ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার এই কর্মসূচিকে সফল করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে ছাত্র-জনতার দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে অবিলম্বে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এছাড়া ছাত্র-জনতার চলমান গণআন্দোলনে তাদের পাশে থাকতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে দলটি।
রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে দেশবাসীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার এবং একই সঙ্গে নিজ নিজ এলাকায়ও আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে গুলি, হত্যা, দমন-নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতা জবরদখল করে রাখা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক মানুষ। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে সমগ্র দেশে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র নেতাকর্মী জমায়েত করে গণতন্ত্রকামী ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দেয়। ঢাকার ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর, উত্তরা, তোপখানা রোডসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারাÍক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করে। সমগ্র দেশকেই আজ রণক্ষেত্রে পরিণত করে হত্যা, নির্যাতন ও বল প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। আলোচনার কথা বলে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে স্বৈরাচারী সরকার।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুপুর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য ইন্টারনেট, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আন্দোলন দমন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে সন্ধ্যা থেকে আবারও সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বরাবরের মতো রোববারও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএসএমএমইউসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানোর ষড়যন্ত্র করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের বাসাবাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নড়াইলের বাসভবন ও বিএনপির ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুর ময়মনসিংহের বাসভবন, যশোরে বিএনপি কার্যালয়, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশব্যাপী গণজাগরণের মধ্য দিয়ে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের পথে যে যাত্রা শুরু করেছে, তা হত্যা, দমন, নিপীড়ন চালিয়ে আর ব্যর্থ করা যাবে না। সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত, সংঘর্ষ উসকিয়ে দিয়ে আন্দোলনের বিজয় নস্যাৎ করতে চায়। অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে আন্দোলনরত জনগণ সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ করে বিজয় ছিনিয়ে আনবে।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনসহ চলমান আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীদের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে হবে।’ তিনি নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে আরও বলেন, তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিবৃতিতে আহত সবার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।