দেশ জনপথ

ঋতুস্রাব নারীর জীবনে একটি ক্রিয়া যা নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে আবার নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়ে যায়। সাধারণত প্রতি মাসে ৭ দিন নারীদের ঋতুস্রাব চলে যেখানে শরীরে জমে থাকা দূষিত রক্ত বের হয়ে যায়। আগে নারীদের ঋতুস্রাব শুরু হতো ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সে। কিন্তু এখন সেই সময়কাল কমে ৭ থেকে ৮ বছরে এসেছে।

কোনও দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের মতো মেয়েদের শারীরিক গঠন এবং শারীরের কার্যকলাপে যে পরিবর্তন ঘটছে তার উল্লেখ রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায়। ১৮৪০ সালে উন্নত দেশগুলোতে মেয়েদের ঋতুচক্র শুরু হওয়ার বয়স ছিল গড়ে ১৭ বছর।
কিন্তু২০০০ সালে সেই পরিসংখ্যানটি বদলে পাঁচ বছর এগিয়ে ১৩ থেকে ১৪ বছরে এসেছিল ঋতুস্রাব শুরুর গড় বয়স। তার জন্য অবশ্যই জিন এবং পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে। খাদ্যাভাসের পরিবর্তনও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়তি ওজনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত ফ্যাটজাত খাবার মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তুলছে।

নির্দিষ্ট বয়সের আগে ঋতুচক্র শুরু হওয়ার সঙ্গে কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক নানা রকম সমস্যার যোগ রয়েছে। মস্তিষ্কের কোথাও টিউমার হলেও হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার, এমন অনেক ওষুধ রয়েছে, যা প্রয়োগ করলেও হরমোনের হেরফের ঘটে। ফলে মেয়েদের শারীরিক বাড়বৃদ্ধি হয় দ্রুত গতিতে।

এছাড়া করোনা মহামারীর সময় বিভিন্নি পরিবর্তন শরীরে উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। পাশাপাশি অল্পবয়সিদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো সমস্যা বেড়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং রোগমুক্তি পাওয়া নারীদের দেহে হরমোনের মাত্রায় হেরফের বিষয়ে ভারতের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, পুরো বিষয়টিই কিন্তু ঘটছে হরমোনের কারসাজিতে। তা শুধু কোভিড কেন, আমরা যে প্লাস্টিকের বোতলে জল খাই, সেখান থেকে এক ধরনের রাসায়নিক বেরোয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই রাসায়নিকটি মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। যে কোনও কারণে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলেই পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধি এগিয়ে আসতে পারে। তাই কোভিড পরবর্তী সময়ে মেনার্কি এগিয়ে আসার ঘটনা এখন খুবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।

শিশুকন্যাদের ঋতুস্রাবের সময় এগিয়ে আসার পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, যাদের সময়ের আগে ঋতুচক্র শুরু হয়, তাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ২৩ শতাংশ বেশি।

এছাড়া হার্টের শিরা-ধমনী সংক্রান্ত রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকল শুরু হলে অনেক শিশুই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতাও বেড়ে যায়। তাই যে সময়েই বয়ঃসন্ধি আসুক না কেন, দেখে নেওয়া জরুরি, তার সঙ্গে শারীরিক কোনও জটিলতা রয়েছে কি না। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাও জরুরি।

সন্তান ধারণের চেষ্টা করার পর টানা এক বছর সময়কাল যদি কোনো দম্পতি সফল না হন, তাহলে তাকে ইনফার্টাইল বা সন্তান ধারণে অক্ষম হিসাবে গণ্য করা হয়। বন্ধ্যত্ব নারী ও পুরুষ উভয়েই হতে পারে। সন্তান ধারণে অক্ষমতার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ই সমানভাবে দায়ী। সন্তান না হলে শুরুতেই শুধু স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বন্ধ্যত্বের নানা চিকিৎসা বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে। এ চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, ব্যয়বহুল এবং কষ্টকর।

