বিশ্ব

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। বুধবার দক্ষিণ গাজায় এক অভিযান চালিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। 

এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ৮২৮তম ব্রিগেডের অভিযানে দক্ষিণ গাজায় তিনজন নিহত হন। ওই তিনজনের লাশের পরিচয় শনাক্তের পর ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার  হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

জেরুজালেম থেকে সিনহুয়া জানায়, বিশ্বের কয়েক ডজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কাৎজের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, '৭ অক্টোবরের গণহত্যা ও নৃশংসতার হত্যা গণঘাতক ইয়াহিয়া সিনওয়ার আজ আইডিএফ সৈন্যদের হাতে নিহত হয়েছে।'

এ বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। হামাসের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণত গোষ্ঠীটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট আল-মাজদে তথ্য প্রকাশ করা হয়। সিনওয়ারের বিষয়ে জানতে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম নয়; বরং হামাসের কাছ থেকে তথ্য আসা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের অপেক্ষা করতে বলছে এই ওয়েবসাইট।

ইরানের রাজধানী তেহরানে গত জুলাইয়ে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক শাখার তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এরপর সিনওয়ারকে হামাসের প্রধান করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ছিলেন। ২০১১ সালে বন্দী বিনিময়ের আওতায় তিনি মুক্তি পান।

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লাহ। রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা হারানোর পর প্রথমবারের মতো সরকার পেলো অঞ্চলটির জনগণ। বুধবার (১৬ অক্টোবর) শপথ গ্রহণ করেন তিনি।

শপথ গ্রহণ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) নিজের অফিসে বসা একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি, সেখানে ক্যাপশনে লেখেন, আমি ফিরে এসেছি।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন জম্মু ও কাশ্মিরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ওমর। ছয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।

অবশেষে দীর্ঘ ছয় বছর পর জম্মু ও কাশ্মীর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে এবার গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে। গত শুক্রবার-ই জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন ওমর আবদুল্লাহ। এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে, জম্মু-কাশ্মীরের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন ওমর আবদুল্লাহ। জম্মু-কাশ্মীরের ৯০ আসনের বিধানসভা আসনে গত কয়েকদিন আগেই ভোট হয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর এই নির্বাচন হয়।

ওই  নির্বাচনে কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। এরপরই ওমর আবদুল্লাহ লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানালে জম্মু-কাশ্মীর থেকে তুলে নেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।

তাইওয়ানের জাতীয় দিবস উদযাপনের দিন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের একটি বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বেইজিংয়ে। লাই চিং-তে তার বক্তব্যে তাইওয়ানের ‘অধিভুক্তি’ প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেন। 

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের জেরে চারপাশে নতুন করে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই মহড়াকে ‘শাস্তি’ হিসাবে বর্ণনা করেছে চীন।

যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ দিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে মহড়া চালাচ্ছে বলে চীনা সেনার ইস্টার্ন কম্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বেইজিং ও তাইওয়ানের কেউ কারও অধীন নয়। দেশটির প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের পর চীন হুঁশিয়ারি দেয়। বেইজিং বলে, লাই চিং-তের এই ‘উসকানি’ তাইওয়ানের জনগণের জন্য ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। 

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক আগের মতোই অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব দ্রুতই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সব ধরনের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সব সংকটে পাশে ছিল চীন। কোভিড কিংবা জুলাই আন্দোলনেও চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে যায়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, চীনের সাথে সামরিক যোগাযোগ বাড়াতে চায় সরকার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। এ কাজে চীনের আরও আন্তরিক ও সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।

এবার উত্তেজনা ছড়ালো ফ্রান্স-ইসরায়েল সম্পর্কে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের সাথে বাগযুদ্ধে জড়ালেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা ও লেবাননে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে তেলআবিবকে অস্ত্র সরবরাহ না করার দাবি সরব হয়েছেন ম্যাকরন। আর তাতেই চটেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। ফরাসি প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে করেছেন সমালোচনা।

এক বছর ধরে গাজায় আগ্রাসন চালালেও, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশের সমর্থন পেয়ে আসছে ইসরায়েল। মুখে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও, বেশকিছু দেশ অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে উল্টো সহায়তা করছে।

পশ্চিমাদের এমন দ্বিচারিতা এরইমধ্যে হচ্ছে বেশ সমালোচিত। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন। তার দাবি, ইসরায়েলকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ না করলে গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুলেছিলাম। তা নিয়ে ইসরায়েল ও লেবাননের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনাও করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নেতানিয়াহু লেবাননে স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা যদি যুদ্ধবিরতি চাই তবে সেটি ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখে সম্ভব নয়। তাই তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা উচিত।

মিত্র দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এমন বক্তব্যকে অবশ্য ভালোভাবে নেয়নি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ম্যাকরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বানকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছেন তিনি।

ম্যাকরনের কথার জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল যেহেতু ইরানের নেতৃত্ব দেয়া সকল বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়ছে, তাই সব সভ্য দেশেরই উচিত তেলআবিবের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন এবং অন্যান্য নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের প্রতি ধিক্কার জানাই। যারা সন্ত্রাস চায় না তারাই আবার ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দ্বিমুখী আচরণ করছে।

