রাজনীতি

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ‘বিএনপি সংস্কার চায় না’ বলে কোনো একটি মহল জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে এনডিএমের সাথে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, যেসব সংস্কারে সমঝোতা হয়েছে তা জাতিকে জানানো উচিত। এবং এই প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত জুলাই চার্টার তৈরি করে সেটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করারও তাগিদ দেন তিনি।এরপর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করলে ডিসেম্বরের আগেই ভোট হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

এদিন বিকেল চারটায় এনডিএম এর সাথে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শুরু হয়। এরপর গণফোরামের সাথেও বৈঠক হয়।

রাজউককে নতুন করে আর কোনো হাউজিং প্রকল্প হাতে নিতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজউক ভবনে রাজউক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, রাজউক এখন থেকে সুপারভিশন করবে। রাজনৈতিক চাপ থেকে রাজউককে মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

রাজউকের বর্তমান বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন রিজওয়ানা হাসান। কেবল আমলা দিয়ে বোর্ড গঠন না করে বিশেষজ্ঞদেরও বোর্ডে রাখা উচিত বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গণপূর্তি উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শ্রম উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।

এসময় শ্রম উপদেষ্টা বলেন, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আশাবাদি তিনি। তবে কোনো সময় বেধে দিতে চান না বলেও জানান উপদেষ্টা।

এদিকে কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতার উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ৮৫ ভাগ শ্রমিক আইনী সুরক্ষার বাইরে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নেই। সকল শ্রমিককে ন্যূনতম আইনের সুরক্ষার মধ্যে আনতে হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া আগামীকাল কক্সবাজার থেকে মহেশখালি সি-ট্রাক সার্ভিস চলাচলের উদ্বোধন হবে বলেও জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

ভাটারা ও যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে দুদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এছাড়া বাড্ডা থানার মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে ২ দিনের, যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে একদিন ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাবি ইউনিটের নেতা তানভীর হাসান সৈকতকে ২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমান এ আদেশ দেন।

এছাড়া যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পশ্চিম, কোতোয়ালি ও ভাটারা থানার বিভিন্ন মামলায় হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনাইদ আহমেদ পলক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সাবেক ওসি আবুল হাসান ও সাবেক এএসপি তানজিল আহম্মেদসহ ১০ জনকে নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এদিন তাদের প্রত্যেককে সিএমএম আদালতে তোলা হয়। শুনানি চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এসময় জুলাই-আগষ্টের ছাত্রজনতা হত্যায় আসামিরা জড়িত নন বলে দাবি করেন তাদের আইনজীবীরা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো-এর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

চীনের গভর্নরকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, অথচ এত দূরে। চলুন, এই ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলি। আশা করি আপনি আবারও আমাদের দেশে আসবেন- আমরা শুধু ভালো প্রতিবেশীই নয়, আরও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।

চীনে তার সাম্প্রতিক সফরের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সফর ছিল দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সহানুভূতিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

গভর্নর ইউবো আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়ে বলেন, আমার এই সফরের লক্ষ্য হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান প্রদেশ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত হাব হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। বৈঠকে উভয় পক্ষ যুব বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

গভর্নর জানান, ইউনান প্রদেশের একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে অধ্যাপক ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। চীনের বহু মানুষ এই পদ্ধতির সুফল ভোগ করছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি দুই দেশের মধ্যে সামাজিক লক্ষ্যগুলোর মিল থাকার কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা এবং সামুদ্রিক খাবার, আম ও কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। বলেন, আমাদের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে এবং আমাদের অঞ্চলগুলোকে আরও কাছাকাছি আনতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা গভর্নরের সব প্রস্তাবে সম্মতি জানান। আপনি যা যা বললেন-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য ও প্রশিক্ষণ সব কিছুতেই আমরা একমত। আমরা এগুলো আগের চেয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।

বৈঠকে স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চীনের কুনমিং-এ চারটি হাসপাতাল নির্ধারণসহ চিকিৎসা পর্যটন চালু করতে চীনের সহযোগিতা নতুন এক অধ্যায় তৈরি করেছে। এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারত্বের এক নতুন সূচনা।