* নারীর বন্ধ্যত্বের কারণ

▶ পলিসিস্টিক ওভারি, যার মাধ্যমে একটা করে ওভাম আসার কথা, সেটা আসে না, প্রেগন্যান্সির জন্য যা জরুরি। জরায়ুর কিছু সমস্যা থাকে, যা জন্মগত হতে পারে আবার অসুখের কারণে হতে পারে।

▶ জন্মগত সমস্যার কারণে হয়তো ডিম আসছে না, টিউব ব্লক, জরায়ু যেটা আছে সেটা বাচ্চাদের মতো। আরও কিছু অসুখ আছে, যেমন-ওভারিয়ান চকলেট সিস্ট, অ্যান্ডোমেট্রিওসিস, থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও বন্ধ্যত্ব হতে পারে।

▶ যৌনবাহিত রোগের কারণে মেয়েদের প্রজনন অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য বন্ধ্যত্ব হতে পারে।

* পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ

একটা কারণ এজোস্পার্মিয়া, অর্থাৎ বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু নেই। পুরুষের নালির কোথাও বাধার সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু মিলতে পারছে না। শুক্রাণু তৈরি হওয়ার যে স্থান অর্থাৎ অণ্ডকোষ, কোনো কারণে সেটি পুরুষের তৈরিই হয়নি। অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম। আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না।

এছাড়া টেস্টোস্টেরন হরমোনও ঠিক মতো ‘সিক্রেশন’ না হলে।

অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, প্রজনন অঙ্গে কোনো ধরনের আঘাত, অস্ত্রোপচারের কারণে সৃষ্ট বাধা, প্রজনন অঙ্গে যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, কৈশোরকালে মাম্পস হলে। এমনকি মাথায় চুল গজানোর ওষুধও পুরুষের সন্তান ধারণের অক্ষমতার কারণ।

* চিকিৎসা

নারীর ডিম্বাণু বৃদ্ধির জন্য রয়েছে ওষুধ, হরমোন, ইনজেকশন। ডিম্বাশয়ের নালি ও জরায়ুর সমস্যা দেখতে ল্যাপারস্কপি পদ্ধতি রয়েছে। সম্প্রতি স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে স্টেম সেল থেরাপি। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির দেহ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহ করে কৃত্রিম পরিবেশে তা নিষিক্ত করে আবার স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করা বা ‘টেস্টটিউব বেবি’র ব্যবস্থা শুরু হয়েছে প্রায় ২০ বছর আগে।

পুরুষের জন্য ওষুধ দিয়ে শুক্রাণু বাড়ানো যেতে পারে। প্রতি মিলিতে ৪০ থেকে ১২০ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকার কথা। যদি সংখ্যাটা ১০ মিলিয়নের নিচে নেমে যায়, তাহলে কৃত্রিম গর্ভধারণে যেতে হবে। যদি পুরোপুরি ‘অবস্ট্রাকশন’ হয়ে থাকে যে কারণে শুক্রাণু আসছে না, তাহলে দেখতে হবে অণ্ডকোষটা সক্রিয় আছে কিনা। অণ্ডকোষ সক্রিয় থাকলে সেখান থেকে সুঁই দিয়ে শুক্রাণু নিয়ে এসে টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়া যায়। পৃথিবীর ভালো কেন্দ্রগুলোতেও অবস্ট্রাকশনের সার্জারি সফল হওয়ার হার মাত্র ২৫ শতাংশ। এটি ব্যয়বহুল, বিশ্বব্যাপী পুরুষের বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় এর সাফল্যের হার কম। নারী-পুরুষ দুজনের জন্যই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। এক সপ্তাহের ডোজেই এটি সেরে যায় না। তাই এক্ষেত্রে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘টেস্টটিউব বেবি’র বেসরকারি পর্যায়ে খরচ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিন্তু এটি একবারে সফল নাও হতে পারে। বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা অনেক কষ্টকর। তারপরও একটি সন্তানপ্রাপ্তির জন্য নিঃসন্তান দম্পতিরা বহুদূর পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে প্রস্তুত।

