অপরাধ

চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে এনামুল হক নামে এক ব্যবসায়ী মামলাটি দায়ের করেন।

আদালত মামলাটি আমলে নিলেও তাৎক্ষণিক কোনো আদেশ দেননি। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪৫০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠনোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় দাড়ি-টুপি দেখে চিন্ময়ের অনুসারীরা তার ওপর হামলা করেন। এতে তার মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম হয়।

এদিকে, মামলা দায়েরের পর চিন্ময়সহ বাকি আসামিদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী নিহত হন। সেদিন পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও আইনজীবী হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।

গত সাড়ে ১৫ বছরে আর্থিক খাতে বিস্ময়কর দুর্নীতি করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ৩ টার্মে দেশের জনগণ দেখেছে ছোট, মাঝারি এবং মেগা প্রকল্পের হিড়িক। কিন্তু এসব প্রকল্পের অনেকগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনমনে। অভিযোগ ছিল বাস্তবতা ও জনস্বার্থ বিবেচনা না করে কেবল লুটপাটের জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

দেখা গেছে, বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্পে হয়েছে পুকুর চুরি। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং মূল্যস্ফীতির কাছে হার মেনেছে বাজেট। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় একাধিক সময়ে অস্থিতিশীল হয়েছে পণ্যের বাজার।

অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতের লুট হওয়া অর্থ দিয়ে তৈরি করা যেত ২৪টি পদ্মা সেতু। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কারমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে তছনছ হওয়া অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পে নয়-ছয়ের কারণে ব্যয় বেড়েছে শতকরা ৭০ ভাগ। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বাস্তবায়ন না হওয়ার আগেই অর্থ ছাড়, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে পাথর স্থাপন বা ফিতা কেটে তছরুপ করা হয় অর্থ। অর্থাৎ দৃশ্যমান একটি আনুষ্ঠানিকতা জানান দেয়াই ছিলো এসবের মূল লক্ষ্য।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে প্রকল্পগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো, সেসব প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়া হয় নি। প্রকল্পগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আসল উদ্দেশ্য ছিলো কোনো গোষ্ঠিকে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া। একাধিকবার একই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে সেই বিশেষ গোষ্ঠিকে সুবিধা করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কৌশলগুলোকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এর ফলে যেসব জায়গায় বড় মাপের ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। ব্যাংক খাতে অর্থ লুটপাট বন্ধে সেগুলোর আগের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে ব্যাংক খাতের হরিলুট অবস্থা। বলা হয়, ব্যাংক খাত ভঙ্গুর করেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এই খাতে লোপাট হওয়া অর্থে ১৪টি মেট্রোরেল অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব। ঋণ খেলাপি এবং আর্থিক অনিয়ম নষ্ট করেছে আর্থিক স্থিতিশীলতা। ব্যহত হয়েছে উৎপাদনশীলতা। বছরে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

রিপোর্টে বলা হয়, পদ্ধতিগত কর ফাঁকি, ছাড়ের অপব্যবহার এবং দুর্বলভাবে কর প্রশাসন পরিচালনায় রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে রাষ্ট্র। গেল ১ দশকে ভিসা ক্রয়, রিক্রুটিং এজেন্সির হুন্ডিতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে ৪টি ঢাকা এমআরটি-৬ (মেট্রোরেল) উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ সম্ভব।

উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা জাল তৈরী করার কথা বলা হলেও, সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরে ছিল প্রকৃত সুফলভোগী। দলীয় বিবেচনার পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকে তাকে ফের পুন:তদন্তের জন্য আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। দলের স্হায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ মনে করেন স্বাধীন বিচারলয় থেকে ন্যায় বিচারই পেয়েছেন তারেক-বাবর।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।

হাফিজ বলেন, পুন:তদন্তের জন্য গ্রেনেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ আদালতে পুন:তদন্তের জন্য আবেদন করলে বিএনপি সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার পেছনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। বরং পাশের দেশের সহযোগিতায় ধর্মীয় উগ্রবাদী কোন সংগঠন এই হামলা ঘটাতে পারে।

আরও চারটি মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়ার পরই তারেক রহমান দেশে ফেরার প্রস্তুতি নেবেন বলেও জানান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান তারেক রহমাহসহ সকল আসামিকে খালাস দেয় উচ্চ আদালত। পাশাপাশি এই মামলার অভিযোগপত্রও অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কেজি স্বর্ণসহ এক মালয়েশিয়ান নাগরিককে আটক করেছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে তাকে আটক করা হয়।

আটককৃতের নাম চো ইয়ো চার। আটকের পর তাকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে একটি ফ্লাইটে ঢাকায় নামেন ওই যাত্রী। এরপর ভিসা অন এরাইভাল এলাকায় এলে তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এনএসআই সদস্যরা তাকে নজরদারি করেন। পরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়।

