রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ সময় বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জাস্টিন ট্রুডো।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তাদের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা, জনগণের স্বাধীনতা বিস্তৃত করা, প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে সহায়তার বিষয়ে দুই সরকার প্রধানের আলোচনা হয়।

বৈঠকে ড. ইউনূস পূর্ববর্তী সরকার দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছিল উল্লেখ করে তা তুলে ধরেন। এ সময় বাংলাদেশের সাথে কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দেশটির সরকারের সমর্থনের প্রশংসা করেন তিনি। তাছাড়া, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি ভিসা দিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধও করেন ড. ইউনূস।

ড. ইউনূস আন্দোলন চলাকালীন ও পরবর্তীতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক একটি আর্টবুক জাস্টিন ট্রুডোকে উপহার দেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাছাড়া, যেকোনো প্রয়োজনের অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকারও আশ্বাস দেন তিনি। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ কথা বলেন তিনি।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৮টা ৫০ মিনিটে) জাতিসংঘ সদর দফতরে এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইউনূস বলেন, দেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এ সময় তিনি বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও দেশ পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানান।

জো বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রেরও পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।

এ সময় ড. ইউনূস আন্দোলন চলাকালীন ও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক একটি আর্টবুক জো বাইডেনকে উপহার দেন।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার রাতে দেশটিতে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উভয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই পোস্টে বলা হয়, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনের সাইডলাইনে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। এ নিয়ে উভয় দেশের সম্পর্কে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা বলেছেন, কারণ তার বিরুদ্ধে শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেছে, এটি এখনও অনুমাননির্ভর।

জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকা ছেড়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ ভোর ৫টায় বাংলাদেশ বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।

জানা গেছে, ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অবস্থান করবেন ড. ইউনূস। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন ৫৭ জন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ প্রতিনিধি দলের একাংশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বাকিরা যাচ্ছেন আজ।

জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠক হবে। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তা চাওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। জো বাইডেনের কাছে দেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের বিষয়েও সহযোগিতা চাইতে পারেন ড. ইউনূস।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)। আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠন ও জন-মালিকানা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

মেজর হাফিজ বলেন, যারা এই দেশের গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে, যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে শিশু হত্যা করেছে, যারা রাজপথে সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরেছে; বাংলাদেশে সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এদের মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের চেষ্টা করছে। তাদের কাছে প্রত্যাশা, দ্রুত সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সেনাবাহিনী ভুল করেছে দুর্বৃত্তদের ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দিয়ে। যারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত। এই বিপ্লব যেন ব্যর্থ না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকার ব্যর্থ হলে জাতি ব্যর্থ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে সিসিইউ'তে রাখা হয়৷ 

মাহমুদুর রহমান মান্না হার্ট অ্যাটাক করেছেন বলে জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। মান্নার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শোয়েব মুহাম্মদ জানিয়েন ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি শঙ্কামুক্ত নন। 

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০১৫ সালে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গুম করে এবং পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় হাসিনা সরকার দুই বছর কারাগারে রাখে। কারাগারে থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক করে এবং তখন তার হার্টে একাধিক ব্লক ধরা পড়ে। কিন্তু আওয়ামী সরকার তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠায়। কারামুক্ত হবার পরও তার পাসপোর্ট আটকে রাখার কারনে তিনি বিদেশে উন্নত চিকিৎসাও নিতে পারেননি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর বলেছেন, আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই সরকারের যে কাঠামো, তাতে যারা এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই টেকনোক্র্যাট, ব্যুরোক্র্যাট, একাডেমিশিয়ান; আছেন দু’জন ছাত্রনেতা, কিছু এনজিও কর্মকর্তা। এখানে যেটা দুর্বলতা, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক মুখ নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা করে তা কমানো যেত। এটা বোধহয় বেশি করা যাচ্ছে না, কম (আলোচনা) হচ্ছে। তাতে রাজনৈতিক দুর্বলতা থাকছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশে এ ধরনের পরিবর্তনের পর যেটি হয় (সবকিছুতেই হয়), সরকারে একটি সমস্যা দেখা দেয়। স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ নিতে চায়। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এটা আছে। তদবির বেড়ে যায় খুব। সবাই তখন নতুন সরকারের কাছে যেতে চায়। ফলে আমরা যদি আশা করি, সরকার দ্রুত সুন্দর ও সঠিকভাবে রান করবে, তা ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, এখনও সব জায়গায় নিরপেক্ষ বা পরিবর্তনের পক্ষের লোক বসানো সম্ভব হয়নি। ফ্যাসিবাদী সরকারের লোকজন রয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাদের (সরকার) অজ্ঞতা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যেহেতু তাদের আলোচনা কম হচ্ছে, তাই দূরত্ব থাকছে একটা। ফলে এ জায়গায় একটা সমস্যা থাকছে। তাই ৫ আগস্টের পর যতগুলো ঘটনা ঘটছে এগুলো বিচ্ছিন্ন নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলার প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। বললেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনায় অনেকে সুযোগ নিচ্ছে। এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করেন না তিনি।

