রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। বলেন, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার যেন নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারে। সেজন্য তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে বিভাগের সকল জেলা ও মহানগরের সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

দলীয় সাংগঠনিক বিষয়ে আমান উল্লাহ আমান বলেন, বিএনপির সব ইউনিটের দ্রুত কমিটি করতে হবে। সবাইকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে কাউকে বাদ দিয়ে নয়।

তিনি আরও বলেন, একাংশকে নিয়ে করলাম আরেক অংশ বাদ দিলাম তা হবে না। প্রয়োজনে প্রত্যেকটি থানা ইউনিয়নে আমাদের নেতারা যাবে। অতীত ভুলে সবকিছু নতুন করে সাজাতে হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিদ্য ইসলাম অমিত। সঞ্চালনা করেন খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। এছাড়াও এ সময় বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২ ডিসেম্বর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এর আগে ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন অপবাদসহ একাধিক অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে মন্তব্য করতে দেখা যায় নয়াদিল্লিকে। সার্বিক পরিস্থিতিতে দলের তিন অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সমন্বয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে প্রতিবাদী পদযাত্রা ও স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) বেলা দেড়টায় ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করে দলের ৩ অঙ্গসংগঠনের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

স্মারকলিপিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান করা থেকে শুরু করে ত্রিপুরায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও বহিস্কৃত ইসকন নেতার বিষয়ে নয়াদিল্লির ভাবনা- এরকম একাধিক ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দলটি।

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলাকালে দেশটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা উঠে আসে স্মারকলিপিতে। বলা হয় এটি ভিয়েনা কনভেনশন- ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন যা অবন্ধুসুলভ আচরণের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের প্রেক্ষাপটে নয়, নৈতিক পদস্খলন ও বিতর্কিত বক্তব্যের জেরেই গ্রেফতার করা হয়েছে ইসকন থেকে বহিস্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কিন্তু তার এই গ্রেফতার ইস্যু্কে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদরা ভিন্নপথে বর্ণনা করছে, যা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির কারণ বলেও অভিযোগ করা হয় সেখানে।

প্রতিবাদলিপির বড় একটা জায়গা জুড়ে ছিলো সার্বোভৌমত্বের আলাপ। প্রতিবেশী দেশের প্রতি অবজ্ঞা সরূপ কোনো বক্তব্য প্রচার তা মিডিয়ার মাধ্যমে হোক বা কূটনৈতিক পরিসরে- এটি থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি অপতথ্য ও অপপ্রচার বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয় ভারতের সরকারের প্রতি।

এসময় ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতাসূলভ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নয়াদিল্লির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি।

সাম্প্রতিক সংকটে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। দু’দেশের ব্যবসায়ীরাই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে, তা মেনে নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আগামীকাল দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফলপ্রসু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা সার্ককে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে দেখতে চান উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সার্কের শুরুতে সামিট হলেও অগ্রগতি হয়েছে কম। রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের মধ‍্যে সাক্ষাৎ হচ্ছে না। সার্কের মাধ‍্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেও মনে করেন উপদেষ্টা।

চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে এনামুল হক নামে এক ব্যবসায়ী মামলাটি দায়ের করেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিলেও তাৎক্ষণিক কোনো আদেশ দেননি। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪৫০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠনোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় দাড়ি-টুপি দেখে চিন্ময়ের অনুসারীরা তার ওপর হামলা করেন। এতে তার মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম হয়।

এদিকে, মামলা দায়েরের পর চিন্ময়সহ বাকি আসামিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী নিহত হন। সেদিন পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও আইনজীবী হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।

ভারতের প্রপাগান্ডাতে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, আমাদের চিকিৎসা, বাজার সবই আছে।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বেনাপোল আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরের নবনির্মিত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে  মতবিনিময় করেন।

এ সময় সাংবাদিদের সাখাওয়াত বলেন, বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যক লোক ভারতে যায়, এ খাত থেকে অর্থনৈতিকভাবে ভারত বিশাল লাভবান হয়। বাংলাদেশিদের না বললে তারা যাবে না।

এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম ও বিজিবি দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির।

ভারতের শাসকগোষ্ঠী বিভেদের রাজনীতি ও বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। দাবি করেছেন, সংখ্যালঘু নিপীড়নের ধোঁয়া তুলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে দিল্লি।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ও এক্স অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।

সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার, এর পরবর্তী সহিংসতা এবং আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপেক্ষিতে এসব কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা।

ইংরেজিতে লেখা এ বিবৃতিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে; তারা আমাদের স্টেকহোল্ডার। বাংলাদেশে চলমান গণঅভ্যুত্থানের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনার নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের এই গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষেরা বাংলাদেশের বন্ধু। তবে ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো এ ধরনের গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং এর ছাত্রদের রাজনৈতিক জাগরণকে হুমকি হিসেবে দেখে। ফলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছে।

এ উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘু নিপীড়নের ধোঁয়া তুলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছে দিল্লি। ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো দুই দেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না।

তিনি তার পোস্টে মনে করিয়ে দেন, ভারতের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত তা ভুলে গেলে চলবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বিজেপি বাংলাদেশকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করছে, এমনটি হলে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। ভারত সরকারকে শুরু থেকেই আমরা জোর দিয়ে আসছি, বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা বন্ধ করতে হবে এবং ন্যায়, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

বাংলাদেশ হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ণ নাগরিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে পোস্টে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী রাজনীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে না বা এর ঐক্যে অবদান রাখবে না। তাই আমরা ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি সম্প্রীতি ও সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতের পাশাপাশি যেকোনো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হওয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে করা প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, মৌলিক অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন সব সরকারের সাথে কাজ করে। এই ইস্যুতে চলমান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, প্রতিটি প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ হওয়া উচিত।

বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেফতার ইস্যুতে করা এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন এই মুখপাত্র বলেন, এই ইস্যুতে স্পষ্টভাবে অবগত নয় মার্কিন প্রশাসন। মামলা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই বলে জানান তিনি।

তবে গ্রেফতার হওয়া যে কোনো ব্যক্তির আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ভেদান্ত প্যাটেল। বলেন, আটক ব্যক্তিদের উপযুক্ত আইনি সুযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে অন্তর্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে অবমাননাকর পোস্টার সাঁটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে কারা এসব লাগিয়েছে তার কোনো হদিস বলতে পারছে না সেখানকার পুলিশ।

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে একটি সনাতনী সংগঠনের সমর্থকরা এই পোস্টের লাগিয়েছে। তাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে নানা আপত্তিকর কথা লেখা রয়েছে।

এর আগে, সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপ সহকারী দূতাবাসে হামলার ঘটনায় বিব্রত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন দুষ্কৃতিকারীকে। তার মধ্যেই ফের এই ধরনের ঘটনা গভীর চিন্তায় ফেলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের লোভে শাসক এবং বিরোধী সব রাজনৈতিক দল এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। নিজেদের দেশ ও রাজ্যের শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও কৃষির নানা সমস্যাকে ধামা চাপা দিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালা বদল এবং ধর্মীয় সংঘাতকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ভারত আক্রমণাত্মকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এই অপতথ্যের কারণেই সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর সম্পূর্ণ দায় ভারতের মিডিয়ার। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, পূর্ব নির্ধারিত ধারণা নিয়েই ভারত অপতথ্য ছড়াচ্ছে। এমন মনোভাব বজায় থাকলে তাদের সাথে আলোচনার উপায় থাকে না। এ সময় বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। অথচ ভারতীয় সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবেদনই আমলে নিচ্ছে। তারা আমাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছে। এ সময় ভারতের অপচেষ্টা রুখে দিতে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ভেঙে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে পোড়ানো হয়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে জরুরি ভিত্তিতে তলব করে ঢাকা। এছাড়া, আগরতলাসহ ভারতে বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য গতকাল সোমবার দিল্লিকে নোট পাঠিয়েছে ঢাকা। কঠোর প্রতিবাদের সঙ্গে ওই নোট পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনার পর ৭ ভারতীয় নাগরিককে আটক করে দেশটির পুলিশ। আর হামলার সময় দূতাবাসের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপরদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কনস্যুলার সেবা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।

দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নাটোরে প্রয়াত ছাত্রদল নেতা সাইফুজ্জামান সুজনের স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির এ নেতা অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের জন্য ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা চালানো হয়েছে, তেমনি পতাকাও পোড়ানো হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নষ্টের চেষ্টাকারীদের জনগণ রুখে দিবে বলে এ সময় হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হত্যার বিচারের দাবিও জানান তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।