* জীবনযাত্রায় পরিবর্তন জরুরি

আমাদের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে সেটি স্বাস্থ্যসম্মত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। নারীর খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে। ক্যালরি বেশি করে খাওয়া কমাতে হবে। ঘরে রান্না খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। শরীরের স্বাভাবিক ওজন রক্ষা করতে হবে। জীবনাচারণ পরিবর্তন করতে হবে। দিনে ঘুমানো, রাতে জেগে থাকার মতো বদ অভ্যাস বদলাতে হবে। বয়স থাকতে বাচ্চা নিতে হবে।

লেখক : ডা. হাসনা হোসেন আঁখি (ফার্টিলিটি কনসালট্যান্ট ও গাইনোকলোজিস্ট, হার্টবিট ফার্টিলিটি ক্লিনিক, গ্রীণ রোড, ঢাকা)।

 

ত্বকের যত্ন

পানি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। প্রতিদিন মুখে ৮ থেকে ১০ বার পানির ঝাপটা দিলে ত্বকের অনেক সমস্যা কমে যাবে।বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে ফেলুন বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

অনেকে মনে করেন সানস্ক্রিন শুধু রোদের জন্য। এটি ভুল ধারণা। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। ভালো মানের সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

কোনো গয়না পরা অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে তা শুকিয়ে নিন। রোদ কিংবা বৃষ্টি থেকে ত্বককে বাঁচানোর জন্য সঙ্গে ছাতা রাখুন।

গরমে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ছেন তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের অধিকারীরা। একটু গরমেই ত্বকের তেল বের হয়ে যায়। এর মধ্যে ধুলাবালু আটকে যাচ্ছে। ঘাম হচ্ছে বেশি। যতটা সম্ভব ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। দুই ঘণ্টা পরপর তেলবিহীন টোনার অথবা ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে গোলাপজলে অল্প গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া স্বাভাবিক ত্বক হলে পরিষ্কার তুলায় টোনার দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন।

চুলের সঠিক যত্নে ও চুল পরিষ্কার রাখতে নিয়ম মেনে শ্যাম্পু করা উচিত
চুলের সঠিক যত্নে ও চুল পরিষ্কার রাখতে নিয়ম মেনে শ্যাম্পু করা উচিতছবি : সংগৃহীত

চুলের যত্ন

আবহাওয়ায় এখন আর্দ্রতা বেশি। তাই চুল সহজে তৈলাক্ত হয়ে পড়ছে। ময়লা ও ঘাম মিশে চুলে চলে আসছে আঠালো ভাব। বৃষ্টিতে অথবা ঘামে ভেজা থাকছে চুলের গোড়া। হতে পারে ছত্রাকের সংক্রমণ। এ সময়ে অনেকের চুল বেশি পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে শ্যাম্পু করুন। মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। বৃষ্টিতে চুল ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে আবারও চুল ধুয়ে নিন।

বৃষ্টির দিনে পানিরোধী প্রসাধনী বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা
বৃষ্টির দিনে পানিরোধী প্রসাধনী বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরাছবি : কবির হোসেন

সাজ

বৃষ্টির দিনে সাজতে চাইলে এমনভাবে সাজুন, হুটহাট ভিজে যেন নষ্ট না হয়। বৃষ্টির সময় চারপাশ কিছুটা অন্ধকার থাকে। মন খারাপ করা ভাবও এসে যায়। সাজে তাই একটু সজীবতা আনা যেতে পারে। পানিরোধী প্রসাধনী বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে সহজে মেকআপ নষ্ট হয় না। নীল কাজল বা আইলাইনার ব্যবহার করতে পারেন।

পায়ের যত্নে নিয়মিত পেডিকিউর করুন
পায়ের যত্নে নিয়মিত পেডিকিউর করুনছবি : সুমন ইউসুফ

