রাজনীতি

উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বস্ত সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে যমুনা টেলিভিশন।

গেল কদিন ধরেই আলোচনা ছিল, যে কোনো মুহূর্তে উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন নাহিদ। নানা সময়ে তিনি নিজে এবং তার সংগঠন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকেও তেমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন সমন্বয়ক নাহিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এই ছাত্র অভ্যুত্থান পরবর্তী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।

নাহিদ ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি সংগঠনের নেতা ছিলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন তিনি।

রোজায় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, কোনোভাবেই যেনো নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে, সেজন্য কাজ করছে সরকার। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে এ সব কথা বলেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেট নির্ধারিত সময় হবে। এ বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, দোকান মালিক সমিতিসহ প্রধান প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। তাদের নিরাপত্তা না দিলে বিনিয়োগ বাড়বে না।

২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থের বিষয় নিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি এনজিও ব্যুরো খতিয়ে দেখতে পারে। তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। দেশের স্বার্থে যেকোনো উন্নয়নে ফান্ড আসতেই পারে। বড় বিষয় হলো কোন উদ্দেশ্যে সেই টাকা আনা হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখা। ভবিষ্যতে যাতে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজে অর্থ না আসে, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সার্বিক পরিস্থিতি আরো উন্নত করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সংক্রান্ত কোর কমিটি। গতকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কোর কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ—

১. রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বাড়াতে হবে। অপরাধ প্রবণ এলাকায় টহল সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী গঠন করে টার্গেট এলাকায় জোরদার অপারেশন পরিচালনা করা হবে।

২. রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নৌবাহিনীর একটি অতিরিক্ত পেট্রোল এবং কিছু এলাকায় কোস্ট গার্ডের একটি অতিরিক্ত পেট্রোল নিয়োজিত থাকবে।

৩. পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধান, উপ-পুলিশ কমিশনার, মাঠে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ব্রিগেড প্রধান ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন।

৪. ডিএমপির পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্যদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয় করা হবে, যাতে করে তাৎক্ষণিকভাবে অলিগলিতে টহল দিয়ে অপরাধীদের পাকড়াও করা যায়।

৫. ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা অবস্থান করতে পারে এমন সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কম্বাইন্ড অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।

৬. ঢাকা শহরের বাইরে বিশেষ করে টঙ্গি, বসিলা, কেরানীগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক টহল বাড়ানো হবে।

৭. ৫০০ এপিবিএন সদস্য ডিএমপিতে ন্যস্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে।

৮. থানাভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের আওতায় আনতে তড়িৎ পদক্ষেপ নেবে।

৯. মিথ্যা, গুজব ও প্রোপাগান্ডার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো প্রচারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিকে অনেক দিন বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ এমনটি বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় শহীদ সেনা দিবসের বাণীতে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

বাণীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সুবিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। সমব্যাথী হয়ে দেশ ও জনগণ শহীদ পরিবার এবং নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াবে- এ আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির সূর্য সন্তান, শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে দিনটি চেতনা ও অনুভূতির একটি নিয়ামক হবে। মনে করিয়ে দেবে দেশের জন্য যুদ্ধ করার ব্রত নিয়ে পথচলা একদল সাহসী মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত নির্মম মৃত্যুর কথা।

গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় সকল প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতর মাধ্যমে নষ্ট করা হয়েছে। এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে মার্জিত বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে, স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করার লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। তিনি জানান, সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান পালিয়েছে; সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার জরুরি।

এ সময় তিনি জনগণের শঙ্কা দূর করতে আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতির দিকে। আরও ভালো করার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের বৈঠক শেষে তিনি এমনটাই দাবি করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। যতদিন ডেভিলরা থাকবে ততদিন অপারেশন চলবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। সব লেভেলে যেন দুর্নীতি কমে সেজন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবি বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। গাজীপুর জিএমপি, শিল্প পুলিশে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবও সংশ্লিষ্ট ডিসি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে নিপীড়ন ও অত্যাচারের হাতিয়ার হিসেবে ডিসিদের ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষদিনে আজ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক শেষে এ কথা বলছেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, ডিসিরা আইন ও সংবিধান মেনে চললেই জনগণ প্রকৃত সেবা পাবে। বর্তমান সরকার ডিসিদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা যেন দ্রুত জামিন না পায়, সে ব্যাপারে বলেছেন ডিসিরা। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আদালতের কাজই জামিন দেয়া।

আইন উপদেষ্টা জানান, ডিসিরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। জনশক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণের কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে। তাছাড়া যারা বিদেশে যেতে চায়, তাদের ডাটাবেজ করা হবে।

তিস্তা ব্রিজ থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়েছে। নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতেই এ পদযাত্রা। যেটি মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) লালমনিরহাট প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে রংপুরের কাউনিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হবে।

আজ তিস্তা অববাহিকার ১১টি পয়েন্টে জড়ো হয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। নদী বাঁচানোর এই আন্দোলনে শামিল আছেন স্থানীয় কৃষক-শ্রমিকসহ হাজারও মানুষ।

তাদের দাবি, বিচ্ছিন্নভাবে নয় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই শুরু করতে হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ। পাশাপাশি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে ভারতকে।