পরবর্তীতে আর্চওয়ে মেশিনে তার শরীর স্ক্যান করলে শার্টের নিচে ভেস্টের ভেতর স্বর্ণের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পরে তার শরীরে তল্লাশি চালিয়ে ১২টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার প্রতিটির ওজন ১ কেজি এবং আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তি দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন, মামুনুর রশিদ, শহীদ উদ্দীন, ইয়াছিন, আবু হেনা, মোমিনুল ও রহিম। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আটককৃতরা কিছুদিন ধরে সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সাবের হোসেনের বাসায় অবস্থান করছিলেন। মুসলিম হয়েও তারা কেন চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আজাদ বলেন, সরাইপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় তাদেরকে জড়ো হতে দেখে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।

জুলাই-আগস্টের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরীকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর সীমান্ত পথে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী। পরে তাকে জুলাই-আগস্টের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে, গত ৮ আগস্ট অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার মো. মেহেদী হাসান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কে কেমন ভূমিকা রেখেছে, সেটি ধরে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি, যেসব গণমাধ্যম আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ফ্যাসিবাদী বয়ান তৈরি করেছে তাও চিহ্নিত করা হবে। বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা: জবাবদিহিতা ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, সেই সংবাদ সম্মেলনগুলো থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে প্রথম নেতিবাচক মন্তব্য উপস্থাপিত হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার কথা জানান প্রেস সচিব।

এছাড়া শেখ হাসিনার সময়ে সম্পাদকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হলেও সম্পাদক পরিষদ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।গণমাধ্যমে গত ১৬ বছর কার কী ভূমিকা ছিল তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিকদের অভিন্ন ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন, বেতন-সুরক্ষা বাস্তবায়ন, স্বতন্ত্র মিডিয়া কমিশন গঠনসহ ৮টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিদেশ সফর শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা ছিলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিয়মিত ঘটনা। এর উদ্দেশ্য সফরের গুরুত্ব জাতির সামনে তুলে ধরা হলেও বেশিরভাগ সময়েই সেখানে তৈরি হতো বিব্রতকর পরিবেশ।

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে কেন গ্রেফতার করা গেলো না, তা নিয়ে প্রসিকিউশনের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে শুনানির পর এই নির্দেশ দেন।

আদালতে প্রাথমিক তদন্তে নিপীড়নের পটভূমি পাওয়া গেছে বলে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর।

এদিকে, ৫ আসামির পক্ষে লড়তে আসা আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে রাষ্ট্রীয় পদ দেয়া হচ্ছে- তাই আসামিপক্ষের ওকালাতনামা প্রত্যাহার করেছেন তিনি।

এর আগে, সকালে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয় ১২ আসামিকে। আর নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে আনা হয় গোলাম দস্তগীর গাজীকে। এরপর জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকসহ ১৩ আসামিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে অবৈধ চক্রের দৌরাত্ম্য। এ কাজে, ডিএনসিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি জড়িত। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, যেখানেই আপনার বাড়ি হোক- যে কোনো একটি এলাকার নাম দিয়েই মহাখালীর গলি থেকেই বানিয়ে দেবে জন্ম সনদ। ঢাকা উত্তর সিটিতে এর নিয়ন্ত্রণ ডিএনসিসি’র এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা’সহ আরও কয়েকজনের। প্রতি সনদের জন্য তারা নেয় তিন থেকে ৫ হাজার টাকা। যেখানে, সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১০০ টাকা।

উত্তর সিটি এলাকায় এ চক্রটির আদ্যোপান্ত বের করার জন্য একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে চাই আমরা। সন্ধান পাওয়া যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মচারীর। যার কাছে গেলে, সহজেই মিলবে বার্থ সার্টিফিকেট।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অফিসের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মাসুদুর রহমান, যিনি নমুনা সংগ্রহের কর্মচারী। মোবাইলে ফোনে তিনি তার অফিসে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে ফোন দেয়ার পর, তিনি তার কার্যালয়ে না নিয়ে ডেকে পাঠালেন পাশের গলিতে। একটি জন্ম সনদের জন্য, পরিচয় গোপন করে সে গলিতে যাই।

গোপনে নেয়া ভিডিও কথোপকথনে ডিএনসিসি নমুনা সংগ্রহের কর্মচারী মাসুদ কাজীকে বলতে শুনা যায়, জন্মনিবন্ধন সনদ করে দেয়া যাবে, তবে এড্রেস দিতে হবে সাতারকুল এলাকার।

