রাজনীতি

প্রায় ৬ বছর পর সস্ত্রীক দেশে ফিরেছেন নন্দিত সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমান। রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারা।

বিমানবন্দরে নেমেই দেশবাসীর প্রতি লাল গোলাপের শুভচ্ছা জানান শফিক রেহমান। আগে থেকেই তাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজন ও দৈনিক যায়যায়দিনের সহকর্মীরা।

দেশে এসে প্রথমেই তিনি জানান, বাংলাদেশে আসার পর সবচেয়ে বেশি অনুভব করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কোনোভাবেই তার মৃত্যুদণ্ড চান না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেচে থাকাই শেখ হাসিনার অপরাধের প্রকৃত শাস্তি হবে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র জনতার অবদান মনে রাখতে হবে। তাদের জন্য অনেক কিছু করার আছে বাংলাদেশের।

সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা এবং উপজেলা পরিষদের মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে সরকার। তাছাড়া এসব স্থানে প্রশাসকও নিয়োগ করতে পারবে। এমন বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শনিবার (১৭ আগস্ট) এ সংক্রান্ত পৃথক অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে বলা হয়, অন্য কোনও আইন বা বিধানে ভিন্ন কিছু থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে সরকার মেয়র, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে এসব স্থানে একজন প্রশাসকও নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

এতে আর বলা হয়, এক্ষেত্রে প্রশাসকের কাজে সহায়তা করার জন্য একাধিক সদস্যের কমিটিও গঠন করতে পারবে সরকার। কমিটির সদস্যরা যথাক্রমে মেয়র, চেয়্যারম্যান ও কাউন্সিলরদের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিচারক, রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতর (আইএসপিআর)। রোববার (১৮ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যপক অবনতি হয়। সে সময় প্রাণহানির শঙ্কায় ৫জন বিচারক, ২৪ জন রাজনীতিবিদ, ২৮ জন পুলিশের কর্মকর্তা, ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ ১২ জন ও তাদের পরিবারর ৫১ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৬১৫ জন নিজ উদ্যোগে সেনানিবাস থেকে চলে যায়। এছাড়া এখন পর্যন্ত চারজনকে অভিযোগ বা মামলার ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনজন ও তাদের পরিবারের চারজন সদস্যসহ মোট সাতজন সেনানিবাসে রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) মধ্যরাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ’র বাবা।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী’সহ ৯১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’এর শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহও অংশ নেয়।

গত ১৮ জুলাই, আসামিদের প্রত্যক্ষ মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান খালিদ।

পরে ২০ জুলাই, হাসপাতালে তার লাশ সনাক্ত করা হয়। মামলার বাদীর অভিযোগ, মামলা নিয়ে শুরু থেকেই গড়িমসি করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাত দু’টা নাগাদ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মামলার এজাহার গ্রহণ করা হয় বলে জানান বাদী কামরুল হাসান।

দুপুরে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বে গণফোরামের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে যান। এসময় সুব্রত চৌধুরী বলেন, খুনি হাসিনা দেশে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।গুলি করে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। আজ ঢাকা মেডিকেলে এসে যে চিত্র দেখলাম তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

পরে তিনি সকল আহতদের উন্নত চিকিৎসার দাবি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিরেক্টর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং আহতদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি আরও বলেন, শহীদদের সঠিক তালিকা করে জাতীয় বীরের মর্যাদা এবং আহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার সব খরচ সরকারকে বহন করতে হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, ছাত্র সম্পাদক মো. সানজিদ রহমান শুভ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিয়াদ হোসেন।

পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে এনে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করা হবে। শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

এসময় মিনু বলেন, আওয়ামী লীগ যে লুটপাট করেছে, তার জবাব দিয়েছে ছাত্র জনতা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে রাজশাহীতে যে তিনজন শহীদ হয়েছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের হত্যার পেছনে হুকুম দাতাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত রাজশাহীতে মামলা হবে।

আন্দোলনের সময় পুলিশের পাশাপাশি, একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে তারও বিচার হবে। বর্তমান সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলেও আশা করেন বিএনপি’র এই নেতা।

বিএনপি নেতাকর্মীরা কোনো বিশৃঙ্খলার মধ্যে জড়ালে, দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মিনু। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা দলীয় হাইকমান্ড বরদাস্ত করবে না বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করবে সরকার। সরকারি হাসপাতালগুলোয় আহতদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।

শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ’র সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও।

গণআন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত কেয়ার ইউনিট তৈরির দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ডা. আহমেদুল কবীর জানান, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসারতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল এরইমধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। কেউ সমস্যার মুখোমুখি হলে জরুরি হট লাইন নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুসহ অমুসলিম নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করা হয় বৈঠকে। তারা এ সময় নাগরিকদের ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে অমুসলিম নাগরিকদের পাশে থাকার কথা বলেন। নেতারা বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

যদি বিএনপির কথা বলে কেউ অপকর্মের সাথে জড়িত থাকে তাদের নাম ও অভিযোগ দিলে দলগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন বিএনপির নেতারা।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।