পায়ের যত্ন

বৃষ্টির পানিতে অনেকের পায়ের ত্বকে সংক্রমণ দেখা যায়। সংক্রমণ দূর করতে আধা কাপ হলুদের রসের সঙ্গে আধা কাপ নিমপাতার রস মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে নিলেই ঘন একটি মিশ্রণ তৈরি হবে। এটি নিয়মিত পায়ে লাগাতে হবে। এরপর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে সংক্রমণ দূর হবে। এ সময় নিয়মিত পেডিকিউর করুন।

জুনের মাঝামাঝি হয়ে গেলেও বর্ষার বৃষ্টির দেখা নেই। এই ভ্যাপসা গরমে আপনার পাশে লাইনে দাঁড়ানো কেউ যদি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তাহলে কী করবেন? কিংবা ধরুন আপনার পরিচিত কেউ, বাসায় আপনার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আসুন জেনে নিই কী করা উচিত।

মানুষের চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। আর এই মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহের। এই  রক্তপ্রবাহে সঠিক পরিমাণে রয়েছে দ্রবীভূত অক্সিজেন, গ্লুকোজ, লবণসহ আরো কিছু রাসায়নিক পদার্থ। আপনার আমার অজান্তেই, আমাদের শরীর তা বজায় রেখে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এর কোনো কিছুতে ব্যত্যয় ঘটলে মানুষ অচেতন হয়ে পড়তে পারে। কারণের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তি অজ্ঞান অবস্থায় থাকতে পারেন অল্প সময় থেকে দীর্ঘমেয়াদি।

মোটা দাগে দুই ধরনের কারণে এই অচেতন হওয়া ঘটতে পারে। যেমন: 
১. রক্ত দেখলে, খারাপ খবর শুনলে, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ঢুকানোর আগেই সুঁই দেখে কেউ কেউ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। এটি তাৎক্ষণিক ঘটে এবং খুব অল্প সময়ে চেতনা ফিরে আসে। এটি খুব মারাত্মক কিছু নয়।

২. এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গ্র্যাভিটির কারণে শরীরের নিচের অংশের রক্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে পৌঁছাতে না পারলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য এক ধরনের ওষুধ আছে সেটা খেলেও এমন হতে পারে। তবে, এ ধরনের ওষুধ শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। 

এবার আসি গুরুতর সমস্যাগুলোতে, যেগুলোতে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে:
১. আমাদের দেশের বয়স্কদের একটি বড় অংশের রয়েছে ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা। হার্টের যেকোনো ধরনের সমস্যায় রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলেও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এই দুই কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত্যুঝুঁকি সর্বাধিক।

২. শরীর থেকে একসঙ্গে অনেক পরিমাণ রক্তপাত হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।

৩. ডায়রিয়া কিংবা অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ, পানি বেরিয়ে গিয়েও অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন।

৪. একটি বিশেষ ধরনের খিঁচুনি আছে যেখানে ব্যক্তি শুধু অজ্ঞান হয়ে পড়েন, সেটিও হতে পারে। এছাড়া লিভার-কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগ, থাইরয়েডের সমস্যা, পারকিনসন ডিজিজ জাতীয় সমস্যায় আক্রান্ত থাকলে মাঝে মাঝে এমন অচেতন হয়ে যেতে পারেন।

অজ্ঞান হয়ে পড়া খুব সাধারণ একটি রোগলক্ষণ। হাসপাতালে আসা রোগীর প্রতি দশজনে একজন অজ্ঞান হয়ে আসেন। এর পিছনে রয়েছে খুব সাধারণ দৈনন্দিন কারণ থেকে জীবনঘাতি ব্যাধি পর্যন্ত নানা ধরনের সমস্যা। তাই এর প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি বারবার এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রয়োজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

ডা. প্রদীপ্ত চৌধুরী, এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), রেসিডেন্ট, বিএসএমএমইউ

ভালোবেসে বিয়ে হোক কিংবা পরিবারের পছন্দে, শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নিতে কমবেশি সবারই কিছুটা সময় লাগে। এমনকি চেনা সম্পর্কগুলোও আগের থেকে একটু হলেও আলাদা হয়ে যায়। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে না থাকলেও অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জেরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।