উভয় পক্ষ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিময় কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়ন করছেন। এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আরও বেশি শিক্ষার্থীকে চীনে পাঠাবো এবং চীনা ভাষা শিক্ষায় উৎসাহিত করবো।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী, যাতে দুই দেশ একযোগে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে এবং উন্নতির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধি দল। যেখানে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৭টি প্রস্তাবে একমত হয়েছে খেলাফত মজলিস। দ্বিমত পোষন করেছে ১৫টি প্রস্তাবে আর আংশিক একমত ৪টি প্রস্তাবে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি ভবনে আসেন। এসময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ’সহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে দলটি সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ জানান, সংবিধানের মূল নীতি থেকে বহুত্ববাদ শব্দ বাদের বিষয়ে জোর প্রস্তাব্ করেছি। এর বদলে ‘বহু মত’ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাদেশিক সরকারের বিষয়েও দ্বিমত প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে খেলাফত মজলিশ।

নির্বাচন ইস্যুতে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারে যারা দোষী, তাদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার আগে দৃশ্যমান হওয়ার আগে নির্বাচন চায় না তারা। আর নাগরিক কমিটিতে ছাত্রদের রাখা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছিলো বলেও জানান তারা। কারণ এতে তাদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদন গ্রহণকালে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততার প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা পুরো প্রতিবেদনটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করব, যাতে নাগরিক, বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রস্তাবিত সংস্কার সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, এই সংস্কারগুলো স্কুলে পাঠ্য হওয়া উচিত, যাতে ছোটবেলা থেকেই নাগরিক সচেতনতা গড়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, আর দেরি করা চলবে না। এই সংস্কারগুলোকে কাগজ থেকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে এখনই।

কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে এই প্রতিবেদনটি মাসব্যাপী পরামর্শ, গবেষণা ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়।

অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, আমরা প্রস্তাব করছি যেন ঐকমত্য কমিশন এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও প্রতিফলনের কাজটি করে। প্রথম অংশে আমরা কাঠামোগত সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং পরের অংশে উপস্থাপন করেছি ‘একটি ধারণা যা হাজারো বাস্তবায়নকে সম্ভব করবে’ — এমন একটি কাঠামো যা বাস্তব ও টেকসই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্থানীয় সরকারকে আরও দক্ষ ও জনসেবামুখী করা। আমরা সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি পৃথক অধ্যায় উৎসর্গ করেছি এবং প্রস্তাব করেছি, স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি তদারকি ভূমিকা পালন করুক যাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।”

প্রতিবেদনে শহরভিত্তিক স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোরও চিহ্নিত করা হয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে।

অধ্যাপক তোফায়েল বলেন, বিভাগীয় অদক্ষতা ও দুর্নীতি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প থেকে শুরু করে দৈনন্দিন সেবার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে আছে — প্রকল্প পর্যায়ে, সেবা পর্যায়ে, এবং আন্তঃবিভাগীয় স্তরে। এসব মোকাবিলা না করলে কার্যকর শাসন ব্যবস্থা কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে।

উক্ত সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, ড. মাহফুজ কবির, মহসুদা খাতুন শেফালী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, এলিরা দেওয়ান, অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, এ. কে. এম. তারিকুল আলম, হেলেনা পারভীন এবং মজবাহ উদ্দিন খান।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার কাকরাইলে হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা শেষে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এ দাবি জানান।

মামুনুল হক বলেন, আমরা দেখেছি, নারী অধিকার সংস্কার কমিশন কর্তৃক কিছু প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে এবং সেটি ঐকমত্য কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা হয়েছে। সেখানে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামি উত্তরাধিকার আইন এবং ইসলামিক পারিবারিক আইনকে বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই প্রস্তাবনাকে চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু এই প্রস্তাবনা বাতিল নয়, বরং এই ধরনের বিতর্কিত ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাতকারী কটাক্ষপূর্ণ প্রস্তাবনা দেয়ার কারণে এই কমিশনকে বাতিল করার দাবি করছি।