যদিও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় নেই ফ্রান্স। গত বছর ইসরায়েলে মোট ৩৩ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করেছে প্যারিস।

গতকাল ইসরায়েলের ওপর ইরান সর্বকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে। মোট ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে যার বেশিরভাগই ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জর্ডানের যৌথ আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী প্রতিরক্ষা দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

তবে, মঙ্গলবার রাতের বিমান হামলা, গত এপ্রিলে অনুরূপ হামলার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গুরুতর। এই আক্রমণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে একটি বিপজ্জনক আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

তবে, এখন আলোচনায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা এবং এই অঞ্চলে ইসরায়েলি এবং অন্যান্য বাহিনীর নিযুক্ত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। কীভাবে এতোগুলো ব্যালিস্টিক মিসাইল আক্রমণের বেশিরভাগ-ই নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হলো ইসরায়েল ও দেশটির মিত্ররা। অন্যদিকে, ইরান একটি হামলায় যদি ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে, তাহলে দেশটির কাছে কত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে? এছাড়াও, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কতটুকু দূরে গিয়ে আক্রমণ করতে সক্ষম? চলুন দেখে নেয়া যাক:

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর মিসাইল থ্রেট প্রজেক্টের ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরানের কাছে হাজার হাজার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন রেঞ্জের এবং দূরের টার্গেট ভেদ করতে সক্ষম।

তবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে এসব ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের সঠিক সংখ্যা অজানা। চলতি বছরে ইরান ওয়াচ ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, ২০২৩ সালে, ইউএস এয়ার ফোর্স জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি কংগ্রেসকে বলেছিলেন যে ইরানের কাছে ৩ হাজারের বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ট্র্যাজেক্টোরি বা গতিপথ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সীমার বাইরে বা কাছাকাছি নিয়ে যায়। ওয়ারহেড পেলোড রকেট থেকে আলাদা হওয়ার আগে যা এটিকে ওপরে নিয়ে যায়। তারপর আবার বায়ুমণ্ডলে তার লক্ষ্যবস্তুতে ফিরে আসে।

ঘটনাস্থল থেকে যাচাইকৃত সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও বিশ্লেষণ করেছেন এমন অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, ইরান ইসরায়েলের ওপর সর্বশেষ হামলায় ‘শাহাব-৩’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আরমামেন্ট রিসার্চ সার্ভিসেসের (এআরইএস) গবেষণা সমন্বয়কারী প্যাট্রিক সেনফ্টের মতে, ‘শাহাব-৩’ ইরানের সব মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভিত্তি। অর্থাৎ, এই সিরিজের ওপর ভিত্তি করেই ইরান অন্যান্য মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে থাকে। এটি তৈরিতে ব্যবহার করা করেছে তরল প্রপেলান্ট।

এর আগে, ২০০৩ সাল থেকে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘শাহাব-৩’। এটি ৭৬০ থেকে ১২ শ’ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। ‘শাহাব-৩’-এর নতুন প্রকরণ গদর ও এমাদ ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলতার রেঞ্জ ৩০০ মিটার বা ১০০০ ফুট। অর্থাৎ, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যে লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে ছোড়া হয় তার আশপাশের ১০০০ ফুটের মধ্যেই আঘাত হানবে। 

ইরানি গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ইসরায়েলি হামলায়, তেহরান একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ-১’ ব্যবহার করেছে। তেহরান ‘ফাত্তাহ-১’-কে একটি হাইপারসনিক (যা শব্দের গতির চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দ্রুত চলতে পারে) ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই ফাত্তাহ-১ এর গতি মাক-৫; যার অর্থ এটি শব্দের গতির পাঁচগুণ অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ৩ হাজার ৮ হাজার মাইল বা ৬ হাজার ১শ’ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম।

তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, প্রায় সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের উড্ডয়ন পথের একটা সময়ে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। বিশেষ করে যখন সেগুলো লক্ষ্যবস্তুর দিকে নামতে থাকে। উচ্চ গতি থাকার কারণে এগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করা কঠিন হয়ে যায়।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো ফ্যাবিয়ান হিঞ্জের মতে, ‘ফাত্তাহ-১’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়। তিনি বলেন, তবে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি অতি দ্রুত সময়ে এর গতিপথ বদলাতে পারে। যার কারণে এটিকে শনাক্ত করে বাধা দেয়া কঠিন। 

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী ও ইরানপন্থী মিলিশিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করে হিজবুল্লাহ। এর আগে, শুক্রবার লেবাননের বৈরুতের দাহিয়েতে বেসামরিক ভবনের নিচে হিজবুল্লাহর সদর দফতরে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার পরেই নাসারাল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি জানায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরে জানা যায়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অবশ্য এরপর মুখ খুলেছিলেন খামেনি। নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে তেহরানের বক্তব্য পরিষ্কার করেন তিনি। বক্তব্যে খামেনি বলেন,  এটি ইসরায়েলের নেতাদের অদূরদর্শীতা এবং বোকামিকেই প্রমাণ করেছে।