সময় ব্যবস্থাপনা
অফিস, নিজের কাজ আর সংসার সামলে দুই বাড়িতেই সময় দেওয়া বেশ কঠিনই বলা যায়। আমাদের সমাজে পুরুষদের এ বিষয়ে কিছুটা দায়মুক্তি থাকলেও নারীর ক্ষেত্রে একদমই উল্টো। বিয়ের পর বেশ কিছুদিন চলে যায় নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ায়। এর মধ্য থেকেও সপ্তাহান্তে সময় বের করে শ্বশুর-শাশুড়ির খোঁজ নিন। আপনার ব্যস্ততার বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।

তর্ক এড়িয়ে চলা
আপনার কোনো কথার সূত্র ধরে যেন পারিবারিক সংকট তৈরি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। অনেক সময় কোনো বিষয়ে কথার উত্তর দিতে খুব ইচ্ছা হবে, এমন পরিস্থিতিতেও চুপ থাকতে চেষ্টা করুন। হয়ত বিষয়টি পরে বুঝিয়ে বলতে পারবেন। উত্তর দেওয়ার সুযোগ আপনি পরেও পাবেন। এতে বড় ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।  

স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া
শ্বশুর-শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজ নিন নিয়মিত। ওষুধ ঠিক সময়ে খাচ্ছেন কি না  কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন কি না তার খোঁজ নিন। এতে আপনার প্রতি ভরসা করতে শুরু করবেন শ্বশুর-শাশুড়ি। এ ছাড়া শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যেরও খোঁজখবর নিন।

একসঙ্গে বেড়ানো
সঙ্গীকে নিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন। দূরে সম্ভব না হলে কাছেপিঠে কোথাও বেড়াতে যান। একদিন সবাই মিলে সারাদিনের জন্য বাইরে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসুন। এ ছাড়া সপ্তাহান্তে বা মাসে দুয়েকবার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে পারেন।

পছন্দের খাবার রান্না করা
শ্বশুরবাড়িতে মাঝেমধ্যে তাঁদের পছন্দের কোনো খাবার রান্না করতে পারেন। এতে সম্পর্ক অনেক বেশি দৃঢ় হবে। কর্মজীবীরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রান্নার সময় বের করুন। প্রয়োজনে শাশুড়ির সঙ্গে মিলে রান্না করতে পারেন।

কাছাকাছি বাড়িতে বসবাস
অশান্তি এড়াতে অনেকেই আলাদা বাড়িতে থাকেন। তবে সম্ভব হলে কাছাকাছি বাড়িতে থাকুন। এতে যেকোনো প্রয়োজনে এবং দেখভাল করতে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া সহজ হবে।  

ধৈর্য রাখা
শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ প্রতিকূল হলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাপন এবং বেড়ে ওঠার পরিবেশ আপনার চেয়ে আলাদা হতে পারে, এটি মেনে নিন। কিছু দিন গেলে পরিস্থিতি সহজ হবে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
শ্বশুরবাড়ির যেকোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন। বিবাহবার্ষিকী বা জন্মদিনে কেক ও উপহার নিয়ে নিজেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। এতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্কও গড়ে উঠবে। 

উপহার দেওয়া
কোনো উৎসবে বা দিবসে শ্বশুর-শাশুড়িকে উপহার দিন। শ্বশুর-শাশুড়ির পছন্দ কিংবা প্রয়োজন জেনে উপহার দিতে পারেন। এতে সহজে তাদের মন জয় করা যাবে। সম্ভব হলে শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যেরও উপহার দিন।

সীমাবদ্ধতা বজায় 
শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা সীমাবদ্ধতা বজায় রাখুন। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। আবার আপনার ব্যক্তিগত বিষয়েও যেন তারা খুব একটা হস্তক্ষেপ করতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন কিংবা সঙ্গীকে দিয়ে বলাতে পারেন। যেকোন সম্পর্কেই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।