মির্জা ফখরুলের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সাথে চুক্তি করেছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান করেনি। আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাগুলো হচ্ছে, এগুলোও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ কোনো সমাধান না। তবে

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত শহীদ হওয়া ১ হাজার ৪২৩ জনের নামের তালিকা পেয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটির সদস্য সচিব ও সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহত ও শহীদদের তালিকা ও সার্বিক সহযোগিতার বিষয়ে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। তবে, এ সংখ্যা আরও কমতে বা বাড়তে পারে বলেও জানান উপ-কমিটির এই সদস্য সচিব।

তিনি বলেন, গত এক মাস ধরে নানান ভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর পাওয়া সবশেষ তথ্যমতে আহত পাওয়া গেছে ২২ হাজার। চিরতরে পঙ্গু বা অঙ্গহানী হয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৫৮৭।

আন্দোলনে চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ৬৮৫ জন। তারমধ্যে ৯২ জন ব্যক্তির দুই চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে।

এছাড়া, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও সরকার আলাদা আলাদাভাবে শহীদ ও আহতদেরকে ভাতা বা অনুদান প্রদান করবে বলেও জানান তিনি।

তারেকুল ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে নিহতদের পরিবারকে ৮ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসাথে আহতদেরকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা করে দেয়া হতে পারে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে মাসিক ২০ থেকে ৩০ হাজার করে মাসিক ভাতা দেয়া হতে পারে। তবে এসব সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন তিনি। পালিয়ে যান ভারতে। তখন থেকে দেশটিতে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

ভারতের কোথায় তিনি আছেন, সেই স্থানের নাম প্রকাশ্যে আসেনি। কেবল জানা গিয়েছিল, দেশটির সরকারি তত্ত্বাবধানে দিল্লির একটি সেফ হাউসে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এরমধ্যে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস শেখ হাসিনার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর খবর দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা। এমনকি তাকে কিছু লোকজন নিয়ে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনেও ঘুরতে দেখা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা যখন একদফা দাবিতে গণভবনের দিকে মিছিল সহকারে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একটি সামরিক বিমানে করে ভারতে পালিয়ে যান। ভারতের গাজিয়াবাদের কাছে একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নামিয়ে দিয়ে দেশে ফিরে ওই বিমানটি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দিল্লির সাথে ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনমলে এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে দিল্লি। তার ক্ষমকাচ্যুতিতে এর আঁচ লেগেছে দুই দেশের সম্পর্কেও।

এদিকে, গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন-বিক্ষোভের সময় শত শত মানুষ হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করছে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ভারতের সাথে (স্বাক্ষরিত) বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী, আমরা তাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের দাবি জানাতে পারি। আপাতত, আমরা আশা করি, তাকে দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ঘটাতে দেবে না ভারত। কারণ, তিনি মিথ্যা ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।

শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতেই চায়, তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে, তাকে চুপ থাকতে হবে।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারের সময় দায়িত্বপালন করা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আসার অনেক নজির রয়েছে। আমরা সবসময় তাদের (পালিয়ে আসা নেতাদের) থাকার অনুমতি দিয়েছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আমাদের ইচ্ছাকে সম্মান করে রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।