যে কারও কিংবা যে জেলারই হোক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলেও জন্ম নিবন্ধন করা যাবে এখান থেকেই। প্রতি সনদের জন্য গুণতে হবে তিন হাজার টাকা।

একটি চক্র মিলে কাজটি করে, মহাখালীর ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৩ এর অফিসের পেছনের এই গলিতে। আবেদন থেকে সনদপ্রাপ্তি পর্যন্ত সব কাজ হয় এই কম্পিউটারের দোকানগুলোতে। আদতে, যা হওয়ার কথা অনলাইনে বা কার্যালয়ের ভেতরে।

চক্রটির কাজ শুরু হয় এই ডিএনসিসি’র কর্মচারী মাসুদ কাজীকে দিয়ে। মাসুদ প্রথমত কাজটিতে যুক্ত করেন তার ভাগ্নেকে। তিনি নিয়ে যান কম্পিউটার দোকানে। সেখান থেকে আবেদনের প্রক্রিয়া হয়ে গেলে, সিটি কর্পোরেশন অংশের বাকি কাজ করেন চক্রের অন্যতম সদস্য মাসুদ কাজী।

এরপর একটি দোকান থেকে একটি মাত্র আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েই হচ্ছে একের পর এক জন্ম নিবন্ধনের সনদ তৈরির প্রক্রিয়া। এ কী করে সম্ভব? এবার যমুনা টিভির পরিচয় প্রকাশ করে সেই গলিতে গেলে, উপস্থিতি টের পেয়ে লাপাত্তা মাসুদ।

ততক্ষণে বেরিয়ে আসে মাসুদের আরও কিছু তথ্য। কর্মচারী হয়েও রাজনৈতিক পরিচয়ই তার শক্তি। মাস খানেক আগে মাসুদকে বদলি করা হয় উত্তরা জোনে। সেখানে থেকেও নিয়ন্ত্রণ করছেন এ চক্র।

এ চক্রের ফাইলগুলোর চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তা ও জন্ম নিবন্ধক ডা. ফিরোজ আলম। তার হাতেই থাকে জন্ম নিবন্ধনের রেফারেন্স কপিগুলো সত্যায়িত করার এখতিয়ার। ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন দেয়ার দায়ে ইতোমধ্যে দুইবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল এই ডাক্তার ফিরোজের বিরুদ্ধে। সেই নথিও আসে হাতে।

গোপনে নেয়া ভিডিও রেকর্ডিংয়ে ডিএনসিসি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, আমরা আসমান থেকে নাজিল হওয়া কোন প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিনিয়ত আমরা ঘষা–মাজার কাজ করছি।

ডাক্তার ফিরোজের বক্তব্য জানতে চাইলেও নাগাল পাওয়া যায়নি তার। নাকের ডগায় এমন ঘটনা নতুন কিছু নয় সিটি করপোরেশনের জন্য। জানা থাকলেও ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই বলে এড়িয়ে যান ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। দায় ঠেলে দেন আঞ্চলিক কর্মকর্তার কাছে।

ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি: জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী ফোনে বলেন, এখানে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারাই সবকিছু দেখেন। কিছুই বলতে পারবো না, আমার কোন অথরিটিই নাই।

অভিযোগ খতিয়ে দেখার সেই গতানুগতিক আশ্বাস রেজিস্ট্রার জেনারেলের। তবে, রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসাইনকে প্রশ্ন করা হয়, একটি দোকান থেকে ১টি মাত্র আইডি দিয়ে ১০০টি নিবন্ধন কীভাবে করা যাচ্ছে?

উত্তরে তিনি বলেছেন, এই প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারবেন না। ১টি আইডি দিয়ে ১০০টি নিবন্ধন করা কীভাবে সম্ভব! ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অনেকে সাস্পেনশনে-ও আছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক আব্দুর রশিদকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহীর ইনাম ফিড মিলের মালিক আতিকুর রহমানের দায়ের করা এক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। রশিদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৬৭ টাকার একটি আর্থিক প্রতারণার মামলা করেছিলেন আতিকুর রহমান। মামলাটির নং : ৬৪৩সি / ২০২৩।

মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, মৎস্য খাদ্যের কাঁচামাল ডি ওয়েল রাইস ব্রান (ডিওআরপি) কেনার জন্য রসিদ অটোমেটিক রাইস মিল লি. এর বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে অগ্রিম ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৬৮ প্রদান করলেও মৎস্যখাদ্যের কাঁচামাল পাননি তিনি। অপরদিকে সেই অর্থও ফেরত না পাওয়ায় চলতি বছরের ২৫শে মার্চ মামলা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ওয়ারেন্ট জারি হলে বিবাদী আব্দুর রশিদ আদালতে হাজির না হওয়া এবং জামিন না নেয়ায় তাকে গ্রেফতার পুলিশ। গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।