বায়ু দূষণ, র্বতমান সময়রে অন্যতম বড় সমস্যা। ক্রমইে দূষতি বায়ুতে ভরে যাচ্ছে আমাদরে পৃথবিী। বাড়ছে শ্বাস-প্রশ্বাসরে সমস্যা। এমনকি ছোট বাচ্চাদরে মধ্যওে নশ্বিাসরে কষ্ট এখন প্রায়ই দখো যায়। নিয়মিত যোগাভ্যাস কন্তিু আপনাকে এই সমস্যা থকেে মুক্তি দতিে পার। ভাবছেন, যোগ ব্যায়ামরে সঙ্গে শ্বাসকষ্টরে কী সর্ম্পক? সর্ম্পক আছ। নির্দিষ্ট কয়েকটি আসন নয়িমতি ভাবে অভ্যাস করলে শ্বাসকষ্ট আপনার ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না। এক ঝলকে সেই আসনগুলি জনেে নেওয়া যাক।

অনুলোম-বিলোম:

যেকোনও যোগা সেশন শুরু করুন আনুলোম-বিলোম দিয়ে। যোগাভ্যাসের ফল আরও ভালো ভাবে পাবেন আপনি। এই প্রাণায়াম আমাদের দৈহিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, অ্যাজমার সমস্যাকে দূরে সরায়। এছাড়া নিয়মিত অনুলোম-বিলোম করলে তা শরীরকে ঠাণ্ডা করে, হৃদযন্ত্রের সমস্যা মেটায় ও মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছেন যারা, তাঁদের জন্য অনুলোম-বিলোম খুবই দরকারি।

পদ্ধতি
যোগা ম্যাটে পদ্মাসনে বসুন। শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। এবার ডান হাতের তর্জনী দিয়ে বাঁ নাক চেপে ধরে ডান নাক দিয়ে জোরে শ্বাস নিন। ৫-১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ুন। এরকম ভাবে দুই দিকের নাক দিয়েই ১০ বার করে করুন।

উত্তনাসন:

অ্যাজমার সমস্যা সমাধানে উত্তনাসন খুবই প্রয়োজনীয় একটি আসন। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য সহ পেটের নানা সমস্যা দূর করে উত্তনাসন। এছাড়াও ইনসমনিয়া ও মেনোপজের পর মহিলাদের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে উত্তনাসন। নিয়মিত উত্তনাসন অভ্যাস করলে তা মানসিক চাপ কমিয়ে হতাশা দূর করতে সাহায্য করে। নার্ভের সমস্যা, কিডনি, লিভারও ভালো রাখে উত্তনাসন।

পদ্ধতি

যোগা ম্যাটে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দুটি পায়ের মধ্যে এক ইঞ্চির মতো ফাঁক রাখুন। হাঁটু না ভেঙে কোমর থেকে গোটা শরীরকে নিচে ঝুঁকিয়ে দিন। দুটো হাঁটুকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারবেন, এরকম ভাবে শরীরটাকে নিচে ঝুঁকিয়ে দিন। হ্যামস্ট্রিং-য়ে টান না লাগা পর্যন্ত এ ভাবেই থাকুন।

শবাসন:

সব যোগা সেশন শেষ হয় শবাসনের মাধ্যমে। যোগাভ্যাস করার সময় শরীর যে স্ট্যামিনা ক্ষয় করে, তা আবার পুনরুজ্জীবিত হয় শবাসনের মাধ্যমে। এর নানা উপকারিতা আছে। তার মধ্যে একটি হল শ্বাসকষ্ট দূর করা। এছাড়াও বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মানসিক উদ্বেগ কাটিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে শবাসন। নার্ভের সমস্যার স্বাভাবিক করে নিয়মিত শবাসন অভ্যাস।

পদ্ধতি

আপনার যোগা ম্যাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। সারা শরীরকে আলগা করে দিন। পা দুটো সোজা ও দুই হাত শরীরের সঙ্গে লম্বা করে রাখুন। যেন মনে হয় আপনার শরীরে কোনও প্রাণ নেই। হাতের তালু দুটো সিলিং-এর দিকে মুখ করে রাখুন। এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস গোনার চেষ্টা করুন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট থাকুন। শবাসনের অবস্থায় থাকার সময় মেডিটেশন করুন।

