করতে ২৪ ঘণ্টা সময় দেন তিনি।

আব্দুল্লাহ আল মোমিন: সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পাবনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট পাবনা জেলা শাখার উদ্যোগে আজ রবিবার সকালে পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন,  বিভিন্ন মহল্লায় ও হিন্দুদের বাসাবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করছে দুর্বৃত্তরা। হামলা প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। চারদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যা এই সময়ে কাম্য হতে পারে না।

বক্তারা বলেন, বৈষম্য নিরসনের কথা বলা হলেও এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পক্ষই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসময় তারা সব হামলা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন। সেই সাথে সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও সংসদে  ১০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন তারা।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট কমিটির পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক আশিষ বসাক, যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট মলয় দাস, সদস্য সচিব সৌহার্দ্য বসাক সুমন, পূজা উদযাপন কমিটির প্রবাসভদ্র, যুব মহাজোটের আহবায়ক শুভ বসাক, ছাত্র মহাজোটের আহবায়ক শুভ মজুমদার সহ প্রমূখ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

রোববার (১১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অফিস আদেশে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে কোনো প্রকার রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন বা কোনো প্রকার অঙ্গ বা ছায়া সংগঠন, লেজুড়বৃত্তিক প্যানেল বা পরিষদ বা সমিতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ সব প্রকার রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো।

উল্লেখ্য, এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হলে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অনুরোধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা নিজ পদে বহাল থাকবেন। সেই সাথে হলে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।

রোববার (১১ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে ফোকলোর বিভাগের অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

এ সময় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের তাদের স্বপদে থেকে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান। সংকটকালীন এই সময়ে প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা পদত্যাগ করলে সাধারণ হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যাহত হবে।

সভায় জানানো হয়, শুধুমাত্র হলের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারবেন। এরআগে যারা আবাসিকতা ছাড়াই হলে অবস্থান করছিলেন, তাদের হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। হলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ব্লক থাকবে না। পরবর্তী সিট বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্লকের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না এবং চিহ্নিত কক্ষগুলো সিলগালা থাকবে। হলের কক্ষে বা করিডোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ কোনো ধরনের ক্ষমতার পরিচয় প্রকাশ করে কিছু করা যাবে না।

শুক্রবার গুলশানে দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে তার বাসভবনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না আরো বলেন, ছাত্র-জনতার সফল অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে সারাদেশের সকল শ্রেণি, পেশার মানুষ যেভাবে এই অভ্যূত্থানে সম্পৃক্ত হয়েছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নেতৃবৃন্দ আলোচনা করেন।

সভার সূচনা বক্তব্যে দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই অভ্যূত্থান হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের সুবিধাভোগী গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এই গণঅভ্যূত্থানের পর দেশের জনগণ নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। অভ্যূত্থান, স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা ছিল এই আকাঙ্খা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেই সরকার জনগণের আকাঙ্খা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থতির যে অবনতি ঘটেছে, তা অতিদ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। গত ১৬ বছরে দেশের সকল সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠিত করা নতুন সরকারের প্রথম কাজ। বিচার বিভাগকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করা, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে জনগণের আস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত সকল অপরাধের বিচার এবং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের সকল স্তরে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার পর অংশীজনদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করবে।

নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশের জনগণ জীবন দিয়ে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে, সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। রাষ্ট্রের গঠনমূলক সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে সহযোগিতা করবে নাগরিক ঐক্য। 

পাশাপাশি সকল ধরনের নৈরাজ্য, সহিংসতা এবং দখলদারত্ব বন্ধ করতে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন অন্যথায় সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উপর জনগণের আস্থার সংকট দেখা দিবে।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ারের পাঠানো বার্তায় আরো বলা হয়,  রাজনৈতিক দলগুলোর উপর হাসিনা সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতনে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করতে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উদ্যোগ নিতে হবে। সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন নেতৃবৃন্দ। 

বঙ্গোপসাগেরর বুকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজারের ছোট্ট দ্বীপ সেন্ট মার্টিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতির এই দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস তুলে ধরেছে।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে যাওয়ার পর একাধিকবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা হয়েছে শেখ হাসিনার। ভারতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর।

তবে আজ রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য তিনি আমেরিকাকে সরাসরি দায়ী করেছেন। 

দেশত্যাগ করার আগে যে বক্তব্য তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে দিতে চেয়েছিলেন, তাতেও এর উল্লেখ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। হাসিনা জানিয়েছেন, আমেরিকার কথামতো বঙ্গোপসাগরে একক আধিপত্যর জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তাঁদের ছেড়ে না দেওয়ার মাশুল হিসেবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশিদের সতর্ক করেছেন, তাঁদের ওপর মৌলবাদীরা যেন ভর না করে। 

শেখ হাসিনা আশাপ্রকাশ করেছেন, তিনি আবার নিজের দেশে ফিরে যাবেন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আবারও দাঁড়াবে। তাঁর দলের বহু নেতাকে হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবরে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত। 

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, হাসিনা ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, গত মে মাসে আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহসচিব ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের সঙ্গে এই ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগও তাঁরা করছেন যে, লু চিনবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে হাসিনার ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। 

শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের হিন্দন বিমানঘাঁটির কাছাকাছি একটি গোপন আস্তানায় অবস্থান করছেন। যতক্ষণ না তাঁর পরবর্তী আশ্রয়ের ঠিকানা নির্ধারিত হয়, হাসিনা নয়াদিল্লিতেই থাকবেন। ধারণা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতে থাকতে হতে পারে। তবে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আইনি সুযোগ না থাকায় ভিসার মাধ্যমে তিনি দিল্লিতে থাকবেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।