তিনি আরও জানান, এ ঘোষণা প্রত্যাহার দাবিতে আগামী ৩ মে মহাসমাবেশ করা হবে। যদি এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নারী অধিকার কমিশনের প্রস্তাবনাকে প্রত্যাহার এবং ইসলামকে কটাক্ষপূর্বক এই ধরনের প্রস্তাবনা দেয়ার দায়ে এই কমিশনকে বাতিল না করা হয়, তাহলে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ৩ মে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সেখানে তাদের বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের সরকারি সফরে আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে তিনি ‘আর্থনা সামিট-২০২৫’- এ অংশগ্রহণ করবেন।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে যাচ্ছেন। দোহায় সামিটে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দেশটির আমিরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। 

আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল এই দুদিনে সামিটে উপস্থাপনা, ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ড. ইউনূস।

দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন। এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।

এছাড়াও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছে ভারত। ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ এবং ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম, দ্য হিন্দু।

এতে তিনটি চলমান প্রকল্পের কাজের পাশাপাশি পাঁচটি আলাদা জায়গায় জরিপের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এরমাধ্যমে বাংলাদেশের রেলপথের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) যুক্ত করার পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটেছে।

বাংলাদেশে নিজেদের রেল নেটওয়ার্ক তৈরির বদলে এখন নয়াদিল্লি এই অর্থ দিয়ে উত্তর ভারতের রেলপথ অবকাঠামোকে উন্নত করছে। এছাড়া বাংলাদেশকে এড়িয়ে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবছে দেশটি। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

দ্য হিন্দু জানিয়েছে, স্থগিত করা এ প্রকল্পগুলো ভারতের ‘স্থলবেষ্টিত’ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বাংলাদেশের মাধ্যমে যুক্ত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ছিল সরু শিলিগুঁড়ি করিডরের (চিকেন নেক করিডর) ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানো। যেটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করার একমাত্র পথ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো নির্মাণ বা অন্য উপকরণ আমরা পাঠাচ্ছি না। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংযোগ রুটের অর্থায়ন বন্ধ আছে। (প্রকল্প পুনরায় শুরু করতে) প্রথমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত অংশে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।’

২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের মূল্য ছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ভারতের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার।

স্থবির হয়েছে যেসব প্রকল্প
ভারতের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন তিনটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ এবং খুলাবুড়া-শাহবাজপুর রেললাইন, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ প্রকল্প ভারত সরকারের ৪০০ কোটি রুপি সহায়তায় করা হচ্ছিল। এই রেল সংযোগের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। যার ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন বাংলাদেশে। আর ত্রিপুরায় ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। খুলাবুড়া-শাহজাদপুর রেললাইন এই প্রকল্পের অংশ। এটির লক্ষ্য ছিল নতুন রেললাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইনের মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সংযোগ উন্নত করা।

অপরদিকে, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছিল কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের খরচ ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। এটির মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। এরমাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোংলা বন্দর ব্রডগেজ রেললাইনের আওতায় আসবে। এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার রয়েছে ভারতের।

অপরদিকে ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা আছে। তবে বিলম্বিত এ প্রকল্পের কাজটি গত বছর পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপির এ প্রকল্পের কাজটি করা হচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায়। তবে এক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ে কিছু ঝামেলা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।

আর পাঁচটি আলাদা জায়গায় যে স্থান জরিপের কাজ চলছে সেগুলোর কাজও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।

বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল
(পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে) ভারত তার অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল পরিবর্তন করছে বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

এর অংশ হিসেব ভারত সরকার উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এরমাধ্যমে নিজেদের নির্ভরতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেখানে এখন জরিপ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের এক কর্মকর্তা।

একইসঙ্গে, ভারত ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। যদিও লজিস্টিক্যালি এ রুটগুলো খুবই জটিল হবে। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে ভারত।

উদাহরণ স্বরূপ, ভারত ও নেপালের মধ্যে রেললাইন সংযোগ স্থাপনের আগের যে পরিকল্পনাটি আছে সেটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। যারমধ্যে রয়েছে বিরাটনগর-নিউ মালের মধ্যে ১৯০ কিলোমিটার এবং কাজালিবাজার সেকশনেরর গালগালিয়া-ভদ্রপুর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ।

অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গে (শিলিগুঁড়ি করিডরের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে) কুমেডপুর-আম্বারি ফালাকাতা অংশে ১৭০ কিলোমিটার নতুন লাইন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করতে স্থাপন করা হবে আরও ২৫ কিলোমিটার নতুন লাইন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।