ডিপ্রেশন এনজাইটি রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটতে হবে। আমি প্রায়শই এ পরামর্শ দিয়ে থাকি। হাঁটলে ব্রেইনের কোষ থেকে কিছু নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিক ভাবেই ডিপ্রেশন কাটাতে সহায়ক।

কাজকর্মের ব্যস্ততায় আমরা অনেক সময় হাঁটতে পারি না। তবে কিছু কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে খুব সহজেই আমাদের হাঁটা হয়ে যায়। যেমন-

১. বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিতে তার সাথে হাঁটুন এবং গল্প করুন। এতে দু'জনের লাভ। আপনার সন্তানকে আপনি একটা ভালো অভ্যাস করাচ্ছেন এবং তার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাচ্ছেন। আর এ মূহুর্তের কথা দুজনের আজীবন মনে থাকবে। কিন্তু গাড়িতে বা বাহনে গেলে আপনার বা আপনার সন্তানের হাতে থাকবে মোবাইল বা ট্যাব। 

২. অফিস থেকে গন্তব্যে যেতে দু’একটা স্টেশন আগে নামুন। নেমে আপনার গন্তব্যে বা আবাসস্থলে যান। তখন বাসায় গেলে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে। ঝগড়াঝাটির সম্ভাবনা কমে যাবে। শরীরে উদ্যম পাবেন। আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হলে দুটোপয়সাও সেভ হবে যা দিয়ে মাস শেষে আপনি সুন্দর কিছু একটা কিনতে পারবেন।

৩. অফিস আদালতে লিফট এলিভেটর ব্যবহার না করে অবশ্যই সিঁড়ি ব্যবহার করবেন। এতে এক সময় সিঁড়ি ব্যবহার অভ্যাস হয়ে যাবে। আপনার ফিগার টাও চমৎকার একটা শেইপে চলে আসবে।

৪. আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি হলে সেটা পার্ক করবেন একটু দূরের পার্কিংয়ে। তাতে গাড়িতে উঠতে ও নেমে অফিসে যেতে আপনার খানিকটা হাঁটা হয়ে যাবে। শরীরটাও ঝরঝরে হয়ে যাবে অজান্তেই।

৫. লাঞ্চ করতে বা ব্রেকফাস্ট করতে একটু দুরের রেস্ট্রুরেন্ট চয়েস করবেন এবং হেঁটে যাবেন। এতে খাবারের আগে ও পরে হাঁটার কাজটা হয়ে যাবে। খাবার ডাইজেস্ট ও ভালো হবে।

৬. রাতে খাবারের পর একটু হাঁটবেন অথবা রাতে এশার নামাজ রাতের খাবারের পর রুটিনে রাখবেন। তাতে শরীর চর্চার ও সাইকোথেরাপি দুটোই হয়ে যাবে। নামাজের মাধ্যমে খুব ভালো সাইকোথেরাপি হয়। 

আরাফাত নিয়মিত ব্যায়াম করেন খালি হাতে।

আরাফাতের সাপ্তাহিক রুটিনটা এমন—

  • ২ দিন খালি হাতে স্ট্রেংথ ট্রেনিং।

  • ২ দিন কোর ওয়ার্কআউট। এই ব্যায়াম করেন পেট থেকে কোমর পর্যন্ত।

  • ২ দিন হিট ট্রেনিং। হিটের পূর্ণ রূপ হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং। এটি হলো পুরো শরীরে ব্যায়াম। ব্যায়ামের রুটিনে ১ দিন যোগব্যায়াম থাকে আরাফাতের।