আয়োজকরা জানান, আন্তর্জাতিকভাবে তিস্তার ক্ষতবিক্ষত পরিস্থিতি তুলে ধরতেই এ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভারতকে চুক্তি বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করা যাবে।

আজ সন্ধ্যায় ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির শেষদিনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উত্তরাঞ্চলবাসীর উদ্দেশে বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।

শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম বেশ কিছুদিন থেকে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগ মুহূর্তে দলের নেতৃত্বে নিয়ে সামনে আসছে বিভিন্ন পক্ষের দাবি-তদবির। এমন বাস্তবতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও ছাত্রশিবিরের মতভেদ।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে কথার বাহাস। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভুঁইয়া তার ভেরিফায়েড পেজে হুঁশিয়ার করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে একই সুরে কথা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ। অন্যদিকে, ছাত্র শিবির বলছে, কেবল ক্যামেরার সামনে থাকলেই আন্দোলন হয় না। পাশাপাশি ইতিহাস বিকৃত না হওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখার কথা বলছে সংগঠনটি।

তবে ২৪ এর আন্দোলন ও ইতিহাস বুকে ধারণ করার কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্থা শারমিন। তিনি বলেন, যদি কোনো দল বা আদর্শ দ্বারা এই অভ্যুত্থান হতো তাহলে তারা সেই পার্টিতেই থেকে যেতেন। ছেড়ে আসার কোনো প্রয়োজন বোধ করতেন না। যেহেতু ছেড়ে আসার প্রসঙ্গ রয়েছে, তাই আমরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছি- সেটি সামগ্রিকভাবে তাদের সাথে আর করা সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের আগেই কেন এত বিরোধ, এত বিতর্ক— এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে কোনো ব্যক্তি একক মাস্টারমাইন্ড ছিলেন না। কোনো দলের একক কৃতিত্ব ছিল সেটিও বলবো না। সবার অংশগ্রহণে হয়েছে এবং সবাইকে এর কৃতিত্ব দিতে হবে না। ইতিহাস বিকৃত হোক এটা কারও কাম্য না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই জনগণে অতীতেও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, এখনও সেটির চেষ্টা চলছে। আমরা চাই, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হোক।

ছাত্রশিবিরে সভাপতি বলেন, এই অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রেডিটের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এটি যেন না হয়। আমরা এটির পক্ষে না।

শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলকে কীভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা? জানতে চাওয়া হয় আন্দোলনে মাঠের অংশীজনের মধ্যে যে মনোমালিন্য তা কি নিতান্তই রাজনৈতিক কৌশল নাকি দুই সংগঠনের মাঝে ফাটলের ইঙ্গিত?

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ রুশাদ ফরিদী বলেন, জুলাই আন্দোলনের কৃতিত্ব নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। যেমন, ছাত্রশিবির তাদের বেশ কয়েকজন নেতার নাম বলছে। তাদের কিন্তু আমরা শিবিরের নেতা হিসেবে গণআন্দোলনে সামনে দেখিনি। সুবিধা নেয়ার জন্য নিজের পরিচয় গোপন রেখে এখন সেই পরিচয় দিয়ে যদি বলে, আমি তোমাদের পেছনে ছিলাম, আমার মনে হয় না এটা তাদের জন্য ভালো কিছু হবে।

তবে একটি জায়গায় এই দুই সংগঠনের নেতাদের চাওয়ায় কোন মতভেদ নেই, আর তা হলো ২৪ এর ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়।

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় আরও অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। দুই ধাপ পিছিয়ে ১৫১তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। এমনটা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আর বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)-২০২৪ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. মো ইফেতেখারুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সিপিআই ২০২৪ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২৩। যা বিগত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছর স্কোর বিবেচনায় উচ্চক্রম অনুসারে দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৪তম। একই স্কোর নিয়ে তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম অবস্থানে রয়েছে কঙ্গো ও ইরান। দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে রয়েছে। এ অঞ্চলে আফগানিস্তানের পরই বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

ইফেতাখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের এ বছরের নিম্ন স্কোর ও অবস্থান প্রমাণ করে যে, বিগত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও, বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে, এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। এর প্রভাবে যথেচ্ছ লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয়ভাবে তোষণ, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা এবং সার্বিক কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রম অবনতি হয়েছে। অথচ দুর্নীতিবিরোধী বাগাড়ম্বর ব্যতীত এ নিয়ে পতিত আওয়ামী সরকারের কোনো বিকার বা চিন্তা দেখা যায়নি। এমনকি দুর্নীতি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইর সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৪ সালে স্কোর বিবেচনায় বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে আবর্তিত ছিল। ২০২৩ সালে এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪ সালে আরও এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২৪ মেয়াদে সিপিআই স্কোরের প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৪, ২৭ ও ২৮। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, তিনবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম।

গত বছর বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম ছিল। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ২৪। সমান স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে ছিল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরান, লেবানন ও জিম্বাবুয়ে। আর ২০২৩ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫।

টিআইবি এমন সময় সিপিআই সূচক প্রকাশ করেছে যখন দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করা হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। তখন এ তালিকায় মোট ৯১টি দেশ ঠাঁই পায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।