এই অঞ্চলের সকল প্রতিরোধ শক্তি হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে এবং পাশে আছে বলে জানান তিনি। সেইসঙ্গে খামেনি সকল মুসলিমকে লেবাবনের জনগণ ও হিজবুল্লাহর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নাসরাল্লাহ হত্যার রিপোর্টের পর মুসলমানদেরকে ইসরায়েলের মোকাবিলা করার আহ্বানও জানান তিনি।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করছে, হাসান নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে সে হামলা চালানো হয়েছিল। এই হামলায় হাসান নাসরাল্লাহর সাথে হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারও নিহত হয়েছে।

আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এখানে বার্তা খুব পরিষ্কার। ইসরায়েলি নাগরিকদের যারা হুমকি দেবে তাদের কীভাবে খুঁজে বের করতে হয় সেটা আমরা জানি। সেটা উত্তরে, দক্ষিণে কিংবা আরো দূরে হলেও আমরা খুঁজে পারব। দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন তখন সেখানে হামলা চালানো হয়। দক্ষিণ বৈরুতের এ জায়গাটি হেজবুল্লাহর একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

উল্লেখ্য, আইডিএফ তাদের ‘এক্স’ প্লাটফর্মে লিখেছিলো, হাসান নাসরাল্লাহ পৃথিবীতে আর আতঙ্ক ছড়াতে পারবে না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পরমাণু শক্তিধর কোনো দেশ পরমাণু শক্তি নেই এমন দেশকে সাহায্য করলে তা যৌথ আক্রমণ বলে ধরে নেয়া হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই বুধবার দেশের পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন পুতিন। তার এই কাজ পরমাণু আক্রমণের রাস্তা প্রশস্ত করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

পুতিনের এই বক্তব্য চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পশ্চিমা বিশ্বে। ইউক্রেন সাহায্যকারী দেশগুলোর কাছে দূরপাল্লার মিসাইল চেয়েছে। তারা রাশিয়ার ভিতরে আক্রমণের কৌশল নিয়েছে। আগস্টে তারা রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চল কুরস্কের একাংশের দখল নিয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, প্রেসিডেন্টের নতুন সিদ্ধান্তে পশ্চিমাদের আরও সাবধান হওয়া উচিৎ। ইউক্রেনকে শুধু পরমাণু সহায়তা না, অন্য যেকোন উপায়ে সমর্থন দেয়া দেশগুলোও আমাদের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে।

রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনকে ক্রুজ মিসাইল সরবরাহ করেছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেগুলো ব্যবহারের অনুমতি এখনও দেয়া হয়নি কিয়েভকে। এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার থেকে ইউক্রেনকে সংযত রাখতেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত মস্কোর।

দিমিত্রি পেসকভ বলেন, সারা পৃথিবী আমাদের পরমাণু অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা সম্পর্কে জানে। সীমান্ত আক্রান্ত হলে অবশ্যই সেগুলো ব্যবহারের চিন্তা করবো আমরা।

এদিকে, রাশিয়ার নতুন সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র পিটার স্টানো বলেন, পরমাণু শক্তি নিয়ে রাশিয়া শুরু থেকেই জুয়া খেলছে। জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশন নিয়ে যখন সব রাষ্ট্রগুলো ব্যস্ত তখন এই হুমকি এলো। তবে তার এসব অপচেষ্টা সফল হবে না। এই হুমকি অবশ্যই আমরা প্রত্যাখান করেছি।

শত্রু রাষ্ট্রগুলোতে রাশিয়ার পরমাণু হামলার হুমকির ঘটনা নতুন নয়। ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে আসছে মস্কো।

লেবাননে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় অন্তত ১৮২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭২৭ জনেরও বেশি। আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশটির তিনশ’র বেশি স্থাপনায় একযোগে হামলা করেছে ইসরায়েল।

হামলায় নিহত ও আহতদের মধ্যে শিশু, নারী ও মেডিকেল কর্মীরা রয়েছেন বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনটা জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার আগে হিজবুল্লাহ সক্রিয় রয়েছে, এমন এলাকা থেকে লেবাননের বাসিন্দাদের ফোন কল করে অবিলম্বে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এমনকি লেবাননের একটি রেডিও হ্যাক করেও তাতে এ বার্তা প্রচার করা হয়।

হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে ‘হিসাব-নিকাশের লড়াই’ ঘোষণা করায় মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অব্যাহত হামলার মুখে দক্ষিণ লেবানন থেকে লোকজনকে সরে যেতে দেখা গেছে। লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত সোমবারের হামলাই সবচেয়ে তীব্র বলে অভিহিত করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, লেবাননে হামলা আরও তীব্র করা হচ্ছে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলিকে উত্তরে ফেরানোর জন্য ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত’ এ হামলা চলবে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের এ ঘটনায় লেবাননে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর অন্তত ১৬ সদস্য রয়েছেন। এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ।

পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাঝেই সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় একাধিক শহরে একযোগে বিমান হামলা চালালো ইসরায়েলি বাহিনী।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মঈনুদ্দিন কাজল
deshermatidaily@gmail.com
০১৬১৫১১২২৬৬, ০১৬৭৩৫৬২৭১৬

দেশের মাটি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।