  • ১ দিন পুরো বিশ্রাম। আরাফাতের ভাষায় বিশ্রাম মানে সত্যিকারের বিশ্রাম।

  • এর বাইরে সপ্তাহে ৩ দিন সাঁতার কাটেন আরাফাত।

  • আরাফাত বললেন, ‘আমি যেহেতু ট্রায়াথলন করি, তাই সাঁতার, দৌড় আর সাইক্লিং চর্চা করি জীবনযাপনের অংশ হিসেবেই। কোনো ইভেন্টের আগে সপ্তাহে ৪ বার সাইক্লিং, ৫ বার দৌড় চর্চা করি।’ প্রতিযোগিতায় যে দূরত্ব পেরোতে হবে, সেই দূরত্বই থাকে চর্চায়।

কয়েক দিন আগে এক সন্ধ্যায় নিজের বাসা পলাশী থেকে আরাফাত এলেন কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো অফিসে। হালকা হাঁপাচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতে আরাফাত বললেন, ‘বিকালে দৌড়াচ্ছিলাম। ভাবলাম আবার পোশাক বদলে আসতে সময় লাগবে বেশি। আর রাস্তাতেও অনেক জ্যাম। তাই দৌড়ে এলাম।’ টেকনাফ থেকে বাংলাবান্ধা ১,০০৪ কিলোমিটার দৌড়ানোর অভিজ্ঞতা যার, সেই আয়রনম্যানের জন্য এই দূরত্ব তো নস্যি!

আরাফাত বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক। অফিসে প্রতিদিন যাতায়াত করেন সাইকেলে। বললেন, ‘ঢাকায় মোটামুটি সাইকেলে যাই সব জায়গায়। শ্বশুরবাড়ি কিশোরগঞ্জেও সাধারণত সাইকেলে যাওয়া হয়।’ আর করোনার সময় নোয়াখালীর নিজ বাড়িতেও ঢাকা থেকে সাইকেলে গিয়েছেন আরাফাত। আর সবকিছুর পরে সপ্তাহে এক দিন ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার সাইকেল চালান আরাফাত।

ট্রায়াথলনে তিনটি খেলার সমন্বয় ঘটে। আরাফাত যোগ করলেন, ‘ট্রায়াথলনের চতুর্থ অংশ হলো পুষ্টি। এটা আমি নিশ্চিত করি পরিকল্পনা ভিত্তি করে।’

আয়রনম্যান, তাই তাঁকে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হয় সব সময়। ‘আসলে সবার জন্যই ফিটনেস দরকার। আর তা সহজেই করা যায়।’ প্রশ্ন জাগতে পারে, আয়রনম্যান চ্যালেঞ্জ জয় করার জন্য ফিটনেস ধরে রাখতে আরাফাত কি নিয়মিত জিম করেন? কঠিন ডায়েট করেন? ব্যায়ামের ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন?

এসব প্রশ্নের উত্তরই নেতিবাচক। আরাফাত বলেন, ‘আমি সব সময় নিজের শরীর ব্যবহার করে খালি হাতের ব্যায়াম (ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ) করি। খুব বেশি খাবার খাই না। পরিকল্পনা করে খাবার খাই, বিশেষ করে প্রতিযোগিতা বা ইভেন্টের সময়।’ বাংলা চ্যানেল সাঁতার, লম্বা দূরত্বের দৌড় কিংবা আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা—এসব ইভেন্টের আগে চার মাস ধরে প্রস্তুতি নেন আরাফাত। আর সারা বছরের প্রতিদিনই চলে তাঁর চর্চা। এই চর্চাও বেশ ক্যাজুয়ালি করেন আরাফাত।

পাঁচ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চি উচ্চতার আরাফাতের ওজন ৬১ কেজি। একহারা ছিপছিপে গড়ন। গত বছরের নভেম্বরে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন বঙ্গোপসাগরে ১৬.১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল সাঁতারে পাশে নৌকা থেকে যখন দেখছিলাম, তখন বোঝা গেছে সাঁতারে তাঁর তীব্র গতি। মনে হচ্ছিল পিচ্ছিল কোনো মাছ গভীর সাগরের বড় বড় ঢেউ কেটে এগিয়ে চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।